মুরগি পালনের দুটি দিক
ছোট পরিসরে কিংবা পারিবারিক মুরগি পালন
মুরগির খামার বা ব্যবসাভিত্তিক মুরগি পালন
বানিজ্যিক মুরগির খামারের প্রকারভেদ
মুরগির ডিম উৎপাদনের জন্য খামার
দিন
দিন মুরগির ডিমের চাহিদা যেভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে সেই তুলনা এখনও ডিম উৎপাদনের খামার যথেষ্ট
নয়। তাই আপনার জন্য সময়ে সাথে এই ব্যবসা লাভজন হতে পারে। এ ব্যবসায় যত বেশি ডিম উৎপাদন
করতে পারবেন তত বেশি লাভ করা সম্ভব। এ কারণেই ব্যবসা শুরু করতে হবে উন্নত জাতের মুরগি
দিয়ে।
ভাল
জাতের মুরগি থেকে বছরে ২০০-৩০০ টি ডিম পাওয়া যায়। বাচ্চা ক্রয় করার সময় পরুষ বাচ্চা
বাচাই করে ক্রয় করতে হবে। কেননা পরুষ বাচ্চা ক্রয় করলে অনর্থক ব্যয় বেরে যাবে। তাছাড়া
ডিম উৎপাদনের জন্য পরুষ বাচ্ছা ক্রয় করা এক প্রকার বোকামি।
আপনার
খামারের জন্য যতগুলো বাচ্চা প্রয়োজন সেগুলো দফায় দফায় ক্রয় না করে একসাথে ক্রয় করা
বুদ্ধিমানের কাজ। আর ডিম দেওয়া শুরু হলে মুরগির বয়স যখন ১৮ মাস পূর্ণ হবে তখন সবগুলোকে
বিক্রি করে দিতে হবে।
এর
বেশি বয়সের মুরগি খামারে রাখলে দিন দিন ডিম উৎপাদন কমে যাবে এবং আপনার লোকশান হতে শুরু
করবে। তাই এই বিষয়ে খেয়াল রাখা খামার মালিকদের একটি জরুরী বিষয়।
আপনার
খামারের মুরগির বয়স যখন ১২ মাস হবে অর্থাৎ এক বছর পূর্ণ হবে তখন সমসংখ্যক এক দিনের
বাচ্চা ক্রয় করতে হবে। এতে খামারের ভারসাম্য বজায় থাকবে।
ব্রয়লার বা মাংস উৎপাদনের জন্য মুরগির খামার
মাংস উৎপাদনের
জন্য মুরগি পালন প্রতিনিযত বেড়েই চলছে। মুরগির মাংসের চাহিদাও অনেক বেড়ে গেছে। আর মাংস
উৎপাদনের জন্য ব্রয়লার সবচেয়ে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।
যদি এই জাতের মুরগি না থাকতো তাহলে দেশি মুরগির দাম
আরো অনেক বেড়ে যেত। ফলে মুরগির মাংস খাওয়া নিম্ন আয়ের মানুষদের পক্ষে অসম্ভব হয়ে যেত।
ব্রয়লার মুরগির
বয়স ৬ সপ্তাহ হলেই বিক্রি করা যায়। তবে মুরগির বয়স ৮ সপ্তাহের বেশি করে বিক্রি করলে
লাভের চেয়ে লোকশান বেশি হবে। কারণ ব্রয়লারের প্রচুর খাদ্য লাগে। তাই ৮ সপ্তাহের মধ্যে
বিক্রি করে দিতে পারলে বেশি লাভবান হবেন।
অনেক খামারি
নিজ থেকে দেশিয় উপায়ে ব্রয়লার মুরগির খাবার তৈরি করে থাকেন। তুলনামূলক বেশি খাবারের
যোগান দিতে এবং মুনাফা বেশি ধরতে তারা এতে অর্থ সাশ্রয় করেন।
ডিম ও বাচ্চা উৎপাদনের জন্য মুরগির খামার
বাচ্চা উৎপাদন
ব্যবসায় আপনাকে একটু বেশি সতর্ক হতে হবে। কেননা ব্যবসার সুনাম অর্জন করতে না পারলে
আপনার কাছ থেকে কেউ মুরগির বাচ্চা ক্রয় করবে না। আর একবার বদনাম হলে ব্যবসাও বদনামে
পরিচিতি লাভ করবে।
বিশেষ করে
মুরগির জাত ঠিক রাখতে হবে। উন্নত জাতের মুরগি বাচাই করে ব্যবসা শুরু করতে হবে। উন্নত
জাতের মুরগি সংগ্রহ করতে প্রথমে আপনাকে কিছু বাড়তি খরচ করা লাগতে পারে।
খাঁটি জাতের
মুরগি আপনাকে নিশ্চিত করতে হবে। দুই মাস পর পরুষ বাচ্চা আলাদা করতে হবে। এতে করে কিছু
খরচ কমে যাবে। বাচ্চার বয়স ৬ মাস হলে স্ত্রী মুরগি ডিম দেওয়া শুরু করে।
উন্নত জাতের মুরগি ও খাঁটি জাতের মুরগি কোথায় থেকে সংগ্রহ করবেন?
নতুন ব্যবসায়ীদের
মনে সবসময় একটা উৎকন্ঠা থাকে যে, খাঁটি জাতের মুরগি কোথায় থেকে কিভাবে ক্রয় করবে। বড় বিষয়
হচ্ছে নতুন অবস্থায় কেহই জানে না যে মুরগির খাঁটি ও উন্নত জাত কোনটি। এজন্য আপনাকে
মুরগির উন্নত জাতগুলো জেনে নিতে হবে।
ব্যবসা শুরু
করার আগে আপনাকেউ ঠিক করতে হবে কোন জাতের মুরগি আপনার জন্য লাভজনক হবে।কেননা আপনার ব্যবসা
অন্য কেউ করে দিবে না। আপনার ব্যবসা আপনাকেই করতে হবে।
উন্নত জাতের
মুরগি ক্রয় করার জন্য জেলার সরকারি মুরগির খামার থেকে সংগ্রহ করতে হবে। প্রায় প্রতিটি
জেলায় সরকারি মুরগির খামার রয়েছে। এসকল সরকারি খামার থেকে উন্নত ও খাঁটি জাতের মুরগি
সংগ্রহ করতে পারবেন ।
এছাড়াও ঢাকার
মণিপুর কেন্দ্রীয় মোরগ-মুরগির খামার অথবা কৃষি খামার সড়কের পশুসম্পদ অধিদপ্তরের বিক্রয়
কেন্দ্রে থেকে উন্নত জাতের মুরগি সংগ্রহ করতে পারেন।
মুরগির সুষম খাদ্য ও খাওয়ার নিয়ম
অধিক ডিম
পেতে প্রতিদিন মুরগিকে সুষম খাদ্য খাওয়াতে হবে। ডিম উৎপাদন ব্যবসায় অধিক লাভ করতে চাইলে
মুরগির খাবারে যত্নশীল হোন।
ডেইলি প্রতিটি
মুরগিকে ১১৫ গ্রাম সুষম খাদ্য, পর্যাপ্ত পরিমানে বিশুদ্ধ পানি এবং ২৫ গ্রাম সবুজ শাক-সবজি
বা কচি ঘাস কেটে খাওয়াতে হবে।
ইচ্ছা করলে
মুরগির সুষম খাদ্য নিজেই তৈরি করতে পারেন, এতে আপনার খরচ বাঁচবে। নিচে ১০০০ গ্রাম বা
এক কেজি সুষম খাদ্য তৈরি করার প্রক্রিয়া দেওয়া হলো। এই অনুপাতে মুরগির খাদ্য নিজেই
তৈরি করে নিতে পারেন আপনার প্রয়োজন মত।
মুরগির সুষম খাদ্যের উপাদন
** গম/ভুট্রা
বা চালের খুদ ৪০০ গ্রাম
** গমের ভুসি
৫০ গ্রাম
** চালের
কুঁড়া ২৫০ গ্রাম (তুষ ছাড়া)
** তিলের
খৈল ১২০ গ্রাম
** শুটকি
মাছের গুড়া ১০০ গ্রাম
** ঝিনুকের
গুড়া ৭৫ গ্রাম
মোট ১০০০
গ্রাম বা ১ কেজি সুষম খাদ্যের উপাদান মিক্সার করলে মুরগির সুষম খাদ্য তৈরি হবে। এই ভাবে
আপনার প্রয়োজন মত খাদ্য তৈরি করে নিতে পারেন।
মুরগির রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা ও পরিচর্যা
খামারে সফলতা
পেতে হলে রোগ প্রতিরোধ ও পরিচর্যায় বিশেষ গুরুত্ব দিতে হবে। কেননা একবার খামারে রোগ
বালাই আক্রমণ করলে আপনার পুঁজি খোয়া যেতে পারে। তাই আপনার মুরগিকে সুস্থ রাখতে নিয়মিত
টিকা দিন। কোন টিকা কিভাবে দিবেন জানতে এখানে ক্লিক করুন।
পশুসম্পদ
বিভাগ থেকে বিনামূল্যে রাণী ক্ষেত, কলেরা, বসন্ত বোগের প্রতিষেধক টিকা সংগ্রহ করতে
পারবেন। আপনাকে সজাগ থাকতে হবে মুরগির রোগ বালাই সম্পর্কে।
মুরগি অসুস্থ হলে সাথে সাথে পশু চিকিৎসালয়ের পরামর্শ নিবেন। অসুস্থ মুরগিকে চিহ্নিত করে তৎক্ষণাত আলাদা করে রাখতে হবে এবং এর বিষ্ঠা ও লালা সতর্কতার সাথে মাটিতে পুতে রাখার ব্যবস্থা নিতে হবে।