পৃথিবীর সব থেকে বেশি ভর্তাপ্রিয় মানুষ হচ্ছে বাংগালীরা। কেননা বাংলাদেশের মানুষের খাদ্যের সাথে ভর্তা ওতপ্রোতভাবে জড়িত রয়েছে। তবে ভর্তা খাওয়া মানুষগুলোকে দুভাগে ভাগ করা যায়। কেউ কেউ শখের বসে বিভিন্ন ভর্তা খাওয়া অধিক পছন্দ করেন আবার অন্য দিকে আর এক দল রয়েছে যারা ভর্তা খায় অন্য কারণে। যেমন- অনেক ব্যাচেলর ছেলে নিজে রান্না করে খাওয়াতে ডিম ভাজি বা ভর্তা নিয়মিত খেতে পছন্দ করেন। আবার কিছু দারিদ্র পরিবার বাজারের উদ্ধগতির কারণে ভর্তা ভাত খেতে পছন্দ করে থাকেন। যাই হোক না কেন ভর্তাতে রয়েছে অনেক পুষ্টি ও স্বাদ। ভর্তার রয়েছে বিভিন্ন প্রকারভেদ ও ধরণ। তবে বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি পরিচিত ও প্রসিদ্ধ ভর্তা হচ্ছে আলু ভর্তা। আজকে আমরা ভর্তার ইতিহাস, নামকরণ ও বিভিন্ন প্রকার ভর্তা সম্পর্কে জানবো।
ভর্তা যে
কোন গুরুত্তপূর্ণ বিষয় নয় তা কিন্তু ভাবা মোটেই ঠিক নয়। কেননা প্রতিদিন হাজার হাজার
বাঙগালী কোন না কোন ভর্তা খাদ্য তালিকায় রাখতে পছন্দ করেন। তাই ভর্তা কত প্রকার হতে
পাবে? ভর্তা কি? এর কি কোন উপকারিতা কিংবা অবকারিতা রয়েছে ? কিভাবে ভর্তা তৈরি করা
হয়? বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বিভিন্ন রকম ভর্তার প্রচলন ইত্যাদি নানা বিষয় থাকছে
আজকের আলোচনায়।
ভর্তা কি?
বাংলায় কোন
কিছু পিষে ফেলাকে ভর্তা বলা হয়। কিছু কিছু অঞ্চলে এই শব্দটি কারো উপর ক্রোধ প্রকাশ করার ক্ষেতে
ব্যবহার করা হয়ে থাকে। তবে সাধারণত ভর্তা বলতে কোন তরকারিকে পিষে বিশেষ পরিবেশন করাকে
বুঝায়।
এছাড়াও ভর্তা
বলতে বেশি যাকে বুঝানো হয় তা হচ্ছে “আলু ভর্তা”। যদিও অনেক রকম ভর্তা রয়েছে, সবথেকে
বেশি প্রচলিত হচ্ছে এটি।
শুধুমাত্র
ভারত ও বাংলাদেশেই নয়, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ভর্তা বা ভর্তাজাতীয় খাবার দেখতে পাওয়া
যায়। আর ভর্তাপ্রিয় হুমায়ন আহমেদ ভর্তা সম্পর্কে বলেছেন, বাংলাদেশের বেশিরভাগ ছোট মাছের
জন্ম হযেছে ভর্তা হবার জন্য।
নামকরণ ও ইতিহাস
আধুনিক বাংলায়
ভর্তা শব্দটি একটি বিশেষ খাবারকে বুঝানো হয়। অর্থাৎ শুধুমাত্র এটি খাবার বোঝাতে ব্যবহৃত
হয়। বাংলায় সংস্কৃত ভর্ত্তা থেকে আগত ভর্তা শব্দের অর্থ স্বামী।
ভর্তা শব্দটি
খুব বেশি ব্যবহৃত না হলেও এর অপভ্রংশ রুপ ভাতার লোকজ বাংলায় বহুল ব্যবহৃত হয়ে থাকে।
কোন কিছু পিষে ফেলাকে ভর্তা বলা হয়। সকল প্রকার ভর্তা বাংগালীরা হাতে কিংবা বিভিন্ন
উপায়ে পিষে তৈরি করে।
ভর্তা মানে
দলাইমলাই, চিপে চিড়েচ্যাপ্টা করে ফেলা। বাঙালি জাতির সাথে ভর্তার সম্পর্ক ঐতিহ্যগতভাবে
জড়িত। তবে ঠিক কখন থেকে ভর্তার সাথে বাঙালি জাতির সুদূর সম্পর্ক তা কোন নৃতাত্ত্বিক
ইতহাস রচিত হয়নি।
তবে ধারণা
করা হয়, হাজার বছর ধরে বাঙালি জাতি ভর্তা খেয়ে আসছে। বিশেষ করে শুঁটকির ভর্তা ছিল অনেক
প্রাচীন। মাছে-ভাতে বাঙালির শুঁটকির ভর্তা খাওয়া ছাড়া উপায় ছিল না এক সময়। কেননা মাছ
শুকিয়ে শুঁটকি করা ছাড়া মাংস সংরক্ষণ করার অন্য কোন পদ্ধতি ছিলো না।
এছাড়াও কৃষিভিত্তিক
সমাজে স্বাভাবিকভাবেই যুক্ত হয়েছে আলু ভর্তা, বেগুন ভর্তা, বিভিন্ন সবজি ভর্তা ইত্যাদি।
এই সব ভর্তা ছিলো একটু নিম্ন আয়ের মানুষেরই খাবার।
দেশের গরিব
জনপদে ভর্তা ছিলো ঠেকে কাজ চালানোর উপায়। ঘরে কোন কিছু না থাকলে যা ছিল তা ডলে একটু
ভর্তা বানিয়ে নেওয়া হতো।
বর্তমানে
ভর্তার রয়েছে ঐতিহ্যের মর্যাদা। দেশের নামিদামি হোটেল রেস্পটুরেন্টেও এখন বহুপদের ভর্তা
রাখা হয়।
শুধুমাত্র
যে ভাতের সাথে ভর্তা খাওয়া হয় তা কিন্তু নয়। শীত মৌসুমে পিঠার দোকানগুলিতে বিশেষ করে
চিতেই পিঠার দোকানে বাহারি পদের ভর্তার সমাহার লক্ষ্য করা যায়।র্
আরো পড়ুন:
যে সকল খাবার হজম শক্তি বৃদ্ধি করে
বাসে উঠলে ভমি হয় কেন? মুক্তি পাবেন কিভাবে?
কি কারণে যৌন ইচ্ছা শক্তি কমে যায়?
গর্ভবতী মায়ের খাবারের তালিকা কিভাবে তৈরি করবেন?
ভর্তার প্রকারভেদ
ভর্তার বিভিন্ন
প্রকার হতে পারে। যেমন- আলু ভর্তা, বেগুন ভরতআ, শুটকি ভর্তা, ডিম ভর্তা ইত্যাদি। এছাড়ও
আরও বহু প্রকার ভর্তা রয়েছে। অর্থাৎ অনেক কিছু দিয়ে ভর্তা বানানো হয়। ফলে বিভিন্ন নামে
ও স্বাদে পরিচিতি লাভ করে। নিচে বিভিন্ন প্রকারের ভর্তার নামের একটা তালিকা দেওয়া হলো।
** কাঁচা
আমের ভর্তা
** আলু ভর্তা
** শুটকি
ভর্তা
** টাকি ভর্তা
** সিদল ভর্তা
** শিম ভর্তা
** বেগুন
ভর্তা
** মরিচ ভর্তা
** কালিজিরা
ভর্তা
** কলা ভর্তা
** ডাল ভর্তা
** টমেটো
ভর্তা
** তিশি ভর্তা
** লাউ বিচি
ভর্তা
** নোনা ইলিশ
ভর্তা
** মুরগি
ভর্তা
** বাঁধা
কপি ভর্তা
** পালং পাতা
ভর্তা
** ফুল কপি
ভর্তা
** পেঁয়াজ
পাতা ভর্তা
** পোড়া
রসুন ভর্তা
** মিষ্টি
কুমড়ার চোঁচা ভর্তা
** সবুজ সবজি
ভর্তা
** নারকেলি
কচু ভর্তা
** বরবটি
ভর্তা
** ঢেঁড়স
ভর্তা
** ডিম ভর্তা
** শাহী ডিম
ভর্তা
** সরিষা
ভর্তা
** বেসন বড়া
ভর্তা
** পটল ভর্তা
** কাঁঠালের
বিচি ভর্তা
** চিংড়ী
ভর্তা
** করলা ভর্তা
** কাচকি
মাছ ভর্তা
** লাউপাতা
নারকেল ভর্তা
** শিমের
বিচি ভর্তা
** পালং চিংড়ী
ভর্তা
** ভাজা বেগুন
ভর্তা
** বাটা শুঁটকি
ভর্তা
** কাঁচা
টমেটো ভর্তা
** বেগুন
টমেটো ভর্তা
** পোড়া
বেগুন ভর্তা
** লাউ খোসা
রুই ভর্তা
** কলাই শাক
ভর্তা
** শালগম
ভর্তা
** কান্দাল
ভর্তা
** মাশরুম
ভর্তা
** পেঁপে
ভর্তা
** তেলাপিয়া
মাছের ভর্তা
** মিষ্ট
আলু ভর্তা
** পটলের
খোসা ভর্তা
** মুগডাল
ভর্তা
** থানকুনি
পাতার ভর্তা
** বাটা ইলিশ
ভর্তা
** চান্দা
মাছ ভর্তা
** চ্যাপা
শুঁটকি ভর্তা
** শিম আলু
বেগুন ভর্তা
** মগজ ভর্তা
** বিফ কিমা
ভর্তা
** ওল কপি
ভর্তা
** মুলা শাক
ভর্তা
** সরিষা
শাক ভর্তা
** নোনা ইলিশ
ভর্তা
** কাঁচামরিচ
ভর্তা
** লাউয়ের
বিচি ভর্তা
** তিল ভর্তা
** আলুর চপ
ভর্তা
** পুঁইশাক
ইলিশ ভর্তা
** ডাল আলু
ভর্তা
** শিম আলু
ভর্তা
** মলামাছের
মাথা ভর্তা
** লাল শাক
ভর্তা
** মিষ্টি
কুমড়া ভর্তা
** পাকা টমেটো
ভর্তা
** ভাজা মাছের
ভর্তা
** পেঁয়াজ
কলি ভর্তা
** কলিজা
ভর্তা
** মাশরুম
পালং চিংড়ী ভর্তা
** আলু ডিম
পটল ভর্তা
** মিষ্টি
কুমড়ার শাহী ভর্তা
** তিল্লি
ভর্তা
** আলু ডিম
ভর্তা
** আলু কাঁঠাল
বিচি ভর্তা
** চিংড়ী
আলু ভর্তা
** কাঁচকলার
বড়া ভর্তা
** পুঁদিনা
পাতা ভর্তা
** কচি আমের
পাতা ভর্তা
** শিম বিচি
আলু ভর্তা
** ঢেঁড়স
পোড়া ভর্তা
** মিষ্টি
কুমড়ার ফুল ভর্তা
** মাগুর
মাছের ভর্তা
** স্পেশাল
করলা ভর্তা
** বাদশাহী
ভর্তা ইত্যাদি।
উপরে আমরা অনেক প্রকার ভর্তার কথা বা ভর্তার নাম জেনে নিলাম। কিন্তু সকল প্রকার ভর্তাই কি বাংলাদেশে জনপ্রিয়তা পেয়েছে? উত্তর: না।
বাংলাদেশের জনপ্রিয় ভর্তাগুলো কি কি?
দেশের বিভিন্ন
অঞ্চলে বিভিন্ন প্রকার ভর্তার প্রচলন খুব বেশি। যেমন কোন কোন অঞ্চলে চেপা মাছের ভর্তা
বেশি জনপ্রিয়, আবার কোথও সিদল ভর্তা বেশি জনপ্রিয়।
দেশের কোথাও
আবার শুটকি মাছের ভর্তা খুবই জনপ্রিয় বা প্রচলিত রয়েছে কোথাও আবার টমেটো ভর্তার চর্চা
খুব বেশি হয়ে থাকে।
তবে অঞ্চলভেদে ভর্তার প্রচলন কিংবা জনপ্রিয়তা ভিন্ন হলেও সামগ্রিকভাবে বাংলাদেশে কয়েকটি ভর্তার বেশ জনপ্রিয়তা রয়েছে। আর তা হচ্ছে- আলু ভর্তা, বেগুন ভর্তা, মাছ ভর্তা, সবজি ভর্তা ইত্যাদি।
উপকারিতা
সবচেয়ে কম সময়ে এবং কোন ঝামেলা ছাড়াই দ্রুত যে কোন কিছুর ভর্তা করা যায়। এছাড়াও খাবারের স্বাদকে আরো বাড়িয়ে তুলতে এর কোন বিকল্প নেই।
ভর্তার কি কোন অপকারিত রয়েছে?
শেষকথাঃ
প্রিয় পাঠক,
আশা করি ভর্তা সম্পর্কে বিস্তারিত ধারণা পেয়ে গেছেন। আপনার কোন ধরণের ভর্তা ভাল লাগে
কিংবা কোন ভর্তা কিভাবে তৈরা জানবেন কমেন্ট করে আমাদের জানাতে পারেন। আপনার কমেন্ট
অনুযায়ী আমরা ভর্তার রেসিপি শেয়ার করবো ইনশাল্লাহ।
অন্যান্য
ইনফো জানুন
রমজান মাসে ডায়াবেডিস রোগিরা কোন কোন খাবার খাবেন?
কোন কোন খাবার সেহরিতে ও ইফতারিতে খাওয়া যাবে না?
ইসুবগুল ও তোকমা দানা খাবেন কিভাবে?
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন