জমির কাগজ তথা খতিয়ানে একাধিক মালিক থাকলে তাদরে কি পরিমান জমির অংশিদার রয়েছে তা উল্লেখ থাকে। নতুন খতিয়ানগুলোতে দশমিক সংখ্যায় প্রকাশ করা হলেও পুরাতন খতিয়ানে রয়েছে বিভিন্ন ধরণের হিসাব। আজকের ইনফোতে (Land Ledger) জমির খতিয়ানের বিভিন্ন হিসাব (আনা, গোন্ডা, কড়া, তিল) নিয়ে আলোচনা করা হলো।
খতিয়ান কি?
খতিয়ান হচ্ছে জমির মালিকানা প্রমাণের জন্য সরকারি দলিল। জমির মালিক কে তা সরকারি রেকর্ড করা থাকে এবং জমির মালিককে একটি লিপিবদ্ধ কাগজ প্রদান করা হয়। এই কাগজকেই জমির খতিয়ান বলা হয়।
আরো জানুন> অনলাইনে জমির খতিয়ান দেখবেন কিভাবে?
ভূমি জরিপ করার সময় ভূমি মালিকদের একটি খসড়া খতিয়ান দেওয়া হয়। এটাকে মাঠ পর্চা বলা হয়। চূড়ান্ত খতিয়ান প্রকাশিত হলে মাঠ পর্চাতে কোন ভূল থাকলে মাঠ পর্চা বাতিল হিসাবে গণ্য করা হয়।
জমির খতিয়ান অনুযায়ী ভূমি অফিসে জমির বিভিন্ন কর বা খাজনা পরিশোধ করা হয়। সে হিসাবে খতিয়ান হচ্ছে ভূমি মালিকের মালিকানা প্রমাণের সরকারি দলিল।
খতিয়ানে কি কি উল্লেখ থাকে?
খতিয়ানে জমির মালিকের নাম ও ঠিকানা। একাধিক মালিক থাকলে তাদের অংশের পরিমান, মালিকের পিতার নাম, জমির দাগ নাম্বার, মৌজা নাম্বার (জে.এল নাম্বার), বাৎসরিক ধার্যকৃত খাজনার পরিমান, এছাড়াও খতিয়ান নাম্বার থাকে।
একাধিক মালিকের নাম থাকলে তাদের যে অংশ তা সর্বশেষ খতিয়ানগুলোতে দশমিক সংখ্যায় প্রকাশ করা হলেও পুরানা খতিয়ানগুলোতে অংশিদার মালিকের অংশগুলো আনা, গন্ডা, কড়া, তিল ইত্যাদি দিয়ে লিপিবদ্ধ করা হয়েছে।
খতিয়ান অংশিদার হিসাব জানা গুরুত্বপূর্ণ কেন?
জমির খতিয়ানে একাধিক মালিকের নাম থাকলেও তাদের জমির পরিমান ভিন্ন হয়ে থাকে। যেমন: ভাই- বোন এবং মাতার নামে জমির খতিয়ান থাকলে তাদের জমির পরিমন বিভিন্ন।
খতিয়ানে কে কতটুকু জমির মালিকানা রয়েছে তা অংশ কলামে দেওয়া আছে। সর্বশেষ খতিয়ানগুলোতে এই অংশগুলো দশমিক সংখ্যায় দেওয়া থাকে । কিন্তু পুরানা ( সিএস, এসএ) খতিয়ানে এই অংশগুলো আনা, গন্ডা, কড়া, তিল ধরণের বিভিন্ন হিসাবে দেওয়া রয়েছে।
অনেকেই এই হিসাবগুলো না জানার ফলে অনেক হয়রানির স্বীকার হোন। এর ফরে দালালরাও সুযোগ নিয়ে থাকে।
গ্রামের কিছু দেওয়ানি এই হিসাবগুলো জানার ফলে সাধারণ মানুষের কাছ থেকে অর্থ লুুটে নেন। অনেকে প্রতারিত হয়ে থাকেন এসব দেওয়ানির কাছ থেকে।
সবচেয়ে বড় আশঙ্কার কথা হচ্ছে, সমাজে অনেক শিক্ষিত লোকও এসব হিসাব না জানার কারণে গ্রামের পারিবারিক সমস্যাগুলো সমাধান দিতে পারেন না কিংবা ভুল সমাধান দিয়ে থাকেন। ফলে ফেতনা বহুগুণ বৃদ্ধি পায়।
তাই সচেতন নাগরিক হিসাবে সবাইকে এই সংক্রান্ত তথ্য ভাল করে জানা উচিৎ। অনেকের পরিবারের অবিভাবকরা মূর্খ থাকেন তাদের ছেলে হিসাবেও এই বিষয়ে জানা অত্যান্ত জরুরী।
সুতরাং দালালকে না বলুন, খতিয়ানের হিসাব জানুন।
খতিয়ানে আনা গন্ডা কড়া ক্রান্তি এর সম্পর্ক
আধুনিক খতিয়ানে আনা, গন্ডা, কড়া, তিল ইত্যাদির ব্যবহার হয় না। সবাই দশমিক হিসাবে অভ্যাস্ত এবং খতিয়ানেও একাধিক মালিকের অংশগুলো দশমিক অংশে দেওয়া থাকে। তবে পুরানা খতিয়ানে এগুলোর ব্যবহার রয়েছে।
তাই পুরানা খতিয়ানের অংশ বুঝেতে হলে এই হিসাব জানা জরুরী।
পুরানা খতিয়ানে ১৬ আনা বা এক পূর্ণ হিসাবে একাধিক মালিকের অংশগুলো দেওয়া থাকে। তাই আপনাকে আনা সংক্রান্ত সম্পর্ক ভাল করে জানতে হবে।
আনা-গন্ডা-ক্রান্তি লেখার নিয়ম
প্রথমে আনা লেখা হয়। নিচে ক্রম অনুসারে দেওয়া হলো।
(ক): আনা লিখার নিয়ম: ( ১ আনা থেকে ১৬ যে চিহ্ন দ্বারা লিখা হয়) এটাকে পণ বা কানি হিসাবেও ডাকা হয়।
আপনার বুঝার সুবির্ধার্থে নিচে উদাহরণ দেওয়া হলো। আনা, কড়া - গন্ডা কে দশমিক সংখ্যায় প্রকাশ করার পদ্ধতি নিম্নরুপ:
উদাহরণ-১ঃ
দশমিক সংখ্যা প্রকাশ করতে পারলে আপনি সহজেই পুরানা হিসাবগুলো কম্পেয়ার করতে পারবেন। নিচের আরো একটি উদাহরণ দেখুন-
উপরের আলোচনা থেকে অবশ্যই বুঝতে পারছেন খতিয়ানের বিভিন্ন ধরণের অংশিদার হিসাব। তবে আধুনিক খতিয়ানে এই ধরণের হিসাব নেই। আধুনিক খতিয়ানে একাধিক মালিক থাকলে তাদের অংশ দশমিক সংখ্যায় প্রকাশ করা হয়েছে।
এছাড়াও জমি সংক্রান্ত নিচের হিসাবগুলো আপনার কাজে লাগতে পারে।
আশাকরি ইনফোটি আপনার উপকারে লাগবে। জমি সংক্রান্ত আরো তথ্য জানতে কমেন্ট করে জানাতে পারেন। উপযুক্ত ইনফো আপনার কাছে শেয়ার করা হবে ইনশাল্লাহ।
এই ইনফোটি আপনার কাছে প্রেয়োজনীয় হলে নিজের ওয়ালে শেয়ার দিয়ে রেখে দিতে পারেন। প্রয়োজনের সময় কাজে লাগাতে পারবেন। তাছাড়া আপনার ওয়ালে থাকলে খুব সহজেই সেটি খুজে পাবেন এবং আপনার বন্ধরাও এই তথ্যটি জানতে পারবে।
আরো জানুন: