বিভিন্ন আকৃতির জমি পরিমাপ করার সুত্র ও পদ্ধতি জানুন

আপনার জমি আপনি নিজেই নির্ভুলভাবে পরিমাপ করার জন্য আজকের এই ইনফোটির সাহায্য নিতে পারেন। অনেক প্রয়োজনের সময় সার্ভেয়ার বা আমিন পাওয়া কঠিন হয়ে যায়। তাছাড়া জমি পরিমাপ করা কঠিন কিছু নয়। আপনার যদি বিভিন্ন আকৃতির জমি পরিমাপ করার সুত্র ও পদ্ধতি জানা থাকে তাহলে, নিজের জমি ঝটপট মেপে নিতে পারেন।

সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে, জমি মাপার পদ্ধতি যদি আপনার জানা থাকে তাহলে ক্ষতি কী? বরং আপনিও অনেককে সহায্য করতে পারবেন। আপনার সামনে কেউ ভুল পরিমাপ করলে ধরিয়ে দিতে পারবেন। সার্ভেয়ার বা আমিন যদি ছয় নয় করে আর আপনার যদি জমি মাপার সুত্র বা পদ্ধতি জানা না থাকে তাহলে বুঝাতেই পারবেন না জমির পরিমাপ টা সঠিক হল না ভুল হল।

যে কোন আকৃতির জমি পরিমাপের সুত্র ও পদ্ধতি

জমি পরিমাপের পদ্ধতি

আমাদের দেশে গান্টার শিকল বা চেইন দিয়ে জমি পরিমাপ করার পদ্ধতিটি খুবই জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। ইংরেজ বিজ্ঞানী গান্টার জমি মাপার সহজকরণ করার জন্য এই চেইন বা শিকল আবিস্কার করেন। ফলে তার নাম অনুসারে জমি মাপার এই পদ্ধতিকে গান্টার শিকল পদ্ধতি বলা হয়।

আপনার গ্রামের কারো বাড়িতে যদি এই শিকল বা চেইন থাকে তাহলে সেটি নিয়ে একজন সহযোগীর দ্বারা খুব সহজেই জমি পরিমাপ করতে পারবেন নিখুত ভাবে।

গান্টার শিকল না পেলেও সমস্যা নেই। সাধারণ টেপ বা ফিতা দিয়ে নিখুতভাবে জমি পরিমাপ করতে পারবেন। এমনকি হাতের মাপ দিয়েও জমি পরিমাপ করতে পারেন। তবে সবার হাতে মাপ সমান না হওয়ার কারণে সঠিক পরিমাপ পাবেন না, তবে জমির পরিমাণ সমন্ধে একটা ধারণা পাবেন।

গান্টার শিকলের দৈর্ঘ্য ২২ গজ বা ৬৬ ফুট। এটি ১০০ টি লিংকে বিভক্ত রফেছে। প্রতিটি লিংকের দৈর্ঘ্য হচ্ছে ৭.৯২ ইঞ্চি। এর ১০০০ বর্গলিংকে এক শতাংশ হিসাব ধরে জমি পরিমাপ করার পদ্ধতিটি অনেক সহজ।

ফিতা বা টেপ দিয়ে জমি পরিমাপ করতে ফুট হিসাবে ধরে পরিমাপ করতে পারেন। ৪৩৫.৬ বর্গফুটকে এক শতাংশ হিসাব ধরে নিখুত ভাবে জমি পরিমাপ করতে পারেন।

জমি পরিমাপ করার বিভিন্ন পদ্ধতি ও এককগুলোর তুলনা ভাল করে জানতে আমাদের সাইটের “জমি পরিমাপ করার নিয়ম: বিভিন্ন এককের তুলনা ও ব্যবহার” ইনফোটি দেখুন। জমি পরিমাপের বিভিন্ন একক ও এদের মধ্যে তুলনা জানা থাকলে যে কোন পদ্ধতিতে সঠিকভাবে জমি পরিমাপ করতে পারবেন।

জমি মাপার ক্ষেত্রে যে পদ্ধতি প্রয়োগ করুন না কেন আপনি যদি ভূমির ক্ষেত্রফল সঠিকভাবে বের করতে না পারেন তাহলে জমির পরিমাপও সঠিক হবে না।

তাই প্রথমেই আপনাকে জমির ক্ষেত্রফল সঠিকভাবে বের করা নিয়ম জানতে হবে। এই ইনফোটিতে বিভিন্ন আকৃতির জমির ক্ষেত্রফল কিভাবে বের করবেন তার সঠিক নিয়ম আলোচনা করা হয়েছে।

কেননা জমির ক্ষেত্রফল বের করে বিভিন্ন এককের সাথে তুলনা করে জমির সঠিক পরিমাপ সহজে বের করা যায়।

আরো জানুন:





বিভিন্ন আকৃতির জমি পরিমাপের নিয়ম

সাধারণত জমিগুলো বর্গাকার বা আয়াতকার হয়ে থাকলে খুব সহজেই ক্ষেত্রফল বের করা যায়। যেমন: আয়াতকার বা বর্গাকার জমির ক্ষেত্রফল = দৈর্ঘ x প্রস্থ । কোন জমির দৈর্ঘ= ৫০০ বর্গলিংক এবং প্রস্থ= ১০০ বর্গলিংক হলে ক্ষেত্রফল = ৫০০ x ১০০ = ৫০০০০ বর্গলিংক।

আমরা জানি, ১০০০ বর্গলিংক এ জমির পরিমান হয় এক শতাংশ হয়, তাহলে ৫০০০০ বর্গলিংক এ কত শতাংশ জমি হবে।

= ৫০০০০ বর্গলিংককে ১০০০ দিয়ে ভাগ করলে শতাংশ পাওয়া যাবে। সুতরাং এখানে জমির পরিমান হচ্ছে ৫০ শতাংশ। এভাবে ফিতা দিয়ে মাপলে ফুট হিসাবে বর্গক্ষেত্র বের করতে পারেন।

জমির আয়াতক্ষেত্র বা বর্গক্ষেত্র নিখুত না হলে অনেকে দুই দৈর্ঘের এবং দুই প্রস্থের গড় বের করে ক্ষেত্রফল বের করে থাকেন। এভাবে মূলত সঠিক হিসাব বের হয় না। তবে সঠিকের কাছাকাছি হিসাব বের হয়ে থাকে।

দৈর্ঘ ও প্রস্থের গড় বের করার উদাহরণ:

মনে করুন,
 নিচের চিত্রের মত একটি জমি রয়েছে। যার দৈর্ঘ হচ্ছে এক পাশে ৩২০ বর্গলিংক, অপর পাশে ২২০ বর্গলিংক এবং প্রস্থ হচ্ছে এক পাশে ১৫০ বর্গলিংক, অপর পাশে ১০০ বর্গলিংক। 

জমির ক্ষেত্রফল গড় বের করার নিয়ম
জমির দৈর্ঘ ও প্রস্থ অসম হওয়ার কারণে গড় বের করে জমির হিসাব বের করে থাকেন এভাবে। দৈর্ঘ= (৩২০+২২০) ÷ ২= ২৭০ বর্গলিংক এবং প্রস্থ = (১০০+১৫০) ÷ ২ = ১২৫ বর্গলিংক।

জমির ক্ষেত্রফল = দৈর্ঘ * প্রস্থ = ২৭০*১২৫ = ৩৩৭৫০ বর্গলিংক। এটিকে ১০০০ দিয়ে ভাগ করলে শতাংশ পাওয়া যাবে।

প্রকৃতপক্ষে জমির আইল সমান থাকে না। তাই এভাবে জমির হিসাব সঠিক বের হয় না। সঠিক হিসাব বের করার জন্য জ্যামিতিক সূত্র প্রয়োগ করতে হবে। নিচে বিভিন্ন আকৃতির জমি পরিমাপের জ্যামিতিক সূত্র আলোচনা করা হলো।

বিভিন্ন আকৃতির জমি পরিমাপের সূত্র

আপনার যদি জ্যামিতিক সুত্র জানা থাকে তাহলে যে কোন আকৃতির জমির পরিমাপ খুব সহজেই সঠিকভাবে বের করতে পারবেন।

জ্যামিতিক সূত্র জানা না থাকলেও সমস্যা নাই। এখানে কয়েকটি সূত্র উল্লেখ করা হয়েছে। ভাল করে খেয়াল করলে সহজেই যে কোন আকৃতির জমি পরিমাপ করা আপনার জন্য কোন ব্যপারই না।

আয়াতকার বা বর্গাকার জমির ক্ষেত্রফল বের করার সূত্র:

আয়াতকার বা বর্গাকার জমির ক্ষেত্রফল বের করার সূত্র হচ্ছে, ক্ষেত্রফল= দৈর্ঘ*প্রস্থ

একটা উদাহরণ: মনে করি আপনি যে জমিটা পরিমাপ করবেন সেটি নিচের চিত্রের মত আয়াতকার।

আয়াতকার জমি পরিমাপের সুত্র

সূত্রানুযায়ী জমিটির ক্ষেত্রফর = ২২০*১২০ = ২৬৪০০ বর্গফুট।

আমরা জানি,
                    এক শতাংশ জমির ক্ষেত্রফল = ৪৩৫.৬ বর্গফুট।

                    সুতরাং ২৬৪০০ বর্গফুট জমির পরিমাণ = ২৬৪০০/৪৩৫.৬ = ৬০.৬ শতাংশ

পঞ্চভুজ আকৃতির জমি পরিমাপের সূত্র:

নিচের চিত্র এর মত পঞ্চভূজ জমি পরিমাপ করা বেশ ঝামেলার কাজ। জ্যামিতিক জ্ঞান ছাড়া এ রকম জমির সঠিক পরিমাপ করা সম্ভব নয়।

কিভাবে এরকম জমির ক্ষেত্রফল সঠিকভাবে রেব করবেন তা নিচে দেওয়া হলো।

পঞ্চভূজ জমি পরিমাপ করার সূত্র

আপনার পরিমাপ করার জমিটি যদি উপরের চিত্রের মত পঞ্চভূজ হয় তাহলে প্রথমে খাতায় পুরো জ্যামিতিটিকে আঁকুন। এরপর ডট ডট দিয়ে তিনটি ত্রিভুজ এঁকে ভাগ করুন।

মনে করি, এখানে ত্রিভুজ তিনটি হচ্ছে- ABD, BCD এবং AED। প্রতিটি ত্রিভুজের বাহুর দৈর্ঘ উপরের ছবিতে দেওয়া আছে।

এখন আমরা নিচের সূত্র ব্যবহার করে প্রতিটি ত্রিভুজের ক্ষেত্রফল আলাদা আলাদা বের করবো। ত্রিভুজের ক্ষেত্রফল বের করার জন্য প্রথমেই আপনাকে ত্রিভূজের পরিসীমার অর্ধেক বের করতে হবে। ত্রিভূজের অর্ধেক পরিসীমা নির্ণয়ের সূত্র হচ্ছে- তিনটি বাহুর যোগফল ÷ ২।

ত্রিভুজের পরিসীমার অর্ধেক দিয়ে এর ক্ষেত্রফর বের করা সূত্র: 

মনে করি, ABD ত্রিভূজের তিনটি বাহু a, b, ও c এবং পরিসীমার অর্ধেক s দিয়ে প্রকাশ করলে ABD ত্রিভুজের ক্ষেত্রফল = sqrt {s (s-a) (s-b) (s-c)} অর্থাৎ দ্বিতীয় বন্ধনীর ভেতরের মানকে বর্গমূল করলেই ত্রিভুজের ক্ষেত্রফল বের হবে।

উপরের চিত্র অনুযায়ী এখানে সূত্র প্রয়োগ করা হলো,

সূত্রানুযায়ী ত্রিভুজ ABD এর পরিসীমার অর্ধেক S= (a+b+c) ÷ ২= (৩+৪+৫) ÷ ২= ৬

 ত্রিভূজটির ক্ষেত্রফল = sqrt {s (s-a) (s-b) (s-c)} = sqrt {৬ (৬-৩) (৬-৪) (৬-৫)} = ৬

একই নিয়মে বাকি দুটি ত্রিভুজের ক্ষেত্রফল বের করলে BCD এর ক্ষেত্রফল = ৪.৪৭ এবং AED এর ক্ষেত্রফল = ৩.৮ হবে।

এখন ত্রিভূজ তিনটির ক্ষেত্রফল যোগ করলে মোট জমির ক্ষেত্রফল বের হবে। এখানে মোট ক্ষেত্রফল = ৬+৪.৪৭+৩.৮ = ১৪.২৭

জমির ক্ষেত্রফল বের করতে আপনার সুবিধামতো যে কোন একক ব্যবহার করতে পারেন। যেমন- লিংক, হাত, ফুট, গজ বা মিটার যে কোনটি ব্যবহার করে জমির ক্ষেত্রফল বের করে বিভিন্ন এককের সাথে তুলনা করে বিভিন্ন পরিমাপে সঠিক হিসাব পাবেন।

উদাহরণস্বরুপ: ১০০০ বর্গলিংক = ১ শতাংশ, ৪৩৫.৬ বর্গফুট = ১ শতাংশ ইত্যাদি।

অসম আকৃতির জমি পরিমাপের সূত্র:

আপনি যে জমি পরিমাপ করতে চান সেটি যদি অসম আকৃতির হয় তাহলে আলাদা সূত্র ব্যবহার করে সঠিক ক্ষেত্রফল বের করতে হবে।

আপনার বোঝার সুবিধার্থে নিচের চিত্রের মত জমি জ্যামিতি তৈরি করে আলোচনা করা হলো। মনে করুন আপনি নিচের মত একটি জমি পরিমাপ করতেছেন।

অসম আকৃতির জমি পরিমাপের সূত্র

পরিমাপের জমিটি উপরের চিত্রের ন্যায় হলে জমিটিকে সমান দূরত্বে কয়েকটি ভাগে ভাগ করে নিতে হবে। সর্বপ্রথম জমিটির লম্বালম্বি দুই শীর্ষের দূরত্ব বের করে নিতে হবে।

এরপর জমিটিকে সমান কয় ভাগে ভাগ করতে চান তা দিয়ে ভাগ করলে প্রত্যেকটি ভাগের সমান দূরত্ব পেয়ে যাবেন।

উপরের চিত্রে জমিটির দুই শীর্ষ হচ্ছে AB মনে করি এর দৈর্ঘ = ৬০ ফুট এবং এটিকে ৬ ভাগে বিভক্ত করি। প্রত্যেকটি ভাগের দৈর্ঘ = ১০ ফুট অর্থাৎ AC=CD=DE=EF=FG=GB সমান ভাগে বিভক্ত।

জমিটির প্রস্থ বিভক্তকারী প্রতিটি রেখার দৈর্ঘ মনে করি, C= ১৫ ফুট, D= ১০ ফুট, E= ১৫ ফুট, F= ২৫ ফুট, G= ২০ ফুট।

বিভক্তকারী রেখাগুলোর মোট দৈর্ঘ = C+D+E+F+G = ১৫+১০+১৫+২৫+২০ = ৮৫ ফুট।

মোট ক্ষেত্রফল = বিভক্তকারী রেখাগুলোর মধ্যবর্তী দূরত্ব* বিভক্তকারী রেখাগুলোর মোট দৈর্ঘ = ১০ ফুট* ৮৫ ফুট = ৮৫০ বর্গফুট = ৮৫০ ÷ ৪৩৫.৬ =১.৯৫ বা প্রায় দুই শতাংশ।

শেষকথা:

আমরা আশাকরি জমি পরিমাপ করার ক্ষেত্রে এই ইনফোটি আপনার কাজে লাগবে। আপনার কাছে ইনফোটি প্রয়োজনীয় মনে হলে শেয়ার করে আপনার ওয়ালে রেখে দিতে পারেন। ফলে প্রয়োজনের সময় সহজেই আপনার ওয়াল থেকে খুজে পাবেন।

ইনফোটি সম্পর্কে আপনার মতামত/পরামর্শ কমেন্ট করে আমাদের জানতে পারেন। এছাড়াও জমির পরিমাপ বুঝতে কোন সমস্যা হলে কমেন্ট করে জানাতে পারেন। আপনাদের যে কোন কমেন্ট আমরা গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করে থাকি।


Home BD info এর অন্যান্য ইনফো:




বিভিন্ন আকৃতির জমি পরিমাপ করার সুত্র ও পদ্ধতি জানুন বিভিন্ন আকৃতির জমি পরিমাপ করার সুত্র ও পদ্ধতি জানুন Reviewed by Home BD info on এপ্রিল ১৩, ২০২২ Rating: 5

২টি মন্তব্য:

  1. উত্তরগুলি
    1. আপনি এই ক্ষেত্রে অসম আকৃতির জমি পরিমাপের সূত্র প্রয়োগ করতে পারেন। যে কোন আকৃতির জমিতে এই সূত্র প্রয়োগ করে পরিমাপ সহজেই বের করা যায়।

      মুছুন

Blogger দ্বারা পরিচালিত.