নিজের উপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করার মাস হচ্ছে রমজান মাস। আল্লাহর প্রতি যেমন ভয় অর্জন করা প্রয়োজন তার যথাযথ প্রশিক্ষণ নিতে হবে এই মাসে। পবিত্র এই রমজান মাসের যথাযথ হক আদায় করার জন্য আমাদের যত্নশীল হতে হবে। আজকে আমরা রোজা বা সাওম কি? রোজার নিয়ত কিভাবে করতে হয়? ইফতারের দোয়া আরবী উচ্চারণ ও বাংলা অর্থসহ আলোচনা করবো।
প্রথমেই আপনাকে
মনে রাখতে হবে যে, ইসলামের ভাষা আরবী আর আমাদের ভাষা বাংলা। ফলে আমাদের মাঝে অনেক সময় ভুল
বুঝাবুঝি তৈরি হয়।যেমন রোজা রাখার জন্য নিয়ত করা আবশ্যক কর্তব্য। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রে
দেখা যায় যারা আরবী ভাষায় দক্ষ নয় তারাও আরবীতে নিয়ত করতে গিয়ে মানসিকভাবে নিজেকে প্রস্তুত
করতে পারেন না। অর্থাৎ নিয়ত সহিহ করতে পারেন না। কোন কাজের নিয়ত সহিহ না হলে সেই কাজও সঠিকভাবে করা সম্ভব হয় না।
আমাদের পরামর্শ
হচ্ছে যারা আরবী ভাষায় দক্ষ নয় তারা বাংলা ভাষায় নিয়ত করবেন। এ ব্যপারে অভীজ্ঞ আলেমের
কাছে জেনে নিবেন কিভাবে নিয়ত করতে হয়। আমরা এখানে আরবী ও বাংলা দুটোই আলোচনা করেছি।
রোজা বা সাওম কি?
বাংলায় আমরা
যাকে রোজা বলি আরবীতে তাকে সাওম বলা হয়। সেহরী থেকে সূর্যাস্থ, এই সময় কোন খাবার না
খেয়ে সমস্থ হারাম কাজ থেকে নিজেকে বিরত রাখার নাম সাওম।
সাওম রোজা আরবী
রমজান মাসের সারা মাস জুড়ে পালন করতে হয়। পুরা মাসে একজন মুসলিম নিজেকে নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা বা
আত্নসংযোম সাধণা করে আল্লাহর সন্তুষ্টি কামনা করে থাকেন।
সাওম বা রোজা
মুসলমানদের জন্য আবশ্যক কর্তব্য বা ফরজ বিধান। এতে রয়েছে মানুষের জীবনে বহু উপকারিতা। সুতরাং
সঠিক নিয়মে, আল্লাহকে সন্তষ্টি করার লক্ষে এবং রাসুল (সাঃ) এর দেখানো পদ্ধতিতে রোজা
পালন করতে হবে।
রোজা রাখার নিয়ত কি?
নিয়ত জিনিসটা
আপনাকে ভাল করে বুঝতে হবে। কেনানা নিয়ত যত সহিহ হবে কাজটি তত ভালভাবে করতে পারবেন।
নিয়ত শব্দের অর্থ ইচ্ছে পোষণ করা। আপনি যদি আরবী ভাষা না বুঝেন তাহলে আরবীতে নিয়ত করা
আপনার জন্য বোকামি।
মনে রাখবেন
আল্লাহ আপনার আত্নার বিচার করবেন। তাই আত্নাকে কতটুকু আল্লাহ বিধানের উপর অটল রাখতে
পারবেন সেটিই বিবেচ্য বিষয়।
রোজা রাখার
জন্য নিয়ত করা জরুরী তবে এটা জরুরী নয় যে আপনাকে আরবী ভাষা শিখে ইচ্ছে পোষণ (নিয়ত)
করতে হবে। আল্লাহ পৃথিবীর সকল মানুষের ভাষা শুধু নয় সারা জগতের এবং সকল কিছুর ভাষা বুঝেন এবং তিনিই এর সৃষ্টিকর্তা। তবে
আপনি যদি আরবী ভাষা শিখে নিজেকে প্রস্তুত করতে পারেন তাহলে এটা আপনার জন্য অনেক ভাল।
আর বাংলাতে নিয়ত করলে যে নিয়ত হবে না বিষয়টা এমন না।
রোজার নিয়ত করা কি ফরজ বিধান?
রোজার নিয়ত
কি ফরজ? এখানে বলে রাখা ভাল যে, আপনার কোন ইচ্ছা (নিয়ত) নেই এমন কাজ কি কখনো করতে যাবেন? যদিও করে থাকেন তাহলে কতটুকু তা ভালভাবে করবেন তা ভেবে দেখুন। তাই অনেকেই হয়তো জানেন না যে, রমজান মাসে রোজার নিয়ত করা কি?
ইসলামের দৃষ্টিতে
নিয়ত করা কি? অর্থাৎ বুজাতে চাইছি ইসলাম রোজার নিয়ত ফরজ করেছে, সুন্নত নাকি নফল? রোজার
নিয়ত করা কি ফরজ।
উত্তর হচ্ছে
রোজার নিয়ত করা ফরজ বিধান। কেউ যদি নিয়ত অর্থাৎ ইচ্ছা পোষণ না করে রোজা রাখে তাহলে তার রোজা
শুদ্ধা বা সঠিক হবে না।
শুধুমাত্র
রোজার ক্ষেত্রে নয়, যে কোন ইবাদতের ক্ষেত্রে আল্লাহকে সুন্তষ্টি করার উদ্দেশ্যে মনের
ইচ্ছা পোষণ জরুরী বিষয়। এছাড়াও মনের ইচ্ছা না থাকলে সেই কাজ সঠিকভাবে করা যায় না। তাই হাদিসে বলা হয়েছে নিয়তের উপর সকল কাজ নির্ভশীল।
রোজার নিয়ত আরবিতে
পবিত্র মাহে
রমজানের সিয়াম পালনের জন্য অর্থাৎ প্রতিটি সিয়াম বা রোজা রাখার জন্য নিয়ত করা অবশ্যই
করনীয় যাকে ইসলামে ফরজ করা হয়েছে।
অনেকেই নিয়তের
আসল বিষয় না বুঝে আরবীতে নিয়ত পড়ে থাকেন। আপনি যদি আরবী ভাষা না বুঝেন তাহলে আপনার
পক্ষে রোজার ইচ্ছা পোষণ করা কি আরবিতে সম্ভব? অনেকে আবার আরবী ভাষা শেখার জন্য আগ্রহী।
তারা সবগুলো
বিষয় আরবিতে বুঝার চেষ্টার করেন আলহামদুলিল্লাহ। যারা আরবিতে নিয়ত বা ইচ্ছা পোষণ করে রোজা পালন করতে
চান তাদের জন্য অর্থাৎ আরবি যে বাক্যগুলো দ্বারা নিয়ত করতে পারেন তা নিচে দেওয়া হলো।
তবে আরবী ভাষা না বুঝলে বাংলায় নিয়ত করা ভাল। কেননা নিয়ত হচ্ছে মনের ইচ্ছা মুখের উচ্ছারণ
জরুরী নয়।
রোজা রাখার আররি নিয়ত
আরবি ভাষায়
নিম্ন বাক্য দ্বারা নিয়ত করতে পারেন। মুখে উচ্চারণ করা জরুরী নয়। মনে মনে বাক্যগুলো
খেয়াল করে ইচ্ছা পোষণ করা যেতে পারে।
نَوَيْتُ
اَنْ اُصُوْمَ
غَدًا مِّنْ
شَهْرِ رَمْضَانَ
الْمُبَارَكِ فَرْضَا
لَكَ يَا
اللهُ فَتَقَبَّل
مِنِّى اِنَّكَ
اَنْتَ السَّمِيْعُ
الْعَلِيْم
রোজা রাখার বাংলা নিয়ত
পবিত্র রমজানের
রোজা পালনের জন্য বাংলায় নাকি আরবিতে নিয়ত করলেন সেটা জরুরি নয় । তবে আপনি নিয়ত করলেন
কিনা সেটা মূখ্য বিষয় এবং যে কোনভাবেই হোক রোজার নিয়ত করা অতি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। রোজার
নিয়ত বাংলা উচ্চারণ দেওয়া হলো।
রোজার নিয়তের বাংলা উচ্চারণ
বাংলা ভাষার
উচ্চারণ যেমন আরবিতে সঠিক হয় না তেমনি আরবি ভাষার উচ্চারণ বাংলাতে হুবহু লেখা সম্ভব
নয়। তারপরও একটু সুবিধার জন্য বাংলা উচ্চারণ দেওয়া হলো।
বাংলা উচ্চারণ:-
নাওয়াই তু আন আছুমা গাদাম মিন শাহরি জমাজানাল মুবারিকি ফারদাল্লাকা, ইয়া আল্লাহু ফাতাকাব্বাল
মিন্নি ইন্নিকা আংতাস সামিউল আলিম।
আরবি ভাষায় হুহহু এভাবে যে নিয়ত করতে হবে বিষয়টা
এমন নয়। তবে মনস্থির করার সময় যে বিষয়গুলো মাথায় নিবেন তা নিয়তে রাখা ভালো। যেমন- উপরোক্ত
নিয়তের বাংলা ভাষায় যা হবে তা নিচে আলোচনা করা হলো।
বাংলা অর্থঃ-
হে আল্লাহ! আমি আগামীকাল তোমার পক্ষ থেকে পবিত্র রমজানের নির্ধারিত ফরজ রোজা রাখার
ইচ্ছা পোষণ (নিয়ত) করলাম। অতএব তুমি আমার পক্ষ থেকে (আমার রোজা তথা পানহার থেকে বিরত
থাকাকে ) কবুল কর, নিশ্চয়ই তুমি সর্বশ্রোতা ও সর্বজ্ঞানী।
ইফতারের দোয়া আরবি
আমরা সারাদিন
সিয়াম সাধনা করে যখন ইফতারি করবো অর্থাৎ একটি রোজার সমাপ্ত ঘটবে তখন আল্লাহ তা’আলা
প্রশংসা করার মাধ্যমে ইফতার বা রোজা সমাপ্ত করতে হবে। আল্লাহর প্রসংশা করাকে আমরা ইফতারে দোয়া বলে থাকি।
এটাও আপনি যে কোন ভাষায় করতে পারেন। তবে আরবিতে পড়া ভালো কেননা জান্নাতের ভাষা হবে
আরবি।
اَللَّهُمَّ لَكَ صُمْتُ وَ عَلَى رِزْقِكَ وَ اَفْطَرْتُ
আরবিতে উচ্চারণ শুনুন
ইফতারের দোয়া বাংলা
আপনি চাইলে ইফতারের দোয়া বাংলা উচ্চারণ এর মাধ্যমে পড়তে পারেন। সঠিকভাবে উচ্চারণ না হলেও এটি আপনাকে মুখস্ত করতে সহযোগিত করতে পারে। রোজার রাখার জন্য এবং ইফতারি করার জন্য বাংলা উচ্চারণ সহ দেওয়া হলো।
বাংলা উচ্চারণঃ- আল্লাহুম্মা লাকা ছুমতু ওয়া আ’লা রিযক্কিকা আফত্বারতু।
অর্থঃ হে আল্লাহ! আমি তোমারই জন্যই রোজা রেখেছি এবং তোমার দেওয়া রিযিক দ্বারা ইফতার করছি