(toc) #title=(ইনফোটি এক নজরে দেখুন)
বয়স্করা যে ধারণাগুলো থেকে সন্তানের লিঙ্গ নির্ধারণ করে থাকেন, সেই ধারণাগুলোর সত্যতা কিংবা বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা আছে কি না তা নিয়ে আমাদের কারো মাথা ব্যাথা নেই, বরং প্রচলিত এসব ধারণা মেনে নিয়ে অনেকেই হতাশায় পড়ে যান।
গর্ভের সন্তান ছেলে না মেয়ে তা জানার নিয়ম
অন্তঃসত্ত্বা
মহিলাদের গর্ভের সন্তান ছেলে না মেয়ে
তা জানার জন্য বর্তমানে দুটি
প্রধান পদ্ধতি রয়েছে:
- আলট্রাসাউন্ড: আলট্রাসাউন্ড হল একটি অ-আক্রমণাত্মক পদ্ধতি যাতে শব্দ তরঙ্গ ব্যবহার করে শিশুর ছবি তোলা হয়। গর্ভাবস্থার ১৮-২২ সপ্তাহের মধ্যে আলট্রাসাউন্ড পরীক্ষা করলে শিশুর যৌনাঙ্গ স্পষ্টভাবে দেখা যায়।
- নমুনা পরীক্ষা: এই পদ্ধতিতে গর্ভের শিশুর ডিএনএ নমুনা নেওয়া হয় এবং তারপর সেই নমুনা পরীক্ষা করে শিশুর লিঙ্গ নির্ধারণ করা হয়। এই পদ্ধতিটি সাধারণত গর্ভাবস্থার ১২ সপ্তাহের মধ্যে করা হয়।
এছাড়াও,
কিছু লোক গর্ভবতী নারীর
শারীরিক লক্ষণ দেখে সন্তানের লিঙ্গ
নির্ধারণ করার চেষ্টা করে।
তবে এই লক্ষণগুলির কোনো
বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নেই এবং এগুলির
নির্ভরযোগ্যতা খুবই কম। নিচে এই বিষয়ে বিস্তারি আলোচনা করা হযেছে।
সন্তান ছেলে হবে না মেয়ে হবে তার বৈজ্ঞানিক ধারণা
বিজ্ঞানমতে, স্ত্রী সহবাসে যে মুহুর্তে শুক্রাণুর সঙ্গে ডিম্বাণু মিলে যায়; তখনই মাতৃ গর্ভে শিশু বাবা মায়ের শরীর থেকে ২৩ টি করে ক্রোমোজোম পায়। সেই সময় চোখের মণির রং, চুলের রঙের মত কিছু বৈশিষ্ট নির্ধারণ হয়ে যায়।
শিশুর যৌনাঙ্গ তৈরি হওয়া শুরু হয় অন্তঃসত্ত্বা হওয়ার ১১ সপ্তাহ পর। এই সময় কোন পরীক্ষার মাধ্যমে সন্তানের লিঙ্গ নির্ধারণ করা সম্ভব হয় না। এর আরো কিছু সময় অতিবাহিত না হলে আলট্রাসাউন্ড পরীক্ষার মাধ্যমেও সন্তান ছেলে না মেয়ে তা বুঝা যায় না।
গর্ভের সন্তান ছেলে না মেয়ে বয়স্কদের ধারণা
সমাজের মধ্যে প্রচলিত কিছু ধারণা আছে, বয়স্করা এসব ধারণা দেখে গর্ভের সন্তান ছেলে না মেয়ে হবে তা বলে থাকেন। তবে প্রচলিত এ ধারণাগুলোর আদৌ বৈজ্ঞানিক সত্যতা আছে কি না তা জেনে নেওয়া যাক আজকের এই ইনফোতে।
বমির ধরন দেখে সন্তানের লিঙ্গ নির্ধারণ
বয়স্করা মনে করেন, অন্তঃসত্ত্বা নারীরা যদি ‘মর্নিং সিকনেস’ বা বমির প্রবণতা বেশি হয়, তাহলে তার গর্ভে কন্যা সন্তান বেড়ে উঠছে। বয়স্কদের এই ধারণার কিছুটা বৈজ্ঞানিক ধারণার মিল রয়েছে।
গর্ভে কন্যা সন্তান হলে শরীরে হরমোনের ক্ষরণ বেশি হয়। এই কারণে হবু-মায়েরা বেশি বমি করে থাকেন। ‘দ্যা ল্যানসেট’ পত্রিকায় প্রকাশিত এক গবেষণায় এমনটি জানা যায়। যা বয়স্কদের ধারণার সাথে কিছুটা মিলে যাচ্ছে।
গর্ভের সন্তান কি তা হবু মায়ের ত্বকের উজ্জ্বলতা দেখে বুঝার উপায়
বয়স্করা ধারণা করেন, গর্ভে যদি কন্যা সন্তান বেড়ে উঠতে থাকে; তাহলে না কি হবু-মায়ের চেহেরার সৌন্দর্য কমতে শুরু করে। তাই অনেকেই বলে থাকেন, অন্তঃসত্ত্বা অবস্থায় যদি কারও চেহেরা ফ্যাকাসে হয়ে যায়, তাহলে তার মেয়ে সন্তান হবে।
অপরদিকে হবু মায়ের চেহেরা যদি উজ্জ্বল হয়, তাহলে তার ছেলে সন্তান হবে। অনেকেই বলে থাকেন, গর্ভে ছেলে সন্তান থাকলে মায়ের চুল লম্বা হয় আর মেয়ে হলে চুল পড়ে যায়।
এই ধারণার কোন বৈজ্ঞানিক প্রমাণ এখনও পাওয়া যায় নাই। সমাজে এই ধারণা প্রচলিত থাকায় কেউ কেউ এটি মেনে নিয়ে হতাশা হয়ে যেতে পারেন।
গর্ভে কি সন্তান হবে তা খাওয়ার প্রবণতা দেখে বুঝা যায়
অন্তঃসত্ত্বা নারীর খাবার প্রবণতা দেখেও বয়স্করা টের পান তার গর্ভের সন্তান ছেলে হবে না কি মেয়ে হবে। প্রচলিত আছে, গর্ভবতী মায়েদের সন্তান ছেলে হলে না কি হবু মায়েরা নোনতা খাবার কিংবা আচার খাওয়ার ইচ্ছে বেশি হয়।
গর্ভবতী মায়েদের সন্তান যদি মেয়ে হয় তাহলে তাদের মিষ্টি খাওয়ার প্রবণতা বেড়ে যায়। বয়স্কদের এমন ধারণা নিয়ে অনেকেই বিপাকে পড়ে যান। বিশেষ করে হবু মায়েদের এমন ধারণা স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর হয়ে দাঁড়ায়।
তবে অন্তঃসত্ত্বা মায়েদের খাওয়ার পছন্দ অপছন্দের সঙ্গে সন্তানের লিঙ্গের কোনো সম্পর্ক আছে কি না, তা নিয়ে এখনও কোন গবেষণা হয় নাই। তাই এই ধারণার কোন বৈজ্ঞানিক সত্যতার প্রমাণ মেলে না।
অন্তঃসত্ত্বা মায়ের মেজাজ পরিবর্তন
বয়স্কদের মাঝে প্রচলিত আর একটি ধারণা হচ্ছে- হবু মায়ের মেজাজ যদি ঘন ঘন পরিবর্তন হয়,তাহলে তার গর্ভে কন্যা সন্তান আছে বলে ধরে নেওয়া হয়। এই ধারণার বৈজ্ঞানিক কোন সত্যতা নেই।
অন্তঃসত্ত্বা সব নারীর শরীরেই হরমোনাল পরিবর্তন আসে। তাই কারও কারও ক্ষেত্রে খুব দ্রুত মুড সুইং হতে পারে। এটি একটি সাধারণ বিষয়। এর সাথে গর্ভের শিশুর লিঙ্গের কোন সম্পর্ক নেই।
গর্ভের সন্তানের হার্ট রেট থেকে লিঙ্গ বুঝায় উপায়
আল্ট্রাসাউন্ডের মাধ্যমেও প্রথম দিকে সন্তানের লিঙ্গ জানা সম্ভব হয় না। তবে জনপ্রিয় এক বিশ্বাস অনুযায়ী, ১৪০ এর মতো গর্ভের সন্তানের হার্ট রেট হলে ছেলে এবং এর বেশি হলে মেয়ে সন্তান হবে। তবে এই ধারণাটি ভুল।
কেননা এই বিষয়ে একটি গবেষণা রয়েছে। ফিটাল ডায়াগনোসিস এ্যান্ড থেরাপি’ তে প্রকাশিত গবেষণাপত্রে উল্লেখিত তথ্য অনুযায়ী অন্তঃসত্ত্বা অবস্থায় ছেলে কিংবা মেয়ের হার্ড রেটে খুব একটা পার্থক্য বুঝা সম্ভব হয় না।
অন্তঃসত্ত্বা মায়ের পেটের আকার থেকে সন্তানের ধারণা
অনেকেরই ধারণা হবু মায়ের পেট যদি ঝুলে যায়, তাহলে কি না তার ছেলে সন্তান হওয়ার সম্ভবনা আছে। আর যদি এমন না হয় তাহলে মেয়ে সন্তান হবে।
তবে বিজ্ঞান অনুসারে, অন্তঃসত্ত্বা মায়ের পেটের আকার নির্ভর করে তার শারীরিক গঠন এবং ভ্রুণের আকারের উপর। গর্ভের সন্তানের লিঙ্গের উপর পেটের আকার নির্ভর করে না। তাই এই ধারণাটির বৈজ্ঞানিকভাবে কোন সত্যতা পাওয়া যায় না।
গর্ভের শিশু ছেলে হবে না কি মেয়ে হবে একটি গ্রাম্য ধারণা
গ্রামের বয়স্ক নারীরা মনে করেন, অন্তঃসত্ত্বা নারীর পেটে যদি ছোট ছোট ছেলে শিশু চুমু খায়, ঘ্রাণ নেয় কিংবা বেশি মেলামেশা করে তাহলে না কি সন্তান মেয়ে হবে। আর যদি মেয়ে শিশুরা এ রকম করে তাহলে ছেলে সন্তান হবে। এই ধারণারও বৈজ্ঞানিক কোন ভিত্তি নেই।
সবার মধ্যে একটা কৌতূহল থাকে যে, গর্ভের সন্তান ছেলে হবে না কি মেয়ে হবে। তবে মানুষের কথা শুনে সন্তান ছেলে হবে না কি মেয়ে হবে তা নিয়ে মাথা ঘামানো উচিৎ নয়। বর্তমান সামাজিক মাধ্যমগুলোতে অনেক ধরণের গুজব সর্বদা উড়ে বেড়াচ্ছে।
অনেকেই এই ধারণাগুলো দেখে বিভ্রান্ত হয়ে ভুল ধারণা পোষণ করে থাকেন। যা অন্তঃসত্ত্বা মায়ের স্বাস্থ্যের উপর প্রভাব ফেলতে পারে। তাই সর্বদা চেষ্ঠা করুন সন্তান যেন সুস্থ অবস্থায় পৃথিবীর মুূখ দেখতে পারে। এজন্য হবু মায়েরা পর্যাপ্ত বিশ্রাম গ্রহণ করুন এবং স্বাস্থ্য সম্পর্কে সচেতন থাকুন।
সুত্র: অনলাইন
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন