মুরগির খামার দেওয়ার আগে যে বিষয়গুলো জানা জরুরী (মুরগি ব্যাবসার গুরুত্বপূর্ণ তথ্য)

0
সাম্প্রতিক সময়ে দেশে মুরগির ব্যাবসা অনেক জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। অনেকেই অল্প পুঁজি দিয়ে মুরগির ব্যবসা শুরু করে লাভবান হচ্ছেন। তবে মুরগির ব্যবসা শুরু করার আগে ব্যবসা সংশ্লিষ্ট অনেক বিষয় আপনাকে ভাল করে জেনে নিতে হবে। কেননা মুরগির ব্যবসায় যেমন প্রচুর লাভ করা যায় তেমনি ফকির হতে সময় লাগবে না। এ ব্যবসায় সবচেয়ে বড় ঝুকি হচ্ছে, মুরগির রোগ বালাই। এজন্য মুরগির রোগ কিভাবে প্রতিরোধ করতে হবে তা ভাল করে জেনে নিতে হবে ব্যবসা শুরু করার আগেই। এ বিষয়ে আমাদের সাইটের “মুরগির রোগ প্রতিরোধে কোন টিকা কিভাবে দিবেন” ইনফোটি আপনাকে সাহায্য করতে পারে। আজকের ইনফোতে আলোচনা করা হবে কিভাবে খামার গড়ে তুলবেন বা মুরগির খামার দেওয়ার আগে যে বিষয়গুলো জানা জরুরী (মুরগির ব্যাবসার আগে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য)।

গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো হচ্ছে, উন্নত জাতের মুরগি নির্বাচন করা, মুরগির বাসস্থান তৈরি করা, ব্যবসার ধরণ নির্বাচন করা, পরিবহন ব্যবস্থা বিবেচনা করা এবং মুরগির সংখ্যা নির্বাচন করা ইত্যাদি।

মুরগির খামার দেওয়ার আগে যে বিষয়গুলো জানা জরুরী (মুরগির ব্যাবসার আগে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য)

ব্যবসা ছাড়াও পারিবারিকভাবে মুরগি পালন করে পরিবারের আয় বাড়াতে পারেন। এতে পরিবারের অল্প বয়স্ক ছেলে মেয়ে, পরিবারের মহিলারা এমনকি বুড়ো বুড়িরাও অবসরে নিজেকে কিছু কাজে নিয়েজিত রাখতে পারেন।

মুরগি পালনের দুটি দিক 

আমাদের গ্রামের পরিবার গুলোতে প্রায় সবাই মুরগি পালন করে থাকে। কিন্তু মুরগি পালনের আধুনিক কলা-কৌশল না জানার কারণে বেশি লাভবান করতে পারে না। একটু পরিকল্পনা করে মুরগি পালন করলে সংসারের অনেক বারতি আয় করা যায়।

মুরগি পালন করার  আগে আপনাকে দুটি দিক লক্ষ রেখে শুরু করতে হবে। ছোট পরিসরে বা পারিবারিক মুরগি পালন এবং বড় পরিসরে কিংবা ব্যবসাভিত্তিক মুরগি পালন।

খামার স্থাপনের আগে পরিবহন ব্যবস্থা, পানি ও শ্রমের সহজ লভ্যতা এবং চার পাশের সামাজিক অবস্থা বিবেচনা করে আপনাকে পরিকল্পনা করতে হবে।

ছোট পরিসরে কিংবা পারিবারিক মুরগি পালন

পারিবারিক মুরগি পালন করার ক্ষেত্রে তেমন কিছু বিবেচনা না নিলেও চলে। কেননা ডিমের চাহিদা ও মাংসের চাহিদা মেটানোর পর পরিবারের আয় বাড়ানোর জন্য উন্নত জাতের মুরগি বাচ্ছা ক্রয় করে পালন করা যায় সহজেই।

মোরগের সংসার করতে আপনাকে কিছু কাজ করতে হব। যেমন-

থাকার ঘর: মুরগি পালন করার ক্ষেত্রে প্রথমেই আপনাকে ঘর ঠিক করতে হবে। ঘরের আয়তন আপনার পছন্দমত নিয়ে ভেতরে ডিম পাড়ার খাঁচি, খাবার পাত্র ও পানির পাত্র রাখতে হবে। এছাড়াও খেয়াল রাখতে হবে-

** ঘর সম সময় শুকনো ও পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন থাকে সেই ব্যবস্থা করতে হবে।

** খোলামেলা জায়গায় ঘর তৈরি করতে হবে।

** ঘরের মেঝে তিন ইঞ্চি পুরু হয় এমন পরিমান তুস, কাঠের গুড়া বা বালির সাথে গুড়া চূর্ণ মিশিয়ে সমান ভাবে বিছিয়ে দিতে হবে।

** মেঝেতে কাঠের গুড়া বা তুস ৭ দিন পর পর ওলট পালট করে দিবেন। স্যাঁতস্যাতে হলে কিংবা দলা দলা হলে পরিবর্তন করতে হবে। ঘরে আটকে না রেখে বাইরেও মুরগি পালন করতে পারেন। এতে মুরগির খাদ্য হিসাবে মুরগি ঘাস, লতা-পাতা কিংবা পোক মাকড় খেতে পারবে।

মুরগির খামার বা ব্যবসাভিত্তিক মুরগি পালন

ব্যবসাভিত্তিক মুরগির খামার দিতে চাইলে অবশ্যই আপনাকে সবকিছু বিবেচনা করে পরিকল্পনা করতে হবে। তা না হলে ব্যবসায় লোকশান গুনতে হবে।

যেহেতু আপনি ব্যবসাভিত্তিক খামার স্থাপন করতে আগ্রহী, তাই যাতে বেশি লাভ হয় বা অনেক মুনাফা অর্জন করতে পারেন সেই দিক মাথায় রেখে যথাযথ পরিকল্পনা করুন।

সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে, লাভজনক খামার গড়ে তুলতে চাইলে আপনাকে সকল বিষয় ভালভাবে জেনে ব্যবসায় নামতে হবে।

যেমন- ব্যবসার ধরণ, রক্ষণা-বেক্ষণ ও পরিচর্যা, পরিবহন ব্যবস্থা ও শ্রমিকের সহজলভ্যতা ইত্যাদি।

বানিজ্যিক মুরগির খামারের প্রকারভেদ

ব্যবসাভিত্তিক খামার দিতে চাইলে ব্যবসার ধরণ জানা জরুরী। কেননা আপনি কি ধরণের মুরগির খামার দিবেন সেটাই যদি ঠিক করতে না পারেন তাহলে লাভের চেয়ে লোকশান হবে বেশি।

ব্যবসাভিত্তিক মুরগির খামার মূলত তিন ধরণের হতে পারে। যেমন-

১। মুরগির ডিম উৎপাদনের ব্যবসা

২। ব্রয়লার বা মুরগির মাংস উৎপাদনের ব্যবসা

৩। মুরগির ডিম ও বাচ্ছা উৎপাদনের ব্যবসা

নিচে এই তিন ধরণের মুরগির খামার নিয়ে আলোচনা করা হলো।

মুরগির ডিম উৎপাদনের জন্য খামার

দিন দিন মুরগির ডিমের চাহিদা যেভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে সেই তুলনা এখনও ডিম উৎপাদনের খামার যথেষ্ট নয়। তাই আপনার জন্য সময়ে সাথে এই ব্যবসা লাভজন হতে পারে। এ ব্যবসায় যত বেশি ডিম উৎপাদন করতে পারবেন তত বেশি লাভ করা সম্ভব। এ কারণেই ব্যবসা শুরু করতে হবে উন্নত জাতের মুরগি দিয়ে।

ভাল জাতের মুরগি থেকে বছরে ২০০-৩০০ টি ডিম পাওয়া যায়। বাচ্চা ক্রয় করার সময় পরুষ বাচ্চা বাচাই করে ক্রয় করতে হবে। কেননা পরুষ বাচ্চা ক্রয় করলে অনর্থক ব্যয় বেরে যাবে। তাছাড়া ডিম উৎপাদনের জন্য পরুষ বাচ্ছা ক্রয় করা এক প্রকার বোকামি।

আপনার খামারের জন্য যতগুলো বাচ্চা প্রয়োজন সেগুলো দফায় দফায় ক্রয় না করে একসাথে ক্রয় করা বুদ্ধিমানের কাজ। আর ডিম দেওয়া শুরু হলে মুরগির বয়স যখন ১৮ মাস পূর্ণ হবে তখন সবগুলোকে বিক্রি করে দিতে হবে।

এর বেশি বয়সের মুরগি খামারে রাখলে দিন দিন ডিম উৎপাদন কমে যাবে এবং আপনার লোকশান হতে শুরু করবে। তাই এই বিষয়ে খেয়াল রাখা খামার মালিকদের একটি জরুরী বিষয়।

আপনার খামারের মুরগির বয়স যখন ১২ মাস হবে অর্থাৎ এক বছর পূর্ণ হবে তখন সমসংখ্যক এক দিনের বাচ্চা ক্রয় করতে হবে। এতে খামারের ভারসাম্য বজায় থাকবে।

 

ব্রয়লার বা মাংস উৎপাদনের জন্য মুরগির খামার

মাংস উৎপাদনের জন্য মুরগি পালন প্রতিনিযত বেড়েই চলছে। মুরগির মাংসের চাহিদাও অনেক বেড়ে গেছে। আর মাংস উৎপাদনের জন্য ব্রয়লার সবচেয়ে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।

 যদি এই জাতের মুরগি না থাকতো তাহলে দেশি মুরগির দাম আরো অনেক বেড়ে যেত। ফলে মুরগির মাংস খাওয়া নিম্ন আয়ের মানুষদের পক্ষে অসম্ভব হয়ে যেত।

ব্রয়লার মুরগির বয়স ৬ সপ্তাহ হলেই বিক্রি করা যায়। তবে মুরগির বয়স ৮ সপ্তাহের বেশি করে বিক্রি করলে লাভের চেয়ে লোকশান বেশি হবে। কারণ ব্রয়লারের প্রচুর খাদ্য লাগে। তাই ৮ সপ্তাহের মধ্যে বিক্রি করে দিতে পারলে বেশি লাভবান হবেন।

অনেক খামারি নিজ থেকে দেশিয় উপায়ে ব্রয়লার মুরগির খাবার তৈরি করে থাকেন। তুলনামূলক বেশি খাবারের যোগান দিতে এবং মুনাফা বেশি ধরতে তারা এতে অর্থ সাশ্রয় করেন।


ডিম ও বাচ্চা উৎপাদনের জন্য মুরগির খামার

বাচ্চা উৎপাদন ব্যবসায় আপনাকে একটু বেশি সতর্ক হতে হবে। কেননা ব্যবসার সুনাম অর্জন করতে না পারলে আপনার কাছ থেকে কেউ মুরগির বাচ্চা ক্রয় করবে না। আর একবার বদনাম হলে ব্যবসাও বদনামে পরিচিতি লাভ করবে।

বিশেষ করে মুরগির জাত ঠিক রাখতে হবে। উন্নত জাতের মুরগি বাচাই করে ব্যবসা শুরু করতে হবে। উন্নত জাতের মুরগি সংগ্রহ করতে প্রথমে আপনাকে কিছু বাড়তি খরচ করা লাগতে পারে।

খাঁটি জাতের মুরগি আপনাকে নিশ্চিত করতে হবে। দুই মাস পর পরুষ বাচ্চা আলাদা করতে হবে। এতে করে কিছু খরচ কমে যাবে। বাচ্চার বয়স ৬ মাস হলে স্ত্রী মুরগি ডিম দেওয়া শুরু করে।

 

উন্নত জাতের মুরগি ও খাঁটি জাতের মুরগি কোথায় থেকে সংগ্রহ করবেন?

নতুন ব্যবসায়ীদের মনে সবসময় একটা উৎকন্ঠা থাকে যে, খাঁটি জাতের মুরগি কোথায় থেকে কিভাবে ক্রয় করবে। বড় বিষয় হচ্ছে নতুন অবস্থায় কেহই জানে না যে মুরগির খাঁটি ও উন্নত জাত কোনটি। এজন্য আপনাকে মুরগির উন্নত জাতগুলো জেনে নিতে হবে।

ব্যবসা শুরু করার আগে আপনাকেউ ঠিক করতে হবে কোন জাতের মুরগি আপনার জন্য লাভজনক হবে।কেননা আপনার ব্যবসা অন্য কেউ করে দিবে না। আপনার ব্যবসা আপনাকেই করতে হবে।

উন্নত জাতের মুরগি ক্রয় করার জন্য জেলার সরকারি মুরগির খামার থেকে সংগ্রহ করতে হবে। প্রায় প্রতিটি জেলায় সরকারি মুরগির খামার রয়েছে। এসকল সরকারি খামার থেকে উন্নত ও খাঁটি জাতের মুরগি সংগ্রহ করতে পারবেন ।

এছাড়াও ঢাকার মণিপুর কেন্দ্রীয় মোরগ-মুরগির খামার অথবা কৃষি খামার সড়কের পশুসম্পদ অধিদপ্তরের বিক্রয় কেন্দ্রে থেকে উন্নত জাতের মুরগি সংগ্রহ করতে পারেন।

 

মুরগির সুষম খাদ্য ও খাওয়ার নিয়ম

অধিক ডিম পেতে প্রতিদিন মুরগিকে সুষম খাদ্য খাওয়াতে হবে। ডিম উৎপাদন ব্যবসায় অধিক লাভ করতে চাইলে মুরগির খাবারে যত্নশীল হোন।

ডেইলি প্রতিটি মুরগিকে ১১৫ গ্রাম সুষম খাদ্য, পর্যাপ্ত পরিমানে বিশুদ্ধ পানি এবং ২৫ গ্রাম সবুজ শাক-সবজি বা কচি ঘাস কেটে খাওয়াতে হবে।

ইচ্ছা করলে মুরগির সুষম খাদ্য নিজেই তৈরি করতে পারেন, এতে আপনার খরচ বাঁচবে। নিচে ১০০০ গ্রাম বা এক কেজি সুষম খাদ্য তৈরি করার প্রক্রিয়া দেওয়া হলো। এই অনুপাতে মুরগির খাদ্য নিজেই তৈরি করে নিতে পারেন আপনার প্রয়োজন মত।

মুরগির সুষম খাদ্যের উপাদন

** গম/ভুট্রা বা চালের খুদ ৪০০ গ্রাম

** গমের ভুসি ৫০ গ্রাম

** চালের কুঁড়া ২৫০ গ্রাম (তুষ ছাড়া)

** তিলের খৈল ১২০ গ্রাম

** শুটকি মাছের গুড়া ১০০ গ্রাম

** ঝিনুকের গুড়া ৭৫ গ্রাম

মোট ১০০০ গ্রাম বা ১ কেজি সুষম খাদ্যের উপাদান মিক্সার করলে মুরগির সুষম খাদ্য তৈরি হবে। এই ভাবে আপনার প্রয়োজন মত খাদ্য তৈরি করে নিতে পারেন।

মুরগির রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা ও পরিচর্যা

খামারে সফলতা পেতে হলে রোগ প্রতিরোধ ও পরিচর্যায় বিশেষ গুরুত্ব দিতে হবে। কেননা একবার খামারে রোগ বালাই আক্রমণ করলে আপনার পুঁজি খোয়া যেতে পারে। তাই আপনার মুরগিকে সুস্থ রাখতে নিয়মিত টিকা দিন। কোন টিকা কিভাবে দিবেন জানতে এখানে ক্লিক করুন।

পশুসম্পদ বিভাগ থেকে বিনামূল্যে রাণী ক্ষেত, কলেরা, বসন্ত বোগের প্রতিষেধক টিকা সংগ্রহ করতে পারবেন। আপনাকে সজাগ থাকতে হবে মুরগির রোগ বালাই সম্পর্কে।

মুরগি অসুস্থ হলে সাথে সাথে পশু চিকিৎসালয়ের পরামর্শ নিবেন। অসুস্থ মুরগিকে চিহ্নিত করে তৎক্ষণাত আলাদা করে রাখতে হবে এবং এর বিষ্ঠা ও লালা সতর্কতার সাথে মাটিতে পুতে রাখার ব্যবস্থা নিতে হবে।


শেষকথাঃ

আশা করি এই ইনফোটি আপনাকে মুরগির ব্যবসা করার ক্ষেত্রে সাহায্য করবে। উল্লেখিত বিষয় ছাড়াও আপনার জানার থাকলে কমেন্ট করে আমাদের জানাতে পারেন। আমরা যথাযথ ইনফো দিয়ে সহযোগিতা করার চেষ্ঠা করবো।

আপনার কাছে এটি প্রয়োজনীয় মনে হলে শেয়ার করে নিজের ওয়ালে রেখে দিন। এতে অন্যরাও এই বিষয়ে জানতে পারবে এবং আপনিও পরবর্তী যে কোন প্রয়োজনের সময় সহজেই খুজে পাবেন নিজের ওয়ালেই।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)

#buttons=(Accept !) #days=(20)

Our website uses cookies to enhance your experience. Learn More
Accept !