দেশের জনবলের বিরাট একটা অংশ দেশের বাহিরে চাকরি কিংবা কাজের উদ্দেশ্যে বিদেশ যাওয়ার জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করেন। কর্মসংস্থানের জন্য বিদেশগামী লোকগুলোর মধ্যে অনেকেই সঠিকভাবে না জানার ফলে প্রতারিত হওয়ার সম্ববনা থাকে। অনেকেই দালালদের খপ্পরে পড়ে মানব পাচারে শিকার হয়ে ফকির হয়ে যান । তাই বিদেশে কাজের উদ্দেশ্যে যাওয়ার জন্য কি কি জানা প্রয়োজন তা সঠিকভাবেই গমনকারীকেই জানতে হবে।আজকে “বিদেশ যাওয়ার জন্য করণীয় কি? কাজ বা চাকরির উদ্দেশ্যে বিদেশে যাবেন কিভাবে?” নিয়ে আলোচনা করা হলো।
বিদেশগামী
অনেকের মধ্যে আগ্রহ থাকলেও তাদের সঠিক তথ্য জানার আগ্রহ নেই বললেই চলে। অনেকেই দালালের
কথায় প্ররোচিত হয়ে আগ্রহী হয়ে ওঠেন। এতে অনেক অর্থের অপচয় ছাড়াও প্রতারিত হওয়ার
সম্ভবনা থাকে। বিশেষ করে নারী কর্মীরা মানব পাচারে শিকার হতে পারেন। তাই এই বিষয়ে সকল
তথ্য সঠিকভাবে জানা একান্ত প্রয়োজন।
বিদেশ যাওয়ার জন্য কি কি জানা প্রয়োজন?
যারা একেবারেই
নতুন অর্থাৎ যারা প্রথমবারের মতো বিদেশ যাওয়ার প্রস্তুতি গ্রহণ করেছেন তাদের জন্য বেশ কিছু বিষয়
একান্ত জানা প্রয়োজন । যেমন- বিদেশ যাওয়ার জন্য কোথায় যোগাযোগ করা লাগে? যাওয়ার আগে
কি ধরণের প্রস্ততি নেওয়া প্রয়োজন? মানব পাচার ব্যবসায়ী হতে কিভাবে সাবধান থাকবেন? কিভাবে
বৈধ উপায়ে স্বল্প খরচে বিদেশ যাওয়া যায়? কিভাবে শ্রম জনশক্তি ব্যুরো সাহয়তা প্রদান
করে? যাত্রাপতে কি কি কাজ করতে হয়? বিদেশ থেকে পাঠানো টাকা কিভাবে বিনিয়োগ করবেন? বিদেশে
অবস্থান বাংলাদেশের দূতাবাস থেকে কি কি সেবা পাওয়া যায়? বিদেশে অবস্থানকালে কি কি করণীয়?
ইত্যাদি। সঠিকভাবে জানতে পারলেই আপনি একজন সফল প্রবাসী জীবন উপভোগ করতে পারবেন।
এখন আপনার মনে প্রশ্ন জাগতে পারে এই সকল তথ্য কিভাবে জনবো। চিন্তায় পড়ে গেছেন? তাই না? আসলে এই বিষয়ে চিন্তার কোন কারণ নেই। এই বিষয়গুলো লিখে গুগলে সার্চ করুন। বাস পেযে যাবেন সকল তথ্য। এছাড়াও আমাদের সাইটে এই বিষয়ে সকল তথ্য “ইমিগ্রেশন” লেবেলে শেয়ার করা হচ্ছে। আপনার প্রয়োজনীয় তথ্য এখান থেকে জেনে নিতে পারেন।
আরো জানুন:
বিদেশ যাওয়ার আগে কি কি বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া জরুরী?
বিমান ভ্রমণের আদব-কেতাব সম্পর্কে এই বিষয়গুলো জানেন কি?
মানসিকভাবে প্রস্তুতি কেন গ্রহণ করবেন?
আপনি যখন
বিদেশে চাকরি কিংবা কাজের উদ্দেশ্যে যাওয়ার জন্য স্বংকল্প করছেন তখন সাথে সাথে মানসিক
প্রস্তুতি নিতে হবে। কেননা সেখানে আপনাকে একাকী থাকতে হবে। পরিবারের মায়া মমতা কিংবা
পারিবারিক বন্ধন থেকে অনেক দূরে অবস্থান করতে হবে।
পরিবার-পরিজন
থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে একাকী থাকার মানসিকতা আগে থেকেই নিজেকে তৈরি করে নিতে হবে। ভিন্ন
পরিবেশ ও ভিন্ন সংস্কৃতিতে নিজেকে খাপ খাইয়ে নেয়ার চেষ্টা করতে হবে।
এছাড়াও যে
বিষয়গুলোর সাথে নিজেকে মানিয়ে নিতে হবে তা হচ্ছে-
একাকী জীবনে
মানসিক কষ্ট থাকাটা স্বাভাবিক। তাই এটি মেনে নেওয়ার জন্য অবশ্যই মানসিকভাবে তৈরি থাকুন।
আন্তর্জাতিক
শ্রম আইনে কাজের সময় দৈনিক আট ঘন্টা। তবে আপনি যদি পোশাক কারখানা, নির্মান কাজ, কৃষি
খামরের কাজ করেন সেক্ষেত্রে আরও বেশি সময় কাজ
করা লাগতে পারে।
গৃহকর্মীদের
কাজের সময় বাড়ির মালিক দ্বারা নির্ধারিত হয়ে থাকে। অর্থাৎ বাড়ির মালিক আপনার সাথে চুক্তবদ্ধ
হবে কি কি কাজ এবং কত ঘন্টা কাজ করতে হবে।
আপনার থাকার জায়গা কেমন হবে?
মধ্যপ্রাচের
দেশগুলোতে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ক্যাম্পে থাকতে হয়। বাংলাদেশের চেয়ে সেখানকার তাপমাত্রা
দুই থেকে পাঁচ ডিগ্রী কমবেশি হয়ে থাকে।
অনেক ক্ষেত্রে
দেখা যায় এই দেশগুলোতে দিনের বেলা প্রচন্ড গরম এবং রাতের বেলা তীব্র শীত অনুভূত হয়ে থাকে।
খাওয়া-দাওয়ার ব্যবস্থা কিভাবে হবে?
বিদেশে অবস্থান
করার সময় নিয়মিত ভাত খাবার সুযোগ নাও থাকতে পারে। কেননা বেশিরভাগ ক্ষেত্রে রুটির ব্যবস্থা
করা হয়। অনেক নিয়োগকর্তা খাওয়ার ব্যবস্থা করে দেন কিংবা এর পরিবর্তে টাকা দিয়ে দেন।
অনেক সময়
দেখা যায় কোম্পানী বা নিয়োগ কর্তার দেওয়া খাবার ভাল লাগে না, সেক্ষেত্রে শ্রকিকরা নিজেরাই
রান্ন করে খেতে পছন্দ করেন। এটাও আপনার জন্য খাবারের ভাল ব্যবস্থা হতে পারে, যদি রান্না
করে খেতে পারেন।
চিকিৎসার ব্যবস্থা কিংবা কিভাবে চিকিৎসা নিবেন?
চুক্তিপত্র
অনুযায়ী নিয়োগকর্তা কর্তৃক চিকিৎসার ব্যবস্থা করার কথা থাকলেও বেশিরভাগ ক্ষেত্রে কর্মীদের
চিকিৎসার ব্যয় বহন করা লাগে।
সাধারণত এসকল
দেশে সরকারি হাসপাতালগুলোতে হেলথ-কার্ডের মাধ্যমে সুলভে অভিবাসী চিকিৎসা ব্যবস্থা থাকে।
মধ্যপ্রচ্যের
দেশগুলোতে আবহাওয়া খুবই শুষ্ক তাই ক্রিম সাথে নিয়ে যেতে পারেন। এটা আপনার ত্বকের জন্য
খুবই ভাল।
আপনার শরীরে
দীর্ঘ মেয়াদী কোন রোগ থাকলে (যেমন- উচ্চরক্তচাপ, হাঁপানী, ডায়াবেডিস ইত্যাদি) দেশ থেকে
অবশ্যই প্রেসক্রিপশন নিয়ে যেতে হবে। কেননা বিদেশে প্রেসক্রিপশন ছাড়া ওষুধ কিনতে পারবেন
না।
কিভাবে বিদেশে জীবনযাত্রা করবেন?
বিদেশে অবস্থান
কালে আপনাকে মেনে চলতে হবে কিছু সাধারণ নিয়ম। যেমন- কোথাও ভ্রমণ করলে নিয়োগকারীর অনুমতিসাপেক্ষে
গমন করবেন।
সেখানে কর্মরত
অবস্থায় সেই দেশের কর্মস্থলের নিয়ম-নীতি মেনে এবং শৃঙ্খলা বজায় রেখে চলবেন।
যে দেশে অবস্থান
করবেন সেই দেশের আইন সম্পর্কে জেনে নিয়ে মেনে চলবেন বিশেষ করে শ্রম আইন।
আপনার অর্জিত
অর্থ বৈধভাবে ব্যাংকের মাধ্যমে দেশে প্রেরণ করবেন। অবৈধভাবে কিংবা হুন্ডির মাধ্যমে
অর্থ প্রেরণ করবেন না। আইনগতভাবে এটা যেমন অপরাধ তেমনি দেশের জন্যও ক্ষতিকর।
কেন বিদেশ থেকে কর্মী দেশে ফেরত পাঠানো হয়?
বিভিন্ন কারণে
আপনাকে দেশে ফেরত পাঠানো হতে পারে । যেমন-
** ভিসার
মেয়াদ শেষ হয়ে গেলে
** ওয়ার্ক-পারমিট
না থাকলে অর্থাৎ সেই দেশের কাজের অনুমতিপত্র
না থাকলে
** মেডিকেল
পরীক্ষায় জন্ডিস, যক্ষা,, হাঁপানি, এইচআইভি/ এইডস পজেটিভ কিংবা বিভিন্ন যৌনরোগ যদি
ধরা পড়ে
** নিয়োগ
কর্তার সাথে ভাল সম্পর্ক না থাকলে
** বে-আইনিভাবে
চাকরি পরিবর্তন কিংবা কর্মস্থল থেকে পলায়ন করলে
বিদেশে সাহায্যের প্রয়োজন হলে কি করবেন?
আপনি যখন
বিদেশে অবস্থান করবেন তখন হঠাৎ করে বিপদেও পড়তে পারেন। যেমন- যে কোন দুর্ঘটনার কবলে পড়লে কোথায় কিভাবে
সাহায্যের জন্য যোগাযোগ করবেন এটা আপনাকে অবশ্যই জানতে হবে।
সাধারণত বিদেশে
দুর্ঘটনা, ক্ষতিপূরণ ও যে কোন সমস্যার সহযোগিতার জন্য সাহায্য পাবেন-
** বাংলাদেশ
দূতাবাসে
** অভিবাসী
কমিউনিটি কিংবা অন্য শুভাকাঙ্খী
** যে দেশে
অবস্থান করছেন সেই দেশে যদি মানবাধিকার সংস্থা যদি থাকে তাহলে সেখানেও সাহায্য পেতে
পারেন
** উন্নয়ণ
সংস্থা বা এনজিও সমূহে (যদি থাকে)
** বিভিন্ন
আইন প্রয়োগকারী সংস্থা (যেমন পুলিশ স্টেশন)
ওয়ার্ক-পারমিট কি?
ওয়ার্ক-পারমিট
হচ্ছে আপনি যে দেশে কাজের জন্য যাচ্ছেন সেই দেশের কর্তৃপক্ষ কর্তৃক দেওয়অ কাজের অনুমতি পত্র। এটা সাধারণত সংশ্লিষ্ট
দেশের লেবার ডিপার্টমেন্ট থেকে সরবরাহ করা হয়।
বিদেশে চাকরি
করার ক্ষেত্রে এই ওয়ার্কপারমিট প্রয়োজন হয়। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে নিয়োগ কর্তার মাধ্যমে
এই ওয়ার্ক-পারমিট নেওয়ার ব্যবস্থা থাকে।
অনেক দেশেই
বিমানবন্দর শ্রমিকদের ইমিগ্রেশন ক্লিয়ারেন্স করার সময় এক বছরের জন্য ওয়ার্ক-পারমিট
এনডোস করা হয়।
অন্যান্য
দেশে লেবার অফিস থেকে এই কাজের অনুমতি পত্র কিংবা ওয়ার্ক-পারমিট দেওয়া হয়।
মালামাল বিদেশে বহন কিংবা বিদেশ থেকে দেশ আনবেন কিভাবে?
সাধারণ বিমানের
ব্যাগেজ রুল অনুযায়ী দু ধরণের মালামাল বহন করতে পারবেন। তবে কোন অবৈধ দ্রব্য বহন করতে
পারবেন না।
দু ধরণের
দ্রব্য যথা- ১) শুল্কমুক্তভাবে: যে সকল মালামালের কোল শুল্ক দেওয়া প্রয়োজন হয় না। মেযন-
ব্যাক্তিগত ব্যবহারের জিনিসপত্র ।
২) শুল্ক
প্রদান সাপেক্ষে: সরকারকে শুল্ক প্রদান করে যে কোন বৈধ জিনিস বহন করতে পারবেন।
এছাড়াও কোন
ব্যাক্তি বাংলাদেশি ৫০০ টাকার বেশি মুদ্রা নিতে পারবেন না। তবে ৫০০ ইউএস ডলার
বিনা এনডোর্সে নিতে পারবেন।
শেষকথা:
আশাকরি বিদেশে
চাকরি কিংবা কাজের উদ্দেশ্যে যাওয়ার জন্য কি কি বিষয় জানা প্রয়োজন তা এই ইনফোটি থেকে
জানতে পেরেছেন। আপনার কাজে এটি প্রয়োজনীয় মনে হলে নিজের ওয়ালে শেয়ার করে রেখে দিন যাতে
প্রয়োজনের সময় সহজেই নিজের ওয়াল থেকেই খুঁজে নিতে পারেন।
এছাড়াও এই বিষয়ে আপনার কোন প্রশ্ন থাকলে কমেন্ট করে আমাদের জানাতে পারেন। যে কোন কমেন্ট আমরা গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করে থাকি।
অন্যান্য ইনফো জানুন:
বাংলাদেশ জাতীয় সচিবলায় নিয়োগ ও নোটিশ বোর্ড দেখুন
শিক্ষক নিবন্ধন সনদ যাচাই করবেন কিভাবে?
ব্যাংকে না গিয়ে সোনালী ব্যাংকের একাউন্ট খোলার উপায়
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন