একজন নারীর কাছে গর্ভধারণ সম্ভবনা উত্তেজনা এবং উদ্বেগের বিষয়। তাই এই বিষয়ে নিশ্চিত হতে হবে আগে ভাগেই। আপনি পরুষ হলে আপনার স্ত্রী গর্ভবতী হওয়ার ব্যপারে সচেতন থাকা জরুরী। বিশেষ করে স্ত্রীর স্বাস্থ্যের প্রতি গুরুত্ব দেওয়া জরুরী। কেননা এর প্রভার আপনার হবু সন্তানের উপর পড়বে। যাইহো আজকের ইনফোতে গর্ভাবস্তা বা গর্ভধারণ পরীক্ষা: ইতিবাচক পরীক্ষার ফলাফল ভুল হয় কেন? শেয়ার করা হলো।
যারা নতুন
বিবাহ করেছেন, তাদের কাছে গর্ভাবস্থা জানার আগ্রহ অনেক। তবে এ ব্যপারে কারো কাছে সাহায্য
নিতে তারা নারাজ কিংবা লাজুকের কারণে উদ্বিগন্ন হয়ে পড়েন।
আরো জানুন:
কিভাবে সহবাস করলে স্ত্রী অন্তঃসত্ত্বা হবে না?
অন্তঃসত্ত্বা নারীর গর্ভের সন্তান ছেলে না মেয়ে কিভাবে জানবেন?
আকর্ষণীয় ত্বক কিংবা সুস্থ ত্বকের জন্য কি করবেন?
আপনার স্ত্রী গর্ভবতী হয়েছে কি না কিভাবে জানবেন?
গর্ভবতী হয়েছে
কিনা জানার জন্য বেশিরভাগ নারীরা প্রচলিত বাড়ির গর্ভাবস্থা পরীক্ষার উপর ভরসা রাখেন।
গর্ভবস্থা কিটসগুলো ওষুধের দোকানে কিংবা ফার্মাসিতে সহজেই কিনতে পাওয়া যায়। এই কিটস
গুলোতে একটি কাঠি থাকে যা নারীর মুত্রে উপস্থিত প্রেগনেন্সি হরমোন-hCG (হিউম্যান ক্রণিক
গোনাডেট্রপিন) এর মাত্রা নির্ণয় করে।
সাধারণভাবে
এই পরিক্ষা সঠিক হিসাবে ধরে নেওয়া হয়, যদিওবা এই পরীক্ষা দাবি করে ইহার ৯৭%-৯৯% পরীক্ষা
রেজাল্ট সঠিক। তবে খুব সামান্য ক্ষেত্রে ইতিবাচক বা নেতিবাচক ভুল রেজাল্ট দিয়ে থাকে।
গর্ভাবস্থা পরীক্ষার ইতিবাচক ভুল রেজাল্ট কি?
কোন নারীর
গর্ভাবস্থা পরীক্ষার রেজাল্ট ইতিবাচক হওয়ার পরও তিনি গর্ভবতী না হলে বুঝতে হবে গর্ভাবস্থা
পরীক্ষার ইতিবাচক ভুল রেজাল্ট সংঘটিত হয়েছে।
যদিও খুব
নগন্য পরিমাণে এমনটা ঘটে থাকে, তারপরও এমন হওয়ার বেশ কিছু কারণ রয়েছে। গর্ভাবস্থা পরীক্ষার
ইতিবাচক ভুল রেজাল্ট এর কারণগুলো কি তা নিচে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।
গর্ভবস্থা মূত্র পরীক্ষার ভুল রেজাল্টের কারণগুলোঃ
যদিও খুব সামান্য ইতিবাচক গর্ভাবস্থা মুত্র পরীক্ষার ফল ভুল হয়, তবুও এর কারণগুলো জেনে আপনি অবাক হবেন। কিটটা পরীক্ষার সময় কাজ ঠিকমত করলেও ভুল হবার অনেকগুলো কারণ রয়েছে। অনেকগুলোর কারণে কয়েকটি নিচে উল্লেখ করা হলো।
সাম্প্রতিক প্রসব বা গর্ভপাত হলে
যদি কোন নারী
সাম্প্রতিক সময়ে সন্তান জন্ম দিয়ে থাকে কিংবা গর্ভাবস্থায় ছেদ (গর্ভপাত বা গর্ভাস্রাবের
মাধ্যমে) ঘটে থাকে এবং এর বিগত ৪ সপ্তাহের মধ্যে পরীক্ষা করা হলে রেজাল্ট পজেটিভ আসার কথা।
এই সময় নারীর
শরীরে প্রেগনেন্সি হরমনোনের (hCG এর) মাত্রা অনেক বেশি থাকে। মহিলার শরীরে গর্ভাবস্থা
শেষ হবার পর থেকে hCG এর মাত্রা ধীরে ধীরে কমতে থাকে। ফলে পরীক্ষায় আপনি গর্ভবতী হলেও
বাস্তাবে গর্ভাবস্থা আপনার থাকে না।
রাসায়নিক গর্ভাবস্থা হলে ইতিবাচক ফল ভুল হয়
গর্ভবস্থা
রাসায়নিক হলে নিষিক্ত ডিম্বাণু বৃদ্ধি বন্ধ হয়ে যায়, প্রতিস্থাপনের পর এটি আর ভ্রণে
পরিণত হয় না। ফলে তাত্ত্বিকভাবে এই সময়ের প্রেগনেন্সি পরীক্ষার রেজাল্ট ইতিবাচক হয়ে থাকে।
বস্তুত গর্ভবস্থা
সমাপ্ত হয়ে যাবে গর্ভস্রাবের মাধ্যমে অনেক আগেই। সাধারণত ২৫%-৪০% গর্ভবস্থার সমাপ্তি
ঘটে অলক্ষিত গর্ভস্রাবের মধ্য দিয়ে। নারীর প্রেগনেন্সি পরীক্ষার রেজাল্ট ইতিবাচক হলেও
তিনি এই সময় গর্ববতী নন।
এক্টোপিক গর্ভাবস্থায় ইতিবাচক রেজাল্ট ভুল হয়
এক্টোপিক
গর্ভাবস্থা চিকিৎসা সংক্রান্ত অত্যান্ত জরুরী একটি বিষয়। কোন নারীর এ রকম ঘটে থাকলে তাকে
জরুরী ভিত্তিতে ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।
এক্টোপিক
গর্ভবস্থা তখন সৃষ্টি হয়, যখন কোন নিষিক্ত ডিম্বাণু জরায়ু ছাড়া অন্য কোন জায়গায় প্রতিস্থাপিত
হয়ে থাকে। জরায়ুর বাইরে থাকায় ভ্রণটি বাড়তে পারে না অর্থাৎ ভ্রণ বৃদ্ধির জন্য জরায়ুর
বাইরে কোন জায়গা পায় না।
এই সময়ের
গর্ভাবস্থা পরীক্ষার রেজাল্ট ইতিবাচক হলেও তা ভুল হবে। তাছাড়া এক্টোপিক গর্ভবস্থার
চিকিৎসা দ্রুত না নিলে নারীর মারাত্বক ক্ষতি হতে পারে।
অনেক আগে পরীক্ষা করা হলে ইতিবাচক রেজাল্ট ভুর হতে পারে
সাধারণত নারীর
স্পর্শকাতর পরীক্ষাগুরোর মধ্যে গর্ভাবস্থা পরীক্ষা অন্যতম। ওভ্যুলেশনের ঠিক পরের দিন
পরীক্ষা করা হলে ইতিবাচক রেজাল্ট দিবে। তাই বিজ্ঞদের পরামর্শ হচ্ছে, পিরিয়ড বন্ধ হওয়ার
কমপক্ষে এক সপ্তাহের পর গর্ভবস্থা পরীক্ষা করা প্রয়োজন। খুব আগে পরীক্ষা করা হলে রেজাল্ট ভুল
হওয়ার সম্ভবনা খুব বেশি থাকে। এটি একটি সাধারণ কারণ।
মহিলাদের শারীরিক সমস্যার কারণেও ভুল রেজাল্ট হতে পারে
নারীর দেহের
নানাবিধ শারীরিক সমস্যার কারণেও গর্ভাবস্থা পরীক্ষার ইতিবাচক রেজাল্ট ভুল হতে পারে।শারীরিক
সমস্য যেমন- গর্ভশয়, মুত্রশয়, ফুসফুস, বৃক্ক, স্তন পাকস্থলী ইত্যাদির ক্যান্সার, জেস্টেশনাল
প্রফোব্লাস্টিক ডিজিজ, ওভারিয়ান সিস্ট, বৃক্কের অসুখ কিংবা সুত্রনালীর সংক্রমণ।
এছাড়াও মহিলাদের
অ্যাডিনোমায়োসিসএর ফলে hCG এর মাত্রা অনেক বেড়ে যায় ফলে গর্ভাবস্থার পরীক্ষার রেজাল্ট
ইতিবাচক হলেও তা ভুল হয়ে থাকে।
ঋতৃবন্ধ বা মেনোপজ এর ক্ষেত্রে রেজাল্ট ভুল হয়
নারীর যখন
ঋতুবন্ধ বা মেনোপজের সময় ঘনিয়ে আসে, তখন তার শরীরের প্রেগনেন্সি হরমোন- hCG এর মাত্রা
বেড়ে যায়। ফলে এই সময়ে গর্ভাবস্থার পরীক্ষার রেজাল্ট ভুল হয়।
নমুনা মুত্রে অপদ্রব্য থাকলে রেজাল্ট ভুল হতে পারে
অনেক সময়
দেখা যায় যে, মুত্রের নমুনাতে অপদ্রব্য যেমন- সাবান বা রক্ত উপস্থিত থাকলে গর্ভবস্থা
পরীক্ষার রেজাল্ট ভুল হয়।
তাই প্রেগনেন্সি
পরীক্ষার জন্য নমুনা মুত্র যেন পরিস্কার থাকে অর্থাৎ নমুনা মুত্রতে যেন কোন প্রকার
অপদ্রব্য না থাকে, এমনভাবে গর্ভবস্থা পরীক্ষা করতে হবে।
মুত্র বাস্পীভবন বা ইভাপোরেশন লাইনে থাকার ফলে ভুল রেজাল্ট
যে কিটস দিয়ে
গর্ভাবস্থা পরীক্ষা করবেন, তার প্রস্তুতকারকের নির্দেশনা ভালভাবে পড়ে নিবেন। কেননা
নির্দেশাবলীতে উল্লেখিত সময় সীমার মধ্যে রেজাল্ট দেখছেন কি না তা নিশ্চিত করবেন। তা
না হলে গর্ভাবস্থার রেজাল্ট ভুল হতে পারে।
যদি নির্দেশাবলীতে
বলে দেওয়া সময়সীমার বহু পরে রেজাল্ট চেক করা হয়, তাহলে মুত্র বাস্পীভবন বা ইভাপোরেশন
লাইনের কাছাকাছি থাকার জন্য ভুল ফলাফল পাওয়া যেতে পারে।
ত্রুটিপূর্ন কিটস দিয়ে পরীক্ষা করা হলে রেজাল্ট ভুল হতে পারে
আপনাকে মনে
রাখতে হবে, নারীর জন্য গর্ভাবস্থা পরীক্ষা একটি স্পর্শকাতর বিষয়। তাই যে কিট দিয়ে পরীক্ষা
করবেন সেটি ত্রুটিপূর্ন কিনা তা যাচাই করে নিবেন।
ত্রুটিপূর্ন
কিট দিয়ে পরীক্ষা করলে রেজাল্ট ভুল হবে, এটাই স্বাভাবিক। তাই ব্যবহার করার আগে কিটটা
দেখে নিবেন।
বিশেষকরে,
পরীক্ষার সময় সীমা ঠিক আছে কিনা তা দেখে নেওয়া, এর জন্য নির্দশিকা ভাল করে পড়বেন।
কিছু ওষুধ গর্ভাবস্থা পরীক্ষার ভুল রেজাল্টের জন্য দায়ী
কোন নারী
যদি গর্ভধারণের জন্য hCG শট বা ওভ্যুলেশানের জন্য গ্রহণ করেন, তাহলে গর্ভাবস্থার পরীক্ষা
রেজাল্ট ভুল হতে পারে।
এছাড়াও আরো
কিছু ওষুধ আছে, যেগুলো গর্ভাবস্থার পরীক্ষার উপর প্রভাব ফেলতে পারে। যেমন- অ্যান্টিসাইকোটিক,
অ্যান্টিহিস্টেমাইনস, অ্যান্টিঅ্যাংজাইটি, ডাইইয়ুবেটিক, পারকিন্সন্স অসুখের ওষুধ এবং
নানা রকম ড্রাগ ইত্যাদি।
ড্রাগগুলোর
মধ্যে যেমন- মেথাডোন,ক্লোবোডিয়ামজপক্সইড কিংবা প্রোমেথাজাইন এর প্রভাবে গর্ভাবস্থার
পরীক্ষার ইতিবাচক রেজাল্ট ভুল হতে পারে।
গর্ভাবস্থার পরীক্ষার ভুল ও ফ্যান্টম hCG পরীক্ষার সম্পর্ক কি?
ফ্যান্টম hCG পরীক্ষা: ফ্যান্টম hCG হল রক্ত নমুনা
দিয়ে গর্ভাবস্থা পরীক্ষা। এই পরীক্ষায় গর্ভবতী না হওয়া সত্বেও ইতিবাচক ফলাফল প্রদান
করে।
ফ্যান্টম
পরীক্ষায় একজন নারীর দেহের নির্দিষ্ট কিছু রাসায়নিক পরীক্ষধীন কিটের সাথে বিক্রিয়া
করে প্রেগনেন্সি পরীক্ষার ফলাফল ভুল দিয়ে থাকে।
নারীর ফ্যান্টম
hCG পরীক্ষা করার যথেষ্ট কারণ রয়েছে, যদি মহিলার ফ্যান্টম পরীক্ষার রেজাল্ট ইতবাচক
হয় এবং মুত্র নমুনার পরীক্ষার রেজাল্ট নেতিবাচক হয়।
গর্ভাবস্থার রক্ত পরীক্ষার রেজাল্ট ভুল হওয়ার কারণসমূহঃ
যদি কোন নারীর
কাছে মুত্র নমুনার মাধ্যমে গর্ভাবস্থার পরীক্ষার ফলাফল ভুল বলে ধারণা হয়, তাহলে কালক্ষেপন
না করে ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে রক্ত পরীক্ষার মাধ্যমে গর্ভাবস্থা পরীক্ষা করা প্রয়োজন।
কেননা এই পরীক্ষাটি অনেক বেশি নির্ভরযোগ্য।
মুত্র নমুনার
পরীক্ষার তুলনায় রক্ত নমুনার পরীক্ষাতে কম মাত্রায় hCG থাকলেও তা ধরা পড়ে। তাই এটির
বিশ্বস্ততা অনেক বেশি।
তবে কিছু
সীমাবদ্ধতাও রয়েছে, এটার পরিমান অবশ্য খুবই নগন্য। যেমন- নির্দিষ্ট কিছু ওষুধের প্রভাবে
ভুল ফলাফল আসতে পারে। যে ওষুধগুলোর ব্যপারে আগেই উল্লেখ করা হয়েছে। টিউমার ওভারিয়ান
ক্যানসার মুত্রে বক্ত বা প্রোটিন এবং বহুগর্ভধাণের ফলে নারীর শরীরে প্রেগনেন্সি হরমোন-hCG
অতিমাত্রায় থাকে।
এছাড়াও রাসায়নিক
প্রেগনেন্সি, ঋতুবন্ধ বা মেনোপজ এবং গর্ভধারণের জন্য চিকিৎসা নেওয়ার জন্য অনেক সময়
ইতিবাচক প্রেগনেন্সি পরীক্ষার রেজাল্ট ভুল হয়ে থাকে।
প্রচলিত ঘরোয়া
পদ্ধতিতে প্রেগনেন্সি পরীক্ষার রেজাল্ট যদি ইতিবাচক পেয়ে থাকেন, তাহলে ডাক্তারের পরামর্শ
নিয়ে রক্ত পরীক্ষার মাধ্যমে নিশ্চিত হওয়া প্রয়োজন। আপনি যখন গর্ভবতী জেনে আনন্দিত হবেন,
তখন নিয়মিত ডাক্তারের পরামর্শ নিতে ভুলবেন না।
এটা এই জন্য করা প্রয়োজন যে, আপনার স্বাস্থ্যের পাশাপাশি আপনার প্রাক-প্রসবকালীন যত্নের জন্যেও জরুরী বিষয়। এছাড়াও ডাক্তারের নজরদারীর মধ্যে একটি সুন্দর ও সুস্থ গর্ভাবস্থা লাভ করার জন্য এটা প্রয়োজন।
Disclaimer: এই ইনফোটি সাধারণ প্রকৃতির এবং শিক্ষামূলক উদ্দেশ্যে উপলভ্য, স্বাস্থ্য সেবা বা ডাক্তারের পরমর্শের বিকল্প হিসাবে কোন অবস্থাতেই বিবেচিত হইবে না। আপনার শারীরিক যে কোন সমস্যার জন্য জাক্তারের সাথে যোগাযোগ করুন।