বিসিএস পরীক্ষা (BCS Exam) : বিসিএস পরীক্ষা বা বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস পরীক্ষা হচ্ছে দেশব্যাপী পরিচালিত বাংলাদেশ প্রজাতন্ত্র প্রথম শ্রেণী গেজেটেড চাকুরির জন্য একটি প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষা যা বাংলাদেশ পাবলিক সার্ভিস কমিশন (বিপিএসসি) কর্তৃক বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিসের বিসিএস (প্রশাসন), বিসিএস (কর), বিসিএস (পররাষ্ট্র) ও বিসিএস (পুলিশ) সহ ২৬ পদে কর্মী নিয়োগ পরিচালনা করা হয়।
বিসিএস ক্যাডারের
সংখ্যা পূর্বে ২৭টি ছিল, ২০১৮ সালে ইকোনমিক ক্যাডারকে প্রশাসন ক্যাডারের সাথে একত্রিত
করা হয়। বিসিএস পরীক্ষা পর্যায়ক্রমে তিনটি ধাপে অনুষ্ঠিত হয়- প্রাথমিক পরীক্ষা (এমসিকিউ),
লিখিত পরীক্ষা এবং মৌখিক পরীক্ষা (ইন্টারভিউ)।
পরীক্ষার বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ থেকে চূড়ান্ত ফলাফল পর্যন্ত সমগ্র প্রক্রিয়া সম্পন্ন হতে
প্রায় ১.৫ থেকে ২ বছর সময় লাগে।
বিসিএস পরীক্ষার প্রক্রিয়া :
বাংলাদেশ
সিভিল সার্ভিস পরীক্ষা ব্রিটিশ আমলে ব্রিটিশ ভারতীয় সরকারের ইম্পেরিয়াল সিভিল সার্ভিসের উপর ভিত্তি করে পরিচালিত হচ্ছে। বিসিএস পরীক্ষাকে বাংলাদেশে চাকরি প্রার্থীদের জন্য অনুষ্ঠিত সবচেয়ে বড় প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষা। প্রতি বছর গড়ে ১,৫০,০০০
থেকে ২,২৫,০০০
প্রার্থী আবেদন করে, যা বছরের চাকরি
প্রার্থীদের প্রায় ৯০% শতাংশ। পরীক্ষায় সকল ক্যাডার মিলে গড় সাফল্যের হার ০.০২% এবং
সাধারণ ক্যাডারের ক্ষেত্রে যা ০.০০৫%
শতাংশ, যদিও প্রতি বছর এ হার পরিবর্তিত
হয়।
পরীক্ষার ধাপসমূহ:
প্রথম ধাপ:
প্রাথমিক পরীক্ষা - এটি বিসিএস পরীক্ষার প্রাথমিক যোগ্যতা বাছাই পর্ব। প্রতি বছর সাধারণত মে/জুন মাসে
এ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। এ বছর করোনা ভাইরাস পরিস্থিতির
কারণে নির্দিষ্ট সময়ে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়নি। পরীক্ষার এক
মাস আগে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয় এবং পরীক্ষার প্রায় এক থেকে দেড়
মাস পরে ফলাফল প্রকাশিত হয়।
দ্বিতীয় ধাপ:
লিখিত পরীক্ষা - এটি বিসিএস এর প্রধান পরীক্ষা,
সাধারণত প্রতি বছরের অক্টোবর/নভেম্বর/ডিসেম্বর মাসে এ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত
হয়।তবে কভিড-১৯ এর কারণে এবার
ব্যাতিক্রম হচ্ছে। প্রায়
এক মাস আগে পরীক্ষার জন্য বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয় এবং পরীক্ষার প্রায় ২ থেকে ৩
মাস পর সাধারণত ফলাফল
প্রকাশিত হয়।
তৃতীয় ধাপ:
মৌখিক পরীক্ষা (ইন্টারভিউ) - লিখিত পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশিত হওয়ার পর মৌখিক পরীক্ষা
অনুষ্ঠিত হয়। মৌখিক পরীক্ষার ১.৫ থেকে
২ মাস পর বিসিএস পরীক্ষার
চূড়ান্ত ফল প্রকাশিত হয়।
বিসিএস দিতে কি যোগ্যতা লাগে?
BCS
Cadre পরীক্ষা দিতে যে যোগ্যতা প্রয়োজন তা হচ্ছে- চার বছর মেয়াদী অনার্স পাস কিংবা
মাস্টার্স পরীক্ষায় উত্তীর্ণ এবং শিক্ষা জীবনে একাধিক তৃতীয় শ্রেণি না থাকা। অর্থাৎ
উচ্চ মাধ্যমিক পাসের পর চার বছরের অনার্স পাস করলে বিসিএস পরীক্ষায় আবেদন করা যায়।
কেউ যদি তিন বছরের অনার্স বা পাস কোর্সে পড়ে থাকে তাহলে তাকে অবশ্যই মাস্টার্স পাস
করে আবেদন করতে হবে। শিক্ষা জীবনে একের অধিক তৃতীয় শ্রেণি থাকলে বিসিএস পরীক্ষায়
আবেদনের অযোগ্য বলে বিবেচিত হবে।
প্রাথমিক পরীক্ষা (এমসিকিউ পদ্ধতি)
বিসিএসের
প্রথম যে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয় তা হচ্ছে - ১০ টি বিষয়ের উপর নৈর্বক্তিক প্রশ্ন থাকে।
সময় 2 ঘণ্টায় মোট নাম্বার ২০০ এমসিকিউ পদ্ধতিতে পরীক্ষা দিতে হবে। প্রাথমিক পরীক্ষা
বা এমসিকিউ ২০০ নম্বরের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলে কবেল লিখিত পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করা যাবে।
প্রিলিমিনারি টেস্ট (এমসিকিউ)-এর বিষয় ও নম্বর বণ্টন
ক্রমিক নম্বর |
বিষয়ের নাম |
নম্বর বণ্টন |
১. |
বাংলা ভাষা ও সাহিত্য |
৩৫ |
২. |
ইংরেজি ভাষা ও সাহিত্য |
৩৫ |
৩. |
বাংলাদেশ বিষয়াবলি |
৩০ |
৪. |
আন্তর্জাতিক বিষয়াবলি |
২০ |
৫. |
ভূগোল (বাংলাদেশ ও বিশ্ব), পরিবেশ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা |
১০ |
৬. |
সাধারণ বিজ্ঞান |
১৫ |
৭. |
কম্পিউটার ও তথ্য প্রযুক্তি |
১৫ |
৮. |
গাণিতিক যুক্তি |
১৫ |
৯. |
মানসিক দক্ষতা |
১৫ |
১০. |
নৈতিকতা, মূল্যবোধ ও সু-শাসন |
১০ |
মোট |
২০০ |
বিসিএসের প্রিলিমিনারি টেস্ট (এমসিকিউ)-এর বিস্তারিত সিলেবাস(BCS Exam & Syllabus)
বিসিএসের প্রধান পরীক্ষা (লিখিত পরীক্ষা)
বিসিএস ক্যাডারের প্রধান পরীক্ষা হচ্ছে লিখিত পরীক্ষা। প্রিলিমিনারি টেস্ট-এ কমিশন কর্তৃক কৃতকার্য ঘোষিত প্রার্থীদের ৯০০ নম্বরের লিখিত পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে হবে। নির্ধারিত শিক্ষাগত যোগ্যতা অনুযায়ী ২৬টি ক্যাডার সাধারণ ক্যাডার এবং কারিগরি/পেশাগত ক্যাডার (প্রফেশনাল ক্যাডার) এই দুই ক্যাটাগরিতে বিভক্ত। সাধারণ ক্যাডারের জন্য ৯০০ নাম্বারের পরীক্ষা ও প্রফেশনাল ক্যাডারের জন্য ৯০০ নাম্বারের পরীক্ষা।
সাধারণ ক্যাডারের
লিখিত পরীক্ষা
বিসিএস সাধারণ
ক্যাডারের জন্য নিচের বিষয়গুলো নাম্বার বন্টন অনুযায়ী মোট ৯০০ নাম্বারের পরীক্ষা দিতে
হবে।
· *সাধারণ
বাংলা (প্রথম ও দ্বিতীয় পত্র)
= ২০০ নম্বর
· * General English (Part I & II) = ২০০ নম্বর
· *বাংলাদেশ
বিষয়াবলি (প্রথম ও দ্বিতীয় পত্র)
= ২০০ নম্বর
· *আন্তর্জাতিক
বিষয়াবলি = ১০০ নম্বর
· * গাণিতিক
যুক্তি ও মানসিক দক্ষতা
= ১০০ নম্বর
· *সাধারণ
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি = ১০০
নম্বর
প্রফেশনাল বা কারিগরি/পেশাগত
ক্যাডারের
লিখিত পরীক্ষা
প্রফেশনাল
ক্যাডারে নিচের নম্বার বন্টন অনুযায়ী মোট ৯০০ নাম্বারের লিখিত পরীক্ষা দিতে হবে।
· *সাধারণ
বাংলা = ১০০ নম্বর
· *General English (Part I & II) = ২০০ নম্বর
· *বাংলাদেশ
বিষয়াবলি (প্রথম ও দ্বিতীয় পত্র)
= ২০০ নম্বর
· *আন্তর্জাতিক
বিষয়াবলি = ১০০ নম্বর
· *গাণিতিক
যুক্তি ও মানসিক দক্ষতা
= ১০০ নম্বর
· *পদ-সংশ্লিষ্ট বিষয় = ২০০ নম্বর
উভয় ক্যাডারের
লিখিত পরীক্ষা
আপনি যদি
উভয় ক্যাডারে পরীক্ষা দিতে চান তাহলে সাধারণ ক্যাডারের ৯০০ নাম্বার আবশ্যিক বিষয় এবং
দুইটি পদ সম্পর্কিত বিষয়ে পরীক্ষা দিতে হবে। আবেদনের সময় উভয় ক্যাডার বেচে
নিতে হবে।
বিসিএস পদ সংশ্লিষ্ট
(Job-related) বিষয়ের পরীক্ষা
যে
সকল প্রার্থী সাধারণ ও কারিগরি/পেশাগত
উভয় ক্যাডারের পদের জন্য পছন্দক্রম দেবেন, তাদেরকে সাধারণ ক্যাডারের জন্য নির্ধারিত বিষয়ের ৯০০ নম্বরের অতিরিক্ত সংশ্লিষ্ট পদ বা সার্ভিসের
জন্য প্রাসংগিক বিষয়ের ২০০ নম্বরের লিখিত পরীক্ষা দিতে হয়।
বিসিএস লিখিত পরীক্ষার বিস্তারিত সিলেবাস (BCS Exam & Syllabus)
আগেই উল্লেখ
করা হয়েছে বিসিএস লিখিত পরীক্ষার বিস্তারিত সিলেবাস বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশনের অফিসিয়াল
(www.bpsc.gov.bd) ওয়েবসাইটে পাওয়া যাবে। বিসিএস লিখিত পরীক্ষার বিস্তারিত সিলেবাস
(Syllabus) সরাসরি ডাউনলোড করুন এখান থেকে।
বিসিএসের মৌখিক পরীক্ষা (ইন্টারভিউ)
বিসিএস-এর লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ প্রার্থীদের ২০০
নম্বরের মৌখিক পরীক্ষায় অংশগ্রহণ বাধ্যতামূলক। মৌখিক পরীক্ষায় পাশ নম্বর ৫০%।যেসকল
প্রার্থী লিখিত পরীক্ষায় পাশ করে শুধু তারাই মৌখিক পরীক্ষার জন্য যোগ্য বলে নির্বাচিত হন, যা সাধারণত ইন্টারভিউ
নামে পরিচিত।বিসিএসের প্রথম দুই ধাপের চেয়ে এ ধাপে সাফল্যের
হার খুবই নগণ্য।
বিসিএস ক্যাডারে চূড়ান্ত নির্বাচন
পদ্ধতি
বাংলাদেশ
সিভিল সার্ভিস ক্যাডার প্রার্থীদের
লিখিত পরীক্ষার সংগৃহীত নম্বর (লিখিত ৯০০ নম্বরের মধ্যে) এবং মৌখিক পরীক্ষার সংগৃহীত নম্বরের (২০০ নম্বরের মধ্যে) উপর ভিত্তি করে চূড়ান্ত যোগ্যতা নির্ধারণ করে থাকে। আগে ৫৫% শতাংশ প্রার্থী প্রচলিত কোটা পদ্ধতি অনুসারে এবং ৪৫% শতাংশ প্রার্থী মেধা অনুসারে বাছাই করা হয়েছিল। বর্তমানে শতভাগ প্রার্থী মেধা অনুসারে বাছাই করা হয়। পিএসসি যোগ্যতা সম্পন্ন প্রার্থীদের নিয়োগের জন্য জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে বিশেষ সুপারিশ করে। এরপর মন্ত্রণালয় পর্যায়ক্রমে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর কর্তৃক স্বাস্থ্য পরীক্ষা, পুলিশ ভেরিফিকেশন এবং এনএসআই ভেরিফিকেশন শেষে তাদের নাম গেজেট আকারে প্রকাশ করে। সাধারণত এ প্রক্রিয়া সম্পন্ন
হত এক থেকে দেড়
বছর সময় লেগে যায়।
সংগৃহিত
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন