সারগেসি চর্চা বেশি হচ্ছে অমুসলিম সংখ্যাগুরু দেশগুলোতে। সারোগেসি শব্দের সোজা অর্থ হচ্ছে মাতৃগর্ভাশয় ভাড়া দেওয়া। একজন নারীর গর্ভে অন্য কোন দাম্পতির সন্তান ধারণের পদ্ধতিকে সারোগেসি বলে। স্ত্রী ও পরুষের ডিম্বাণু ও শুক্রাণু দেহের বাইরে বিশেষ পদ্ধতিতে নিষিক্ত করে তা নারীর গর্ভে প্রতিস্থাপন করা হয়। একে আইভিএফ পদ্ধতি বলে।
সারোগেসি
চর্চা যারা করেন তারা এটি যেভাবে প্রমোট করেন তা হলো- অনেক চেষ্টা করেও যখন সন্তান
লাভ করতে পারেন না তখন কোন দাম্পতি এটির আশ্রয় নিতে পারে। সারোগেসি গ্রহণের আরো বেশ
কিছু কারণ থাকতে পারে । যেমন-
** বার বার
চেষ্টা করেও কোন সন্তান জন্ম গ্রহণ না করে গর্ভপাত হওয়া
** কোন নারীর
অসময়ে মেনোপেজ বন্ধ হয়ে যাওয়া
** আইভিএফ
চিকিৎসা গ্রহণ করেও গর্ভধারণ না হওয়া
** জরায়ুতে
অস্বাভাবিক দেখা যাওয়া বা কোন প্রকার অস্ত্রপাচার করার কারণে জরায়ু বাদ পড়ে যাওয়া
উপরোক্ত যে
কোন একটি কারণে কোন দাম্পতি সারোগেসি গ্রহণ করতে পারে। এছাড়াও মানুষ বিভিন্ন কারণে
এটি গ্রহণ করে থাকে। যেমন সন্তান ধারণের কষ্ট সহ্য করতে না পারার ইচ্ছা, ব্যস্ততার
কারণে কিংবা শারীরিক সৌন্দর্যা নষ্ট হয়ে যাওয়ার ভয়ে, বিয়ে না করে সিঙ্গেল ফাদার কিংবা
মাদার হওয়ার ইচ্ছা পোষন ইত্যাদি বিভিন্ন কারণে মানুষ সারগেট বেবি নিয়ে থাকেন।
আপনারা জেনে
থাকবেন এই ধরণের সারগেট বেবি নেওয়ার প্রবণতা ইন্ডিয়ায় কয়েক বছর আগে থেকেই ব্যপক জনপ্রিয়
ছিল। এবং অনেক দাম্পত্তি সারগেট বেবি নিয়েছেন। এমনকি বিয়ে না করেও ভারতে অনেকেই সারগেট
বেবি প্রতিপালন করছেন।
সারোগেসি কত প্রকার?
সাধারণত দু
প্রকার সারোগেসি হতে পারে। এক. পার্শিয়াল সারোগেসি
এবং দুই. ট্রু সারোগেসি। এই দুই প্রকারের সারোগেসি অর্থাৎ এই পদ্ধতিতে দু রকমের সারগেট
মাদার গর্ভধারণ করে থাকেন।
পার্শিয়াল সারোগেসি কি?
অনেক দিন
ধরে এই পদ্ধতিটি চলে আসছে। এই পদ্ধতিতে মায়ের কোন ভূমিকা থাকে না। শুধুমাত্র বাবার
শুক্রাণু আর সারগেট নারীর ডিম্বাণু থেকে সন্তান জন্ম হয়।
অর্থাৎ এই
পদ্ধতিতে কোন দাম্পতি সন্তান নিলে সাধারণত নারীর গর্ভ ও ডিম্বাণু ভাড়া নেওয়া হয়। এই
ক্ষেত্রে সন্তানের উপর সারগেট মাদারের একটি জৈবিক অধিকার থেকেই যায়।
ট্রু সারগেসি কি?
এই পদ্ধতিতে
বাবার শুক্রাণু এবং মায়ের শুক্রাণু নিয়ে ল্যাবে ভ্রণ তৈরি করা হয়। এরপর এই এম্ব্রায়ো
বা ভ্রণ সারগেট মায়ের ইউটিরেস বা জরায়ুতে স্থাপন করা হয়।
বর্তমানে
বেশিরভাগ দাম্পতি ট্রু সারগেসি পদ্ধতি গ্রহণ করে থাকেন। এই পদ্ধতিতে সারগেট নারীর কোন
অধিকার সন্তানের উপর রক্ষিত হয় না।
ট্রু সারগেসি
পদ্ধতি অবলম্বন করলে দাম্পতির পিতৃত্ব বা মাতৃত্ব নিয়ে কোন প্রকার সংশয় থাকে না। কারণ
এই পদ্ধতিতে মায়ের শুক্রাণুর সাথে স্পার্ম ব্যাংকের অন্য পরুষের শুক্রাণু অথবা বাবার
শুক্রাণুর সাথে অন্য নারীর ডিম্বাণুর নিষিক্ত ঘটিয়ে ভ্রণ তৈরি করা হয়।
এখানে লক্ষণীয় যে, আইভিএফ পদ্ধতিতে ডিম্বাণু ও শুক্রাণু নিষিক্ত করাকে টেস্টটিউব বেবি মনে করা যায় না। টেস্টটিউববেবি ও সারগেসি দুটি ভিন্ন পদ্ধতি।
ঘরে বসে গর্ভাবস্থা পরীক্ষা করবেন কিভাবে?
বাণিজ্যিকভাবে সারগেসি
বানিজ্যিক
সারোগেসিতে একটি নির্দিষ্ট পরিমান অর্থের বিনিময়ে একজন মাদার অন্য কারো সন্তান গর্ভধারণ
করেন। অর্থাৎ গর্ভধারণকারী পান অর্থ আর ইন্ডেনডেড প্যারেন্টস পান সন্তান।
বিভিন্ন দেশে
সারগেসি প্রচলিত আছে, আবার অনেক দেশেই এটি নিষিদ্ধ। ভারতে ২০০৫ সাল থেকে ২০১৫ সাল ছিল
সারগেসির হটস্পর্ট । ২০১৬ সালে সারগেসি বিল ২০১৬ পাশ হবার পর বাণিজ্যিকভাবে সারগেসি
নিষিদ্ধ হয়ে গেছে। তবে আলটুরিস্টিক সারোগেসি চালু রয়েছে।
সারোগেসির খরচ কত?
খরচের পরিমান
বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন রকম হয়ে থাকে। ভারতে একটা সারগেট সন্তানের জন্য ১০ লাখ থেকে ৩০/৪০/৫০
লাখ টাকা খরচ হয়ে থাকে।
সারোগেসি সম্পর্কে ইসলাম কি বলে?
ইসলামে সারোগেসিকে
সম্পূর্ণরুপে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। ইসলামি আইনে টেস্টটিউববেবি হালাল করা হলেও সারোগেসি
হারাম।.
ইসলামি বিশেষজ্ঞদের
মতে, এই ধরনের সারগেট মাতৃত্বের অনুমোতি নেই। কারণ এটি জিনা (ব্যভিচার) এর সমতুল্য।
যেহেতু সারগেট তার বৈধ স্বামী নয় গর্ভধারণে এমন ব্যক্তির ডিম বহন করে যে সন্তান জন্ম
নেয়, বৈধ বিবাহের মাধ্যমে তার কোন বংশগত সম্পর্ক নেই। তাই সন্তানটি অবৈধ বলে গণ্য হবে।
সুতরাং সারোগেসি
পদ্ধতিতে যেহেতু সন্তানটি অবৈধ তাই এটিকে হারাম বলা হয়েছে।
সারগেসি ফতোয়া
১১ থেকে ১৬
ই অক্টোবর ১৯৮৬ সালে জর্ডানের রাজধানী আম্মানে ইসলামিক ফিকহ একাডেমি কাউন্সিলের তৃতীয়
অধিবেশনে ঘোষণা করা হয় যে, সারোগেসি ইসলামে সম্পূর্ণরুপে নিষিদ্ধ। এই কারণে কোন মুসলিম
সারোগেসি পদ্ধতিতে সন্তান গ্রহণ করতে পারে না।
বাংলাদেশে সারোগেসি আইন
বাংলাদেশ
হচ্ছে একটি মুসলিম মেজোরিটি দেশ। এখানে ইসলামে অবৈধ এমন বিষয় আইনগতভাবে বৈধ হবে না
এটাই স্বাভাবিক। বর্তমানে টেস্টটিউববেবি বাংলাদেশে আইনগতভাবে বৈধ হলেও সারোগেসি অবৈধ।
এখন পর্যান্ত
বাংলাদেশে সারোগেসি আইনের চোখে অবৈধ হিসাবে দেখা হয় কিংবা এর বৈধতা বাংলাদেশের আইনে
পায় নাই।
তবে বিভিন্ন
মাধ্যমে জানা যায় বাংলাদেশে গোপনে গোপনে সারোগেসি চলে বলে ধারণা করা হয়। এক্ষেত্রে
আপনাকে বলে রাখি যে, বাংলাদেশে আইনগতভাবে অনেক অবৈধ কাজও মানুষ নিয়মিত করে । এমনকি
ইসলামে কঠোরভাবে নিষিদ্ধ কাজও বাংলাদেশের কিছু মানুষ করতে দ্বিধাবোধ করেন না। গোপনে
কিংবা ক্ষেত্র বিশেষ প্রকাশ্যেই করে থাকেন। যেমন- ধর্ষন, মদ্য পান ইত্যাদি।
সুতরাং সারোগেসি
করার ধারণা অমূলক নয়। তবে যারা করে থাকবেন তারা হয়তো ইসলাম মানেন না কিংবা অন্য কোন
ধর্মের লোক হতে পারেন।
সারোগেসি সম্পর্কে মানুষের দৃষ্টিভঙ্গি
যারা ইসলামিক আদর্শের লোক তারা একে ঘৃণার চোখে দেখে থাকেন। এবং শক্তি সামর্থ থাকলে পাপ কাজ হিসাবে প্রতিহত করার চেষ্টা করবেন এটাই স্বাভাবিক। কেননা মুসলিমদের কাছে সৎ কাজে আদেশ করা অসৎ কাজে নিষেধ করা একটি মহান ইবাদত বা পূর্ণের কাজ।
কিছু মানুষ
মতামত দিয়েছেন যে, নিম্নবৃত্ত কোন মহিলা যদি অর্থের বিনিময়ে নিজের গর্ভ স্বেচ্ছায় ভাড়া
দেন তাহলে আপত্তি হবে কেন? যদি ডাক্তাররা তাঁর দৈহিক ও মানসিক স্বাস্থ্য উপযুক্ত বলে
মনে করেন। কিডনি বিক্রি করা কিংবা পতিতাবৃত্তি করার চেয়ে এটা কি ভাল নয়?
আবার বানিজ্যিক
সারোগেসির বিরুদ্ধে আওয়াজ তুলে নারীবাদীদের অন্য একটি অংশ বলেন, ভারতে সারোগেসি ক্লিনিকগুলো
ধনীদের জন্য নিছক ‘বেবি কারখানা’ হয়ে দাড়িয়েছে।
সন্তানের পিতামাতা হওয়ার জন্য আরো একটি জনপ্রিয় পদ্ধতি হচ্ছে সন্তান দত্তক নেওয়া। বাংলাদেশে কিভাবে সন্তান দত্তক নেওয়া যায় কিংবা সন্তান দত্তক নেওয়ার বৈধ প্রক্রিয়া কি? বিস্তারিত জানতে “কিভাবে সন্তান দত্তক নেওয়া হয়? বাংলাদেশে সন্তান দত্তক নেওয়ার আইনি প্রক্রিয়া কি?” ইনফোটি দেখুন।
শেষকথা:
আশাকরি সারোগেসি
সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে গেছেন। এ ব্যপারে আপনার কোন মতামত কমেন্ট করতে ভুলবেন না।
জীবন ঘনিষ্ট বিভিন্ন প্রয়োজনীয় ইনফো জানতে আমাদের সাথেই থাকুন এবং অন্যদের জানাতে বিভিন্ন
সোশ্যাইল মিডিয়া গ্রুপে শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন।
Home BD info এর অন্যান্য ইনফো জানুন:
কোন কোন সময় সহবাস করলে নারী অন্তঃসত্ত্বা হবে না?
গর্ভাবস্থা পরীক্ষার ইতিবাচক ফলাফল ভুল হয় কেন?