বাংলাদেশে মোবাইল ব্যাংকিং বর্তমান সময়ে অত্যান্ত জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। আর এই সুযোগে প্রতারক চক্রও মোবাইল ব্যাংকিং গ্রহকদের নানা রকম প্রতারণা করে অবৈধভাবে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। যারা মোবাইল ব্যাংকিং লেনদেন সম্পর্কে ভাল জানেন না তারাই মূলত বেশি প্রতারণার শিকার হয়ে থাকেন। আজকের ইনফোটিতে মোবাইল ব্যাংকিং এ প্রতারণার শিকার ও ফোনকল বন্ধ হলে কি করবেন? তা শেয়ার করা হলো।
মোবাইল ব্যাংকিং এর ক্ষেত্রে পিন কোড হচ্ছে নিরাপত্তার চাবিকাট। চাবি ছাড়া যেমন তালা খোলা যায় না তেমনি পিন কোড ছাড়া একাউন্টা খোলা বা ব্যবহার করা সম্ভব নয়।তাই প্রতারক চক্র প্রথমেই গ্রাহকদের কাছ থেকে পিন কোড হাতিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে।
গ্রহকদের কাছ থেকে পিন কোড হাতিয়ে নেওয়ার কৌশল
প্রতারকরা
সাধারণত কাস্টমারকেয়ারের অফিসার বা ভূয়া কাস্টমার কেয়ার সেজে প্রথমে মোবাইল ব্যাংকিং গ্রাহকদের কাছ থেকে পিন
কোড হাতিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে। এখানে ব্যর্থ হলে অন্যান্য কৌশল প্রয়োগ করে টাকা হাতিয়ে
নেয়।
সাম্প্রতি
বিকাশের নাম ভাঙিয়ে প্রতারক চক্র নতুন ফাঁদ পেতে বসেছে। অবৈধ আর্থিক লেনদেন রোধে সমস্ত
পার্সোনাল ”বিকাশ একাউন্ট” বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে।
আপনার একাউন্টে
টাকা থাকলেও তা তুলতে পারবেন না, এমন কিছু চটকদার তথ্য দিয়ে আপনাকে বিভ্রান্ত করে পিন কোড হাতিয়ে
নেওয়ার চেষ্টা করবে। এই প্রক্রিয়ায় প্রথম ধাপে আপনাকে দুটি কোড ডায়াল করতে উৎসাহিত
করবে।
এই কোড দুটি
যদি আপনি ফোনে ডায়াল করেন তাহলে আপনার ফোন থেকে কোন কল যাবে না আবার কারো কাছ থেকে
আপনার ফোনে কল আসবে না।অনেক গ্রাহক এমন অবস্থায় ভয়ে প্রতারকদের পিন কোড দিয়ে দেন এবং তাদের
কথাকেই সত্যি বলে ধরে নেন।
আরো জানুন:
ব্যাংকে না গিয়ে সোনালী ব্যাংকের একাউন্ট খুলবেন কিভাবে?
আপনার হাতের মুঠোয় ইসলামী ব্যাংকের মিনি শাখা সেলফিন মোবাইল অ্যাপ ব্যবহার করবেন কিভাবে?
উপায় কি? বাসায় বসে উপায় একাউন্ট খুলবেন কিভাবে?
বিকাশ দোকানদার সেজে প্রতারণার কৌশল
প্রতারকরা
আপনার কাছে যদি পিন কোড নিতে না পারে তাহলে তারা অন্যভাবে টাকা হাতিয়ে নেওয়ার চেষ্টা
করবে। যেমন- আমার সাথে এক প্রতারক প্রতারণা শুরু করে এভাবে-
অপরিচিত একটি
ফোন নাম্বার দিয়ে কল করে আমাকে বলে – আমি নাজমুল ইসলাম বিকাশের দোকান থেকে বলছি। আপনি
এখান থেকে ক্যাশ আউট করেছেন। আমার বিকাশ ব্যালেন্স এ একটু গড়মিল হচ্ছে আপনার ব্যালেন্সটা
চেক করে একটু জানাবেন?
আমি আমার
বিকাশ একাউন্ট ব্যালেন্স চেক করে জানিয়ে দিলাম। খুব ভদ্র ভাষায় আমাকে বলল ভাইয়া আমি
ভুলে আপনার নাম্বারে ৬০০০/- টাকা পাঠিয়ে দিয়েছি। আপনি মেসেজ চেক করে দেখুন একটি এসএমএস
পেয়েছেন কিনা।
মেসেজ চেক
করে দেখলাম ঠিকই একটি মেসেজ এসেছে। আমার বিকাশে ৬০০০/- জমা হওয়ার মেসেজ। ফোন করে বললাম
ভাই হ্যাঁ একটি মেসেজ পেয়েছি। ৬০০০/- টাকা এসেছে। অনেক কাকুতি মিনতি করে টাকা ৬০০০/-
পাঠিয়ে দেওয়ার জন্য একটি বিকাশ নাম্বার দিল।
যখন টাকা
নেওয়ার জন্য অন্য একটি বিকাশ নাম্বার দিল এবং আমাকে অন্য একটি মোবাইল নাম্বার থেকে
কল দিতে বলল, তখন আমার মনে সন্দেহ হলো। ফলে আমি বিকাশ ব্যালেন্স চেক করি, আসলে টাকা
জমা হয়েছে কিনা জানার জন্য।
ওমা দেখি
নতুন কোন টাকা জমা হয় নাই। আগের ব্যালেন্স এ ঠিক রয়েছে। পরে ফোন দিয়ে বললাম ভাই আমার
বিকাশে তো নতুন কোন ব্যালেন্স যুক্ত হয় নাই। আমার কথা শুনে সালার বেটা প্রতারক ক্ষেপে
গেল, একটু আগে বললেন টাকা পেয়েছেন এখন আবার বলছেন টাকা পান নাই।
আমিও চরমভাবে
তার উপর ক্ষেপে গেলাম। ঐ সালার বেটা প্রতারক কতদিন ধরে প্রতারণা করছো? আমার কথা শুনে
ফোন বন্ধ করে রেখে দিল । আজ পযর্ন্ত ফোন আর খোলা পাইলাম না।
বিকাশ কর্তৃপক্ষের সতর্কবার্তা
প্রতারণার
হাত থেকে বাঁচতে বিকাশ কর্তৃপক্ষ ৪টি সতর্কমূলক বার্তা দিয়েছেন। এগুলো অনুসরণ করলে
প্রতারণার হাত থেকে রক্ষা পাবেন।
১। বিকাশ
পিন নাম্বার ও ব্যালেন্স কোন ভাবে কাউকে জানাবেন না। এমনকি +16247 বা এই ধরণের নাম্বার
থেকে ফোন করলেও পিন নাম্বার বা পিন নম্বরের যোগফল বলবেন না।
২। ফোনে কেউ
যদি আপনাকে ভুল করে টাকা পাঠানোর কথা বলে ফেরত চায় তাহলে আগে আপনার ব্যালেন্স চেক করে
দেখুন আসলে টাকা আসছে কি না। কেননা আমার ক্ষেত্রে এই প্রতারণাটা হয়েছে।
৩। কারো প্ররোচনায়
লটারি জেতার মিথ্যা আশায় কোন প্রকার লেনদেন করবেন না।
৪। ফোনে শুধু
কারো কথা শুনে পরিচয় নিশ্চিত না হয়ে কারো নির্দেশনায় কোন নম্বর বা কোড ডায়াল করবেন
না কিংবা টাকা পাঠাবেন না।
প্রতারণার শিকার হলে কি করবেন?
বিকাশ কাস্টমার
কেয়ার থেকে জানানো হয়, এই ধরণের কোন পরিস্থিতির মুখোমুখি হরে যতদ্রুত সম্ভব 16247 কল
করে কিংবা ফ্রড ম্যানেজমেন্ট টিমকে support@bkash.com
এ ইমেইল করে রিপোর্ড করতে হবে।
আপনি প্রতারিত
হয়ে থাকলে দ্রুত রিপোর্ট করলে বিকাশ কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা নিবে।ফলে আপনি আর্থিক ক্ষতির
হাত থেকে রক্ষা পাবেন।
ফোনকল বন্ধ হলে কি করবেন?
প্রতারকদের
প্ররোচনায় যদি আপনি *33*000# কোড ডায়াল করেন
তাহলে সিমের আউট গোয়িং কল বন্ধ হয়ে যাবে। অর্থাৎ আপনার ফোন থেকে কোথাও কল যাবে না।
আবার *35*000# কোড ডায়াল করেন তাহলে ইনকামিং কল বন্ধ হয়ে যাবে।
এমন অবস্থায়
কোডগুলো আবার ডায়াল করলে লক খুলে যাবে। অর্থাৎ একই কোড একবার ডায়াল করলে লক হবে এবং
দ্বীতিয়বার ডায়াল করলে লক খুলে যাবে।
বিস্তারিত
*33*000# এই কোড একাবার ডায়াল করলে সিমের আউট গোয়িং কল বন্ধ হবে এবং আবার ডায়াল করলে
আউটগোয়িং কল খুলে যাবে। একই নিয়মে ইনকামিং কলের ক্ষেত্রে ডায়াল করতে হবে *35*000#
অনলাইনে আর্থিক লেনদেনের ক্ষেত্রে নিরাপদ থাকতে যা করণীয়
** পিন নম্বার
সমসময় গোপন রাখুন
** ভূয়া
“কাস্টমার কেয়ার” থেকে সাবধান, নকল মেসেজ ও ভূয়া কলের ব্যাপারে সচেতন থাকতে হবে
** যে কোন
লেনদেন করার পূর্রে নিজের একাউন্ট ব্যালেন্স চেক করে নিতে হবে
** সঠিকভাবে
নিবন্ধিত সিম থেকে মোবাইল ব্যাংকিং একাউন্ট খুলতে হবে
** স্মার্টফোন
অ্যাপ থেকে ব্যাংকিং করার ক্ষেত্রে ফোনে আজেবাজে অ্যাপ রাখা যাবে না। কেননা বাজে কিছু
অ্যাপ আপনার ব্যাক্তিগত তথ্য চুরি করতে পারে
** আপনার
ফোনে মোবাইল ব্যাংকিং করলে ফোন সমসময় ”লকড” করে রাখবেন
** কোন নাম্বারে
টাকা পাঠানোর আগে ফোন করে নিশ্চিত হবেন
** ব্যাংকের
তথ্য কারো সাথে শেয়ার করবেন না
** স্মার্টফোনে
থার্ট পাটি অ্যাপ ”এলাউ” নিষ্ক্রিয় করে রাখতে হবে
** অপরিচিত
নাম্বার থেকে আসা এসএমএস, ব্লুটুথ কিংবা ওয়াইফাই ফাইল রিসিভ করা ও খোলা থেকে বিরত থাকতে
হবে।
** মোবাইল
ফোন হারিয়ে গেলে যত দ্রুত সম্ভব মোবাইল ব্যাংকিং হটলাইনে ফোন করে একাউন্ট সুরক্ষা নিশ্চিত
করতে হবে
শেষকাথাঃ
আশাকরি মোবাইল
ব্যাংকিং প্রতারণার ক্ষেত্রে এই ইনফোটি আপনাকে সহায্য করবে। এই বিষয়ে আপনার কোন প্রশ্ন
থাকলে কমেন্ট করে জানাতে পারেন।
আপনার কাছে এটি প্রয়োজনীয় মনে হলে শেয়ার করে নিজের ওয়ালে রেখে দিন। প্রয়োজনের সময় নিজের ওয়াল থেকেই যেন সহজেই খুজে পেতে পারেন।
Home BD info এর অন্যান্য ইনফো
ইন্টারনেট ব্যাংকিং বা ডিজিটাল ব্যাংকিং সম্পর্কে আপনি কতটুকু জানেন?
সরকারী যে কোন ফি ই চালান ওয়েবসাইটের মাধ্যমে জমা দিবেন কিভাবে?