অনলাইনে আয় করার হাজার রকম পদ্ধতি রয়েছে। এর মধ্যে অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং করে আয় করা অনেক জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। ডিজিটাল মার্কেটিং অভিজ্ঞতা থাকলে অন্যের প্রডাক্ট অ্যাফিলিয়েট করে অনলাইনে ব্যবসা করা যায়। ইহাকে অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং বলা হয়। আজকের ইনফোতে এই সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হবে।
নিজেকে একজন সফল মার্কেটার হিসাবে গড়তে পারলে এই সেক্টর থেকে ঘরে বসে যথেষ্ঠ পরিমানে টাকা ইনকাম করা সম্ভব। একই সাথে একজন সফল ব্যবসায়ী হিসাবে প্রতিষ্ঠিত হওয়া যায়।
যে কোন কাজ গোছানো এবং পরিকল্পনা মাফিক করলে কাজটি সুন্দর ও সহজ হয়। তাই অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং করতে আপনাকেও সুন্দরভাবে পরিকল্পনা করতে হবে। নতুবা আপনার মূল্যবাণ সময় নষ্ট হবে।
অ্যাফিলিয়েট করার আগে যে বিষয়গুলো ভাল করে জানতে হবে অর্থাৎ পরিকল্পনা করার জন্য “বিষয়বস্তু (নিশ) নির্ধারণ”, “অ্যাফিলিয়েট প্রোগ্রাম নিয়ে গবেষণা”, “অ্যাফিলিয়েট নেটওয়ার্ক এ একাউন্ট ও লিংক তৈরি”, “ওয়েবসাইট তৈরি”, চমৎকার কনটেন্ট তৈরি করার অভিজ্ঞা অর্জন করতে হবে।
অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং কি? What is affiliate marketing?
অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং হলো কমিশন ভিত্তিক প্রোডাক্ট বা সার্ভিস বিক্রয় করার পদ্ধতি। বিভিন্ন ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান অ্যাফিলিয়েট প্রোগ্রাম চালু করে রেখে দেয়। এখানে যে কেউ যোগদান করে কমিশনের ভিত্তিতে পন্য বা সেবার মার্কেটিং করে কমিশন গ্রহণ করতে পারে।
এছাড়াও বিভিন্ন অ্যাফিলিয়েট মার্কেট প্লেস রয়েছে। যারা মার্কেটিং ভালো করতে পারেন তাদরে জন্য এই মার্কেটপ্লেসগুলো হতে পারে আয় করার প্রধান উৎস।
অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং কি তা বিস্তারিত ভাবে বললে আপনি আরো ভালো করে বুঝতে পারবেন।
প্রতিটি কোম্পানি
তাদের সার্ভিস বা পন্য বিক্রি করার জন্য নিজদের ব্যবস্থাপনায় বিক্রয় কর্মকর্তা নিয়োগ
করে থাকে। তাদেরকে প্রতি মাসে বিক্রয় করার জন্য একটা টার্গেট দেওয়া হয় এবং মাসিক বেতন
ভুক্ত কর্মকর্তা বা বিক্রয় কর্মীরা কোম্পানির সেবা বা পন্য বিক্রয় করে থাকে।
আবার কিছু
কোম্পানি তাদের প্রোডাক্ট বা সার্ভিস বিক্রয় করার জন্য অ্যাফিলিয়েট প্রোগ্রাম চালু
করে রাখে। ফলে যে কেউ এই প্রোগ্রামে যোগ দিয়ে কোম্পানির সার্ভিস বা প্রোডাক্ট বিক্রি
করার জন্য কমিশন ভিত্তিক চুক্তিতে আবদ্ধ হতে পারে। অর্থাৎ সহজ ভাষায় যাদেরকে আমরা ডিলার
বলে থাকি ।
ডিলার কোম্পানির
সার্ভিস বা পন্য যত বেশি বিক্রি করবে তত বেশি কমিশন পাবে। এরুপ অনলাইনে অ্যাফিলিয়েট
প্রোগ্রামে যারা যুক্ত হয়ে কোন কোম্পানির সার্ভিস বা পন্য বিক্রি করে তারা চুক্তি অনুযায়ী
কমিশন পেয়ে থাকে।
আপনার মার্কেটিং
অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে অনলাইনে নিজেকে একজন ডিলার হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করতে অ্যাফিলিয়েট
প্রোগ্রামে যোগ দিতে পারেন।
ইন্টারনেটের
মাধ্যমে কোন কোম্পানির পন্য বা সেবা বিক্রি করে কমিশন ভিত্তিক আয় করাকে অ্যাফিলিয়েট
মার্কেটিং বলা হয়।
এই মার্কেটিং
পদ্ধতিতে কোম্পানি আপনাকে মাসিক বেতন দিবে না। বিক্রয় করলে শুধু কমিশন দিবে। এখন আপনার
মনে প্রশ্ন জাগতে পারে কোম্পানি কিভাবে বুঝবে যে আমি তাদের পন্য বা সেবা বিক্রি করছি?
প্রযুক্তির
যুগে এটি এখন অনেক সহজ হয়ে গেছে। আপনি যখন কোন কোম্পনির অ্যাফিলিয়েট প্রোগ্রামে জয়েন্ট
করবেন তখন তারা আপনাকে একটি স্বতন্ত্র ওয়েবলিংক তৈরি করে দিবে।
এই লিংকের
মাধ্যমে আপনাকে বিক্রয় করতে হবে। অর্থাৎ আপনি এই লিংক দিয়ে অনলাইনে মার্কেটিং করে গ্রাহকের
কাছে পন্য বা সেবা বিক্রয় করবেন।
আপনার লিংকের
মাধ্যমে যত প্রোডাক্ট বা সার্ভিস বিক্রয় হবে সেগুলোর কমিশন আপনি পেয়ে যাবেন। সুতরাং
মার্কেটিং এই মডিউলকেই অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং বলে।
আরো জানুন:
ইউটিউব চ্যালেন তৈরি করে কিভাবে আয় করবেন?
ফেসবুক ইন্সট্যান্ট আর্টিকেল কি? এটি দিয়ে কিভাবে আয় করা হয়?
Google AdSense কি? এডসেন্স থেকে কিভাবে আয় করা হয়?
অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং প্রক্রিয়া কি অথবা কিভাবে কাজ করে?
এই মার্কেটিং
প্রক্রিয়া হলো অ্যাফিলিয়েট প্রোগ্রামে যারা যুক্ত হবে তাদের জন্য আলাদা আলাদ ইউনিক
লিংক তৈরি হবে। কোম্পানি এই লিংকগুলো থেকে সেলস ট্রাক করতে পারে।
কোন লিংক
থেকে কত সেলস হলো এবং কত কমিশন পাবে তা লিংক প্রোফাইলগুলোতে জেনারেট করে দেয়। এই কাজট
মূলত একটা সফ্টওয়ার ব্যবস্থাপনা করে থাকে। যাকে অ্যাফিলিয়েট প্রোগ্রাম বলে থাকি।
এই মার্কেটিং
মডিউল দু প্রকার হয়ে থাকে। যথা-
১। অ্যাফিলিয়েট
মার্কেটপ্লেস
২। ইন্ডিভিজুয়াল
কোম্পানি অ্যাফিলিয়েট প্রোগ্রাম
অ্যাফিলিয়েট মার্কেটপ্লেস কি?
বর্তমান প্রযুক্তির
উন্নতির কারণে অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং অনেক লাভজনক একটা পদ্ধতি। কোম্পানি বা ব্যবসায়ীরা
কমিশন ভিত্তিক পন্য বা সেবা বিক্রয় করায় তাদের লোকসানের ঝুকি থাকে না। অপরদিকে অ্যফিলিয়েট
মার্কেটাররা তাদের ইচ্চামত মার্কেটিং করার সুযোগ পায়।
ফলে সবার
কাছে এই পদ্ধতি জনপ্রিয় হয়ে উঠে। কোম্পানি লোকশানের ঝুকি না নিয়ে অধিক পন্য বা সেবা
বিক্রয় করে যেমন বেশি মুনাফ অর্জন করতে পারে তেমনি একজন মার্কেটারও তার চাহিদা মত কিংবা
অধিক আয় করার জন্য প্রচেষ্ঠা চালাতে পারে।
এই কারণে
বর্তমাণে অনেক অ্যাফিলিয়েট মার্কেটপ্লেস তৈরি হয়েছে। ঘরে বসে মার্কেটারও তৈরি হচ্ছে
এবং বিশ্ব বাজার একাকার অর্থাৎ এখন যে কেউ ঘরে বসে যে কোন দেশে মার্কেটিং করে আয় করতে
পারে।
মার্কেটপ্লেসগুলো
বিভিন্ন কোম্পানি (ভেন্ডর) এর অফার নিয়ে লিস্ট করে রাখে। অ্যাফিলিয়েট মার্কেটারদের
জন্য এই লিস্ট উন্মুক্ত থাকে।
ফলে মার্কেটাররা
তাদের পছন্দমত পন্য বা সেবা নিয়ে মার্কেটিং করতে পারে। যারা যে বিষয়ে দক্ষ সেই বিষয়
নিয়ে মার্কেটিং করে অধিক আয় করার সুযোগ পায়। এতে কোম্পানি ও মার্কেটার উভয় লাভবান হয়।
বিশ্বের জনপ্রিয়
কিছু মার্কেটপ্লেসঃ
ক্লিক ব্যাংক:
ওয়েবলিংক- https://www.clickbank.com/
অ্যামাজন অ্যাসোসিয়েট: ওয়েবসাইট - https://affiliate-program.amazon.com/
সিজে ডট কম:
ওয়েবসাইট- https://www.cj.com/
জেভিজু: ওয়েবসাইট-
https://www.jvzoo.com/
ইমপ্যাক্ট
রেডিআস: ওয়েবসাইট- https://impact.com/
এই রকম আরো
অনেক বড় বড় অ্যাফিলিয়েট মার্কেটপ্লেস রয়েছে। প্রথমে আপনার উচিৎ হবে একটি বা দুটি মার্কেটপ্লেসে
যুক্ত হয়ে মার্কেটিং শুরু করা। পরবর্তীতে যখন আপনি অনেক কাস্টমার জেনারেট করার ওয়ে
তৈরি করতে পারবেন তখন আরো মার্কেটপ্লেসে যুক্ত হয়ে ব্যবসার পরিধি বাড়াতে পারেন।
আরো জানুন:
সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং কি? কিভাবে সোশ্যাল মিডিয়ায় মার্কেটিং করবেন?
ইন্ডিভিজুয়াল কোম্পানি অ্যাফিলিয়েট প্রোগ্রাম কি?
অ্যাফিলিয়েট
মার্কেটপ্লেস ছাড়াও আপনি বিভিন্ন কোম্পানি কিংবা বিভিন্ন সার্ভিস প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব
অ্যাফিলিয়েট প্রোগ্রামে যোগ দিয়ে তাদের পন্য বা সেবা নিয়ে ব্যবসা করতে পারেন।
বর্তমানে
ছোট বড় প্রায় কোম্পানিগুলো অ্যাফিলিয়েট প্রোগ্রাম চালু করে রেখেছে। অ্যাফিলিয়েট মার্কেটপ্লেসগুলোতে
একধিক কোম্পানির প্রোডাক্ট নিয়ে কাজ করতে পারবেন। কিন্তু কোন কোম্পানির অ্যাফিলিয়েট
প্রোগ্রামে যোগ দিলে শুধুমাত্র ঐ কোম্পানির প্রোডাক্ট বা সেবা নিয়ে কাজ করতে হবে। পার্থক্য
শুধু এতটুকু।
বলতে গেলে
বড় বড় প্রায় কোম্পানিগুলো অ্যাফিলিয়েট প্রোগ্রাম চালু করে রেখেছে। নিচে কিছু কোম্পানির
লিস্ট দেওয়া হলো।
·
Amazon
Associates ওয়েবসাইট- https://affiliate-program.amazon.com/
·
Get
Response ওয়েবসাইট - https://eu.getresponse.com/eu-affiliate-programs
·
Clickmagick
ওয়েবসাইট - https://www.clickmagick.com/affiliates/
·
Clickfunnels
ওয়েবসাইট - https://affiliates.clickfunnels.com/affiliate-access/
·
Thrive
Themes ওয়েবসাইট - https://thrivethemes.com/affiliate-program/
এই কোম্পানিগুলো
তাদের নিজদের ট্রাকিং সিস্টেম এর মাধ্যমে অ্যাফিলিয়েট করার সুযোগ দিয়ে থাকে। এছাড়াও
বিভিন্ন সার্ভিস প্রতিষ্ঠান যেমন- পেওনিয়ার, ইযাইক, দ্যা মনিটাইজেশন ইত্যাদির মত প্রতিষ্ঠানগুলোও
অ্যাফিলিয়েট করার সুযোগ দিয়ে থাকে।
মার্কেটপ্লেস নাকি কোম্পানি অ্যাফিলিয়েট কোনটি ভাল?
যেহেতু দু
ধরণের অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং প্রক্রিয়া দেখতে পাচ্ছেন তাই আপনার মনে প্রশ্ন জাগতে পারে
যে আমার জন্য কোনটি ভাল হবে? আপনি নতুন হলে এ ধরণের প্রশ্ন আসা স্বাভাবিক। কেননা আপনি
এই মার্কেটিং সম্পর্কে বিস্তারিত জানেন না।
অ্যাফিলিয়েট প্রক্রিয়া যে ধরণের হোক না কেন আপনি
যদি কাস্টমার জেনারেট করতে পারেন তাহলে আপনার জন্য এই মার্কেটিং আদর্শ কর্মক্ষেত্র।
অ্যাফিলিয়েট
মার্কেটিং এর প্রধান লক্ষ হচ্ছে গ্রাহক তৈরি করে পন্য বা সেবা বিক্রয় করা। বিষয়টা আরো
ক্লিয়ার করে বলা যাক।
ধরুন- ডিজিটাল
প্রোডাক্ট সম্পর্কে আপনি ভাল রিভিউ লেখতে পারেন। এখন আপনার রিভিউ দেখে অনেকে ডিজিটাল
প্রোডাক্ট ক্রয় করার জন্য আগ্রহী হয়ে উঠলো। তখন আপনি ডিজিটাল প্রোডাক্টের অ্যাফিলিয়েট
লিংক রিভিউয়ের মধ্যে দিয়ে দিবেন।
এখানে আপনি
যে কোন (মার্কেটপ্লেস কিংবা কোম্পানি) অ্যাফিলিয়েট লিংক ব্যবহার করতে পারেন। তবে রিভিউয়ের
সাথে প্রোডাক্টের যেন মিল থাকে সেদিকে লক্ষ রেখে অ্যাফিলিয়েট লিংক রেফার করবেন। এতে
বিক্রয় দিন দিন বাড়তে থাকবে।
অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং করার সুবিধাঃ
অনলাইনে এফিলিয়েট মার্কেটিং হচ্ছে একটি স্মার্ট ও আধুনিক পেশা। অনলাইনে অন্যান্য কাজের থেকে এই পেশায় রয়েছে আলাদা বৈশিষ্ট। যেমন:
·
নিজের
পুঁজি ছাড়াই অন্যের পন্য বিক্রি করে আয় করা যায়।
·
পছন্দমত
পন্য নিয়ে কাজ করা যায়।
·
ঘরে
বসে কাজ করা সুযোগ, এজন্য কোথাও যেতে হয় না।
·
ফুলটাইম
ক্যারিয়ার অর্থাৎ নিজেকে এফিলিয়েট মার্কেটার হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে পারেন।
·
সময়ের
স্বাধীনতা আপনার হাতেই থাকে।
·
বিভিন্ন
কোম্পানির কাছে অনেক ব্রান্ড ভেলু বাড়ানো যায় সহজেই।
·
স্বাধীন
ভাবে কাজ করার সুযোগ পাওয়া যায়।
·
একটি
এফিলিয়েট সাইট দিয়ে একাধিক উপায়ে আয় করা সম্ভব।
·
অনলাইনে
সব সময় একটিভ থাকার প্রয়োজন হয় না।