নারীর গর্ভবতী হওয়ার লক্ষণ: গর্ভবতী হওয়ার প্রথম সপ্তাহের লক্ষণ সমূহ কি?

0

নারী সমাজের ভারসাম্য রক্ষা করতে অধিক কষ্ট সহ্য করে থাকেন। তবুও অনেক ক্ষেত্রে সমাজে তাদেরকে সম্মান দেওয়া হয় না। আজকের ইনফোতে নারীর গর্ভবতী হওয়ার লক্ষণ কিংবা গর্ভবতী হওয়ার প্রথম সপ্তাহের লক্ষণ সমূহ কি কি? তা নিয়ে আলোচনা করা হলো। 


নারীর গর্ভবতী হওয়ার লক্ষণ: গর্ভবতী হওয়ার প্রথম সপ্তাহের লক্ষণ সমূহ কি?


বেশিরভাগ নারী বিশেষ করে যারা প্রথমবারের মত মা হতে যাচ্ছেন তারা গর্ভবতী হওয়ার লক্ষণগুলো নিয়ে দ্বিধাদন্দে ভোগে থাকেন। সাধারণত মাসিক কিংবা ঋতৃস্রাব বন্ধ হলে অর্থাৎ পিরিয়ড মিস হওয়ার ১ বা ২ সপ্তাহের মধ্যেই গর্ভধারণের কিছু উপসর্গ শরীরে দেখা যায়।


(toc) #title=(ইনফোটি এক নজরে দেখুন)

 

সহবাসের কতদিন পর গর্ভবতী হয় বা গর্ভধারণের লক্ষণগুলো কখন থেকে দেখা যায়?

 

সাধারণত সহবাসে নারীর ডিম্বাণু নিষিক্ত হলেই গর্ভবতী হওয়ার লক্ষণগুলো প্রকাশ পেতে শুরু করে। ডিম্বাণু নিষিক্ত হওয়ার পর যৌন পথের ফেলোপিয়ান টিউব (Fallopian Tube) হয়ে জ্বরায়ুতে পৌঁছাতে প্রায় ৬ দিন সময় লেগে যেতে পারে।

গর্ভধারণের লক্ষণগুলো একেক নারীর ক্ষেত্রে একেক সময়ে প্রকাশ পেয়ে থাকে। প্রথম ছয় সপ্তাহের মধ্যেই প্রায় ৬০% নারীর গর্ভধারণের বিভিন্ন উপসর্গ দেখা যায় এবং গর্ভধারণের প্রথম ৮ সপ্তাহের মধ্যে প্রায় ৯০% নারী গর্ভবতী হওয়ার লক্ষণগুলো অনুভব করতে পারেন।

যদি কোন নারী পিরিয়ড বা মাসিকের হিসাব না রাখেন কিংবা তার মাসিক নিয়মিত না হয়, তাহলে তিনি বুঝতে পারেন না পরবর্তী সময়ে কখন মাসিক হবে। এমন পরিস্থিতিতে নিচে উল্লেখ করা উপসর্গ মিলিয়ে দেখতে পারেন  তিনি গর্ভবতী হয়েছেন কি না।

গর্ভধারণের লক্ষণগুলো দেখে নিজেকে মিলিয়ে দেখতে পারেন তিনি প্রেগনেট কি না। এছাড়াও উপসর্গ সমূহের সাথে মিলিয়ে দেখার পাশাপাশি বাসায় বসেই প্রেগন্যান্সি কিট দিয়ে গর্ভাবস্থা পরীক্ষা করতে পারেন।

অন্তঃসত্তা মহিলার গর্ভের সন্তান ছেলে না মেয়ে কিভাবে জানবেন?

কোন কোন সময় সহবাস করণে গর্ভবতী হওয়ার সম্ভবনা নেই?


নারীর গর্ভবতী হওয়ার লক্ষণ সমূহ

নতুন যারা মা হতে চায় কিংবা মা হতে যাচ্ছেন তাদের মনে নানা ভাবনা বিরাজ করে অথবা সন্দেহ হয় যে তিনি গর্ভবতী হয়েছেন কি না। অনেকের মাসিক নিয়মিত না হওয়ায় বুঝতেই পারে না যে তিনি গর্ভবতী হয়েছেন। একজন নারী গর্ভবতী হলে তার শরীরে যে সকল উপসর্গ দেখা যায় তা নিচে উল্লেখ করা হলোঃ


১) মাসিক বা ঋতৃস্রাব বন্ধ হওয়া

নারী গর্ভবতী হওয়ার অন্যতম প্রধান লক্ষণ হচ্ছে পিরিয়ড মিস হওয়া। সাধারণত নারীদের প্রতিমাসে একটি নির্দিষ্ট সময়ে ঋতুস্রাব হয়ে থাকে।এই ঋতুস্রাব বা পিরিয়ড বা মাসিক বন্ধ হলে নারী গর্ভবতী কিংবা অন্তঃসত্ত্বা হয়েছেন ধরে নেওয়া হয়।

পিরিয়ড সাধারণত ২৮-৩২ দিন পর পর হয়ে থাকে। আপনি গর্ভবতী হয়েছেন কি না এটা জানার জন্য আপনার পিরিয়ড ঠিক সময়ে হচ্ছে কি না খেয়াল করুন। যদি নির্ধারিত সময়ের পরও মাসিক বা পিরিয়ড না হয়, তাহলে হয়তো আপনি গর্ভধারণ করেছেন। নিশ্চিত হওয়ার জন্য অন্যান্য উপসর্গ মিলিয়ে নিতে পারেন এবং পাশাপাশি বাসায় বসে প্রেগন্যান্সিকিট দিয়ে গর্ভাবস্থা পরীক্ষাকরতে পারেন।

যে নারীর আগে থেকেই অনিয়মিত ঋতুস্রাব বা পিরিয়ড হয়ে থাকে, তাদের গর্ভবতী হওয়ার এই লক্ষণটি বোঝা প্রথম অবস্থায় একটু কষ্টকর হয়ে থাকে। আপনার যদি মাসিক নিয়মিত না হয়ে থাকে কিংবা মাসিক চক্রের হিসাব ঠিকঠাক রাখতে না পারেন, তাহলে মাসিক বন্ধ হয়েছে কি না তা বুঝার আগেই নিচের উপসর্গগুলো মিলিয়ে দেখতে পারেন।

 

২) খাবারে অনীহা প্রেগন্যান্সির একটি উপসর্গ হতে পারে

নতুন যারা গর্ভবতী হয়ে থাকেন, তাদের খাবারের প্রতি অনীহা অস্বাভাবিক নয়। আপনি যদি নতুন প্রেগন্যান্সির অভিজ্ঞা পেয়ে থাকেন তাহলে খাবারে অনীহা বোধ করবেন কিংবা আপনার খাবারে রুচি কমে যাবে। এসময় বিভিন্ন খাবারের ব্যাপারে গন্ধপ্রবন হয়ে যেতে পারেন। কিছু কিছু খাবারের গন্ধ আপনার অসহ্যও হতে পারে কিংবা পেট গুলিয়ে উঠতে পারে।

 প্রেগন্যান্সি নারীরা কেন খাবারের প্রতি অনীহা কিংবা গন্ধপ্রবন হয়ে ওঠে তার কারণ নিশ্চিত ভাবে জানা যায় না, তবে ধারণা করা হয় গর্ভাবস্থায় দেহে দ্রুত পস্ট্রোজেন হরমোনের পরিমাণ বৃদ্ধির একটি পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া।

আপনি গর্ভবতী হলে হয়ত দেখতে পারেন যে কিছু বিশেষ খাদ্য অনেক মজা করে খেতেন কিন্তু হঠাৎ করে তা এখন একেবারেই অসহ্য লাগছে। অনেকের মুখে আবার বিস্বাদ লাগে অথবা তমাটে ধরণের স্বাদ অনুভব করে থাকেন। কারো কারো ক্ষেত্রে মুখে দুর্গন্ধও লক্ষ করা যায়। গর্ভাবস্তায় নারীর শরীরে নানা রকম পরিবর্তনের কারণেই এমনটা ঘটতে পারে।

 

৩) গর্ভাবস্থায় নারীর মেজাজের পরিবর্তন

যখন কোন নারী গর্ভবতী হয়, তখন তার মেজাজের পরিবর্তন হওয়া খুবই সাধারণ একটি বিষয়। আংশিকভাবে এর কারণ হচ্ছে হরমোনের পরিবর্তন।

মস্তিস্কের রাসায়নিক বাহক নিউরোট্রান্সমিটারের মাত্রাকে প্রভাবিত করার ফলে মেজাজের পরিবর্তন ঘটে থাকে। হরমোনের আধিক্যের কারনেই মুড সুইং দ্রুত পরিবর্তন হতে দেখা যায়।

এই রাগ, এই দুঃখ, কখন অবসাদ আবার একটু পরেই আনন্দে ভরে ওঠার মত মুড সুইং গর্ভধারণের প্রথম সপ্তাহে যে লক্ষণগুলো দেখা যায় তার মধ্যে অন্যতম।

প্রতিটি নারীর ক্ষেত্রে এ পরিবর্তন আলাদা আলাদা সাড়া প্রদান করে থাকে। প্রথমবারের মত মা হতে যাচ্ছে এমন অনেকেই অতিমাত্রায় আবেগপ্রবণ হয়ে যেতে পারেন। ভাল কিংবা মন্দ উভয় প্রকার পরিবর্তন লক্ষ করা যায়। অনেকের ক্ষেত্রে আবার এই সময় বিষন্নতা কিংবা দুশ্চিন্তায় ভোগা অস্বাভাবিক নয়।

বিঃদ্রঃ মানসিক পরিবর্তন আপনার যদি কন্ট্রোলের বাহিরে চলে যায়, তাহলে দ্রুত স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারীর সাথে কিংবা মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞের সাথে যোগাযোগ করতে ভুলবেন না। কেননা নিজের উপর নিয়ন্ত্রণ রাখতে না পারলে মা হওয়া স্বপ্ন ভেস্তে যেতে পারে। সাথে আপনার জীবণটিও।

গর্ভধারণ পরীক্ষার ইতিবাচক ফলাফল ভুল হয় কেন? 

গর্ভবতী মায়ের খাবার তালিকা তৈরি করবেন কিভাবে?


৪) গ্যাস্টিক বা পেট ফোলা ভাব

গর্ভবতী হওয়ার প্রথম দিকে অনেকেরই পেটে গ্যাসের সমস্যা লক্ষ করা যায়। এসময়ে আপনার পেট ফাঁপার অনুভূতি হতে পারে, যেমনটা মাসিক শুরু হওয়ার আগে করে থাকে। হরমোনের কারণেই এমনটা হয়ে থাকতে পারে।

এই সময়ে যদিও জরায়ুতে তেমন কোন পরিবর্তন না হয়ে থাকে তবুও কোমরের কাছে আপনার কাপড় সাধারণ সময়ের চেয়ে বেশি আঁটসাঁট অনুভূব হতে পারে। ধারণা আরো গভীর হলে নিজেকে আরো অন্যরকম মনে হতে পারে।

গ্যাস্টিক বা এই পেট ফোলা ভাবের কারণে নিজের বাড়িতে তেমন কোন সমস্যা না হলেও বাড়ির বাহিরে বিব্রতকর পরিস্থিতি সৃষ্টি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। তবে এ নিয়ে চিন্তার কোন কারণ নেই, এটি একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। তাই উদ্বিগ্ন হবার কিছুই নেই।


৫) গর্ভাস্থায় ঘন ঘন প্রস্রাব হতে পারে

গর্ভধারণের কারণে এবং নারীর শরীরে হরমোনের কারণে যে পরিবর্তনগুলো হয়, তার মধ্যে শরীরে রক্ত প্রবাহ বৃদ্ধি হওয়া একটি। এর কারণে শরীরে কিছু ধারাবাহিক প্রক্রিয়ার গতি বেড়ে যায় যা কিডনিতে রক্ত প্রবাহের হার বাড়িয়ে তোলে।

ইহার কারণে মুত্রথলি আরো দ্রুত পূর্ণ হয়ে যায়। এটাই মূলত ঘন ঘন প্রস্রাব হওয়ার জন্য দায়ী। গর্ভবতী নারীর প্রথম দুই থেকে তিন সপ্তাহ ঘন ঘন প্রস্রাব হওয়া খুবই স্বাভাবিক ব্যপার।

গর্ভাবস্থার সময় যাওয়ার সাথে সাথে ভ্রুণের বৃদ্ধির সাথে তার মিলিয়ে জরায়ুর আকারও বাড়তে থাকে। যখন ক্রমবৃদ্ধিমান শিশু মুত্র থলিতে চাপ দিতে থাকে, তখন সমস্যাটি আরো জটিল আকার ধারণ করে। ফলে ঘন ঘন মুত্রত্যাগ করার প্রয়োজন হয়।

 

৬) গর্ভধারণে ক্লান্ত লাগে কেন?

গর্ভবতী হওয়ার উপসর্গগুলোর মধ্যে ক্লান্ত লাগা একটি উপসর্গ। হঠাৎ ক্লান্ত বোধ করা কিংবা ক্লান্তিতে ভেঙ্গে পড়তে পারেন যা অনেকের ক্ষেত্রে দেখা যেতে পারে। গর্ভধারণের প্রথম দিকে কেন এমনটা হয়ে থাকে তা নিশ্চিত করে বলা যায় না।

তবে কারো কারো ধারণা প্রজেস্টেরন হরমোনের মাত্রার দ্রুত বৃদ্ধির কারণে শরীরে ক্লান্ত বোধ বা ঘুম ঘুম ভাব হয়ে থাকে। এটা এ কারণেও হতে পারে যে, মর্নিং সিকনেস ও রাতে ঘুম থেকে ওঠে বার বার প্রস্রাব করাতে শরীরে ক্লান্তিবোধ হতে পারে।

গর্ভধারণের দ্বিতীয় ট্রাইমেস্টার সময়ে এই ক্লান্তিবোধ কেটে যাবে। তখন আগের চেয়েও বেশি ভাল বোধ করে থাকবেন। তবে গর্ভধারণের শেষের দিকে আবার ক্লান্তিবোধ আসতে পারে। কেননা স্বাভাবিক ভাবেই আপনি তখন অনেক ওজন বহন করে থাকবেন।

এই সময়ে গর্ভকালীন নানা সমস্যায় রাতের ঘুমের ব্যাঘাত ঘটতে পারে। সাধারণত ঘুম কম হলেই যে কেউ স্বাভাবিক ভাবেই ক্লান্তিবোধ করেন।

 

৭) স্তনের পরিবর্তন হওয়া

গর্বধারণের প্রথম দিকে সংবেদনশীল/ স্পর্শকাতর উপসর্গ হচ্ছে স্তন। এটা হরমোনের মাত্রার বৃদ্ধির কারণে হয়ে থাকে। অনেক সময় মাসিক শুরু হওয়ার আগেও এই ধরণের স্পর্শকাতর কিংবা ব্যাথা হয়ে থাকে। তবে গর্ভাবস্থায় একইরকম কিংবা আরও প্রকটভাবে এই উপসর্গ আরো প্রকটভাবে অনুভূত হতে পারে আপনার কাছে।

প্রথম ট্রাইমেস্টারের পর অর্থাৎ গর্ভাবস্থার প্রথম তিন মাস পর স্তনের এই অবস্থা উল্লেখযোগ্যভাবে কমে যেতে পারে, তখন আপনার কাছে স্বাভাবিক মনে হতে পারে।কারণ ততদিনে শরীর থেকে হরমোনের পরিবর্তনের সাথে অভ্যাস্থ হয়ে যাবেন।

গর্ভাবস্তা নিশ্চিত হওয়ার পর থেকে স্তনের আকার পরিবর্তন শুরু হয়ে থাকে। প্রথম দিকে স্তনের বোটায় (Nipple) পরিবর্তন হয়। বোঁটা চেপে ধরলে এক ধরণে রস নিঃসৃত হয়ে দেখা যায়।

গর্ভবতী হওয়ার দিন বাড়ার সাথে সাথে ক্রমেই স্তনের আকার বড় হতে দেখা যায়। এই সময় ব্যাথাও হতে পারে যেমনটা অনেকের মাসিকের সময়ও ঘটে থাকে। কখনো কখনো শিরশিরে অনুভুতি হতে পারে।

 

৮) গর্ভাবস্থায় হাল্কা রক্তপাত বা স্পটিং হওয়া

সবার কাছে এই উপসর্গটি দেখা নাও দিতে পারে। কিছু নারী গর্ভবতী কিনা তা জানার আগেই হাল্কা স্পটিং লক্ষ করতে পারেন। অনেকেই এটাকে মাসিক হিসাবে ধরে নিতে পারেন।

ওভুলেশনের প্রথম বা দ্বিতীয় সপ্তাহের মধ্যে এমনটা হতে পারে। এই রক্তপাতকে ইমপ্ল্যান্টেশন ব্লীডিং (Implantation Bleeding) বলা হয় থাকে। কেননা জরায়ুতে ভ্রুন স্থাপিত বা ইমপ্লেনটেশনের সময় এ রক্তপাত হতে দেখা যায়।

সাধারণত এই রক্তপাত হালকা বাদামি রঙের দেখা যায়। নারীর ডিম্বাণু নিষিক্ত হওয়ার ৬ দিনের মধ্যে এই প্রক্রিয়াটি শুরু হয়ে থাকে।

যদি ঋতৃস্রাব শুরু হওয়ার সপ্তাহ খানেক আগে এক বা দুদিন এ ধরণের স্পটিং দেখা যায়, তাহলে প্রেগন্যান্সি পরীক্ষা করে দেখতে পারেন। যদি রেজাল্ট নেগেটিভ আসে তাহলে কিছু দিন অপেক্ষা করে আবার পরীক্ষা করে দেখতে পারেন। মাসিক বন্ধ হলে গর্ভাবস্থা নিশ্চিত হওয়ার জন্য পরীক্ষা করতে ভুলবেন না।

দৃষ্টিপাত: প্রতি চার জন নারীর একজনের এই ধরণের রক্তপাত হতে দেখা যায়। এটা প্রথম ট্রামেস্টারের শুরুর দিকে ঘটে থাকে। গর্ভবস্থার রক্তক্ষরণ একটি সাধারণ বিষয় হতে পারে, আবার কোন মারাত্মক জটিলতার কারণেও ঘটতে পারে। যেমন- এক্টপিক প্রেগন্যান্সি, গর্ভপাত কিংবা প্লাসেন্টা জনিত কারণে রক্তক্ষরণ হতে পারে। তাই এই ধরনের সমস্যা দেখা দিলে দ্রুত ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিৎ যাতে তিনি পরীক্ষা করে দেখতে পারেন সবকিছু ঠিক আছে কিনা।

 

৯) গন্ধের প্রতি সংবেদনশীলতা ও বমি বমি ভাব হওয়া

এই উপসর্গটি দেখা যায় সাধারণত গর্ভধারণের ২ থেকে ৪ সপ্তাহ পর থেকে। মর্নিং সিকনেস অর্থাৎ সকালে ঘুম থেকে উঠার পর ক্লান্ত লাগা ও বমির ভাব হতে দেখা যায়। বমির ভাব হওয়া শুধু সকালেই নয়, এটা দুপুরে কিংবা রাতেও হতে পারে।

কিছু নারীর গর্ভধারণের ৬ সপ্তাহ সময় থেকে মর্নিং সিকনেস বা বমি বমি ভাব উপসর্গ দেখা যায়। আবার কারো কারো ক্ষেত্রে ৪ সপ্তাহ থেকেও শুরু হতে দেখা যায়। এই সময় অনেকে বিভিন্ন ধরণের গন্ধের প্রতি সংবেদনশীল হয়ে পড়েন।

 

১০) দেহের তাপমাত্রা স্বাভাবিকের চাইতে বেড়ে যাওয়া

আপনার শরীরের তাপমাত্রা যদি লিপিবদ্ধ করে রাখেন, আর যদি দেখেন যে আপনার শরীরের তাপমাত্রা অন্তত ১৮ দিন ধরে স্বাভাবিকের চাইতে বেশি, তাহলে ধরে নিতে পারেন এটি গর্ভধারণের সংকেত হতে পারে।

গর্ভধারণের সময় আপনার দেহের নানা পরিবর্তন ও শরীরে তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়াও একটি পরিবর্তন।

 

১১) গর্ভবতী নারীর কোষ্ঠকাঠিন্য হওয়া

একজন নারী যখন গর্ভধারণ করেন তখন তার শরীরে যে উপসর্গগুলো দেখা যায় তার মধ্যে কোষ্ঠকাঠিন্য একটি উপসর্গ। এই উপসর্গটি হরমোনের মাত্রার তারতম্যের কারনে ঘটে থাকে।

গর্ভাবস্থায় নারীর শরীরে অধিকহারে হরমোন বৃদ্ধি পায়। ফলে শরীরের হজম প্রক্রিয়ার গতি কমে যায়। এর ফলে কোষ্ঠকাঠিন্য দেখা যেতে পারে।

 

গর্ভবতী হওয়ার প্রথম সপ্তাহের লক্ষণ সমূহ

প্রতিটি নারীর জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সময় হলো অন্তঃস্ত্বা মুহূর্ত। গর্ভধারণের প্রথম সপ্তাহে নারীর শরীরে নানা রকম উপসর্গ দেখা যায়। এ লক্ষণগুলো সবার জন্য সমান হয় না।


গর্ভবতী হওয়ার প্রথম সপ্তাহের লক্ষণ সমূহ


গবেষণায় দেখা গেছে, কমবেশি সব নারীই প্রথম সপ্তাহে কিছু লক্ষণ দেখতে পান। যেমন-

১) মাসিকের মতই হাল্কা রক্তক্ষরণ হওয়া। এটা গর্ভধারণের প্রথম দিকে ৬ থেকে ১২ দিন মধ্যে হতে পারে। এই স্পটিং বিস্তারিত আগেই উল্লেখ করা হয়েছে।

২) গর্ভধারণের প্রথম সপ্তাহে মুখে অন্য রকম স্বাদ অনুভূব করতে পারেন। যা খাবারের প্রতি অনীহা প্রকাশ করে থাকে।

৩) গর্ভধারণের সময় নারীরা অতিরিক্ত পরিমানে স্বপ্ন দেখে থাকেন। তিনি গর্ভবতী হয়েছেন এমন স্বপ্নই বেশি দেখেন।

৪) অনেক সময় মুখে বা হাত-পায়ে কালো কালো ছাপ দাগ পড়তে দেখা যায়। গর্ভধারণে ত্বকের সংবেদনশীলতা বেড়ে যাওয়ায় এমনটা হতে পারে।

৫) ক্লান্তি লাগা।

৬) ঘন ঘন প্রস্রাব হওয়া।

৭) মাথার ধরা বা মাথার যন্ত্রনা হতে পারে। হরমোনের মাত্রা শরীরে বেড়ে যাওয়ায় গর্ভধারণের প্রথম সপ্তাহে মাথাব্যথা শুরু হতে পারে।

 

আপনি গর্ভবতী হয়েছেন কিনা নিশ্চিত হওয়ার জন্য কি করবেন?

আপনার মনে যদি সন্দেহ জাগে যে, গর্ভধারণ করেছেন কিনা? তবে গর্ভধারণের লক্ষণগুলোর পাওয়ার পর বাসায় বসে প্রেগন্যান্সি কিট দিয়ে পরীক্ষা করে নিশ্চিত হতে পারেন। গর্ভাবস্থা পরীক্ষা করার জন্য বাজেরে ডাক্তারের দোকানে কিংবা ফার্মিসিতে এই কিট গুলো পাওয়া যায়। ব্যবহারের নিয়ম সাথে দেওয়া থাকে।


আপনি গর্ভবতী হয়েছেন কিনা নিশ্চিত হওয়ার জন্য কি করবেন?


মাসিক বা ঋতুস্রাব বন্ধ হওয়ার কমপক্ষে এক সপ্তাহ পরে প্রেগন্যান্সি টেস্ট করবেন। কেননা এক সপ্তাহের মধ্যে গর্ভবস্থা পরীক্ষা করলে ভুল রেজাল্ট আসতে পারে। পিরিয়ড মিস হওয়ার এক সপ্তাহের মধ্যে পরীক্ষা করে যদি নেতিবাচক রেজাল্ট পান তাহলে আরো কিছুদিন অপেক্ষা করে পরীক্ষা করুন।

গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে, গর্ভধারণের বিভিন্ন উপসর্গ দেখার বা গর্ভবতী নিশ্চিত হওয়ার বেশ আগে থেকেই বাচ্চার গঠন শুরু হয়ে থাকে। তাই যখনই আপনার গর্ভবতী হওয়ার সুসংবাদ জানতে পারেন, তখন থেকেই নিজের প্রতি যত্নবান হোন। আর গর্ভবতী নিশ্চিত হওয়ার সাথে সাথে গাইনি ডাক্তারের পরামর্শ নিতে ভুলবেন না।

 

গর্ভবতী বিষয়ে যে প্রশ্নগুলো নিয়মিত করা হয়

গর্ভবতী সম্পর্কে অনেকেরই জানার আগ্রহ থেকে থাকে। বিশেষ করে যারা নতুন মা হতে চান, তাদের জানার শেষ নাই। তারা অনেক প্রকার প্রশ্ন করে থাকরেও মূলত সার-সংক্ষেপ দুটি বা তিনটি প্রশ্ন করে ফেলেন। সহবাসের কতদিন পর গর্ভবতী হয়? গর্ভবতী হওয়ার পর কি মাসিক হয়? পিরিয়ড মিস হওয়ার কতদিন পর গর্ভধারন বোঝা যায়? গর্ভধারণের প্রথম সপ্তাহের লক্ষণগুলো কি কি? ইত্যাদি।

 

মাসিব বা ঋতুস্রাব বন্ধ হওয়ার কত দিন পর প্রেগন্যান্ট বোঝা যায়?

মাসিক বা পিরিয়ড মিস হওয়ার পরের দিনই আপনি প্রেগন্যান্সি পরীক্ষা করে দেখতে পারেন। রেজাল্ট যদি পজেটিভ হয় তাহলে বুঝতে হবে আপনার গর্ভধারণের দুই সপ্তাহ অতিবাহিত হয়েছে। অনেক সময় পিরিয়ড শুরুর তারিখ থেকে আরো দুই সপ্তাহ পর সঠিক ফলাফল পাওয়া যায়।

যাদের শরীরে হরমোনের পরিমান ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পায়, তাদের ক্ষেত্রে একটু দেরিতে গর্ভধারণের পরীক্ষা করা উচিৎ। কেননা আগে পরীক্ষা করলে রেজাল্ট ভুল হতে পারে।

এছাড়াও যাদের অনিয়মিত মাসিক হয়ে থাকে তাদের ক্ষেত্রে পরীক্ষার সঠিক সময় বোঝা যায় না।কারণ পরবর্তী মাসিক কখন হবে তা বোঝা মুশকিল। তাই এ ক্ষেত্রে সাম্বাব্য তারিখের পর গর্ভধারণের পরীক্ষা করা ভালো। নিশ্চিত হওয়ার জন্য সাত সপ্তাহ পর গর্ভধারণের পরীক্ষা করলে সঠিক রেজাল্ট পাওয়া যাবে।

সাম্প্রতি কালে আপনি যদি কোন জন্ম নিরোধক ওষুধ ব্যবহার বন্ধ করে থাকেন, তাহলে হয়তো বুঝতে পারবেন না যে পিরিয়ড চক্রের সময় কখন। এমন অবস্থায় পরীক্ষার রেজাল্ট না সূচক হলে ৩/৪ দিন পর আবার পরীক্ষা করে দেখতে পারেন।

 

গর্ভধারণের পরও কি মাসিক বা ঋতৃস্রাব হয়?

সাধারণত গর্ভবতী হওয়ার পর নারীর মাসিক বন্ধ হয়ে যায়। প্রতি মাসে নারীর জরায়ু একটি ডিম্বাণুকে নিষিক্ত করার প্রস্ততিস্বরুপ একটি পুরু রক্ত-সমৃদ্ধ আবরণ তৈরী করে থাকে। কোন নারী যখন গর্ভধারণ না করে তখন এই কোষ এবং রক্ত নারীর শরীর থেকে নির্গত হয়। এটাকেই মূলত মাসিক বা ঋতুস্রাব কিংবা পিরিয়ড বলা হয়।

কিন্তু একবার যখন এই আবরণে একটি ডিম্বাণু নিষিক্ত হয়ে যায়, তখন এই রক্ত-সমৃদ্ধ কোষটি অটুট থাকে। কারণ এই সময় শরীরের হরমোন ক্রমবর্ধমান শিশুর ভারবহন করার জন্য নির্দেশ প্রদান করে। ফলে শরীর থেকে আর নির্গত করে না। তাই সন্তান ভূমিষ্ঠ না হওয়া পর্যন্ত মাসিক বন্ধ থাকে।

 

একজন নারী সহবাসের কত দিন পর গর্ভবতী হয়?

সহবাসের ফলে যদি নারীর ডিম্বাণু নিষিক্ত না হয় কিংবা নিরাপদ দিনগুলো সহবাস করে থাকেন, তাহলে গর্ভধারণের সম্ভবনা খুবই কম। গর্ভবতী বা বাচ্চা নিতে চাইরে ডেঞ্জার পিরিয়ডের দিনগুলোতে সহবাস করা উচিৎ।


একজন নারী সহবাসের কত দিন পর গর্ভবতী হয়?


সহবাসে ডিম্বানু নিষিক্ত হলে সেই দিন থেকেই আপনি গর্ভবতী হয়ে যাবেন। দিন বাড়ার সাথে সাথে গর্ভবতী হওয়ার লক্ষণগুলো আপনার শরীরে প্রকাশ পেতে থাকবে।

 

Disclaimer: এই ইনফোটি সাধারণ প্রকৃতির এবং শিক্ষামূলক উদ্দেশ্যে উপলভ্য, স্বাস্থ্য সেবা বা ডাক্তারের পরমর্শের বিকল্প হিসাবে কোন অবস্থাতেই বিবেচিত হইবে না। আপনার শারীরিক যে কোন সমস্যার জন্য জাক্তারের সাথে যোগাযোগ করুন।

Tags

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)

#buttons=(Accept !) #days=(20)

Our website uses cookies to enhance your experience. Learn More
Accept !