সাধারণত সবার ক্ষেত্রেই প্রথমবারের মতো উড়োজাহাজে বা বিমান ভ্রমণের সময় একটা উত্তেজনা কাজ করে। আপনি যদি প্রথমবার বিমানে চড়ে থাকেন তাহলে আপনার মনে উত্তেজনা করাটাই স্বাভাবিক। অনেকে আবার স্নায়বিক চাপও অনুভব করেন। কেননা বিমানের পরিবেশ অন্যসব যানবাহন থেকে আলাদা। এছাড়াও বিমানে কিছু আদব-কেতা মেনে চলতে হবে আপনাকে। তা না হলে নিজের অজান্তেই অন্য যাত্রীদের বিরক্তির কারণ হতে পারেন আপনি। তাই বিস্তারিত জানুন “বিমান যাত্রার আদব-কায়দা: প্লেনে যাত্রার সময় কি করা উচিৎ এবং কি করা উচিৎ নয়?”
বিমান ভ্রমণের প্রস্তুতি নিবেন কিভাব?
প্লেনে সাধারণত
আমরা বিদেশ ভ্রমণ করে থাকি। বিভিন্ন জন বিভিন্ন কারণে এই যাত্রা করে থাকেন। যেমন- কেউ চাকরির
জন্য, কেউ ব্যবসার জন্য, কেউ ট্রাভেল করার জন্য আবার কেউ পড়াশুনার করা জন্য ইত্যাদি।
আপনি কি জন্য ভ্রমণ করবেন তার উপর নির্ভর করবে ভ্রমণের প্রস্তুতি।আপনি নতুন এবং প্রথমবারের
মতো বিদেশে চাকরি কিংবা কোন কাজের উদ্দেশ্যে যদি যেতে চান তাহলে নিচের বিষয়গুলো
বিবেচনা করুন।
** ভ্রমণের সময় আপনার সাথে যা যা নিবেন তার একটা তালিকা
তৈরি করুন।
** ক্যারি-অন
অর্থাৎ যে ব্যাগটি প্লেনে আপনার নিজের কাছে রাখবেন সেটিতে টাকা-পয়সা, গহনা, ভ্রমণ ও
চাকরি সংক্রান্ত কাগজপত্র রাখবেন।
** চেক-ইন
কিংবা যে ব্যাগটি বিমানে দিবেন সে ব্যাগটি ওজন করবেন এবং ২০ কেজি ওজনের বেশি যেন না
হয় সেদিকে খেয়াল রাখবেন।
** ব্যাগটি
অবশ্যই শক্তিশালী হতে হবে কিংবা দড়ি বা প্যাকিং টেপ দিয়ে শক্ত করে বেধে দেবেন। কেননা
যাত্রাকালীন সময়ে ব্যাগ ছিড়ে গেলে বিপাকে পড়তে পারেন।
** বর্তমান
বাজারে ভ্রমণের জন্য স্পেশাল ব্যাগ কিনতে পাওয়া যায়। শক্ত উপাদান দিয়ে তৈরি এবং ভাল
মানের তালার ব্যবস্থা রয়েছে এমন ব্যগ ক্রয় করবেন।
** ভ্রমণের
সময় প্রতিটি ব্যাগে নাম, ঠিকানা ও ফোন নাম্বার লিখে দিবেন।
** বিমানের
লাগেজ এ যে ব্যাগ দিবেন সেখানে টাকা-পয়সা, গহনা, ভ্রমণ ও চাকরি সংক্রান্ত কাগজপত্র
এবং অন্যান্য মূল্যবান জিনিসপত্র রাখবেন না।
** অপরিচিত
ব্যাক্তির দেওয়া কোন কিছুই বহন করবেন না।
** কখনই ধারালো
কোন বস্তু যেমন- ব্লেড, কাঁচি, ছুরি ইত্যাদি নিবেন না। কেননা সিকিউরিটি চেকের সময় ধরা
পড়ে এবং এগুলো ফেলে দেওয়া হয়।
** ব্যাগের
ভিতর নিষিদ্ধ কোন বস্তু নিবেন না।
প্লেনের ভিতর নিষিদ্ধ কাজসমূহ:
আইনগতভাবে
যে কাজগুলো নিষিদ্ধ প্লেনের ভিতর অবশ্যই তা পরিহার করতে হবে। এছাড়াও আরো কিছু কাজ বিমান
বা এয়ারপোর্টে করা যাবে না। যেমন-
** প্লেনে
ও এয়ারপোর্টে ধূমপান নিষিদ্ধ।
** মোবাইল
ফোন ও ট্রানজিষ্টার রেডিও ব্যবহার করা যাবে না।
** আগ্নেয়াস্ত্র
ও বিস্ফোরকজাতীয় পদার্থ বহন করা যাবে না।
** নিষিদ্ধ
মাদক ও ড্রাগ বহন করা নিষিদ্ধ।
** আগুন ধরে
এমন পদার্থ যেমন- লাইটার।
** দুর্গন্ধ
হয় এমন পদার্থ নিয়ে বিমানে উঠবেন না।
** মাংস, দুধ, ডিম ও অন্যান্য পোল্ট্রিজাতীয় খাবার, ফুল, ফল, সবজি, পান, গুল, সাদাপাতা ইত্যাদি।
আরো জানুন:
এয়ারপোর্টের ইমিগ্রেশন কি?
সকল প্রস্তুতি
শেষ করার পর এখন আপনি যাত্রা শুরু করবেন। নির্দিষ্ট তারিখে সবকিছু নিয়ে এয়ারপোর্ট কাউন্টারে
পৌছাঁন। বিমানের উঠার আগে ইমিগ্রেশন ভেরিফাইড করতে হয়। শুধুমাত্র বৈধ ব্যক্তিরাই বিমানে
উঠার সুগো পেয়ে থাকেন।
আপনার পাসপোর্ট,
ভিসা, জনশক্তি ব্যুরোর ছাড়পত্র ইত্যাদি পরীক্ষা করে সঠিক পেলেই কেবল বিমানে উঠার সুযোগ
পাবেন। কেননা পাসপোর্ট সিলমোহর করে প্রার্থীকে ভিতরে প্রবেশ করার অনুমতি দেওয়া হয় এবং
ভিতরে বিমানের জন্য অপেক্ষা করতে হয়।
ইমিগ্রেশনের
সামনে লাইন দিয়ে দাড়ান, আপনার পাসপোর্ট, ভিসা, ইমিগ্রেশন/ডিসএম্বারকেশন ও কাস্টমস ফরমসহ
তৈরি থাকুন।
অফিসার আপনার
পাসপোর্টে যে দেশে যাবেন সেই দেশে গমনের তারিকসহ সিল দিয়ে দিবে।
প্লেনে উঠবেন কিভাবে?
আপনার কাগজপত্র
ইমিগ্রেশন হলে ভিতরের প্রবেশ করার অনুমতি পাবেন। ভিতরে প্রবেশ করে বিমানের জন্য অপেক্ষা
করুন।
বিমানে আরোহনের
পূর্বে ইংরেজিতে ও বাংলায় মাইক্রোফোনে ঘোষনা করা হয় । এছাড়াও ডিসপ্লে বোর্ড ও টেলিভিশন
মনিটরে দেখানো হয় সেদিকে খেয়াল করুন।
ঘোষণার পরই
বোর্ডিং-কার্ড হাতে নিয়ে বিমানের দিকে অগ্রসর হোন এবং বিমানের নির্দিষ্ট আসনে বসুন।
বিমানের ভিতর করণীয় কি?
বিমান ভ্রমণ
আরামদায়ক ও ঝামেলামুক্ত করতে হলে আপনাকে অবশ্যেই কিছু নিয়ম কানুন মেনে চলতে হবে। বিমানের
ভিতর কি আচারণ করবেন নিচে তার কিছু আদবকেতা আলোচনা করা হলো।
বিমানের শৌচাগার ব্যবহার করবেন কিভাবে?
বিমানে উঠে
শৌচাগারের ব্যবহার প্রয়োজন হতেই পারে। তবে ব্যবহারে বেশি সময় না নেওয়াই ভালো, যাতে
অন্য যাত্রীদের সমস্যা সৃষ্টি না হয়।
এছাড়াও বাসার
শৌচাগারের মতো নোংরা অবস্থায় রেখে আসা উচিত নয়। আপনার স্বাস্থের কথা ভেবে বিমানের ময়লা
শৌচাগারে যেকোন ধরনের যৌনাচার পরিহার করা উচিৎ।
তীব্র গন্ধযুক্ত কোন কিছু পরিহার করা
অনেকের কাছে
আতর বা পারফিউম পছন্দের বিষয়, অনেকে আবার এর গন্ধ সহ্য করতে পারে না। তাই তীব্র গন্ধযুক্ত
আতর বা পারফিউম মেখে বিমানে না উঠাই ভালো।
কেননা এর
কারণে অন্য কোন যাত্রীর অসুবিধা হতে পারে। আপনার অজান্তে কেউ হয়তো কষ্ট পাচ্ছে, কিন্তু
আপনি জানতে পারবেন না। অন্যকে কষ্ট দেওয়াও একটি বড় পাপ কাজ মনে রাখাতে হবে।
এছাড়াও তীব্র
গন্ধযুক্ত খাবারও খাবেন না বা সাথে নিয়ে বিমানে ভ্রমণ করবেন না।
সন্তাতের প্রতি নজর রাখুন
ছোট বাচ্চারা
একটু দুষ্টুমি না করলে তাদের খায়েস মিটে না। বিমানে ওঠেও তাদের দুষ্টুমি করাটাই স্বাভাবিক।
আর সন্তানকে দেখে রাখা আপনার দায়িত্ব।
অন্যের বাচ্চা
দুষ্টুমি করলে বিষয়টা তাদের বাবা-মাকে জানানো উচিৎ। বিমানে অন্যের সন্তানকে ধমক দেওয়ার
সঠিক জায়গা নয়।
প্লেনে কিভাবে ঘুমাবেন?
অনেক যাত্রীই
বিমানে ঘুমিয়ে থাকেন। তাই আপনি বিমানে উঠে ঘুমানোর জন্য একটা নেক পিলো (ঘুমানোর জন্য
বিশেষ এক বালিশ, যা ঘাড়ে জড়িয়ে নেওয়া যায়) চেয়ে নিতে পারেন।
নেক পিলোর
বিশেষ সুবিধা হচ্ছে ঘুমের মধ্যে আপনার মাথা অন্য কারো ঘারে চলে যাবে না। মনে রাখুন,
আপনি যদি বিমানের মাঝখানে আসন পান তাহলে ট্রে টেবিলে মাথা রেকে ঘুমানো উচিত নয়। কেননা
এতে করে আপনার দুপাশের যাত্রীদের চলাচলে বিঘ্ন ঘটতে পারে।
মাঝ আসনের যাত্রীর আর্মরেস্টের অধিকার বেশি কেন?
বিমানের আসনের
সাথে লাগানো হাত রাখার যে জায়গা তাকে আর্মরেস্ট
বলা হয়। প্লেনের জানলার পাশের আসন কিংবা করিডোরের পাশের আসনের মতো হাত-পা ছড়ানোর সুযোগ
মাঝের আসনের যাত্রীর অনেক কম। তাই তাকে আর্মরেস্টের জায়গা ছেড়ে দেওয়া উচিৎ।
সাধারণত মাঝের
আসনের যাত্রীর মানসিক চাপ সৃষ্টি হতে পারে। তাই তাকে আর্মরেস্টের জায়গা ছেড়ে দিয়ে তার
সাথে বেশি কথা না বলে মানসিক জায়গা করে দেওয়াও গুরুত্বপূর্ণ একটি ভাল কাজ।
নিজের আসন থেকে সঠিক সময়ে উঠুন
বাথরুমে যাওয়া
ছাড়া বিমানের ভিতরে আসন ত্যাগ করার প্রয়োজন হয় না। তাই আসন ছাড়ার আগে বিবেচনা করুন,
দেখুন বিমানের আসনের মধ্যবর্তী পথে বিমানবালার হাতে খাবারের ট্রে, তাহলে আসনে বসে থাকা
উচিৎ।
বিমান বালার
হাত থেকে খাবার সংগ্রহ না করে আসন ত্যাগ করা উচিৎ নয়।
মালপত্র সঠিক জায়গায় রাখুন
আসনের মাথার
উপর মালপত্র যেখানে রাখা হয় তাকে ’বিন’ বলা হয়। বিমানে প্রতিটি ব্যাগের জন্যই মূল্য
দিতে হয়। সুতরাং প্রতিটি ’বিন’ই মূল্যবান।
তাই নিজের
ব্যাগ বিনে আনুভূমিকভাবে রেখে অন্যের জায়গা দখল করা উচিৎ নয়। বরং ব্যাগগুলোকে উলম্বভাবে
রাখুন। যদি আপনার সাথে দুটি ব্যাগ থাকে তাহলে একটি ব্যাগ পায়ের কাছে রাখতে পারেন।
হেলান দেওয়ার ক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বন করুন
আপনি চাইলে
আধশোয়া হতে ঘুমাতে পারেন। এক্ষেত্রে আপনার আসনটি হেলে দিয়ে আধশোয়া করে শোয়ার উপযুক্ত
করে নিতে হবে। তবে এটি করার সময় সতর্ক থাকুন। পিছনের যাত্রীর দিকে খেয়াল রাখুন।
আসনটি আধশোয়া
করতে গিয়ে সেটি যেন আবার পিছনে যাত্রীর পানীয়, ল্যাপটপ বা পায়ের সাথে না লেগে যায়।
তাই আসন বাঁকা করার আগে পেছনের যাত্রীকে সতর্ক করুন।
বিমানবালাদের সাথে ভাল আচরণ করুন
বিমানবালাদের
অন্যতম দায়িত্ব হচ্ছে উড়োজাহাজের সকল নিয়ম-কানুন আপনাকে বুঝিয়ে দেওয়া। সিট বেল্ট বেঁধে
দেওয়া, খাবার দেওয়া, বিমান অবতরণের আগে আরেকবার সিট বেল্ট বেঁধে নেওয়ার পরামর্শ দেওয়া
ইত্যাদি।
অর্থাৎ বিমানবালারা
যাত্রীদের সহযোগিতা করেন। তাই তাদের সাথে ভাল আচারণ করুন। কেননা আপনার খারাপ আচরণের
কারণে তারা বিরক্ত হতে পারেন । ফলে প্লেন উড্ডয়নের ক্ষেত্রে দেরি হয়ে যেতে পারে।
বিদেশ পৌঁছানোর পর বিমান বন্দরে কি করবেন?
বিদেশে এয়াপোর্ট
পৌঁছানোর পর গুরুত্বপূর্ণ কাজ হচ্ছে আপনার ব্যাগ সংগ্রহ করা। ব্যাগেজ সংগ্রহ করার জন্য
কনভেয়ার বেল্টের সামনে দাঁড়িয়ে যান।
কনভেয়ার বেল্টের
উপর ফ্লাইট নাম্বার দেয়া থাকে, সেটা লক্ষ করুন। আপনার ফ্লাইট নাম্বার হলে ব্যাগ সংগ্রহ
করুন।
কাস্টমকে
আপনার কাস্টমস ডিক্লারেশন ফরম দিন। কাস্টমস অফিসার ব্যাগ দেখতে চাইলে খুলে দেখান।
হারোনো ব্যাগ খুঁজবেন কিভাবে?
কনভেয়ার বেল্টের
মধ্যে যদি ব্যাগ না পান কিংবা ব্যাগ হারিয়ে গেলে সাথে সাথে এয়ারলাইন্স কর্তৃপক্ষকে
জানান এবং ক্লেইম ফরম পূরণ করুন।
প্রয়োজনে
তথ্য কেন্দ্রের সহযোগিতা নিন। সাধারণত ব্যাগ হারিয়ে গেলে কর্তৃপক্ষ বেগ বের করে দেয়।
এক্ষেত্রে এয়ারলাইন্স আপনার ব্যাগ খুঁজে বের করে আপনার সাথে যোগাযোগ করবে।
চূড়ান্ত গন্তব্যের
ঠিকানা ও ফোন নাম্বার এয়ারলাইন্স কর্তপক্ষকে যথাযথভাবে প্রদান করুন। আপনার হারোনো
ব্যাগ আপনাকে পৌঁছে দেওয়া হবে।
যদি হারানো
ব্যাগ না পাওয়া যায়, তাহলে টিকেটে উল্লিখিত নীতিমালা অনুযায়ী আপনাকে ক্ষতিপূরণ দেওয়া
হবে।