প্রযুক্তির এই যুগে আন্তর্জাকিতভাবে লেনদেন করার প্রয়োজনীয়তা বহুগুণ বেড়ে গেছে। এমন একটা সময় ছিল যখন প্রবাসীরা দেশের বাড়িতে পরিবারের কাছে টাকা পাঠাতে অনেক ঝামেলা পোহাতে হয়েছে। এমনকি অনেক সময় টাকা খোয়া যাওয়ারও ঘটনা ঘটেছে। বর্তমান সময়ে এসবকিছু অবসান ঘটে চালু হয়েছে নতুন নতুন মানি ট্রান্সফার সেবা। আর ওয়েস্টার্ন ইউনিয়ন হচ্ছে আন্তর্জাতিক অর্থ লেনদেন করার সবচেয়ে বড় আর্থিক প্রতিষ্ঠান। এর নিকটতম প্রতিযোগী প্রতিষ্ঠান হচ্ছে মানিগ্রাম। আজকের ইনফোটিতে আলোচনা হবে “ওয়েস্টার্ন ইউনিয়ন কি? Westernunion কারা এবং কেন ব্যবহার করেন?Western Union এর সুবিধা ও অসুবিধা কি কি?”
ওয়েস্টার্ন
ইউনিয়ন হচ্ছে একটি আমেরিকান বহুজাতিক আর্থিক পরিসেবা প্রতিষ্ঠান। বিভিন্ন দেশে এর এজেন্ট
রয়েছে। সাধারণত বিভিন্ন দেশের ব্যাংক গুলো ওয়েস্টার্ন ইউনিয়নের এজেন্ট হয়ে কাজ করে
থাকে।
ওয়েস্টার্ন ইউনিয়ন কি? What is Western Union?
ওয়েস্টার্ন ইউনিয়ন হলো একটি বহুজাতিক আর্থিক প্রতিষ্ঠান
যা বৈধভাবে আন্তর্জাতিক অর্থ স্থানান্তর করে থাকে। বিভিন্ন দেশের ব্যাংকগুলোতে এর এজেন্ট
শাখা রয়েছে।
প্রবাসীরা
তাদের রেমিটেন্স বৈধভাবে কয়েক মিনিটের মধ্যে ওয়েস্টার্ন ইউনিয়নের মাধ্যমে দেশে পাঠাতে
পারে। বর্তমানে ওয়েস্টার্ন ইউনিয়নের পাঠানো টাকা সরাসরি বিকাশ একাউন্টে জমা করা যায়।
এই বহুজাতিক
আর্থিক প্রতিষ্ঠানটি আইনগতভাবে পরিচালিত হয়ে থাকে। এ ব্যপারে বিস্তারিত জানতে এখানে দেখুন।
ওয়েস্টার্ন ইউনিয়নের মাধ্যমে কিভাবে অর্থ স্থানান্তর করবেন?
Western
Union সাধারণত কোন উদ্দেশ্যে কোন ব্যাংকের এজেন্ট বা প্রতিনিধি হয়ে কাজ করে না কিংবা
কোন ব্যাংকের তরফে জমা গ্রহণ করে না। ওয়েস্টার্ন
ইউনিয়নে বিশ্বজুড়ে এজেন্টগুলোর মধ্যে মানি ট্রান্সফার সেবা পাওয়া যায়।
কোন গ্রাহক
ওয়েস্টার্ন ইউনিয়ন এজেন্ট থেকে অর্থ পাঠালে প্রাপক এজেন্টে কয়েক মিনিটের মধ্যে তুলতে
পারে। বিভিন্ন দেশের টাইম জোন ভিন্নতার কারণে সময় বিলম্ব হতে পারে। এক্ষেত্রে পরবর্তী
দুই ব্যবসায়িক দিনের মধ্যে প্রেরিত টাকা পাওয়া যাবে।
একাউন্ট ভিত্তিক
মানি ট্রান্সফার সাধারণত ২৪ -৪৮ ঘন্টার মধ্যে সম্পূর্ণ হয়ে থাকে। ব্যাংক একাউন্ট ভিত্তিক
ট্রান্সফারের ক্ষেত্রে ৫ ব্যবসায়িক দিন সময় লেগে যায়। মোবাইল ওয়ালেট মানি ট্রান্সফারের
ক্ষেত্রে মিনিটের মধ্যেই লেনদেনটি সম্পূর্ণ হয়ে থাকে।
এছাড়াও সীমিত
পরিমানের অতিরিক্ত অর্থ বিধিনিষেধ কিংবা কিছু কিছু দেশে নিয়ন্ত্রণ সমূহ লেনদেন এর কারণে
বিলম্ব ঘটতে পারে।
Western Union এর অর্থ বাংলাদেশে কি কি উপায়ে গ্রহণ করা যায়?
বাংলাদেশের
অনেকেই প্রবাস জীবন কাটছেন। তারা অনেক দিন থেকে ওয়েস্টার্ন ইউনিয়নের মাধ্যমে টাকা দেশে
পরিবারের কাছে পাঠিয়ে থাকেন। ওয়েস্টার্ন ইউনিয়নে যারা নতুন তাদের জন্য বলছি , বাংলাদেশ
থেকে কয়েকভাবে আপনি টাকা গ্রহণ করতে পারবেন। যেমন- Cash pickup নগদ গ্রহণ, ব্যাংক একাউন্টে জমা এবং সরাসরি মোবাইল
ব্যাংকিং তথা বিকাশ একাউন্টে জমা ইত্যাদি।
Cash pickup বা নগদ গ্রহণ করবেন কিভাবে?
নিয়মিত গ্রাহকরা
ক্যাশ পিকআপ বা নগদ অর্থ গ্রহণ করতে চাইলে এজেন্টের কাছে যেতে হবে। কেউ ক্যাশ পিকআপে
ওয়েস্টার্ন ইউনিয়নে টাকা পাঠাইলে মিনেটের মধ্যে প্রাপক টাকা তুলতে পারে।
ক্যাশ পিকআপ
অর্থ গ্রহণ করার জন্য আপনার কাছাকাছি কোন ওয়েস্টার্ন ইউনিয়ন এজেন্টে চলে যান এবং নগদ
অর্থ গ্রহণ করুন। আপনার নিকটস্থ এজেন্ট পয়েন্টের অবস্থান অনলাইনে জেনে নিতে পারেন।
কাছাকাছি ওয়েস্টার্ন ইউনিয়ন এজেন্ট অবস্থান অনলাইনে দেখুন এখানে।
Bank Account: পাঠানো টাকা আপনার ব্যাংক একাউন্টে জমা হবে
ওয়েস্টার্ন
ইউনিয়নের মাধ্যমে পাঠানো টাকা সরাসরি আপনার ব্যাংক একাউন্টে জমা হবে। আপনার ব্যাংক
একাউন্টে টাকা নিতে হলে ওয়েস্টার্ন ইউনিয়নে যে টাকা পাঠিয়ে দিবে তাকে আপনার ব্যাংক
একাউন্ট নাম্বার, ব্যাংকের কোড এবং আপনার নাম জানিয়ে দিন।
অর্থাৎ আপনার
ব্যাংক একাউন্টের তথ্য সেন্ডারকে জানিয়ে দিলে সরাসরি ব্যাংক একাউন্টে টাকা জমা হবে।
বিকাশ একাউন্টে সরাসরি ওয়েস্টার্ন অর্থ গ্রহণ করা যাবে
bKash account বিকাশ একাউন্টে টাকা গ্রহণ :
Receive directly in your bKash account. আপনার বিকাশ একাউন্টে সরাসরি ওয়েস্টার্ন ইউনিয়নের
মাধ্যমে পাঠানো টাকা জমা হবে।
এ ব্যপারে
বিস্তারিত জানতে “বিদেশ থেকে ওয়েস্টার্ন ইউনিয়েরমাধ্যমে বিকাশে কিভাবে টাকা পাঠাবেন?” ইনফোটি দেখুন।
প্রবাসীরা ওয়েস্টার্ন ইউনিয়নের মাধ্যমে কিভাবে টাকা দেশে পাঠাবে?
বিদেশে অবস্থানরত
প্রবাসীরা নির্দিষ্ট এজেন্ট এ গিয়ে দেশে টাকা পাঠানোর জন্য একটি ফরম পূরণ করতে হবে।
ফরমে প্রাপকের নাম, ঠিকানা এবং টাকার পরিমান উল্লেখ করে এজেন্টকে টাকা প্রদান করবে।
এজেন্ট প্রবাসীকে একটি রেফারেন্স নাম্বার প্রদান করবে।
এই রেফারেন্স
নাম্বারকে MTCN বলা হয়। এই নাম্বারটি সাধারণত ১০ টি সংখ্যার হয়ে থাকে। এটি মূলত মানি
ট্রান্সফার ট্রাকিং নাম্বার। অনলাইনেও এই নাম্বার দিয়ে পাঠানো টাকার অবস্থা জানা যাবে
এখানে।
এই এমটিসিএন
নাম্বারটি প্রাপককে দিলে প্রাপক কোন এজেন্ট থেকে সরাসরি ক্যাশ তুলতে পারবেন এবং বিকাশ
একাউন্টে জমা করতে পারবেন।
এছাড়াও টাকা
পাঠানোর সময় ব্যাংক একাউন্টের তথ্য এজেন্টকে দিলে টাকা সরাসরি একাউন্টে জমা হবে।
বাংলাদেশ থেকে ওয়েস্টার্ন ইউনিয়নের একাউন্ট কিভাবে খুলবো?
ওয়েস্টার্ন
ইউনিয়ন একাউন্ট বলতে কিছু নেই। যারা বিদেশে অবস্থান করেন তারা ওয়েস্টার্ন ইউনিয়ন অ্যাপে
রেজিস্ট্রার করতে পারে এবং বুথে না গিয়েও সরাসরি টাকা দেশে টাকা পাঠাতে পারে অ্যাপ
থেকেই। অর্থাৎ বিদেশে অবস্থান করলে এবং ওয়েস্টার্ন ইউনিয়ন অ্যাপে রেজিস্ট্রার করা থাকলে
Western Union শপে না গিয়েও অ্যাপ থেকে টাকা পাঠাতে পারবেন।
ওয়েস্টার্ন
ইউনিয়ন কোন ব্যাংক নয়। এটি বিশ্বজুড়ে একটি মানি ট্রান্সফার পরিসেবা। কোন ব্যাংকের এজেন্ট
হয়ে এটি কাজ করে না কিংবা কোন ব্যাংকের তরফে জমাও করে না। অ্যাপে রেজিস্ট্রার করা থাকলেও
বাংলাদেশে ব্যাংকের মাধ্যমেই টাকা গ্রহণ করতে হবে।
বাংলাদেশ থেকে কিভাবে ওয়েস্টার্ন ইউনিয়নের মাধ্যমে দেশেরে বাহিরে টাকা পাঠাবো?
বাংলাদেশ
থেকে বিদেশে বৈধভাবে টাকা পাঠানোর দুটি উপায় আছে। উপায় দুটি হচ্ছে শিক্ষা বাবদ খরচ
এবং চিকিৎসা বাবদ খরচ। এই উপায় দুটির মাধ্যমেই ওয়েস্টার্ন ইউনিয়নে বিদেশে টাকা পাঠানো
যাবে। তবে এর জন্য যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করতে হবে।
বাংলাদেশিরা
এই দুই খাত ছাড়া বিদেশে টাকা পাঠাতে পারবে না। লেখাপড়ার জন্য বিদেশ গেলে তাকে ব্যাংকে
অনুমোতি নিতে হয়। এই অনুমোদনের প্রক্রিয়াকে বলা হয় স্টুডেন্ট ফাইল ওপেন করা। একইভাবে
চিকিৎসার জন্য বিদেশে গেলে ফাইল ওপেন করতে হয়। এটাকে ব্যাংক টু ব্যাংক কিংবা রেমিট্যান্স
ফাইল ওপেন বলা হয়।
বাংলদেশ থেকে
যদি আপনার উল্লেখিত খাতে বিদেশে টাকা পাঠানোর প্রয়োজন হয়, তাহলে বিষয়টি আরো সহজভাবে
আপনাকে বলছি। সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকে সাধারণ ভাবে একটি একাউন্ট খুলে রেমিট্যান্স ফাইল
ওপেন করুন। ব্যাংকের লোকেশন গুলো দেখতে এবং এ বিষয়ে বিস্তারিত জানতে এখানে ক্লিক করুন।
বিদেশে বাংলাদেশের টাকা কিভাবে গ্রহণ করা যাবে?
বাংলাদেশ
থেকে ওয়েস্টার্ন ইউনিয়নের টাকা যে ভাবে গ্রহণ করা যায় একইভাবে বিদেশে অবস্থান করে ওয়েস্টার্ন
ইউনিয়নের টাকা গ্রহণ করা যাবে। এ বিষয়ে উপরে আলোচনা করা হয়েছে।
মূলত Western
Union এর টাকা Cash pickup, Bank Account কিংবা মোবাইল ওয়ালেট এর মাধ্যমে গ্রহণ করা
হয়।
ওয়েস্টার্ন ইউনিয়ন ব্যবহারের অসুবিধা সমূহ
উপরে আমরা ওয়েস্টার্ন ইউনিয়নের বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা নিয়ে আলোচনা করেছি। এখন এর কিছু অসুবিধা জানা যাক
- ওয়েস্টার্ন ইউনিয়নে নির্দিষ্ট একটি এমাউন্ট এর বেশি অর্থ পাঠানো যায় না।
- ব্যাবসায়িক ভাবে ওয়েস্টার্ন ইউনিয়নে টাকা পাঠানো যায় না।
- বাংলাদেশ থেকে বিদেশে শুধুমাত্র শিক্ষা ও চিকিৎসা খরচ বাবদ ছাড়া অন্য কোন টাকা ওয়েস্টার্ন ইউনিয়নের মাধ্যমে পাঠানো যায় না।
- খুব দ্রুত মানি ট্রান্সফার হলেও অনেক সময় আইনি ঝামেলার মধ্যে পড়তে হয়।
তবে এসকল
অসুবিধা থাকার ফলেও আইনগতভাবে এটি একটি বৈধ আন্তর্জাতিক মানি ট্রান্সফার সংস্থা। মানি
লন্ডারিং এর মত কিছু ঘটনা এর মাধ্যমে ঘটে থাকলে তা সহজেই সনাক্ত করা হয়।
শেষকথা:
ওয়েস্টার্ন
ইউনিয়ন হচ্ছে বিশ্বজুড়ে মানি ট্রান্সফার আমেরিকান কোম্পানী। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এটির
এজেন্ট রয়েছে। প্রবাসীরা সহজেই এবং দ্রুত এর মাধ্যমে দেশে অর্থ পাঠিয়ে থাকে। মানি ট্রান্সফার
ফি একটু বেশি হলেও এটি বর্তমানে সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয় হয়ে উঠছে।
জনপ্রিয় এই কোম্পানীটি ২০১১ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। Western Union সম্পর্কে আরো কিছু আপনার জানার আগ্রহ থাকলে কমেন্ট করে আমাদের জানাতে পারেন। আপনার কমেন্ট অনুসারে ইনফোটি পরবর্তীতে আপডেট করা হবে ।
লেখাটি আপনার প্রয়োজনীয় মনে হলে শেয়ার করে নিজের ওয়ালে রেখে দিন প্রয়োজনের
সময় যাতে সহজেই নিজের ওয়াল থেকেই সহজেই খুজে নিতে পারেন।
আরো জানুন:
বাংলাদেশ থেকে পেপাল একাউন্ট খুলে কিভাবে ভেরিফাই করবেন?
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
স্যার,আমি কি ইসলামি ব্যাংক থেকে ওয়েস্টার্ন ইউনিয়নের মাধ্যমে আমেরিকায় টাকা পাঠাতে পারবো।দয়া করে জানা বেন।
ইসলামী ব্যাংক থেকে নির্দিষ্ট শর্ত ছাড়া দেশের বাহিরে টাকা পাঠানো যায় কিনা তা জানতে ইসলামী ব্যাংকে যোগাযোগ করে দেখতে পারেন। এই বিষয়ে না জেনে আমরা আপনাকে পরামর্শ দিতে পারি না।