বাংলাদেশ কৃষি নির্ভর হওয়ায় আমাদেরকে কৃষিকাজ ও কৃষি ব্যবসায় উন্নতি স্বাধন করতে হবে। গ্রাম-গঞ্জ এর বেশিভাগ মানুষের পেশা হচ্ছে কৃষি। তাই কৃষি যত উন্নত হবে আমাদের দেশও তত উন্নত লাভ করবে। এরই লক্ষে আমাদরে সাইটে কৃষি বিষয়ে বেশ কিছু প্রয়োজনীয় ইনফো শেয়ার করা উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। যাতে কৃষকরা এই সকল ইনফো কাজে লাগিয়ে উপকৃত হতে পারে। আজকের ইনফোতে মুরগির কত ধরণের টিকা কোন কোন সময় কিভাবে দিতে হয় সেই বিষয়ে আলোচনা করা হবে।
কৃষকভাইদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলতে চাই, অনলাইনে অনেক ধরণের তথ্য রয়েছে, অনেক পরামর্শও রয়েছে, অনেক সময় এগুলো দেখে আপনি বিভ্রান্তও হতে পারেন। তাই আমাদের পরামর্শ হচ্ছে বাংলাদেশ কৃষি বাতায়ন সরকারি ওয়েবসাইটে নিবন্ধ হয়ে আপনার সমস্যার কথা জানান অথবা ৩৩৩১ নাম্বারে কল দিয়ে পরামর্শ নিন।
আরো জানুন:
মুরগির ব্যবসা বা খামার দেওয়ার আগে যে বিষয় জানা জরুরী
ট্রেড লাইসেন্স কি? ব্যবসার জন্য কিভাবে ট্রেড লাইসেন্স করবেন?
বাণিজ্যিক উদ্দেশ্য মুরগি পালন
আমাদের দেশে বানিজ্যিকভাবে মুরগি পালন ব্যবসা বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে অনেক আগে থেকেই। অনেকেই নিজেকে মুরগি পালন ব্যবসায় নিয়োজিত করে লাভবান হয়েছেন । মুরগি পালন ব্যবসায় লাভবান হতে চাইলে মুরগির বিভিন্ন ধরণের রোগ সম্পর্কে ভাল জ্ঞান থাকা জরুরী।
বিভিন্ন রোগপ্রতিরোধের জন্য বিভিন্ন টিকা রয়েছে এগুলোর প্রয়োগ ও ব্যবহার জানলে মুরগি পালন ব্যবসায় আপনি সহজেই লাভবান হতে পারবেন। আপনি যদি ইতিমধ্যে এই ব্যবসা শুরু করে থাকেন তাহলে আপনার উপজেলা কৃষি অফিসারের সাথে যোগাযোগ করে প্রয়োজনীয় পরামর্শ নিতে ভুলবেন না।
আপনি আবার এটা ভাববেন না যে, ব্যবসা করবো আমি আর পরামর্শ নিবো কৃষি অফিসারের কাছ থেকে? না এই ধারণা কখনই করবেন না। আপনাকে সহযোগিতা করার জন্যই প্রতিটি উপজেলায় কৃষি অফিসার নিয়োগ দেওয়া হয়েছে সরকারের তরফ থেকে। তারা আপনাকে লাভবান হতে সাহায্য করবে। আপনার ক্ষেত, খামার, উৎপাদিত ফসলে বিভিন্ন ধরণের রোগ বালাই নির্ণয় ও প্রতিকারের পরামর্শ ও উপকরণ উপজেলা কৃষি প্রাণী সম্পদ অফিস থেকে পাবেন।
ছবি: পিক্সেল Quang Nguyen Vinh এর
আপনি যদি কৃষি বাতায়নে নিবন্ধিত কৃষক হয়ে থাকেন তাহলে ৩৩৩১ এ ফোন দিলে আপনার নিকস্থ কৃষি অফিসারের নিকট কল যাবে। নিবন্ধিত না হয়ে থাকলেও সমস্যা নাই । কৃষি মন্ত্রণালয়ের যে টিম রয়েছে তারা আপনাকে পরামর্শ দিবে। যদি নিকস্থ কৃষি অফিসারের প্রয়োজন হয়, তাহলে তারা কলটি ফরওয়ার্ড করে দিবে।
বাণিজ্যিকভাবে মুরগি পালন করলে ভ্যাকসিন কিংবা টিকার বিকল্প কোন ব্যবস্থা নেই। মুরগি পালনের স্থান স্বাস্থ্যকর, পরিচ্ছন্ন পরিবেশ এবং উন্নতমানের করলেও এমন কিছু রোগ আছে যেগুলোর আক্রান্ত হলে আপনি আগে থেকেই জানবেনই না। আর একবার আপনার খামারে এ রোগে আক্রান্ত হলে বা ছড়িয়ে পড়লে ফকির হওয়া ছাড়া আপনার কোন পথ থাকবে না।
পুপুলেশন ডেনসিটি বেশি হলে অর্থাৎ এক জায়গায় বেশি পরিমানে পশুপাখি এমনকি মানুষও থাকলে সেখানে রোগ বালাই বেশি হওয়ার আশঙ্কা থাকে। আর এ রকম পরিবেশে রোগ দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। মূলত একারণেই রোগের আক্রমণ ও ছড়িয়ে পড়া ঠেকাতে একসাথে পুরো পপুলেশনকে বা সমস্ত খামারেই বিভিন্ন রোগের টিকা নিয়মিতি দিয়ে নিরাপদ রাখতে হয়।
আজকের এই ইনফোটি আপনাকে এই বিষয়ে সাহায্য করার উদ্দেশ্যে শেয়ার করা হয়েছে। নিচে মুরগির বিভিন্ন টিকার বিবরণ দেওয়া হলো।
মুরগির বিভিন্ন ধরণের টিকা ও প্রয়োগ পদ্ধতি
লক্ষীনিয় বিষয়: এখানে CAV মানে chicken anemia virus বা মুরগির অ্যানিমিয়া রক্ত শূণ্যতা; রিও মানে Reo virus; এমজি (MG) মানে mycoplasma; জি মানে গাম্বুরো (Gumburo); এনডি (রানিক্ষেত) এবং আইবি (ব্রঙ্কাইটিস, bronchitis) হিসাবে মুরগির টিকাগুলো উপস্থাপন করা হলো।
লেয়ার মুরগি বাণিজ্যিক
দিন / সপ্তাহ |
টিকা |
দিন / সপ্তাহ |
টিকা |
১ম দিন |
মেরেক্স* (লাইভ ইঞ্জেকশন)) |
৩-৫ম দিন |
আই বি +এন ডি* |
৬-৮ তমদিন |
এন ডি + আই বি ডি(মৃত) |
১০-১২ দিন |
আই বি ডি* |
১৩তম দিন |
মেরেক্স (লাইভ) |
১৭-১৯তম দিন |
আই বি ডি* |
২৫-২৭তম দন |
এন ডি + আইবি* |
৪-৫ সপ্তাহ |
পক্স (বসন্ত) |
৪২-৪৫ তমদিন |
করাইজা(মৃত) |
৪৯-৫০দিন |
টাইফয়েড (লাইভ,কিল্ড) |
৫২-৫৫তম দিন |
কলেরা (মৃত) |
৬০-৬৫তম দিন |
আই বি + এন ডি * |
৭০-৭৫তম দিন |
পক্স |
৭৭-৮০তম দিন |
করাইজা(মৃত) |
৯০-৯৫তম দিন |
কলেরা (মৃত) |
১০০তম দিন |
টাইফয়েড |
১৫-১৬ সপ্তাহ |
আই বি +এন ডি +ই ডি এস(মৃত)* সাথে এন ডি লাইভ |
* মার্ক করা টিকাগুলো অবশ্যই দিতে হবে
বয়লারের মুরগির জন্য নির্ধারিত টিকা
দিন |
টিকা |
১-৫ দিন |
আই + এন ডি |
১০-১২দিন |
আই বি ডি |
১৭-২০দিন |
আই বি ডি |
বিঃ দ্রঃ ২০-২২ দিন বয়সেও এন ডি দেয়া যায়
সোনালির মুরগির জন্য নির্ধারিত টিকা
দিন / সপ্তাহ |
টিকা |
১-৫দিন |
আই বি + এন ডি |
১০-১২ দিন |
আই বি ডি |
১৭-১৯ দিন |
আই বি ডি |
৪-৫ সপ্তাহে |
পক্স |
২৫-৩০ দিন |
আই বি + এন ডি |
লেয়ার ব্রিডার মুরগির জন্য নির্ধারিত টিকা
দিন /সপ্তাহ |
টিকা |
যে স্থানে দিতে হবে (রুট) |
৩দিন |
কক্সি |
মুখে |
৭দিন |
আই বি +এন ডি |
চোখে |
১২ দিন |
আই বি ডি (লাই।) |
মুখে |
১২ দিন |
আ ইবিডি +এন ডি (মৃত) |
চামড়ার নিচে |
১৯-২০দিন |
আই বি ডি |
মুখে |
১৯-২০ দিন |
আই বি +এন ডি |
চোখে |
৬ সপ্তাহ |
পক্স |
পাখায় |
৬ সপ্তাহ |
সালমোনেলা |
চামড়ার নিচে |
৮ সপ্তাহ |
এন ডি (মৃত) |
চামড়ার নিচে |
৮ সপ্তাহ |
আই বি + এন ডি |
চোখে |
১০ সপ্তাহ |
এ ই+ পক্স |
পাখায় |
১০ সপ্তাহ |
করাইজা |
চামড়ার নিচে |
১৩ সপ্তাহ |
আই বি |
চোখে |
১৩ সপ্তাহ |
সালমোনেলা |
চামড়ার নিচে |
১৪ সপ্তাহ |
চিকেন এনিমিয়া |
বুকের মাংসে |
১৭ সপ্তাহ |
করাইজা |
চামড়ার নিচে |
১৭ সপ্তাহ |
এন ডি লাইভ |
চোখে |
১৭ সপ্তাহ |
আইবি+এনডি+ইডিএস+আইবিডি |
বুকের মাংসে |
ব্রয়লার ব্রিডারের জন্য নির্ধারিত টিকা
দিন /সপ্তাহ |
টিকা |
যে স্থানে দিতে হবে (রুট) |
৩দিন |
কক্সি |
মুখে |
৭ দিন |
আই বি + এন ডি |
চোখে |
৭ দিন |
রিও (লাইভ) |
চামড়ার নিচে |
১২ দিন |
জি+ এনডি |
চামড়ার নিচে |
১২ দিন |
আই বি ডি ২ |
চোখে |
১৯ দিন |
আই বিডি প্লাস |
মুখে |
১৯ দিন |
আই বি +এন ডি |
চোখে |
৬ সপ্তাহ |
পক্স |
পাখায় |
৬ সপ্তাহ |
সালমোনেলা |
চামড়ার নিচে |
৭সপ্তাহ |
রিও (লাইভ) |
চামড়ার নিচে |
৮ সপ্তাহ |
আই বি + এন ডি |
চোখে |
১০ সপ্তাহ |
এম জি |
চামড়ার নিচে |
১০ সপ্তাহ |
আই বি +এন ডি |
চোখে |
১১ সপ্যাহ |
করাইজা |
চামড়ার নিচে |
১২ সপ্তাহ |
রিও (মৃত) |
চামড়ার নিচে |
১২ সপ্তাহ |
আই বি |
চোখে |
১৪ সপ্তাহ |
CAV বা এনিমিয়া |
বুকের মাংসে |
১৭ সপ্তাহ |
করাইজা |
চামড়ার নিচে |
১৮ সপ্তাহ |
রিও +আইবি+এন ডি+জি |
বুকের মাংসে |
১৮ সপ্তাহ |
এম জি |
চামড়ার নিচে |
১৮ সপ্তাহ |
এন ডি (লাইভ) |
চোখে |
১৯ সপ্তাহ |
সালমোনেলা |
চামড়ার নিচে |
১৯সপ্তাহ |
ই ডি এস |
বুকের মাংসে |
৪০ সপ্তাহ |
রিও+আই বি+এন ডি +জি |
বুকের মাংসে |
খাবার পানিতে টিকা দেওয়ার নিয়ম
১০০০ লেয়ার মুরগির জন্য বয়সভেদে পানির পরিমান নিচে দেওয়া হলো
বয়স |
পানির পরিমান |
০-৪ সপ্তাহ |
১০-১৫ লিটার |
৫-১০ সপ্তাহ |
১৫-২৫ লিটার |
১০ সপ্তাহ। |
৫০-৫৫ লিটার |
১৭ সপ্তাহের অধিক |
৬০-৭০ লি |
পানিতে টিকা দেওয়ার সতর্কতাঃ
আবহাওয়ার প্রতি নজর রেখে পানির পরিমান কম বেশি করা যেতে পারে। টিকা যেদিন দিবেন তার আগের দিন ও টিকা দেওয়ার পরের দিন স্প্রে বা পানিতে ক্লোরিন দেয়া যাবে না। তাছাড়া খুব জরুরী প্রয়োজন না হলে পানিতে অ্যান্টিবায়টিক না দেওয়াই ভাল।
মুরগির খাবার পানিতে টিকা দেওয়ার পদ্ধতি
খাবার পানিতে টিকা দিতে হলে আপনাকে বেশ সতর্ক থাকতে হবে। টিকা দেওয়ার আগের দিন দের থেকে দুই ঘন্টায় কতটুকু পানি খায় খাবার দেওয়ার ৪৫ মিনিট পর হিসাব করে বের করতে হবে।
দুই ঘন্টায় যা খায় তার ৫% পানি বেশি দেওয়া যেতে পারে, দের ঘন্টা কম হলে সব মুরগি খেতে পারে না, আবার দুই ঘন্টার বেশি হলে টিকা মারা যেতে পারে।
একটু সতর্ক থেকে পানিতে টিকা দিতে হবে। টিকা দেওয়ার ১ ঘন্টা আগে পানি দেওয়া বন্ধ করতে হবে।
পানিতে টিকা মিশানোর নিয়ম
যেহেতু রোগ প্রতিরোধের জন্য মুরগিকি টিকা দেওয়া হয়। তাই আপনাকে যত্নসহকারে এই কাজটি করতে হবে। পানিতে টিকা মিশানোর ক্ষেত্রে প্রথমে হাত সাবান দিয়ে গ্লোভস পরে নিন।
এরপর পানির সাথে পাউডার অর্থাৎ ভ্যাকসিব্রুস্ট কিংবা ভেক সেফ বা এগ্রোমিল্ক বা স্কিম মিল্ক ২.৫ গ্রাম ১ লিটার পানিতে মেশাতে হবে। ৫-১০ লিটার স্টক সল্যুশন তৈরি করতে হবে এবং ২০ মিনিট রেখে দিতে হবে।
যাতে ক্রোরিন বা ভারি ধাতু অর্থাৎ হ্যাভি মেটাল নিষ্ক্রিয় হয়ে যায়। স্কিম মিল্ক মিশ্রিত ১-২ লিটার পরিমান স্টক সল্যুশনে ভ্যাকসিন ভায়ালের ক্যাপটা খুলে নিয়ে এই মিশানো পানিতে ভ্যাকসিন ভায়ালটি ডুবিয়ে এর মুখের রাবার খুলতে হবে।
লক্ষ রাখবেন যেন, টিকাটি ভালভাবে গলে যায। রাবারের কাটি দিয়ে আস্তে আস্তে মিক্স করুন এবং অবশিষ্ট পানি যোগ করে নিন। যতটুকু পানি প্রয়োজন তা একবারেই নিতে হবে পরে পানি যোগ করা যাবে না।
খামারের সব পাখি যাতে পানিটা সমানভাবে খেতে পারে তা নিশ্চিত করতে হবে। এই পানিতে (ভ্যাকসিন মিশানো পানি) যেন সূর্যের আলো না পড়ে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।
আই বি ডি টিকা মুখে আর রানিক্ষেত ও ব্রাংকাইটিস টিকা মুরগির চোখে দিলে ভালো কাজ করে।
মুরগিকে টিকা দেওয়ার সতর্কতা
মুরগিকে টিকা দেওয়ার ক্ষেত্রে কিছু সতর্কতা অবলম্বন করা জরুরী। যেমন- ঠান্ডা সময়ে অর্থাৎ সকালে কিংবা বিকারে যখন আবহাওয়া ঠান্ডা থাকে তখন টিকা দিতে হবে।
ডিম পাড়া মুরগি হলে কিল্ড (মৃত) টিকা বিকালে, আর লাইভ টিকা সকালে পানিতে দেওয়া যেতে পারে। যে ডাইলোয়েন্ট (যেমন: পানি) দেওয়া হয় সেটিও ফ্রিজে নরমারে রাখতে হবে।
গরমের সময় আপনার হাত গরম থাকতে পারে তােই টিকার বোতল বা হাত ভেজা কাপড় দিয়ে মুড়িয়ে নিয়ে ব্যবহার করতে পারেন। মনে রাখবেন, ১-২ ঘন্টার মধ্যে টিকা দেওয়া শেষ করতে হবে।
যেখানে টিকা দিবেন সেই জায়গায় পেপার বিছিয়ে নিতে পারেন। কেননা টিকা নিচে পড়লে যাতে বুঝা যায় এবং পরে তা পরিস্কার করা সহজ হয়ে যাবে।
টিকা দেওয়ার সময় তাড়াহুরা করা উচিৎ নয়। আস্তে আস্তে টিকা দেওয়া উচিৎ এবং কিছু সময় হাতে ধরে রেখে তারপর ছেড়ে দেওয়া উচিৎ।
মুরগির কিল্ড বা মৃত টিকা দেওয়ার নিয়ম
প্রথমে টিকা ফ্রিজ থেকে বের করে নরমাল বা হালকা গরম পানিতে রেখে দিন যাতে টিকার তাপমাত্রা ১৮-২০ ড্রিগ্রি সেলসিয়াস হয়।
ভ্যাকসিন গান গরম পানিতে ফুটিয়ে জীবাণুমুক্ত করে নিন। তবে স্যাভলন কিংবা এ জাতীয় কোন জীবাণুনাশক ব্যবহার করবেন না।
ডিমপাড়া মুরগিকে বিকালে টিকা দিতে হবে কেননা সকালে ডিম পাড়ে। টিকা যদি বাহিরের লোক দিয়ে দেওয়া হয় তাহলে কাপড় পরিবর্তন করা উচিৎ।
কিল্ড বা মৃত টিকা মুরগির বুকের বা পায়ের মাংসে কিংবা গলায় চামড়ার নিচে দেওয়া হয় যা শোষিত হতে ৩০-৪৫ দিন পর্যন্ত সময় লেগে যেতে পারে।
টিকা দেওয়া শেষ হলে স্থানটি ভাল করে পরিস্কার করুন এবং টিকার ভায়ালটি মাটিতে পুঁতে রাখুন।
মুরগির টিকা: ফাউল পক্স এর ব্যবহার
মুরগির পক্স (বসন্ত) রোগ প্রতিরোধ করতে এই টিকা ব্যবহার করা হয়। যে এলাকা গুলোতে পক্স কম হয় সে এলাকার খামার গুলোতে এই টিকা ১টি দিলেই চলে।
যে সব এলাকাগুলোতে ঝুকি অনেক বেশি অর্থাৎ রক্ত চোষক পোকামাকড় যেখানে বেশি দেখা যায় সেখানে ২ টি টিকা দেওয়া প্রয়োজন।
ডিম আসার কমপক্ষে ৪ সপ্তাহ আগে এই টিকা দেওয়া শেষ করতে হবে। সাধারণত মুরগির ৬ সপ্তাহ বয়সের আগে বেশি দুর্বল করা টিকা এবং ৬ সপ্তাহ পরে কম দুর্বল করা টিকা দিতে হয়।
টিকা দেওয়ার ৭-১০ দিন পর মুরগিকে পর্যবেক্ষণ করলে দেখা যাবে টিকা দেওয়ার জায়গা ফুলে গেছে অর্থাৎ টিকা কাজ করছে বুঝা যায়।
পক্স টিকার কর্মসূচি
প্রথম টিকা ৬ সপ্তাহ, প্রকৃতপক্ষে এই টিকা ৪ সপ্তাহে দেওয়া উচিৎ কেননা ৪ সপ্তাহ বয়সে মুরগির পক্স হতে পারে।
দ্বিতীয় টিকা দিতে হবে ১১-১২ সপ্তাহ বয়সে
পক্স রোগে মুরগি আক্রান্ত হলেও টিকা দেওয়া যায়, তবে বেশি আক্রান্ত হয়ে গেলে তখন আর টিকা দিলে লাভ হবে না।
মেরেক্স টিকার ব্যবহার
এই টিকা সাধারণত মুরগির চামড়ার নিচে ব্যবহার হয়ে থাকে। যেমন- এম ডি সি এফ এল ( ইলানকো), এইচ ভি টি (১২৬ এফ সি স্টেইন), সেরুটাইপ ৩ মুরগির চামড়ার নিচে প্রয়োগ করা হয়।
হ্যাচারীতে ০.২ এমএর ডোজ, অনেকে আবার ১৪ দিনের আগেই দ্বিতীয় টিকা দিয়ে দেয়। ১০০০ ডোজের জন্য ২০০ এমএর FDAH diluent মিশাতে হবে।
মুরগির ব্রাংকাইটিস টিকা ব্যবহার নিয়ম ও প্রয়োগ পদ্ধতি
১ম টিকা দেওয়ার সময় খেয়াল রাখতে হবে যাতে কম প্রতিক্রিয়া হয়।যেমন এইচ ১২০, ম্যাসাচুসেটস বা কানেক্টিকাট দিয়ে টিকা দেওয়া যেতে পারে। আমাদের দেশে এইছ ১২০ এবং এম ৪১ স্ট্রেইন বেশি ব্যবহৃত হয়ে থাকে।
প্রথম ও দ্বিতীয় টিকার মাঝে বিরতি দিতে হবে ২-৩ সপ্তাহ। আর বুস্টার টিকার মাঝ বিরতি দিতে হবে ৪-৬ সপ্তাহ। রানিক্ষেত ও ব্রংকাইটিস টিকা এক সাথে দেওয়া যাবে না।
তবে কম্বাইন্ড হলে দেওয়া যাবে। সর্বশেষ লাইভ এবং কিল্ড টিকার মাঝে বিরতি দিতে হবে ৪-৬ সপ্তাহ। ডিম পাড়ার কমপক্ষে ৪ সপ্তাহ আগে কিল্ড বা মৃত টিকা দেওয়া শেষ করতে হবে।
ম্যাসাচুসেটস সেরুটাইপ ক্রস প্রটেকশন করে। স্ট্রেইন মিউটেশনের লাইভ টিকা দেওয়ার পর অনেক সময় প্রতিক্রিয়া দেখা যায়। যেমন- গড় গড় শব্ধ, মাথা ঝাড়া দেওয়া, কনজাংটিবাইটিস এবং ই কলাই সংক্রমণ হতে পার।
ব্রংকাইটিস টিকার প্রথম কর্মসূচি
১ম টিকা দিতে হবে ১-২ সপ্তাহ বয়সে
২য় টিকা দিতে হবে ৪-৬ সপ্তাহ বয়সে
৩য় টিকা দিতে হবে ৮-১৪ সপ্তাহ বয়সে
৪র্থ টিকা দিতে হবে ১৫-১৮ সপ্তাহ বয়সে
এ টিকার দ্বিতীয় কর্মসূচি
মুরগির বয়স যখন ৪ সপ্তাহ তখন ১ম টিকা দিতে হবে
মুরগির বয়স যখন ৮-১০ সপ্তাহ তখন ২য় টিকা দিতে হবে
মুরগির বয়স যখন ১৪-১৮ সপ্তাহ তখন তয় টিকা দিতে হবে
আমাদের দেশে প্রচলিত নিয়ম হচ্ছে-
মুরগির বয়স ১-৫ দিন সময়ে আই বি + এন ডি,
মুরগির বয়স ২৫-২৭ দিন সময়ে আইবি +এন ডি
মুরগির বয়স ৬০-৬৫ দিন সময়ে আইবি +এন ডি
এবং মুরগির বয়স ১৪-১৭ সপ্তাহ হলে আইবি + এন ডি+ ই ডি এস (মৃত) প্রয়োগ করা হয়।
আই বি তে আক্রান্ত হলেও এই টিকা দেওয়া যায়।
মুরগির ফাউল কলেরা এবং ই ডি এস এর ব্যবহার ও প্রয়োগ পদ্ধতি
সাধারনত মুরগি অল্প বয়সে কলেরা রোগে আক্রান্ত হয় না, তাই মুগির বয়স ৮ সপ্তাহ আগে এই টিকা দেওয়ার প্রয়োজন নেই। যে এলাকাগুলোতে আক্রান্তও হওয়ার সম্ববনা থাকে সে এলাকাতে এর আগেও টিকা দেয়া হয়ে থাকে।
কিল্ড বা মৃত টিকা
এই টিকা দুটিই দিলেই যথেষ্ট হয়ে যায়। দুটি টিকার মাঝে ৪ সপ্তাহ বিরতি দিতে হব। মনে রাখতে হবে ২য় টিকা দিতে হবে ডিম উৎপাদন হওয়ার কমপক্ষে ৪ সপ্তাহ আগে। ডিম পাড়া অবস্থায় মুরগিকে এই টিকা দেওয়া যাবে না।
কলেরা কিল্ড বা মৃত টিকার কর্মসূচি
মুরগির বয়স ৮-১৪ সপ্তাহ হলে ১ম টিকা দিতে হবে এবং
মুরগির বয়স ১২-১৬ সপ্তাহ হলে ২য় টিকা দিতে হবে।
লাইভ টিকা প্রয়োগ ও ব্যবহার পদ্ধতি
মৃত বা কিল্ড টিকা দেওয়ার আগে লাইভ টিকা প্রয়োগ করা ঠিক নয়, কেননা এতে মৃত টিকার কার্যকারিতা কিছুটা কমে যায়। নিচের নিয়ম অনুযায়ী এই টিকা প্রয়োগ করতে হবে।
প্রথম টিকা মুরগির বয়স ১২ সপ্তাহ হওয়ার আগেই দিতে হবে। লাইভ টিকা দেওয়ার ৭ দিন আগে এবং পরে এন্টিবায়োটিক দেওয়া উচিৎ নয়।
লাইভ টিকা দেওয়ার ১০ দিনের মধ্যে অন্য কোন টিকা দেওয়া যাবে না। মুরগিকে এই টিকা প্রয়োগ করার পর অনেক সময় ক্রনিক আকারে কলেরা দেকা যায়।
লাইভ টিকার কর্মসূচি
মুরগির বয়স ৮-১০ সপ্তাহ হলে ১ম টিকা দিতে হবে।
মুরগির বয়স ১৪-১৬ সপ্তাহ হলে ২য় টিকা দিতে হবে।
ই ডি এস (এগ ড্রপ সিন্ড্রোম) টিকার প্রয়োগ ও ব্যবহার পদ্ধতি
এই টিকাটি সাধারণত সব এলাকায় প্রয়োগ করা হয় না। যে এলাকাতে এর প্রাদুর্ভাব আছে সেই এলাকাতে এর প্রয়োগ করা হয়। ডিম উৎপাদনের কমপক্ষে ৪ সপ্তাহ পূর্বে একটা কিল্ড টিকা দেওয়া হয়।
বেশিভাগ ক্ষেত্রে আই বি -এন ডি - ই ডি এস আকারে প্রয়োগ করা হয়। মুরগির বয়স ১৪-১৮ সপ্তাহের মধ্যে একবার টিকা প্রয়োগ করা হয়।
মুরগির রানিক্ষেত টিকার প্রয়োগ ও ব্যবহার পদ্ধতি
রানিক্ষেত রোগটি সবার কাছে বেশ পরিচিত। সাধারণ বাড়িতে যে মুরগি পোষা হয় তাতেও এর আক্রান্ত লক্ষ করা যায়। খামারে এই রোগ প্রতিরোধের জন্য আগে থেকেই পদক্ষেপ গ্রহণ করা উচিৎ।
ভ্যাকসিন স্ট্রেইন
** প্রাইমারি এবং লেন্টোজেনিক : Y4F strain, Ulster, VG/GA, B1B1, Hitchner, Lasota মাইকোপ্লাজমা পজেটিভ থাকলেও প্রয়োগ করা যায়। টাইটার তুলনামূলকভাবে কম উঠে।
** সেকেন্ডারি এবং মেসোজেনিক : Roakin, Kimbar, Mukteswar, H strain, Komarov মাইক্রোপ্লাজমা পজেটিভ হলে এই টিকা প্রয়োগ করা উচিৎ নয়। কেননা এতে রিয়াকশন হয়। এই টিকায় ভালো টাইটার ওঠে।
** কিল্ড বা ইনএক্টিভেটেড, লাসোটা, কিম্বার ও মুক্তেশরর: সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হয় কিল্ড টিকা। যে সকল এলাকাতে রানিক্ষেত রোগের তীব্রতা বেশি সে সকল এলাকাতে এই টিকা প্রয়োগ করা হয়। কিল্ড টিকা তৈরি করতে মেসোজেনিক স্ট্রেইন ব্যবহার করা হয়।
রানিক্ষেত টিকা প্রয়োগ করার নিয়ম
লেয়ার মুরগির জন্য-
প্রথম টিকা কর্মসূচি
মুরগির বয়স - ২ সপ্তাহ হলে ১ম টিকা, ৪ সপ্তাহ হলে ২য় টিকা, ৮-১২ সপ্তাহ হলে ৩য় টিকা, ১৫-২০ সপ্তাহ হলে ৪র্থ টিকা প্রয়োগ করতে হবে।
দ্বিতীয় টিকা কর্মসূচি
মুরগির বয়স ৪ সপ্তাহে লাইভ ১ম টিকা দিতে হবে এবং ১০ সপ্তাহ বয়সে লাইভ ২য় টিকা দিতে হবে। এরপর ১৬-১৭ সপ্তাহ বয়সে কিল্ড ৩য় টিকা এবং ৪০-৪৫ সপ্তাহে কিল্ড ৪র্থ টিকা দিতে হবে।
তৃতীয় টিকা কর্মসূচি
১-২ সপ্তাহে ১ম টিকা
৬ সপ্তাহে ২য় টিকা লাইভ
১১ সপ্তহে ৩য় টিকা
১৫-১৮ সপ্তাহে ৪র্থ টিকা কিল্ড
চতুর্থ টিকা কর্মসূচি
১ম টিকা ৬ সপ্তাহে
২য় টিকা ১০-১২ সপ্তাহে
৩য় টিকা ১৫-১৮ সপ্তাহে কিল্ড
৪র্ত টিকা ৪০-৪৬ সপ্তাহে কিল্ড
বাংরাদেশে টিকা দেওয়ার প্রচলিত সিডিউল
মুরগির বয়স ১-৫ দিনে আই বি + এন ডি টিকা প্রদান
৫-১০ দিন বয়সে এন ডি + আই বিডি কিল্ড
২৫-২৮ দিন বয়সে আই বি + এন ডি
৬০-৬৫ দিন বয়সে এন ডি
মুরগির বয়স ১৪-১৮ সপ্তাহে আই বি +এন ডি + ইডি এস কিল্ড সাথে এন ডি লাইভ টিকা প্রদান করা হয়।
মুরগির গাম্বুরো টিকা দেওয়ার নিয়ম ও ব্যবহার পদ্ধতি
মুরগির এই রোগের টিকার সাধারণত কোন তালিকা হয় না। এই টিকা নির্ভর করে ফ্লকের অবস্থা, স্থানীয় রোগের প্রাদুর্ভাব এবং আবহাওয়ার উপর। এই রোগ প্রতিরোধের জন্য প্রধানত তিন ধরণের টিকা প্রয়োগ করা হয়ে থাকে। যথা-
এক. ইন্টারমেডিয়েট ( বারসাইন ২, গাম্বোরু ২)
দুই. ইন্টারমেডিয়েট প্লাস (বাইসাইন প্লাস)
তিন. হট (২২৮ আইবিডি ব্লেন)
সাধারণভাবে গাম্বুরো টিকার টাইটার ওঠতে ৪-৫ দিন সময় লাগে। বাচ্ছার এন্টিবডি ব্যালেন্স ভালো থাকলে অর্থাৎ রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ভালো থাকলে ১৭ দিনে ১ টি টিকা দেওয়াই যথেষ্ট।
আর যদি মুরগির বাচ্ছার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল হয় তাহলে ১ম টিকা ১১ তম দিনে এবং ২য় টিকা ১৫ তম দিনে প্রয়োগ করা ভালো।
এ রোগের সম্ববনা বেশি থাকলে করণীয়
ব্রয়লারে প্রথম টিকা ৮ তম দিনে, মিসটেক হলে বাচ্ছার বয়স ১৮ তম দিনে ১ম টিকা প্রয়োগ করুন। লেয়ারের ক্ষেত্রে ১ম টিকা ১৫ তম দিনে এবং ব্রয়লারের ক্ষেত্রে ১১ তম টিকা শুরু করতে হবে। কেননা রেয়ারের এন্টিবডি হাফ লাইফ ৬-৭ দিন এবং ব্রয়লারের ৩-৪ দিন।
হট টিকা
যে সকল এলাকায় অতিতীব্র গাম্বোরু ভাইরাস আক্রমণ করে থাকে সে সকল এলাকায় এই টিকা প্রয়োগ করা হয়। ব্রিডারের তিনটা লাইভ এবং ১-৩ টি কিল্ড (মৃত) টিকা দেওয়া হয়।
ব্রিডার ফার্মে গাম্বুরো টিকা ভালভাবে প্রয়োগ করলে ফার্মের বাচ্ছায় গাম্বোরু খুব কম হয়।
হট টিকা কর্মসূচি
ব্রয়লারের জন্য-
বাচ্ছার বয়স ১০-১৩ তম দিনে আইবি কিংবা আিই বি ডি প্লাস
১৭-২০ তম দিনে আই বি ডি কিংবা আই বি ডি প্লাস প্রয়োগ করতে হবে।
লেয়ারের জন্য
মৃরগি0র বাচ্ছার বয়স ৩-৭ দিন সময়ে আই বি ডি + এন ডি (কিল্ড)
১০-১৩ দিনে আই বি ডি
১৮-২১ দিনে আই বি ডি কিংবা আই বি ডি প্লাস
কোথায় কিভাবে পাবেন মুরগির টিকা?
উপরে মুরগির বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধের জন্য বিভিন্ন ধরণের টিকা ও এর ব্যবহার এবং প্রয়োগ পদ্ধতি সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে। কিন্তু এগুলো টিকা কোথায় থেকে সংগ্রহ করবেন?
আপনাকে মনে রাখতে হবে, এই টিকাগুলোসহ যাবতীয় মুরগির কিংবা যে কোন গবাদি পশুর ঔষোধ উপজেলা প্রাণী সম্পদ অফিস থেকে সংগ্রহ করতে পারবেন।
এছাড়াও দোকান থেকে টিকাগুলো ক্রয় করতে পারবেন। তবে যেখান থেকেই সংগ্রহ করুন না কেন এটি সংরক্ষণের জন্য যত্নবান হতে হবে। দূরবর্তী থেকে বহন করতে হলে অবশ্যই থার্মোফ্লাক্স করে বহন করবেন এবং ফ্রিজে সংরক্ষণ করবেন।
শেষকথাঃ
আমরা আশা করছি এই ইনফোটি মুরগির টিকা প্রয়োগ করার ক্ষেত্রে আপনাকে সাহায্য করবে সেই সাথে আপনার মুরগি পালন ব্যবসার সু কামনা করছি।
মুরগি পালন ব্যবসার রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা না নিলে রাতারাতি খামারের সকল মুরগি আক্রান্ত হয়ে বিনাশ হয়ে যায়। ফলে খামার মালিককে পথে বসতে হয়। তাই এ ব্যবসার শুরু করলে রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা ভালভাবে নিতে হবে।
পরিশেষে বলতে চাই আপনার কাছে এই ইনফোটি প্রয়োজনীয় মনে হলে নিজের ওয়ালে শেয়ার করে রেখে দিন। যাতে প্রয়োজনের সময় সহজেই পেতে পারেন।
বন্ধুদের কাছে এ বিষয়ে জানাতাতে চাইলে শেয়ার করে দিতে পারেন। এতে কারো না কারো ইনফোটি উপকারে লাগবে।
অন্যান্য ইনফো জানুন:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন