কানাডা প্রবাসী হওয়ার জন্য কি কি ডকুমেন্ট প্রয়োজন?

বলা হয়ে থাকে অভিবাসীদের দেশ হচ্ছে কানাডা। এই দেশে শতকরা ৪ দশমিক ৯ ভাগ ফার্ষ্ট নেশন ছাড়া বাকী ৯৫ ভাগের বেশি মানুষ ইমিগ্রান্ট বা প্রবাসী। অর্থনীতির চাকা সচল রাখার জন্য কানাডা কর্তৃপক্ষ প্রতি বছর তিন লাখেরও বেশি ইমিগ্রান্ট পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ থেকে নিয়ে আসে। কানাডায় ইমিগ্রেশনের জন্য সাধারণত এখন ইন্টারভিউ নেওয়া হয় না। বিশেষ প্রয়োজনে তারা আপনাকে ইমেইল কিংবা বড় জোড় ফোন করতে পারে। তাই আজকের ইনফোতে “কানাডা প্রবাসী হওয়ার জন্য কি কি ডকুমেন্ট প্রয়োজন?” বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।

কানাডা প্রবাসী হওয়ার জন্য কি কি ডকুমেন্ট প্রয়োজন?

কানাডাতে প্রবাসী হতে হলে নির্ভুল ডকুমেন্ট সবার আগে জোগার করতে হবে। কেননা আপনার ডকুমেন্ট দেখে কানাডা কর্তপক্ষ আপনাকে সে দেশে থাকার অনুমতি দেবে। মনে রাখবেন প্রতিবছর লাখ লাখ আবেদন বাতিল হয়ে যাচ্ছে, নির্ভুল ডকুমেন্ট ও আবেদন যথাযথ পূরণ করার অভাবে।

 

নামের বানান নিয়ে যে সমস্যা তৈরি হতে পারে

বাংলাদেশে অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় বিভিন্ন জায়গায় ব্যক্তির নামের বানান বিভিন্ন রকম থাকে। ফলে নথিপত্রে নামের বানানে অনেক অসঙ্গতি তৈরি হয়। কারো নামের শুরুতে এক জায়গায় শুধু মো. থাকে, আবার অন্য জায়গায় মোহাম্মদ লিখা থাকে।

সকল ডকুমেন্ট একই ধরণের বানান থাকা উচিৎ। কেননা বানানের এই অসঙ্গতি থাকার কারণে আবেদনপত্র বাতিল হওয়ার সম্ভবনা থেকে যায়। শুধু নিজের নামের ক্ষেত্রে নয়, পিতা-মাতার নামের বানান সকল ডকুমেন্টে একই রকম থাকা জরুরী।

 

ব্যক্তিগত তথ্যের ডকুমেন্ট সম্পর্কে যা জানা প্রয়োজন

আপনি যদি আবেদনকারী হয়ে থাকেন, তাহলে আপনার ডিপেন্ডের যেমন ধরেন স্বামী/স্ত্রী, সন্তান ইত্যাদি যারা আছেন তাদের পাসপোর্ট এবং আবেদন প্রক্রিয়া চলার মধ্যে মেয়াদ শেষ হওয়ার কমপক্ষে ছয়মাস পাসপোর্টের মেয়াদ থাকতে হবে।

আবেদন প্রক্রিয়া চলমান থাকার সময় পাসপোর্টের মেয়াদ শেষ হওয়ার কমপক্ষে ছয় মাস আগে পাসপোর্ট নবায়ন করে নিতে হবে। আবেদনকারীর ও তার ডিপেন্ডেদের জন্মনিবন্ধন আবশ্যকভাবে থাকতে হবে।

জন্মনিবন্ধনের ক্ষেত্রে সরকার প্রদত্ত প্রকৃত অর্থাৎ কোন প্রকার ছলচতুরীভাবে জন্মনিবন্ধন করা যাবে না। যাদের বয়স ১৮ বছর পূর্ণ ও তার অধিক বয়স্কদের সবার জাতীয় পত্র (NID) থাকতে হবে।

বিবাহিতদের জন্য Marriage Certificate এবং নিকাহনামা আবশ্যকভাবে থাকতে হবে। বাংলাদেশে এই দুটো সরকারী নথি সাধারণ বাংলায় ইস্যু করা হয়ে থাকে। তবে আপনাকে যে কাজি বিয়ে পড়িয়েছেন, তার কাছে যদি আপনার বাংলা ডকুমেন্ট নিয়ে যান, তবে তিনি একটি নির্দিষ্ট ফির বিনিময়ে তা ইংরেজিতে অনুবদ করে দেবেন।

মনে রাখুন, সকল ডকুমেন্ট ইংরেজিতে এবং নিখুঁত অর্থাৎ প্রকৃত ডকুমেন্ট হতে হবে।


আরো জানুন:

বিদেশ যাওয়ার আগে কি কি বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া জরুরী?

বিদেশে অবস্থানকালে পাসপোর্ট হারিয়ে গেলে কি করবেন?

আপনি বিদেশে প্রবাসী হলে ভোটার হবেন কিভাবে? 

বিমানের যাত্রা করবেন কিভাবে?


শিক্ষাগত ও ভাষাগত যোগ্যতা সনদপত্র গাইডলাইন

আপনার যতগুলো শিক্ষাগত যোগ্যতা রয়েছে তার সকল সনদপত্রের ক্রিডেনশিয়াল করতে হবে। অর্থাৎ আপনি বাংলাদেশ কিংবা বিশ্বের যে কো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পড়াশুনা করেছেন, তার মান কানাডিয়ান স্ট্যান্ডার্ডে কতটুকু, কর্তৃপক্ষ দেখে নিবে।

সনদপত্রের ক্রিডেনশিয়াল করার গাইডলাইন কানার ইমিগ্রেশনের সরকারি ওয়েবাসাইট (www.cic.gc.ca) এ দেওয়া আছে। এই সাইটে আপনি এই সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নিন।

আইইএলটিএস (IELTS) স্কোরের সার্টিফিকেট লাগবে। এক্ষেত্রে আপনি যদি কানাডায় শিক্ষার্থী ভিসায় আসেন, তাহলে আপনাকে একাডেমিক আইইএলটিএস পরীক্ষা দিতে হবে। আর অন্য সকল ভিসার জন্য আপনাকে “জেনারেল” আইইএলটিএস দিতে হবে। IELTS এর সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে “আইইএলটিএস (IELTS) কি? কিভাবে পরীক্ষা দিবেন?” ইনফোটি দেখুন।

 

সেটেলমেন্ট ফান্ড কি?

ভিসার নেওয়ার জন্য আপনাকে ব্যাংকে সেটেলমেন্ট ফান্ড দেখাতে হবে। বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে টাকার পরিমান ভিন্ন হয়ে থাকে। এক্ষেত্রে আপনাকে যত টাকার কথা বলা হবে সেই পরিমান টাকা ব্যাংকে থাকা ভাল। তবে এই টাকা বিভিন্নভাবে থাকতে পারে।

যেমন ধরুন- ফিক্সড ডিপোজিট, সঞ্চয়পত্র, চলতি হিসাব, প্রভিডেন্ট ফান্ড, শেয়ার বাজার ইত্যাদি। বাড়তি হিসেবে আপনাদের সোনা-গহনা, নিজ নামে বা স্পাউসের নামে সম্পত্তি থাকলে তা দেখাতে পারেন। শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে তাদের মাতা-পিতার টাকা এবং সম্পত্তি দেখাতেও পারবেন।

 

কাজের অভিজ্ঞতা (Work Experience) গুরুত্বপূর্ণ কেন?

কানাডায় আবেদন করার ক্ষেত্রে কাজের অভিজ্ঞতা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এই ক্ষেত্রে কোন প্রকার মিথ্যার আশ্রয় নেওয়া যাবে না। মনে করুন, আপনার কিংবা আপনার স্পাউসের যদি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে পাঁচ বছরের কাজের অভিজ্ঞতা থাকে, তাহলে প্রতিটির জন্য আলাদা আলাদা অভিজ্ঞতার সনদ সংগ্রহ করতে হবে।

সনদপত্রগুলো এক পাতার বেশি না হওয়াই ভাল। প্রতিটি সনদপত্রে সনদ প্রদানকারীর নাম, পদবি, স্বাক্ষর, ঠিকানা, ফোন নাম্বার এবং ইমেইল আইডি থাকতে হবে। অনেক ক্ষেত্রে কানাডার ইমিগ্রেশন বিভাগ তাঁদের সাথে যোগাযোগ করতে পারে।

তাই যাদের কাছ থেকে সনদপত্র নিবেন তাদের জানিয়ে রাখবেন বিষয়টি। তাদের সাথে যোগাযোগ করলে যেন তারা আপনার অভিজ্ঞতাপত্রে যা লিখেছেন তা বলতে পারেন।

এব্যাপারে মনে রাখবেন, কানাডিয়ান ইমিগ্রেশনের সিঙ্গাপুর অফিস থেকে আপনার চাকরির ব্যাপারে অধিকাংশ সময়ই খোঁজখবর নিয়ে থাকেন। কিছু কিছু ক্ষেত্রে সিঙ্গাপুর থেকে সশরীরে অফিস এসে দেখে যায় এবং এই সময় তারা আপনার উপস্থিতি কামনা করে।

 

এক্সপ্রেস অব ইন্টারেস্ট কি?

অনেক ক্ষেত্রে কানাডায় অভিবাসনের জন্য যোগ্য এ ধরণের একটি এক পাতার চিঠি ডকুমেন্ট হিসেবে আপনাকে পাঠাতে হয়, যাকে এক্সপ্রেস অব ইন্টারেস্ট নামে অবহিত করা হয় অর্থাই এই নামেই এটি পরিচিত।

এটি লেখার আগে কানাডার চাকরির বাজার সম্পর্কে খোঁজখবর নিয়ে লিখবেন। আপনার শিক্ষাগত যোগ্যতার সাথে মিল রেখে বাংলাদেশের কাজের অভিজ্ঞতার ওপর ভিত্তি করে কানাডা চাকরির বাজারে কি অবদান রাখতে পারবেন, তা এই চিঠিতে ফোকাস করবেন।

এ ব্যাপারে যদি আপনার কনফিডেন্স না থাকে, তাহলে যারা এই বিষয়ে দক্ষ, তাঁদের সাহায্য নিয়ে এটি লিখবেন। এছাড়াও গুগল কিংবা ইউটিউবে সার্চ করলে এই বিষয়ে অনেক কো-অপারেটিভ পাবেন।

 

পুলিশ ক্লিয়ারেন্স কি?

আপনার নামে থানায় কোন ক্রিমিনাল অফেন্স আছে কিনা তা মূলত নিশ্চিতকরণ করার জন্য পুলিশ ক্লিয়ারেন্স নিতে হবে। বাংলাদেশের ক্ষেত্রে কানাডিয়ান সরকারি ওয়েবসাইটে (http://www.cic.gc.ca/) এই সংক্রান্ত বিস্তারিত গাইডলাইন দেওয়া আছে।

আপনার কোন ক্রিমিনাল অফেন্স থাকলে আবেদন বাতিল হয়ে যেতে পারে। কিভাবে পুলিশ ক্লিয়ারেন্স পাবেন তা বিস্তারিত জানতে “পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সনদ কি? এটি কিভাবে পাবেন?” ইনফোটি দেখুন।

 

আপনার সোশ্যাল মিডিয়া কেমন হওয়া উচিৎ?

কানাডার ইমিগ্রেশন বিভাগ আপনার ফেসবুকসহ অন্যান্য সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ঘাঁটাঘাঁটি করে দেখবে। এক্ষেত্রে আপনার দেওয়া তথ্যগুলোর মধ্যে আপনার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের ব্যাক্তিগত ইনফরমেশন অবশ্যই মিল থাকতে হবে।

এছাড়াও সামাজিক মাধ্যমে কোন কিছু শেয়ার করতে সতর্ক থকবেন। যেমন- কোন ভায়োলেন্স, শিশু নির্যাতন, কোন বর্ণবাদী স্ট্যাটাস কিংবা এই ধরণের কিছু শেয়ার করবেন না।


 অন্যান্য কি ডকুমেন্ট প্রয়োজন হয়?

অধিকাংশ ক্ষেত্রেই কানাডা ইমিগ্রেশনে কাগজপত্র স্ক্যান করে পাঠাতে হয়। কোন কোন ক্ষেত্রে নোটারি করার প্রয়োজন হতে পারে। এ ক্ষেত্রে প্রকৃত নোটারিয়ান দিয়ে নোটারি করতে হবে। কোনভাবেই মিথ্যা কাগজ বানিয়ে দিবেন না।

ছোট একটি উদাহরণ দিলে বিষয়টি পরিস্কার বুঝতে পারবেন। যেমন- আপনি দেখালেন কোন এক জায়গায় আপনি চাকরি করেন, কানাডার ইমিগ্রেশন বিভাগ যখন আপনার ব্যাংক স্টেটমেন্ট দেখবে, তখন আপনার ওই প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক একাউন্ট থেকে আপনার নিজস্ব একাউন্টে প্রতিমাসে বেতনের টাকা না যায়, তাহলে তারা বুঝে নিতে পারে আপনি সেখানে কাজ করেন না।

কানাডায় যে অভিবাসির চাহিদা বেশি?

কানাডায় যে অভিবাসির চাহিদা বেশি?

কানাডা কর্তৃপক্ষ বরাবরই দক্ষলোকদের গুরুত্ব দিয়ে থাকে। অভিবাসি নেওয়ার ক্ষেত্রে ৬০ শতাংশের বেশি দক্ষ বিবেচনা করা হয়।

এছাড়াও যে সকল ক্যাটাগরিতে অভিবাসির বরাদ্ধ বাড়ানো হয়েছে তা হচ্ছে- এক্সপ্রেস এন্ট্রি, পিএনপি, অ্যাগ্রিফুড পাইলট প্রোগ্রাম, রুরাল অ্যান্ড নর্দান ও মিউনিসিপ্যাল পাইলট প্রোগ্রামের মাধ্যমে এবং ফ্যামিলি ক্লাস, রিফিউজি স্পনসরশিপ, হিউম্যানিটেরিয়ান অ্যান্ড কম্পাশনেট ও অ্যাসাইলাম ইত্যাদি।

দক্ষ ইমিগ্রান্টদের চাহিদা কানাডায় প্রচুর পরিমানে রয়েছে। তাই আপনি দক্ষ হলে পৃথিবীর দ্বিতীয় বৃহত্তম দেশ কানাডাতে অভিবাসন নিতে পারেন।

 

শেষকথাঃ

কানাডায় সাধারণত পৃথিবীর প্রায় সব দেশের মানুষ আবেদন করতে পারে। তাই এই দৌড়ে আপনাকে টিকে থাকতে হলে সঠিক ডকুমেন্ট প্রদান করতে হবে এবং গুরুত্বসহকারে একবারে নির্ভুলভাবে আবেদনপত্র ফর্ম পুরণ করতে হবে।

কানাডা সরকারি ওয়েবসাইটে সবকিছু বিস্তারিত দেওয়া আছে। আবেদন করার আগে নিজে পড়ে বুঝে তবেই আবেদন করুন।


অন্যান্য ইনফো

সৌদি আরবে স্কোলারশিপ নিয়ে উচ্চ শিক্ষা করার উপায়

ওয়েস্টার্ন ইউনিয়ন কি? প্রবাসীরা এর মাধ্যমে বিকাশে টাকা পাঠাবেন কিভাবে?

মানি গ্রাম কি? কেন মানিগ্রাম ব্যবহার করবেন?

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

[blogger]

Search This Blog

যোগাযোগ ফর্ম

নাম

ইমেল *

বার্তা *

Blogger দ্বারা পরিচালিত.
Javascript DisablePlease Enable Javascript To See All Widget