শিক্ষিত সমাজের কাছে সারা পৃথীবি এখন একটি গ্রামের মত । এই প্রযুক্তির যুকে পৃথীবির যে কোন প্রান্তে বসে ব্যবসা-বাণিজ্য কিংবা ঘরে বসে অন্য যে কোন দেশে চাকরি করার সুযোগ পাচ্ছে। এছাড়াও অনলাইনে ফ্রিল্যান্সিং পেশায় হাজার হাজার মানুষ বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করছে। এই বৈদেশিক মুদ্রা দেশের লোকাল ব্যাংকগুলো সরাসরি গ্রহণ করে না। তাই ব্যবসায়ি বা ফ্রিল্যান্সারদের একটি আন্তার্জিক লেনদেন (ওপেন ব্যাংকিং) সুবিধা দেয় এমন প্রতিষ্ঠানের গ্রহক হতে হয়। বর্তমানে গ্লোবাল লেনদেন সুবিধা দেয় এমন অনেকগুলো ওপেন ব্যাংক রয়েছে। এর মধ্যে পেওনিয়ার ব্যাংক অন্যতম। আজকের ইনফোতে Payoneer Account নিয়ে আলোচনা করা হলো।
পেওনিয়ার একাউন্ট কি? What is Payoneer Account?
পেওনিয়ার হলো একটি আন্তর্জাতিক ওপেন ব্যাংক। যে কোন দেশ থেকে এই ব্যাংকের একাউন্ট খুলে লেনদেন করা যায়। ২০০ টিরও বেশি দেশ থেকে এতে পেমেন্ট গ্রহণ করা যায়।
তাই যারা বৈদেশিক ব্যবসা কিংবা সেবা দিয়ে অর্থ উপার্জন করেন তাদের জন্য পেওনিয়ার হতে পারে একটি আদর্শ ব্যাংক। শুধু তাই নয় বিভিন্ন দেশে এটি সে দেশের নোকাল ব্যাংকের মতই ব্যবহার করা যায়।
যেমন ধরুন- আপনি বাংলাদেশ থেকে আমেরিকাতে কিছু সেবা বিক্রি করতে চাচ্ছেন কিংবা ব্যবসা করতে চান তাহলে তাদের কাছ থেকে অর্থ গ্রহন করবেন কিভাবে? এমন যদি হয় যে, আমেরিকাতে কোন ব্যাংকে আপনার একাউন্ট রয়েছে।
তাহলে আপনার ক্লায়েন্টদের কাছ থেকে সহজেই সেই আমেরিকা ব্যাংক একাউন্টে অর্থ গ্রহণ করতে পারেন। যেমন আমরা বাংলাদেশের ব্যাংকগুলোতে কারো একাউন্টে টাকা প্রদান করে থাকি।
শুধু আমেরিকা নয় বিভিন্ন কারেন্সিতে বিভিন্ন দেশের ভার্চুয়ার ব্যাংক একাউন্ট পাবেন। সে ব্যাংক একাউন্টগুলো সে দেশের লোকার ব্যাংকের মতই ব্যবহার করতে পারবেন।
বিভিন্ন দেশের ভার্চুয়ার ব্যাংক একাউন্টের সুবিধা
পেওনিয়ারের বড় সুবিধা হচ্ছে এটি বিভিন্ন কারেন্সিতে বিভিন্ন দেশের ব্যাংক একাউন্ট প্রদান করে। যা সে দেশের লোকাল ব্যাংক একাউন্টের মতই ব্যবহার করা যায়।
ভার্চুয়াল ব্যাংক একাউন্টগুলোর বিভিন্ন কারেন্সি যেমন- মার্কিন ডলার, ইউরো, পাউন্ড, জাপানিজ ইয়েন, ক্যানাডিয়ান ডলার, অস্ট্রেলিয়ান ডলার ও ম্যাক্সিকান পেসো কারেন্সিতে অর্থ গ্রহণ করতে পারেন।
অর্থাৎ এই ভার্চুয়াল একাউন্টগুলোকে আপনি যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ইউরোপ, জাপান, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, এবং ম্যাক্সিকোর লোকাল ব্যাংক একাউন্টের মতোই ব্যবহার করতে পারবেন।
২০০ টিরও বেশি দেশে লেনদেন করার পাশাপাশি উপরের দেশগুলোতে আপনার একটি সে দেশের ব্যাংক একাউন্ট প্রদান করবে পেওনিয়ার।
কারা পেওনিয়ার একাউন্ট খুলতে পারবে?
বিশ্বের যে কেউ পেওনিয়ার একাউন্ট খুলতে পারবে। তবে তাকে তার পরিচয় প্রমাণের জন্য জাতীয় পরিচয় পত্র প্রদান করতে হবে।
বাংলাদেশে যারা ভোটার হয়েছেন বা যাদের এনআই কার্ড আছে তারা সহজেই পেওনিয়ার একাউন্ট খুলতে পারেন।
যাদের বয়স এখনো ১৮ হয় নাই বা যাদের এনআইডি হয় নাই তারা পেওনিয়ার একাউন্ট ভেরিফাই করতে পারবেন না।
আপনার যদি জাতীয় পরিচয় পত্র (NID) না থাকে তাহলে আপনার পরিবারের কারো (যার এনআইডি আছে) নামে পেওনিয়ার একাউন্ট খুলে ব্যবহার করতে পারেন।
কেন Payoneer Account খুলবেন?
কেন আপনি পেওনিয়ার একাউন্ট খুলবেন সেই বিষয়টি আগে আপনাক জেনে নিতে হবে। কেননা সবার চাহিদা এক রকম নয়। কেউ কিচেন বিরানি সবসময় ক্ষেতে পছন্দ করে আবার কেউ বিরানি ক্ষেতে পারে না।
আপনি যদি একজন ব্যবসায়ি বা ফ্রিল্যান্সার কিংবা অনলাইন বিক্রেতা হয়ে থাকেন। আপনার যদি বৈদেশিক লেনদেন করার প্রয়োজন পরে। বিভিন্ন দেশ থেকে অর্থ গ্রহণ করার প্রয়োজন হলে আপনি পেওনিয়ার একাউন্ট খুলে ব্যবহার করতে পারেন।
আপনার দেশের বাইরে অর্থ লেনদেন প্রয়োজন না হলে পেওনিয়ার একাউন্ট খুলে আপনি কি করবেন? হ্যাঁ, এর মার্কেটিং করে কিছু টাকা আয় করার নিয়ত থাকলে খুলতে পারেন।
এছাড়া খামাখা একাউন্ট খুলে সময় নষ্ট ছাড়া কোন লাভ হবে না। আপনি একজন এফিলিয়েট মার্কেটার কিংবা ফ্রিল্যান্সার হয়ে থাকলে এর একাউন্ট আপনাকে লেনদেন এ সাহায্য করবে।
অ্যামাজন কিংবা ফ্রিল্যান্সার মার্কেটপ্লেস আপওয়ার্ক, ফাইভার ইত্যাদি থেকে সহজেই পেমেন্ট গ্রহণ করে ব্যবহার করতে পারেন পেওনিয়ার একাউন্টে।
একাউন্ট খুলতে কি কি লাগে?
পেওনিয়ার একাউন্ট খুলতে কিছু ডকুমেন্ট প্রয়োজন হবে। যেমন - জাতীয় পরিচয় পত্র, পাসপোর্ট কিংবা ড্রাইভিং লাইসেন্স এর যে কোন একটি হলে চলবে।
এছাড়াও একাউন্ট ভেরিফার করার জন্য আপনার সেলফি তুলে আপলোড করতে হবে।
যেহেতু অনলাইনের মাধ্যমে একাউন্ট খুলতে হবে তাই ইন্টারনেট সংযোগসহ পিসি যে কোন স্মার্ট ডিভাইস প্রয়োজন।
পেওনিয়ার মোবাইল অ্যাপ ডাউনলোড করেও সহজেই মোবাইল দিয়ে একাউন্ট খুলে নিতে পারেন।
কিভাবে পেওনিয়ার একাউন্ট খুলবেন?
জিমেই, ফেসবুক একাউন্ট খোলার মতই আপনি খুব সহজেই পেওনিয়ার ব্যাংক একাউন্ট খুলতে পারেন। সাইন আপ ক্লিক করলে যে ফরমটি আসে সেটি পূরণ করলেই একাউন্ট খোলা হয়ে যায়।
একাউন্ট খোলা হয়ে গেলে একাউন্টটি ভেরিফেকেশন করে নিতে হবে। ভেরিফাই করার জন্য পেওনিয়ার একাউন্টে আপনার যে কোন একটি ব্যাংক একাউন্ট যুক্ত করতে হবে।
এরপর জাতীয় পরিচয়পত্র/পাসপোর্ট/ড্রাইভিং লাইসেন্স আপলোড করে আপনার একটি সেলফি তুলেও আপলোড করতে হবে।
সেলফি তোলার সময় হাতে একটি নোট থাকতে হবে। সেটাতে যেন সেলফি তোলার তারিখটা স্পষ্টভাবে বোঝা যায়।
আপনার আপলোকৃত ডকুমেন্ট এবং ব্যাংক একাউন্টের তথ্য এক থাকতে হবে। সবকিছু ঠিক থাকলে আপনার একাউন্টি ফেরিফাই হয়ে যাবে। এজন্য কয়েকদিন সময় লাগতে পারে।
একাউন্ট ভেরিফাই হলে সারা বিশ্বে এটি দিয়ে লেনদেন করতে পারবেন।
একাউন্ট খুলে 25$ ডলার বোনাস পাওয়ার উপায়
আপনি যদি কোন রেফারাল লিংক থেকে পেওনিয়ার একাউন্ট সাইন আপ করেন তাহলে আপনার একাউন্টে যখন ১০০০ ডলার লেনদেন সম্পন্ন করবেন তখন আপনি ২৫ ডলার বোনাস পাবেন এবং আপনি যে রেফারাল লিংক থেকে একাউন্ট খুলেছেন সেই লিংকশেয়ারকারীও ২৫ ডলার বোনাস পাবে।
আর আপনি যদি কোন রেফার লিংক থেকে একাউন্ট না খুলে থাকেন তাহলে বাড়তি ২৫ ডলার বোনাস পাওয়ার কোন সুযোগ নেই। কেননা এই বোনাস শুধুমাত্র প্রচারের ক্ষেত্রে দেওয়া হয়ে থাকে।
আপনি যদি পেওনিয়ার এখাউন্ট খুলে বাড়তি ২৫ ডলার বোনাস পেতে চান, তাহলে এখানে ক্লিক করে পেওনিয়ার একাউন্ট খুলে নিন।
তবে অবশ্যই মনে রাখবেন, আপনার যদি অনলাইন আয় কিংবা ব্যাবসায়িক প্রয়োজনে পেওনিয়ার একাউন্ট না লাগে তাহলে এমনি এমনি একাউন্ট খুলবেন না। শুধুমাত্র ২৫ ডলারের লোভে একাউন্ট খুলতে আপনার কোন লাভ হবে না।
পেওনিয়ার একাউন্টের টাকা ব্যবহার করবেন কিভাবে?
পেওনিয়ার একাউন্টের জমা অর্থ আপনি সরাসরি নিজের ব্যাংক একাউন্টে নিয়ে আসতে পারবেন। এজন্য আপনার ব্যাংক একাউন্ট পেওনিয়ারে যুক্ত করতে হবে।
ওয়ার ট্রান্সফারের মাধ্যমে পেওনিয়ার থেকে ব্যাংকে জমা হবে। এটা করতে পেওনিয়ার লগইন করে সেন্ট টু ব্যাংক একাউন্ট অপশনটি ব্যবহার করতে হবে।
এছাড়্রও আন্তর্জাতিক মার্কেটপ্লেসগুলোতে সরাসরি পেমেন্ট করতে পারেন। অনলাইনে কেনাকাটা সহ ভ্যাট/ ট্যাক্স বিল দিতে পারেন সরাসরি।
পেওনিয়ার মাস্টারকার্ড ব্যবহার করে বিশ্বের যে কোন দেশে ব্যবহার করতে পারবেন। এই কার্ড থেকে সরাসরি বিকাশে টাকা যুক্ত করতে পারবেন।