বাংলাদেশে ডিজিটাল যুগ অনেক আগেই প্রবেশ করেছিল। তবে ইতিমধ্যে ডিজিটাল মাধ্যমের কোন আইন ছিল না। অর্থাৎ ডিজিটাল মাধ্যমে কেউ অপরাধ করলেও তাদের বিরুদ্ধে কোন মামলা করার অইনি প্রতিকার ছিল না। এখন ডিজিটাল আইন হওয়ায় যে কেউ অপরাধ করলে এমনকি বিদেশে বসে কোন বাংলাদেশি নাগরিক যদি অনলাইনে অপরাধ করে তাহলে তার বিরুদ্ধে এই আইনে বিচার করা যাবে। আপনি যদি এই আইন সম্পর্কে অবগত না থাকেন তাহলে এই আইনে ফেঁসে যেতে পারেন। তবে আইনটি প্রস্তাব হওয়ার পর থেকেই উদ্বেগ, বিতর্ক ও সমালোচনা চলছে, এমন তথ্য জানা যায় বিভিন্ন সংবাদ পোর্টালের মাধ্যমে।
ডিজিটাল আইন
সম্পর্কে উদ্বেগ, বিতর্ক কিংবা সমালোচনা নিয়ে এখানে কোন আলোচনা করা হবে না। আপনি কিভাবে
এই আইনে ফেঁসে যেতে পারেন। অর্থাৎ ডিজিটাল আইনের যে তথ্যগুলো আপনার জানা জরুরী তা শেয়ার
করাই এই লেখাটির মূল উদ্দেশ্য।
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন কি?
ডিজিটাল ডিভাইস
তথা কম্পিউটার, ল্যাপটপ, মোবাইল কিংবা অনলাইন ব্যবহার করে যে সকল অপরাধ সংঘটিত হবে
তার বিচার যে আইনে করা যাবে তাই মূলত ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন।
কেউ কেউ বলেছেন
সাইবার অপরাধ নিয়ন্ত্রণ করার জন্য ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন করা হয়েছে। এখন অনেকেই ডিজিটাল
মাধ্যম ব্যবহার করে বিভিন্ন তথ্য ও মন্তব্য শেয়ার করে থাকেন। যেমন- ফেসবুক, টুইটার,
ইউটিউব ইত্যাদি যারা ব্যবহার করে বিভিন্ন তথ্য শেয়ার করেন তারা অবশ্যই এই আইন সম্পর্কে
জানবেন এবং কন্টেন শেয়ার করার সময় লক্ষ রাখবেন।
কেননা ডিজিটাল
আইনের বিপরীত কোন তথ্য অনলাইনে শেয়ার করলে
আপনিও এই আইনে অপরাধী হিসাবে গণ্য হতে পারেন।
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে কি রয়েছে?
** ডিজিটাল
মাধ্যমে প্রকাশিত বা প্রচারিত কোনো তথ্য-উপাত্ত দেশের সংহতি, অর্থনৈতিক কর্মকান্ড,
নিরাপত্তা, প্রতিরক্ষা, ধর্মীয় মূল্যবোধ কিংবা জন শৃঙ্খলা ক্ষুন্ন করলে বা জাতিগত বিদ্বেষ
ও ঘৃণা সৃষ্টি করলে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী তা ব্লক বা অপসারণের জন্য টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রক
সংস্থা বিটিআরসিকে অনুরোধ করতে পারবে।
এই ক্ষেত্রে
পুলিশ পরোয়ানা বা অনুমোদন ছাড়াই তল্লাশি, জব্দ এবং গ্রেপ্তার করতে পারবে আইনে তা বলা
রয়েছে।
** ডিজিটাল
আইনে অফিসিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্ট যুক্ত করা হয়। ফলে কোনো সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত
বা সংবিধিবদ্ধ অতি গোপনীয় বা গোপনীয় তথ্য-উপাত্ত ধারণ, প্রেরণ কিংবা সংরক্ষণ করা হয়,
কিংবা প্রকাশ করা হয় অথবা কাউকে করতে সহায়তা করে আইন ভঙ্গ করলে এই আইনে সর্বোচ্চ ১৪
বছরের সাজা হতে পারে বা ২৫ লাখ টাকা জরিমানা বা অর্থদন্ড কিংবা উভয় দন্ড হতে পারে।
** কোনো সরকারি,
আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত বা সংবিধিবদ্ধ সংস্থার অতি গোপনীয় বা গোপনীয় তথ্য-উপাত্ত
যদি কম্পিউটার, ডিজিটাল ডিভাইস, ডিজিটাল নেটওয়ার্ক বা অন্য কোনো ইলেকট্রনিক মাধ্যমে
ধারণ, প্রেরণ বা সংরক্ষণ করা হয়, তাহলে তা হবে গুপ্তচর বৃত্তি।
অর্থাৎ এরকম
করলে তা আইনে গুপ্তচরবৃত্তি হিসাবে গণ্য হবে এবং এর জন্য ৫ বছরের কারাদন্ড বা ১০ লাখ
টাকা জরিমানা হতে পারে।
** আইন অনুযায়ী
ডিজিটাল মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধ বা মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বা জাতির পিতার নামে প্রোপাগান্ডা
কিংবা প্রচারণা চালালে তা অপরাধ হিসাবে গণ্য হবে।
আর এর সাজা
সর্বোচ্চ ১০ বছরের জেল বা এক কোটি টাকা জরিমানা কিংবা উভয় দন্ড হতে পারে।
** ডিজিটাল
মাধ্যম ব্যবহার করে আক্রমণাত্মক, মিথ্যা, ভীতি প্রদর্শক তথ্য- উপাত্ত প্রকাশ, মনহানিকর
তথ্য প্রকাশ, ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত, আইনশৃঙ্খলার অবনতি ঘটানো, ঘৃণা প্রকাশ, অনুমতি
ছাড়া ব্যক্তিগত তথ্য সংগ্রহ, প্রকাশ বা ব্যবহার করলে শাস্তির বিধান রয়েছে আইনে।
এসব ক্ষেত্রে
তিন থেকে ৭ বছরের জেল, জরিমানা বা উাভয় দন্ড হতে পারে। দ্বিতীয়বার এই অপরাধ করলে ১০
বছরের জেল হতে পারে।
** ডিজিটাল
মাধ্যম ব্যবহার করে কেউ প্রতারণা করলে অনধিক ৫ বছরের জেল বা ৫ লাখ টাকা জরিমানা কিংবা
উভয় দন্ড হতে পারে।
** এই আইনে
কম্পিউটার হ্যাকিংয়ের বিষয়েও বিধান রয়েছে। আইনের ১৫ ধারায় বলা হয়েছে, কম্পিউটার, কম্পিউটার
প্রোগ্রাম, কম্পিউটার সিস্টেম বা কম্পিউটার নেটওয়ার্ক বা ডিভাইস, ডিজিটাল সিস্টেম বা
ডিজিটাল নেটওয়ার্কে প্রবেশাধিকার ব্যাহত করে, এমন ডিজিটাল সন্ত্রাসী কাজের জন্য অপরাধী
হবেন।
এই অপরাধে
শাস্তির বিধান রয়েছে অনধিক ১৪ বছরের কারাদন্ড বা এক কোটি টাকা জরিমানা কিংবা উভয় দন্ড
হতে পারে।
** ছবি বিকৃতি
বা অসৎ উদ্দেশ্যে ইচ্ছেকৃতভাবে বা অজ্ঞাতসারে কারো ব্যাক্তিগত ছবি তোলা, প্রকাশ করা
বা বিকৃত করা কিংবা ধারণ করলে অপরাধী হবেন।
এই অপরাধের
জন্য ৫ বছরের কারাদন্ড হতে পারে। ইন্টারনেটে পর্নগ্রাফি ও শিশু পর্নগ্রাফির অপরাথে
৭ বছর জেল বা ৫ লাখ টাকা অর্থদন্ড কিংবা উভয় দন্ড হতে পারে।
** কোনো ব্যাংক,
বীমা বা আর্থিক সেবা প্রতিষ্ঠান থেকে কোন ইলেকট্রনিক বা ডিজিটাল মাধ্যমে ব্যবহার করে
আইনানুগ কর্তৃত্ব ছাড়া অনলাইন লেনদেন করলে পাঁচ বছরের কারাদন্ড, বা পাঁচ লাখ টাকা জরিমানা
কিংবা উভয় দন্ড হতে পারে।
** বাংলাদেশ
কিংবা বিশ্বের যেকোনো স্থানে বসে কোন বাংলাদেশের নাগরিক যদি এই আইন লঙ্ঘন করেন, তাহলে
তার বিরুদ্ধে এই আইনে বিচার করা যাবে।
** ডিজিটাল
নিরাপত্তা আইনের বিচার হবে বিশেষ ট্রাইব্যুনালে। অভিযোগ গঠনের ১৮০ কার্যাদিবসের মধ্যে
মামলার নিষ্পত্তি করতে হবে। তবে এর মধ্যে করা সম্ভব না হলে সর্বোচ্চ ৯০ বার্যাদিবস
বাড়ানো যাবে।
আইন সংক্রান্ত
অন্যান্য ইনফো
মামলা করবেন কিভাবে
কিংবা মামলা করার উপায় কি?
জমি
বেদখল হলে উদ্ধার করার উপায় কি? আইনিভাবে কি করবেন?
পুলিশের
হয়রানির শিকার হলে কি করবেন? পুলিশের বিরুদ্ধে কোথায় অভিযোগ করা যায়?
মানি এসকট এর ক্ষেত্রে পুলিশের
সহায়তা কিভাবে নিবেন?
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন