বাংলাদেশের শ্রমিকদের জন্য সৌদি আরব হচ্ছে একটি বিরাট শ্রমবাজার। লক্ষ লক্ষ বাংলাদেশি শ্রমিক সেখানে কর্মরত রয়েছেন। এই শ্রমবাজারকে কেন্দ্র করে অনেক দালাল গোষ্ঠিও সৃষ্টি হয়েছে। অনেক শ্রমিক সৌদিতে কাজ করতে গিয়ে প্রতারিত হয়ে থাকেন, অনেকে আবার কাজের পরিবেশে গিয়ে নির্যাতনের শিকার হন।এছাড়াও বিপদ আরো বাড়ে যখন কোন প্রবাসী সঠিকভাবে কোন কিছু না জানে। অনেক অভিবাসি এমনও রয়েছে যে, তারা বাংলাদেশ দূতাবাস এর সাথে যোগযোগ করতেও সক্ষম হয় না। তাই কি কি করলে বিপদমুক্তভাবে সৌদিতে বসবাস করা যাবে এবং বিপদ হলে করণীয় কি তা নিয়ে আজকের ইনফোটি সাজানো হলো।
যারা সৌদি
আরবে যেতে চান কিংবা যারা সৌদিতে কর্মরত রয়েছেন তাদের জন্যই মূলত এই তথ্যগুলো গুরুত্বপূর্ণ।
যেমন- সৌদি আরবে বাংলাদেশের দূতাবাসের ফোন নাম্বার ও ঠিকানা, কাজ পছন্দ না হলে পরিবর্তন
করার উপায় কি? সমস্যা হলে করণীয় কি ইত্যাদি।
সৌদিতে সুষ্ঠ ও নিরাপদ অভিবাসনের জন্য করণীয় কি?
আপনি যদি
বাংলাদেশ থেকে অন্য যে কোন দেশে সুষ্ঠ ও নিরাপদ প্রবাসী জীবন কাটাতে চান তাহলে অবশ্যই
সঠিকভাবে অভিবাসনের তথ্যগুলো জানতে হবে এবং সবকিছু ঠিক আছে কিনা তা নিজেকেই যাচাই করে নিতে হবে।
সৌদি আরব
কিংবা বিদেশে চাকরির উদ্দেশ্যে গমনের আগে অবশ্যই যাচাই করে নিবেন নিচের বিষয়গুলো। কেননা
এগুলো সঠিক থাকলে প্রতারণা/হয়রানি কিংবা মানব পাচার হওয়ার সুযোগ থাকবে না।
চাকরির উদ্দেশ্যে সৌদি যাওয়ার আগে যা প্রয়োজন:
** বৈধ পাসপোর্ট
(বর্তমানে আপনাকে বিদেশে যেতে হলে ই-পাসপোর্ট করতে হবে।)
** সৌদি আরবের
কর্মসংস্থান ভিসা (সঠিক আছে কিনা অনলাইনে যাচাই করে নিন)
** নিয়োগপত্র/
চুক্তিপত্র কিংবা কন্ট্রাক্ট ফরম, প্রযোজ্য ক্ষেত্রে মেডিকেল সার্টিফিকেট
** বিএমইটির
(BMET) ছাড়পত্র বা স্মার্ট কার্ড
** সৌদি আরব
যাওয়ার জন্য সরকার নির্ধারিত ব্যয়
** আপনি যে
চাকরির জন্য যাচ্ছেন তার সঠিক তথ্য । যেমন- চাকরির বিবরণ, বেতন ও অন্যান্য সুবিধাদি
** বৈধ রিক্রুটিং
এসেন্সির নাম ও ঠিকানা সাথে রাখুন
** দক্ষতা
অর্জনের লক্ষ্যে আপনার নিকটস্থ কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র তথা টিটিসি হতে প্রশিক্ষণ
নিতে পারেন। এছাড়াও ”ঘরে বসে কারিগরি প্রশিক্ষণ কিভাবে নিবেন” ইনফোটি দেখুন।
** বৈধ রিক্রুটিং
এর মাধ্যমে সৌদি আরব যাবেন। তাদের সাথে অর্থাৎ বৈধ এজেন্সির সাথে কেবলমাত্র চেক/পে
অর্ডার/ ব্যাংক ড্রাফের মাধ্যমে সরাসরি লেনদেন করবেন।
** বাংলাদেশ
সরকার কর্তৃক অনুমোদিত এজেন্সির সঠিক তথ্যের জন্য আপনার নিকটস্থ জেলা কর্মসংস্থান ও
জনশক্তি অফিসে যোগাযোগ করুন। বিএমইটির (BMET) ওয়েবসাইটেও (www.bmet.gov.bd) এজেন্সির সঠিক তথ্য পেয়ে যাবেন।
** চাকরির
উদ্দেশ্যে সৌদি যাওয়ার ক্ষেত্রে কোন অবস্থাতেই দালাল বা মধ্যস্বত্বভোগীর শরানাপন্য
হবেন না। কেননা দালালদের হাতে প্রতারিত, অর্থ অপব্যয় কিংবা মানব পাচারের শিকার হতে পারেন।
** আপনার
নিজ জেলা/নিকটস্থ জেলা কর্মসংস্থান ও জনশক্তি অফিস থেকে রেজিস্ট্রেশন ও ফিঙ্গারপ্রিন্ট
করুন। মনে রাখুন রেজিস্ট্রেশন ও ফিঙ্গারপ্রিন্ট করা মানেই বিদেশ যাওয়ার নিশ্চয়তা নয়।
** যাওয়ার
আগে ভিসা ও চুক্তিপত্রের সঠিকতা যাচাই পূর্বক জেনে বুঝে স্বাক্ষর করবেন।
** জনশক্তি,
কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরো থেকে বহির্গমন ছারপত্র বা স্মার্ট কার্ড নিয়ে বৈধ উপায়ে
সৌদিতে যাবেন। শুধুমাত্র সৌদি নয় যে কোন দেশে যাওয়ার জন্য ৩টি আন্তর্জাতিক বিমান বন্দর
(ঢাকা, চট্রগ্রাম, সিলেট) দিয়ে যেতে হবে। এছাড়া অন্য কোন পথ যেমন-সমুদ্রপথ দিয়ে বিদেশ যাওয়া
শাস্তিযোগ্য অপরাধ।
আন্তর্জাতিক টার্মিনাল ও বিমান যাত্রা ইমিগ্রেশন
যারা প্রথমবারের মত সৌদিতে বা বিদেশ যাচ্ছেন তাদের মনে অনেক অজানা
ভয় কাজ করে। কিভাবে কার সাথে কোথায় থাকবেন, কি খাবনে, বিমানের যাত্রা করবেন কিভাবে ইত্যাদি। এই
ভয়গুলো দূর করার জন্য যাওয়ার আগেই একটি প্রশিক্ষণ গ্রহণ করতে পারেন।
যাত্রাকালে
নির্দিষ্ট তারিখে বিমানের টিকিট ও প্রয়োজনীয় কাগজসহ আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরে উপস্থিত
হবেন। মনে রাখবেন, প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ও টাকা-পয়সা, গহণা, বিশেষ করে ভ্রমণ সংক্রান্ত
কাগজপত্র নিজের সাথে ছোট ব্যাগে রাখবেন। আর বিমানের লাকেজে যে ব্যাগ দিবেন তাতে অন্যান্য
প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র রাখবেন।
বিমানবন্দরে
পৌঁছার পর ইমিগ্রেশনের জন্য তৈরি হোন। কাউন্টারে আপনার পাসপোর্ট, ভিসা, জনশক্তি ব্যুরোর
ছারপত্র ইত্যাদি সঠিক থাকলে পাসপোর্ট সিলমোহর করে ভিতরে যাওয়ার অনুমোতি দিবে।
বিমানে উঠার
আগ পর্যান্ত সেখানে অবস্থান করতে হবে। ইমিগ্রেশনের জন্য লাইনে দাড়ান। আপনার পাসপোর্ট,
ভিসা, ইমিগ্রেশন/ডিসএম্বারকেশন ও কাস্টম ফরমসহ তৈরি থাকুন।
কর্তব্যরত
অফিসার আপনার পাসপোর্টে সৌদি আরব গমনের তারিখসহ সিল দিয়ে দিবে। এরপর আপনি ভিতরে প্রবেশ
করে বিমানের জন্য অপেক্ষা করুন।
বিমানে উঠা ও বিমান যাত্রার নিয়ম
বিমানে আহরোনের
আগে ইংরেজিতে ও বাংলায় মাইক্রোফোনে ঘোষনা করা হয় এবং ডিসপ্লে বোর্ড ও টেলিভিশন মনিটরে
দেখানো হয়।
ঘোষনা দেওয়ার
পর বিমানের দিকে অগ্রসর হোন। বিমানে অপরিচিত কোন ব্যাক্তির দেওয়া কোন কিছু বহন করবেন
না।
অবৈধ কোন
জিনিস বহন করবেন না। এছাড়াও দুর্গন্ধ হয় এমন পদার্থ, মাংস, দুধ, ডিম ও অন্যান্য পোল্ট্রিজাতীয়
খামার, ফুল, ফল, সবজি, পান, গুল, সাদাপাতা ইত্যাদি।
প্লেনে নিষিদ্ধ
কাজগুলো পরিহার করে চলুন। যেমন- ধুমপান, মোবাইল ফোন ও ট্রানজিষ্টার রেডিও ব্যবহার ইত্যাদি।
যাত্রাকালে
সাহায্যের প্রয়োজন হলে বিমানবন্দরস্থ প্রবাশী কল্যাণ ডেস্কের সহায়তা নিন।
সৌদি বিমান বন্দরে পৌঁছার পর করণীয় কি?
সৌদি বিমান
বন্ধরে পৌছার পর ব্যাগ বুঝি নিন। ব্যাগেজ সংগ্রহের জন্য কনভেয়ার বেল্টের সামনে দাঁড়ান।
কনভেয়ার বেল্টের উপর আপনার ফ্লাইট নাম্বার দেওয়া থাকবে তা খেয়াল করুন।
আপনার কাষ্টমস
ডিক্লারেশন ফরম দিন, কাষ্টমস অফিসার ব্যাগ খুলে দেখতে চাইলে খুলে দেখান।
ব্যাগ হারিয়ে গেলে কি করবেন?
বেল্টে ব্যাগ
পাওয়া না গেলে কিংবা হারিয়ে গেলে সাথে সাথে এয়ারলাইন্স কর্তৃপক্ষকে জানান এবং ক্লেইম
ফরম পূরণ করুন।
প্রয়োজনে
তথ্য কেন্দ্রের সাহায্য নিন।
এয়ারলাইন্স
আপনার ব্যাগ খুঁজে বের করে আপনার চূরান্ত গন্তব্যে যোগাযোগ করবে। অর্থাৎ আপনার হারানো
ব্যাগ আপনার কাছে পৌঁছে দেওয়া হবে।
হারানো ব্যাগ
পাওয়া না গেলে টিকিটে উল্লিখিত নীতিমালা অনুযায়ী আপনাকে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে।
সৌদিতে পৌঁছার পর আপনার করণীয় কি?
** বাংলাদেশ
দূতাবাস ঠিকানা ও ফোন নাম্বার সংগ্রহ করুন।
** সৌদি আরবের
শ্রম আইনসমূহ জেনে রাখুন।
** হাসপাতাল,
স্বাস্থ্যকেন্দ্র ও পলিশ স্টেশনের ঠিকানা ও ফোন নাম্বার সংগ্রহ করুন।
** সৌদি আরবে
বাংলাদেশের ব্যাংকের ঠিকানা ও ফোন নাম্বার সংগ্রহ করুন এবং নিজের নামে ব্যাংকে টাকা
রাখুন।
** নিজস্ব
তথ্য, পাসপোর্ট, টাকা-পয়শা ইত্যাদি কোনভাবেই অন্যের হাতে দিবেন না।
** সৌদি আরব
কর্মস্থলের ঠিকানা ও ফোন নাম্বার এবং নিয়োগকর্তার বিস্তারিত তথ্য দেশের পরিবারের কাছে
জানিয়ে রাখুন।
** অন্যান্য
বাংলাদেশি প্রবাসীদের সাথে যোগাযোগ রাখুন, তাদের ঠিকানা ও ফোন নাম্বার সংগ্রহে রাখুন
দূর্ঘটনা, ক্ষতিপূরণ কিংবা যে কোন সমস্যার জন্য কোথা যাবেন?
** বাংলাদেশ
দূতাবাস
** অভিবাসী
কমিউনিটি বা অন্য শুভাকাঙ্খী সহকর্মী
** বিভিন্ন
মানবাধিকার সংস্থা
** উন্নয়ন
সংস্থা বা এনজিও সমূহে
** বিভিন্ন
আইন প্রয়োগকারী সংস্থা ইত্যাদি।
সৌদি আরবে বাংলাদেশ দূতাবাস
রিয়াদ: বাংলাদেশ দূতাবাস
ঠিকানা- Sulaimania
Al-Waroud Quarters, North of Aruba Street, Riyadh, KSA, P.O.Box No. 94395,
Riyadh-11693
আপনার যে কোন সমস্যার জন্য বাংলাদেশ দূতাবাসের ট্রোল ফ্রি নাম্বাররে যোগাযোগ করুন:
রিয়াদের আন্তর্জাতিক
ডায়ালিং কোড হচ্ছে: +966-11
টেলিফোন:
+966-11-4195300,
+966-11-419-6695,
+966-11-419-2594,
+966-11-419-3112
বাংলাদেশ
দূতাবাসের ফ্যাক্স:
ডিপ্লোম্যাটিক
উইং: +966-11-4193555, 419-5172
লেবার উইং:
+966-11-419-2380
বাংলাদেশ
দূতাবাসের ইমেইল ও ওয়েবসাইট:
ইমেইল- mission.riyadh@mofa.gov.bd, info@bangladeshembassy.org.sa
ওয়েবসাইট-www.bangladeshembassy.org.sa
অফিস সময়:
রবিবার থেকে বৃসস্পতিবার সকাল ৮:০০ থেকে বিকাল ৪:০০ টা স্থানীয় (জিএমটি+৩) সময় অনুযায়ী।
জেদ্দা: কনস্যুলেট অফিস
ঠিকানা-
Kilo 3, Near Old Makkah Road (Behind Mitsubishi Car Office), Nazlah Dist, PO
Box 31085, Jeddah 21497, Saudi Arabia.
জেদ্দার আন্তর্জাতিক
ডায়ালিং কোড: +966-12
টেলিফোন নাম্বার:
+966-12-687-8465, +966-12-689-4712, +966-12-681-7140, +966-12-688-1752,
+966-12-681-7149
ফ্যাক্স:
ডিপ্লোম্যঅটিক
উইং: +966-12-680-0392
লেবার উইং:
+966-12-687-5924
সোনালী ব্যাংক:
+966-12-633-6480
জেদ্দা কনস্যুলেট ইমেইল ও ওয়েব ঠিকানা
কনস্যুল জেনারেল-
cg@bcgjeddah.com
লেবার উইং-
lw@bcgjeddah.com
হজ উইং- cg@bcgjeddah.com
সোনালী ব্যাংক
প্রতিনিধি- cg@bcgjeddah.com
ওয়েবসাইট-
www.bcgjeddah.com
অফিস সময়:
রবিবার থেকে বৃসস্পতিবার সকাল ৮:০০ থেকে বিকাল ৪:০০ টা স্থানীয় (জিএমটি+৩) সময় অনুযায়ী।
আরো জানুন:
সৌদি আরবে বাংলাদেশীরা কিভাবে বৈধভাবে ব্যবসার করবেন?
সৌদি আরবে স্কলারশিপ নিয়ে উচ্চ শিক্ষার জন্য আবেদন করবেন কিভাবে?