ভোটার আইডি কার্ড সংশোধন- নিজের নাম সংশোধনে করণীয় কিংবা এর জন্য প্রয়োজনীয় কি কি কাগজপত্র প্রয়োজন হয় ইত্যাদি বিষয় নিয়ে আজকের ইনফোটি শেয়ার করা হলো।
আগেই
যারা ভোটার হয়েছেন তাদের আইডি কার্ড এ নানা রকম কিছু না কিছু ভুল রয়ে গেছে। নিজের নাম
পদবী কিংবা বানান অথবা অন্য কোনো তথ্য। আমাদের কাছে অনেকেই জিজ্ঞাসা করে থাকেন যে,
জাতীয় পরিচয়পত্র সংশোধন করার নিয়ম কি? কিভাবে ভোটার আইডি কার্ড সংশোধন করা যায়? কিংবা
ভোটার আইডি সংশোধন করতে কি কি লাগে ইত্যাদি। তবে এটা সত্য যে, এসকল প্রশ্নের উত্তর
অনেকেই সঠিকভাবে জানে না।
ফলে
অনেকেই এনআইডি কার্ড/ ভোটার আইডি কার্ড এর ভুল নিয়ে ভোগান্তিতে পড়ে যান। এখানে আমরা
বিস্তারিত আলোচনা করবো কিভাবে আপনি খুব সহজেই ভোটার আইডির ভুল তথ্য সংশোধন করতে
পারেন। এবং ভোটার আইডি কার্ড এ নিজের নাম সংশোধনে করণীয় কি এবং কি কি প্রয়োজনীয় কাজগপত্র
জমা দিলে সংশোধন আবেদন দুত নিষ্পত্তি হবে।
জাতীয় পরিচয়পত্র সংশোধন করার উপায়:
যাদের
আইডি কার্ড এ ভুল রয়েছে তাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে কিভাবে সঠিক উপায়ে সংশোধন
করা যায়। এনআইডি কার্ড/ ভোটার কার্ড এ বাংলা নাম ও ইংরেজি নামে যদি প্রকৃতপক্ষেই ভুল
থাকে তাহলে সংশোধনের আবেদন করে ঠিক করা যায়।
এছাড়াও
বর্তমান ঠিকানা পরিবর্তনের আবেদন করা যায়। নামের ক্ষেত্রে সাধারণত বানানে কোনো ভুল
হলে কিংবা নামের পদবী সার্টিফিকেটের সাথে হেরফের থাকলে সংশোধনের আবেদন করে সহজেই সংশোধন করে নিতে পারেন।
এনআইডি কার্ড বা ভোটার আইডি কার্ড সংশোধন করার আবেদন মূলত দুইভাবে করা যায়।
আবেদনের প্রথম পদ্ধতি:
আপনার
উপজেলা নির্বাচন অফিসে গিয়ে ভোটার আইডি কার্ড সংশোধন ফরম-২ সংগ্রহ করে পূরণ করতে হবে।
এরপর ভোটার আইডি কার্ড সংশোধন ফি রকেট/ বিকাশ এর মাধ্যমে জমা দিয়ে তার রশিদ ও প্রয়োজনীয়
কাগজপত্র ফরমের পিছনে যুক্ত করে জমি দিতে হবে।
আপনার
সংশোধন আবেদন ফরম নির্বাচন অফিসে জামা দেওয়ার পর সংশোধনের কার্যাক্রম শুরু হবে।
সংশোধন আবেদনের দ্বিতীয় পদ্ধতি:
এটা
হচ্ছে অনলাইন পদ্ধতি। এর মাধ্যমে আপনি ঘরে বসে ভোটার সংশোধনের আবেদন করতে পারেন। এর
জন্য বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশনের ওয়েবসাইট services.nidw.gov.bd গিয়ে আপনাকে
রেজিস্ট্রেশন করতে হবে।
রেজিস্ট্রেশন
হয়ে গেলে লগইন করে প্রবেশ করলে আপনার ভোটার ছবি, নাম, পিতার নাম, মাতার নাম, জন্ম তারিখ,
ঠিকানসহ যাবতীয় তথ্য দেখতে পারবেন।
এখান
থেকে যে কোন তথ্য এডিট করে আবেদন দাখিল করতে পারেন। এর জন্য আপনাকে অফিসে আসতে হবে
না।
অর্থাৎ
আপনি চাইলে ঘরে বসে আপনার কম্পিউটার/ল্যাপটপ কিংবা মোবাইলে ইন্টারনেট সংযোগ করে নির্বাচন
অফিসের ওয়েবসাইটে রেজিস্ট্রেশন করে এনআইডি কার্ড/ ভোটার আইডি কার্ড এডিট করার মাধ্যমে
সংশোধন আবেদন করতে পারেন।
বিকাশ/
রকেট একাউন্ট থেকেই ফি পরিশোধ করে সহজেই সংশোধন আবেদন সাবমিট করতে পারেন। ফলে কষ্ট
করে আপনাকে নির্বাচন অফিসে আসার প্রয়োজন হবে না।
বর্তমান
প্রেক্ষাপটে ঘরে বসে এনআইডি কার্ড/ ভোটার আইডি কার্ড এর সংশোধন আবেদন ঘরে বসে অনলাইনে
করাই অনেক ভালো।
আরো জানুন:
অনলাইনে ভোটার হয়ে আইডি কার্ড ডাউনলোড করবেন কিভাবে?
প্রবাসীরা বিদেশে থেকে কিভাবে ভোটার হবেন?
ভোটার আইডি কার্ড সংশোধন করতে কি কি প্রয়োজন?
আপনি
কি সংশোধন করতে চাচ্ছেন তার উপর নির্ভর করে থাকে যে, সংশোধন আবেদনের ক্ষেত্রে কি কি
কাগজপত্র প্রয়োজন হয়। যদি আপনার নামের বানান প্রকৃতপক্ষে ভুল থাকে এবং নামের আগে মোঃ/মোছাঃ
যোগ করতে কিংবা বাদ দিতে চান। অর্থাৎ সাধারণ ভুলের জন্য আবেদনের সাথে যা প্রয়োজন হবে
তা নিম্নরুপ:
**
এসএসসি সনদ: যদি আপনি নির্বাচন অফিসে ভোটার আইডি সংশোধন আবেদন করেন তাহরে আবেদনের সাথে
এসএসসি /সমমান সনদের ফটোকপি সাথে যুক্ত করে দিতে হবে। আর যদি অনলাইনে আবেদন করেন তাহলে
এসএসসি কিংবা সমমান সনদের ছবি বা স্ক্যান করে আপলোড দিতে হবে।
**
জন্ম নিবন্ধন সনদ: আবেদনকারীর অনলাইনে জন্ম নিবন্ধন সনদের কপি আবেদনের সাথে জমা দিতে
হবে কিংবা অনলাইনে ছবি বা স্ক্যান কপি আপলোড করতে হবে। মনে রাখবেন জন্ম সনদ সবার জন্য
বাধ্যতামূলক।
যদি
আপনি বিবাহিত হয়ে থাকেন এবং শিক্ষাগত সনদ না থাকে তাহলে আবেদনের সাথে নিম্নোক্ত কাগজপত্রগুলো
প্রয়োজন হতে পারে। যেমন-
**
অনলাইন জন্ম নিবন্ধন সনদের ফটোকপি লাগবে বাধ্যতামূলকভাবে।
**
সন্তানদের ভোটার সনদের ফটোকপি কিংবা শিক্ষা সনদ অথবা জন্ম সনদ (যদি থাকে)
**
স্বামী বা স্ত্রীর ভোটার আইডির কপি (যদি থাকে)
**
বিবাহের সনদ বা কাবিননামা (যদি থাকে)
**
সার্ভিস বই/ এমপিও শীটের কপি যদি আপনি চাকরিজীবি হয়ে থাকেন
**
পৌয় মেয়র কিংবা চেয়ারম্যান অথবা ওয়ার্ড কাউন্সিলরের প্রত্যায়নপত্র ইত্যাদি। যারা ক্ষেত্রে
যেটি প্রযোজ্য হয়।
যদি
আপনি বিবাহিত না হয়ে থাকেন তাহলে যেসকল কাগজপত্রে আপনার নাম সঠিকভাবে লেখা আছে সেই
সকল কাগজপত্র সংশোধন আবেদন পত্রের সাথে জমা দিবেন। অর্থাৎ সংশোধন আবেদন করার ক্ষেত্রে
আপনার নাম যে ভুল তা প্রমাণ করতে সঠিক কাগজপত্র জমা দিতে হবে।
আইডিতে নামের পদবী সম্পূর্ণ পরিবর্তন করার জন্য কি কি লাগে?
**
এসএসসি বা সমমান শিক্ষাগত সনদ (যদি থাকে)
** অনলাইন জন্ম সনদ এটি বাধ্যতামূলক
**
স্বামী বা স্ত্রীর ভোটার আইডির কপি (যদি থাকে)
**
সন্তানের ভোটার আইডি কার্ড এর কপি/ শিক্ষা সদন বা জন্ম সনদের কপি (যদি থাকে)
**
পাসপোর্ট এর কপি (যদি থাকে)
**
বিবাহের সনদ বা কাবিননামা (যদি থাকে)
**
পাসপোর্ট এর কপি (যদি থাকে)
**
ড্রাইভিং লাইসেন্স এর কপি (যদি থাকে)
**
পৌয় মেয়র কিংবা চেয়ারম্যান অথবা ওয়ার্ড কাউন্সিলরের প্রত্যায়নপত্র ইত্যাদি। যারা ক্ষেত্রে
যেটি প্রযোজ্য হয়।
উপরোক্ত
কাগজপত্রগুলো আবেদনের প্রাথমিক অবস্থায় জমা দিবেন। অনলাইনে আবেদন করার ক্ষেত্রে ছবি
উঠিয়ে কিংবা স্ক্যান করে আপলোড দিবেন।
আরো জানুন:
এসএমএস দিয়ে কিভাবে এনআইডি নাম্বার বের করবেন?
এনআইডি ওয়ালেট কি? কেন ব্যাবহার করার প্রযোজন হয়?
NID তে সম্পূর্ণ নাম পরিবর্তন করার জন্য করণীয় কি?
আপনি
যদি এনআইডিতে আপনার সম্পূর্ণ নাম পরিবর্তন করার জন্য আবেদন করেন তাহলে উপরে উল্লেখিত
যে কাগজপত্রগুলো আপনার রয়েছে সেগুলোর সাথে আরো একটি কাগজ প্রয়োজন হবে। আর সেটি হচ্ছে
একটি এ্যাফিডিভিট বা হলফনামা।
হলফনামা
অবশ্যই জডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট কোর্টে সম্পাদিত হতে হবে । কেননা নোটারী পাবলিক থেকে
না করাই ভালো।
সম্পূর্ণ
নাম পরিবর্তন করার আবেদনের ক্ষেত্রে আপনি আবেদনের সাথে যতই কাগজপত্র জমা দেন না কেন,
এই ক্ষেত্রে সরেজমিন তদন্ত করার প্রয়োজন হয়। এক্ষেত্রে উপজেলা নির্বাচন অফিসার সরেজমিন
তদন্ত করে রিপোর্ট তৈরি করবেন এবং তা উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে প্রেরণ করবেন।
তদন্ত
প্রতিবেদন এবং আপনার দাখিলকৃত কাগজপত্র পর্যালোচনা করে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আপনার
আবেদন অনুমোদন কিংবা বাতিল করতে পারে।
মনে
রাখবেন, সংশোধনের ক্ষেত্রে যদি সম্পূর্ণ নাম পরিবর্তন করার প্রয়োজন হয় তাহলে সঠিকভাবে
আবেদন করতে হবে। কেননা এনআইডি কার্ড বা ভোটার আইডি কার্ড থেকে নিজের সম্পূর্ণ নাম পরিবর্তনের
আবেদনগুলো সহজেই অনুমোদন হয় না।
কারণ
এ ক্ষেত্রে অনেক বিচার বিশ্লেষণ করার প্রয়োজন হয় এবং সেগুলো সম্পন্ন না হওয়া পর্যান্ত
সংশোধন আবেদনটি চলমান অবস্থায় থাকে। আপনার সম্পূর্ণ নাম পরিবর্তন করার প্রয়োজন হলে
উপরোক্ত পরামর্শ অনুযায়ী আবেদন করে দেখতে পারেন।
আপনার
আবেদন অনুমোদন কিংবা বাতিল হলে অথবা আরো কোন কাগজপত্র প্রয়োজন হলে আপনার দেওয়া মোবাইল
নাম্বারে এসএমএস করে জানিয়ে দেওয়া হবে।
পরিবর্তন আইডি কার্ড কিভাবে পাবেন?
আপনার
আবেদন অনুমোদন হলে অনলাইন থেকে আপনার পরিবর্তন হওয়া মূল এনআইডি কার্ড বা ভোটার আইডি
কার্ড এর একটি অনুলিপি ডাউনলোড করতে পারবেন। ডাউনলোড করার পর সেটি প্রিন্ট করে লেমিনেটিং
করে নিলে নিশ্চিন্তে ব্যবহার করতে পারবেন।
অথবা
আপনার আবেদন অনুমোদন হওয়ার ৫-৭ কর্মদিবসের মধ্যে আপনার উপজেলা নির্বাচন অফিসে গিয়ে
সংশোধিত এনআইডি কার্ড/ ভোটার আইডি কার্ড সংগ্রহ করতে পারেন।
বিস্তারিত পরামর্শ নেওয়ার জন্য আরো যা করতে পারেন
ভোটার
আইডি সংশোধনের জন্য যা করা প্রয়োজন তার সবই এই ইনফোতে আলোচনা করা হয়েছে। তারপরও যদি
আপনার মনে আরো জানার প্রশ্ন জাগে তাহলে আমাদের কমেন্ট করে জানাতে পারেন। এছাড়াও নির্বাচন
অফিসের হটলাইন নাম্বার 105 এ অফিস চলাকালিন সময়ে ফোন দিযে জেনে নিতে পারেন কিংবা নির্বাচন
অফিসে সরাসরি যোগাযোগ করে পরামর্শ পেতে পারেন।
আবেদন
করার ক্ষেত্রে আমাদের পরামর্শ হচ্ছে নিজের ভোটার আইডি সংশোধনের জন্য ঘরে বসে নিজের
মোবাইলে কিংবা ল্যাপটপ/কম্পিউটারের মাধ্যমে অনলাইনে রেজিস্ট্রেশন করে আবেদন করা। এতে
সবকিছু আপনার নিজের মতো করে আবেদন করতে পারবেন।
শেষকথা:
আশাকরি যারা এনআইডি সংশোধন করা নিয়ে চিন্তিত আছেন তাদের জন্য এই লেখাটি কাজে লাগবে। আপনার কাছে এটি প্রয়োজনীয় মনে হলে শেয়ার করে নিজের ওয়ালে রেখে দিতে পারেন। প্রয়োজনের সময় যাতে নিজের ওয়াল থেকেই সহজেই খুজে নিতে পারেন।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন