নারীর যৌন স্বাস্থ্য: ওরাল সেক্স করলে যোনিতে ব্যাকটেরিয়াল ভ্যাজিনোসিস রোগ হয় কেন?

0

এক গবেষণায় জানা যায়, ওরাল সেক্সের মাধ্যমে নারীর যৌনাঙ্গে “ব্যকটেরিয়াল ভ্যাজিনোসিস” বা ‘বিভি’ নামে রোগের সংক্রমণ ঘটতে পারে। প্লস বায়োলজি নামে এক জার্নালে এই গবেষণার রিপোর্ট প্রকাশিত হয়। সেই গবেষণার আলোচিত বিষয় নারীর যৌন স্বাস্থ্য: ওরাল সেক্স করলে যোনিতে ব্যাকটেরিয়াল ভ্যাজিনোসিস রোগ ছড়ায়! আজকের ইনফো তা শেয়ার করা হলো।

নারীর যৌন স্বাস্থ্য: ওরাল সেক্স করলে যোনিতে ব্যাকটেরিয়াল ভ্যাজিনোসিস রোগ হয় কেন?

গবেষণায় বলা হয়েছে ওরাল সেক্সের মাধ্যমে নারী দেহে এই রোগ বিস্তার করে থাকে। তবে বিভি কোন সেক্সুয়ালি ট্রান্সমিটেড ডিজিজ বা যৌন রোগ নয়। নারীর যৌনাঙ্গে সাধারণত যে সকল ব্যাকটেরিয়া থাকে, সেগুলোর কোন ভারসম্য ক্ষতিগ্রস্থ হলে বিভি হতে পারে।

 

এই রোগে আক্রান্ত ব্যক্তির শরীরে বিভির কোন উপসর্গ সব সময় দেখা যায় না। তবে বিভির আক্রান্ত হলে যৌনি থেকে দুর্গন্ধযুক্ত রস নিঃসৃত হয়। বিজ্ঞানীরা এই গবেষণায় দেখার চেষ্টা করছেন যে, মানুষের মুখে যে সকল ব্যাকটেরিয়া থাকে তা নারীর যৌনাঙ্গে ছড়িয়ে পড়লে কী প্রভাব পড়ে।

 

ব্যাকটেরিয়াল ভ্যাজিনোসিস বা বিভি কি? 

সাধারণত বিভি কোন সিরিয়াস অসুখ নয়। তবে যারা এই রোগে আক্রান্ত হন অর্থাৎ যে সকল নারী ব্যাকটেরিয়াল ভ্যাজিনোসিস এ আক্রান্ত হয়, তারা অন্যান্য রোগের শিকার হতে পারেন। এসব নারীদের মুত্রনালিতে সংক্রমণ দেখা দিতে পারে।

যদি কোন নারী অন্তঃসত্ত্বাকালে বিভিতে আক্রান্ত হয়, তাহলে সন্তান স্বাভাবিক সময়ের আগেই জন্ম নেয়ার ঝুঁকি থাকে। এসময়টাতে আসার আগে চিকিৎসা বা ডাক্তারের পরামর্শ  নেওয়া প্রয়োজন।

আরো জানুন:

গর্ভধারণ পরীক্ষার ইতিবাচক রেজাল্ট ভুল হয় কেন?

গর্ভবতী মায়ের খাবারের তালিকা: কি খাওয়া উচিৎ এবং কি খাওয়া উচিৎ নয়?


আপনার বিভি হয়েছে কিনা কিভাবে জানবেন?

মহিলাদের স্বাস্থ্য বিষায়ক একটি সাধারণ সমস্যা হচ্ছে বিভি। যে সকল নারীদের ব্যাকটেরিয়াল ভ্যাজিনোসিস হয়, তাদের যৌনাঙ্গ থেকে এক ধরনের রস নিঃসৃত হয়। এই রসে উৎকট আঁশটে গন্ধযুক্ত থাকে।

নারীদের পিরিয়ডের সময় স্বাভাবিক যে রস রেব হয়, বিভি হলে রসে রঙ এবং ঘনত্বের পরিবর্তন দেখা যায়। সেই যোনি রস পাতলা পানির মত এবং অনেকটা ঘোলাটে সাদা হয়ে থাকে।

ডাক্তারি পরীক্ষার মাধ্যমে আপনি সহজেই জানতে পারবেন যে, আপনার বিভি হয়েছে কিনা। যৌনি রসের নমুনা পরীক্ষা করে বিভির উপস্থিতি সম্পর্কে নিশ্চিত হতে পারবেন। এজন্য ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ করতে হবে আপনাকে।

ডাক্তার যদি আপনাকে নিশ্চয়তা দেয় যে, আপনার বিভি হয়েছে, তাহলে অ্যান্টিবায়োটিক ট্যাপলেট, জেল বা ক্রিম ব্যবহার করে অথবা ডাক্তার যে পরামর্শ দেন তাই মেন সংক্রমণ দূর করতে পারেন।

 

গবেষণায় বিভি সম্পর্কে নতুন যা জানা যায়

যে সকল নারীদের যৌনিতে বিভি নেই তাদের থাকে ভাল ব্যাবটেরিয়া। অর্থাৎ আপনার যৌনিতে যদি ভাল ব্যাকটেরিয়া থাকে তাহলে বিভি উপস্থিতি থাকবে না। এদের বলা হয় ল্যাকটোব্যাসিলাই।

এগুলো পিএইচ লেভেল কমিয়ে যোনিপথের অ্যাসিডিক বা অম্ল ভাব ধরে রাখে। যদি এই স্বাস্থ্যকর ভারসাম্যটি কখনো বিনষ্ট হয়, তাহলে যৌনিতে অন্যান্য জীবাণু বংশবৃদ্ধি করে।

এই রকম কেন ঘটে থাকে, তা পুরোপুরি জানা যায় না। তবে গবেষকরা ধারণা করেন নিচের কারণগুলোর জন্য বিভি হতে পারে:

** আপনার যৌন জীবন খুবই ব্যস্ত হলে (সেক্স না করা নারীরও বিভি হতে পারে।)

** যৌন সঙ্গি পরিবর্তন করলেও বিভি হতে পারে

** আই-ইউ=ডি জন্মরোধক ব্যবস্থা গ্রহণ করলেও বিভি হতে পারে

**  আপনি যদি যোনির আশেপাশে সুগন্ধি ব্যবহার করেন তাহলেও বিভি হতে পারে

 

আরো জানুন:

বাসায় বসে প্রেগনেন্সি কিট দিয়ে গর্ভাবস্থা পরীক্ষা করবেন কিভাবে? 

কোন কোন সময় সহবাস করলে আপনি গর্ববতী বা অন্তঃস্বত্ত্বা হবেন না?

নারীর গর্ভবতী হওয়ার লক্ষণ: গর্ভধারণের প্রথম সপ্তাহে কি কি লক্ষণ দেখা যায়?

গর্ভবতী নারীর পেটের সন্তান ছেলে না মেয়ে কিভাবে জানা যায়?


গবেষণায় ওরাল সেক্সে বিভি হওয়ার প্রমাণ 

বিজ্ঞানীরা মানুষের যোনি ও ইঁদুরের উপর গবেষণা চালিয়েছেন। গবেষণার রেপোর্ট প্লস বায়োলজি সাময়িকীতে প্রকাশিত হয়। প্রকাশিত রেপোর্ট থেকে জানা যায়- মানুষের মুখ গহ্বরে মাড়ির রোগ কিংবা ডেন্টাল প্লেক থাকলে তাতে যে ব্যাকটেরিয়া দেখা যায়, তার কারণেও ব্যাকটেরিয়াল ভ্যাজিনোসিস হতে পারে।

বিজ্ঞানীরা এই ব্যাকটেরিয়ার ক্ষতিকর আচরণ সম্পর্কে যা জানতে পেরেছেন তা হচ্ছে- বিশেষ একটি ব্যাকটেরিয়া – ফুসোব্যাকটেরিয়াম নিউক্লিয়েটাম – বিভির সাথে সম্পার্কিত ব্যাকটেরিয়াগুলোর বংশবৃদ্ধিতে সহায়তা করে থাকে।

এই গবেষণায় অংশ নেওয়া ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ড. অ্যামান্ডা লুইস এবং তার সহকর্মীরা জানায় যে, ওরাল সেক্স থেকে কোন কোন সময় নারীর যোনিতে ব্যাকটেরিয়াল ভ্যাজিনোসিস হতে পারে, গবেষণায় এমন প্রমাণ পাওয়া গেছে। এছাড়াও দুটি নারীর মধ্যে লেসবিয়ান সম্পর্কসহ বিভিন্ন ধরণের যৌন সঙ্গমের কারণে বিভি হতে পারে। এটা বিশেষজ্ঞদের অজানা নয়।

 

 ওরাল সেক্সে স্ত্রী অঙ্গে ব্যাকটেরিয়া প্রবেশ করে

অধ্যাপক ক্লডিয়া এস্টকোর্ট বলেন, এই গবেষণার মাধ্যমে বিজ্ঞানীদের ধারণা পরিস্কার হবে, ব্যাকটেরিয়াল ভ্যাজিনোসিস সম্পর্কে। তিনি হচ্ছেন ব্রিটিশ অ্যাসোসিয়েশন অফ সেক্সসুয়াল হেলথ-এর মুখপাত্র।

যোনিতে অন্য কোন সমস্যা থাকুক কিংবা না থাকুক, ওরাল সেক্সের মাধ্যমে যৌনরোগের জীবাণু এবং নানা প্রকার ব্যাকটেরিয়া স্ত্রী অঙ্গের ভিতর প্রবেশ করতে পারে।

সুত্র: বিবিসি

স্বীকারোক্তিঃ

নারীদের স্বাস্থ্য ও যৌন জীবন সম্পর্কে অনেক নারীরই সঠিক ধারণা না থাকার কারণে তারা সমস্যা নিরবে সহ্য করে থাকেন। তাই আমরা নারিদের বিভিন্ন স্বাস্থ্য বিষায়ক ইনফো শেয়ার করে থাকি। তবে এগুলো কোন ডাক্তারের পরামর্শ কিংবা স্বাস্থ্য সেবার বিকল্প হিসাবে বিবেচিত হইবে না। শুধুমাত্র শিক্ষার জন্য উপলভ্য।

Tags

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)

#buttons=(Accept !) #days=(20)

Our website uses cookies to enhance your experience. Learn More
Accept !