ফেতরা বা সদকাতুল ফিতর ঐ নির্ধারিত সদকাকে বলা হয় যা ঈদুল ফিতরের নামাজের আগে প্রদান করা হয়। পবিত্র রমজান মাসে সিয়াম সাধনার শেষে এবং ঈদুল ফিতর নামাজের আগে এই সদকা প্রদান করা হয় বলে একে সদকাতুল ফিতর বা ফিতরাও বলা হয়।
ফিতরার পরিমান ২০২৩
সর্বনিম্ন= ১১৫ টাকা এবং সর্বোচ্চ ২৬৪০ টাকা
ফিতরা বা সদকাতুল ফিতরকে জাকাতুল ফিতরও বলা হয়ে থাকে। কেননা ফিতরা সবার উপর আদায় করা ওয়াজিব নয়। যে সকল মুসলমান নিসাব পরিমান সম্পদের মালিক শুধুমাত্র তাদের জন্য ফিতারা আদায় করা ওয়াজিব।
যারা নিসাব পরিমান সম্পদের মালিক নন তাদের জন্য ফিতরা আদায় করা ওয়াজিব নয়। তবে তাদের জন্য ইহা আদায় করা সুন্নত ও নফল ইবাদত। তারা আদায় করলে সওয়াব পাবেন। ইসলামি পন্ডিতরা এমটিই মত প্রকাশ করে থাকেন।
ফিতরা বা সদকাতুর ফিতর কি?
“সদকাতুল ফিতর” শব্দ দুটি হচ্ছে আরবি। সদকা এর বাংলা হলো দান, আর ফিতর অর্থ রোজার সমাপন বা ইদুল ফিতর। অর্থাৎ ইদুল ফিতর উপলক্ষে যে দান করা হয় তাকেই সদকাতুল ফিতর বলা হয়।
সদকাতুল ফিতরকে জাকাতুর ফিতর বা শুধু ফিতরাও বলা হয়ে থাকে।
ফিতরা আদায়ের শরয়ী বিধান কি?
ইসলামী শরিয়ত মোতাবেক সদকাতুল ফিতর আদায় করা ওয়াজিব। হাদিস শরিফে বর্ণনা করা হয়েছে, হযরত ইবনে ওমর (রা) বলেন, রাসূল (সাঃ) সদকাতুল ফিতর অপরিজার্য করেছেন। এর পরিমাণ হলো এক সা জব বা এক সা খেজুর। ছোট-বড়, স্বাধীন-পরাধীন সবার উপর ফিতর আদায় করা ওয়াজিব। (বুখারি হাদিস নং-১৫১২)
ফিতরা ওয়াজিব হওয়ার শর্ত কি?
যাকাতের মতোই ফিতরা ওয়াজিব হওয়ার শর্ত হচ্ছে নিসাব পরিমান সম্পদের মালিক হওয়া। অর্থাৎ কারো কাছে সাড়ে সাত ভরি সোনা বা সাড়ে বায়ান্ন ভরি রুপা বা সমপরিমান ব্যবসায়িক নগদ অর্থ কিংবা নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের অতিরিক্ত সম্পদ ঈদুর ফিতরের সময় বিদ্যমান থাকলে, তার উপর সদকাতুর ফিতর আদায় করা ওয়াজিব।
যার উপর ফিতরা আদায় করা ওয়াজিব, তিনি তার নিজের ফিতরা আদায় করার পাশাপাশি তার অধিনস্থদের পক্ষেও আদায় করতে পারেন।
ফিতরা কখন আদায় করতে হয়?
ঈদুল ফিতরে নামাজের আগে সদকাতুল ফিতর আদায় করতে হয়। ইতিহাস ও হাদিসগ্রন্থ থেকে জানা যায় ২৮ শে রমজান থেকে ফিতরা আদায় করা উত্তম। কেননা ২৯ শে রমজান হলে ঈদের আগের দিন ফিতরা আদায় করা হয়।
তবে সুবিধার জন্য এর আগেও ফিতরা আদায় করা যায়। যাদেরকে যাকাত দেওয়া যায়, তাদেরকে ফিতরাও দেওয়া যায়।
কোন বস্তু দ্বারা ফিতরা আদায় করবেন?
ফিতরার নির্ধারিত খাদ্যসামগ্রী কিংবা তার মূল্যের টাকাও আদায় করা যায়। ফিতরার টাকা দিয়ে কোন বস্তু ক্রয় করে দেওয়াও জায়েজ রয়েছে।
হাদিসে রয়েছে- হজরত আবু সাইদ খুদরি (রা) থেকে বর্ণনা করা, তিনি বলেন রাসূল (সাঃ) এর জামানায় আমরা সদকাতুল ফিতর দিতাম এক সা (সাড়ে তিন কেজি প্রায়) খাদ্যবস্ত, তখন আমাদের খাদ্য ছিল: যব, কিশমিশ, পনির ও খেজুর (বুখারি, খন্ড-১, পৃষ্ঠা ২০৪)।
তিনি আরো বলেন, আমরা সদকাতুল ফিতর আদায় করতাম এক সা খাদ্যবস্ত, যেমন- এক সা যব, এক সা খেজুর, এক সা পনির, এক সা কিশমিশ (বুখারি, খন্ড-১, পৃষ্ঠা ২০৫)।
এবছর জনপ্রতি ফিতরার পরিমান কত?
প্রতি বছর খাদ্যমূল্য কমবেশির কারণে ফিতরার পরিমান মূল্য কমবেশি হয়ে থাকে। তাই সুবিধার জন্য বাংলাদেশ ইসলামি ফাউন্ডেশন জাতীয় ফিতরা নির্ধারন কমিটি কর্তক প্রতিবছর ফিতরার পরিমান নির্ধারণ করে একটি প্রজ্ঞাপন প্রদান করা হয়।
নিচে বাংলাদেশ ইসলামি ফাউন্ডেশনের বিজ্ঞপ্তিটি দেওয়া হলো
বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী এছর সর্বোচ্চ ফিতারা পরিমান হচ্ছে ২৬৪০ টাকা আর সর্বনিম্ন পরিমান হচ্ছে ১১৫ টাকা।
একই পরিবারের কতজনকে ফিতরা দিতে হবে?
অনেকে প্রশ্ন করেন একই পরিবারের কতজনকে তাদের ফিতরা দিতে হবে। একটি পরিবারে স্বামী-স্ত্রী, শিশু-কিশোর, ভাই-বোন এবং পিতা-মাতাসহ মোট ৮ জন সদস্য থাকলে, পরিবারের দায়িত্বশীল ব্যক্তি এই ৮ জনের ফিতরা আদায় করবেন। প্রত্যেককে এভাবে হিসাব করে ফিতরা দিতে হবে।
ফিতরা কার উপর ওয়াজিব?
ঈদ-উল-ফিতরের দিন যদি কোনো মুক্ত মুসলমানের জাকাতের নিসাব থাকে অর্থাৎ সাড়ে সাত তোলা স্বর্ণ বা সাড়ে ৫২ তোলা রূপা বা তার সমপরিমাণ নগদ, তাহলে সেই ব্যক্তির জন্য ফিতরা ওয়াজিব।
ঘরবাড়ি, আসবাবপত্র, স্থাবর সম্পদের মূল্য (যদি ব্যবসার জন্য না হয়) যাকাতের নিসাবের অন্তর্ভুক্ত নয়। কিন্তু ফিতরার ক্ষেত্রে অতিরিক্ত আসবাবপত্র, বাড়িঘর ও স্থাবর সম্পদ, ভাড়ার ঘর, যন্ত্রপাতি, কৃষি উপকরণ ইত্যাদি (উপার্জনের জন্য না হলেও) ফিতরার পরিমাণের অন্তর্ভুক্ত হবে।