যাই যে ধারণা করুক না কেন, বাংলাদেশে যখন ইসলামের সূচনীয় অবস্থা তৈরি হয় তখনই হেফাজত ইসলাম সৃষ্টি হয়েছে।
হেফাজত ইসলাম বাংলাদেশ হচ্ছে কাওমি মাদ্রাসা ভিত্তিক একটি অরাজনৈতিক সংগঠন। ২০১০ সালে ১৯ শে জানুয়ারী এই সংগঠনটি প্রতিষ্ঠিত হয়।
প্রতিষ্ঠার পর থেকেই সংগঠনটি ইসলাম বিরোধী বিভিন্ন কর্মকান্ডের প্রতিবাদ করে আসছিল। ইসলামী সমাজ বিনির্মাণের আন্দোলন শুরু করে।
হেফাজত ইসলাম বাংলাদেশ সংগঠনটির ইতিহাস
Hepajot Islam Bangladesh: হেফাজত ইসলাম বাংলাদেশ সম্পর্কে উইকিপিডিয়াতে যে তথ্য পাওয়া যায় তা হলো-
২০১০ সালে জানুয়ারী মাসে ১৯ তারিখে প্রায় ১০০ (একশত) কাওমি মাদ্রাসার শিক্ষক দিয়ে প্রতিষ্ঠা লাভ করে।
এই সংগঠনটি প্রতিষ্ঠা করেন হাটহাজারী মাদ্রাসার মহাপরিচাকল আল্লামা শাহ আহমদ শফী। সর্বপ্রথম ২০১০ সালে ধর্মনিরপেক্ষ শিক্ষানীতির বিরোধিতা করে সংগঠনটি আত্নপ্রকাশ করে।
হেফাজতে ইসলাম ২০১১ সালে বাংলাদেশ নারী উন্নয়ণ নীতি (২০০৯) এর চরম বিরোধিতা করে ।কারণ এর কয়েকটি ধারা ইসলামের সাথে সাংঘর্ষিক ।
ধর্মনিপেক্ষ নারী নীতির বিরোধিতায় হেফাজত ইসলাম আলোচনার কেন্দ্র বিন্দুতে পরিণত হয়।
২০২০ সালে সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা আল্লামা শাহ আহমদ শফীর মৃত্যূর পর নতুন কমিটি গঠন করা হয়। নতুন কমিটির আমির হন আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরী।
২০২১ সালে সংগঠনটি সরকারের রোষানলে পড়ে এর কমিটি বিলুপ্তু করা হয়। তবে এর পরপরই সংগঠনটি টিকে রাখার জন্য আহবায়ক কমিটি গঠন করা হয়।
আহবায়ক কমিটির প্রধান হন হেফাজত ইসলাম বাংলাদেশ এর বিলুপ্ত কমিটির আমির আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরী।
হেফাজত ইসলামের কর্মকান্ড
হেফাজত ইসলামা বাংলাদেশ এর নেতাকর্মীর বক্তব্য অনুযায়ী বুঝা যায়, এই সংগঠনটির মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে ইসলামী সমাজ প্রতিষ্ঠা করা। তবে বিতর্কও রয়েছে। কেননা ইফাজত ইসলাম বরাবর বলে আসছে এই সংগঠনটি একটি অরাজনৈতিক সংগঠন।
সংগঠনটি সৃষ্টির শুরু থেকে বেশকিছু কর্মকান্ড পরিচালনা করে ব্যপক আলোরণ সৃষ্টি করে।
সংগঠনের কর্মকান্ডগুলোর মধ্যে ব্যপক আলোচিত হচ্ছে-
- ২০২১ সালে নারী উন্নয়ন নীতির বিরোধিতা
- ২০১৩ সালে ইসলাম ও রাসূল (সাঃ) কে কটুক্তিকারী নাস্তিক ব্লগারদের ফাঁসির দাবি করে ব্যাপক আন্দোলন ও সমাবেশ। এতে সংগঠন থেকে ১৩ দফা দাবি তোলা হয়।
- ৫ মে ২০১৩ সালে ঢাকা অভিমুখে লংমার্চ ও শাপলা চত্তরে সমাবেশ। এ সমাবেশে প্রচুর মানুষের সমাগম হয়।
- ভারতের প্রধান মন্ত্রী বাংলাদেশ সফরের বিরোধিতা ইত্যাদি।
হেফাজত ইসলামের ১৩ দফা দাবি
হেফাজত ইসলাম বাংলাদেশ এর ১৩ দফা দাবির লিখিত কোন ডকুমেন্ট আমাদের কাছে নেই। তবে বাংলা উইকিপিডিয়াতে ১৩ দফার যে বর্ণনা পাওয়া যায় তা নিম্নরুপঃ-
1. বাংলাদেশ সংবিধানে ‘আল্লাহর উপর পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস, পুনঃস্থাপন এবং কোরান-সুন্নাহ বিরোধি সব আইন বাতিল করতে হবে।
2. আল্লাহ, রাসূল ও ইসলাম ধর্মের অবমাননা এবং মুসলমানদের বিরুদ্ধে কুৎসা রোধে সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদন্ডের বিধান রেখে জাতীয় সংসদে আইন পাস করা।
3. শাহবাগ আন্দোলনে নেতৃত্বদানকারী স্বঘোষিত নাস্তিক এবং রাসূল এর নামে কুৎসা রটনাকারী ব্লগার ও ইসলাম বিদ্বেষীদের সব অপপ্রচার বন্ধসহ কঠোর শাস্তিদানের ব্যবস্থা করা।
4. ব্যাক্তি ও বাক স্বাধীনতার নামে সকল প্রকার বেয়াপনা, অনাচার, ব্যভিচার, প্রকাশ্যে নারী পরুষের অবাধ বিচরণ, মোমবাতি প্রজ্বলণসহ সব বিজাতীয় সংস্কৃতি অনুপ্রবেশ বন্ধ করতে হবে।
5. ইসলাম বিরোধী নারীনীতি, ধর্মহীন শিক্ষানীতি বাতিল করে শিক্ষার প্রাথমিক স্তর থেকে উচ্চ মাধ্যমিক স্তর পর্যন্ত ইসলাম ধর্মীয় শিক্ষাকে বাধ্যতামূলক করতে হবে।
6. সরকারিভাবে কাদিয়ানিদের অমুসলিম ঘোষণা এবং তাদের প্রচারণা ও ষড়যন্ত্রমূলক সকল অপতৎপরতা বন্ধ করতে হবে।
7. মসজিদের নগর ঢাকাকে মূর্তির নগরে রুপান্তর এবং দেশব্যপী রাস্তার মোড়ে মোড়ে ও কলেজ-ভার্সিটিতে ভাস্কর্ষের নামে মূর্তি বন্ধ করতে হবে।
8. জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকারমসহ দেশের সকল মসজিদে মুসল্লিদের নির্বিঘ্নে নামাজ আদায়ে বাধাবিপত্তি ও প্রতিবন্ধকতা অপসারণ এবং ওয়াজ- নসিহত ও ধর্মীয় কার্যকালাপে বাধাদান বন্ধ করতে হবে।
9. রেডিও-টেলিভিশনসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে দাড়ি-টুপি ও ইসলামি কৃষ্টি-কালচার নিয়ে হাসিঠাট্রা এবং নাটক-সিনেমায় তেতিবাচক চরিত্রে ধর্মীয় পোশাক পড়িয়ে অভিনয়ের মাধ্যমে তরুণ প্রজন্মের মনে ইসলামের প্রতি বিদ্বেষমূলক মনোভাব সৃষ্টির অপপ্রয়াস বন্ধ করতে হবে।
10. পার্বতথ্য চট্রগ্রামসহ দেশব্যপী ইসলামবিরোধী কর্মকান্ডে জড়িত এনজিও এবং খ্রিষ্টান মিশনারিগুলোর ধর্মান্তকরণসহ সকল অপতৎপরতা বন্ধ করতে হবে।
11. রাসূল প্রেমিক প্রতিবাদী আলেম-ওলামা, মাদ্রাসার ছাত্র, রাসুর প্রেমিক জনতার ওপর হামলা, দমন-পীড়ন, নির্বিচার গুলিবর্ষণ এবং গণহত্যা বন্ধ করতে হবে।
12. সারা দেশের কাওমি মাদ্রাসার ছাত্র-শিক্ষক, ওলামা-মাশায়েখ ও মসজিদের ইমাম-খতিবকে হমকি-ধমকি, ভয়ভীতি দানসহ তাদের বিরুদ্ধে সকল ষড়ষন্ত্র বন্ধ করতে হবে।
13. অবিলম্বে গ্রেপ্তারকৃত সকল আলেম-ওলামা, মাদ্রাসার ছাত্র ও রাসূর প্রেমিক জনতাকে মুক্তিদান, দায়ের করা সকল মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার এবং আহত ও নিহত ব্যক্তিদের ক্ষতিপূরণসহ দুস্কৃতকারীদের বিচারের আওতায় এনে কঠোর শাস্তি প্রদান করতে হবে।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন