কম্পিউটার কিভাবে কাজ করে? এই বিষয়ে জানার জন্য অনেকে আগ্রহ দেখাচ্ছে। আর এই যন্ত্রটি বর্তমান যুগে সবচেয়ে বেশি আলোচিত এবং এর ব্যবহারও বাড়ছে জ্যামিতিক হারে। জীবনের সকল সেক্টরে কম্পিউটার মানুষকে করে দিয়েছে আকাশচুম্বি সুযোগ সুবিধা। মানুষ ঘরে বসেই এই যন্ত্রটি দিয়ে সারা পৃথিবী নিয়ন্ত্রণ করছে খুব সহজেই। কম্পিউটারের যন্ত্রগুলে তিন ভাবে বিভক্ত। ইনপুট যন্ত্র, প্রসেসিং যন্ত্র এবং আউটপুট যন্ত্র। আজকের আলোচনার বিষয় হচ্ছে “কম্পিউটারের আউটপুট ডিভাইস (Output Devise) গুলো কি কি? আউটপুট যন্ত্র দিয়ে কি কাজ করা হয়?”
কম্পিউটার ইনপুট যন্ত্র দিয়ে তথ্য গ্রহণ করে প্রসেসিং যন্ত্রে তা প্রসেস করে এবং সবশেষে আউটপুট যন্ত্রে ফলাফল প্রদর্শন করে। আউটপুট যন্ত্র কি? আউটপুট ডিভাইসগুলো কি কি? এই বিষয়ে নিচে আলোচনা করা হলো।
আউটপুট ডিভাইস কি?
আউটপুট ডিভাইস হলো কম্পিউটারের ফলাফল প্রদর্শন করার হার্ডওয়্যার। ইনপুট যন্ত্র দিয়ে কম্পিউটার ব্যবহারকারী যে তথ্য কম্পিউটারে প্রবেশ করায় তা প্রসেসিং অর্থাৎ কম্পিউটার ইনপুট যন্ত্র দেওয়া তথ্য প্রক্রিয়া করে আউটপুট ডিভাইসে ফলাফল দেখায়।
বিভিন্ন তথ্যের ফলাফল প্রদর্শনের জন্য বিভিন্ন আউটপুট ডিভাইস রয়েছে। এই ডিভাইসগুলো ইলেকট্রনিক তথ্যকে মানুষের পাঠযোগ্য বিন্যাসে রুপান্তর করে প্রদর্শন করে। যেমন- অডিও, ভিজ্যুয়াল, পাঠ্য বা হার্ড কপি ইত্যাদির ফলাফল দেখাতে সাহায্য করে।
সুতরাং আউটপুট ডিভাইস হচ্ছে কম্পিউটার হার্ডওয়্যারের একটি অংশ যা একটি কম্পিউটার থেকে ডেটা গ্রহণ করে এবং তারপরে সেই ডেটাটিকে অন্য ফর্মে অনুবাদ করে। অন্য ফর্মটি হতে পারে অডিও, ভিজ্যুয়াল, পাঠ্য বা হার্ড কপি ইত্যিাদি।
আরও জানুনঃ কম্পিউটারের ইনপুট ডিভাইস কি কি? এগুলোর কাজ কি?
আউটপুট ডিভাইসগুলো কি কি?
কম্পিউটারের বিভিন্ন ধরণের আউটপুট ডিভাইস রয়েছে। এইগুরো বিভিন্ন ডেটা কম্পিউটারের প্রসেসিং ইউনিট কর্তৃক প্রক্রিয়াকৃত ডেটা প্রদর্শনের জন্য ব্যবহৃত হয়। নিচে আউটপুট ডিভাইসের (Output Devise) একটি তালিকা দেওয়া হলো।
- মনিটর (Monitor)
- প্রিন্টার (Printer)
- প্লোটার (Plotter)
- প্রজেক্টর (Projector)
- ইয়ারফোন (Earphone)
- স্পিকার (Speaker)
- জিপিএস (GPS)
- সাউন্ড কার্ড (Sound Card)
- ভিডিও কার্ড (Video Card)
- ব্রেইল রিডার (Braille Reader)
- স্পিচ-জেনারেটিং ডিভাইস ইত্যাদি
আউটপুট ডিভাইসের কাজ কি?
কম্পিউটারের আউটপুট ডিভাইসের কাজ হচ্ছে ব্যহারকারীর দেওয়া তথ্য অনুযায়ী ফলাফল প্রকাশ করা। অর্থাৎ কম্পিউটার ব্যবহারকারী ইনপুট ডিভাইসে যে তথ্য ইনপুট করে তা কম্পিউটার প্রথমে প্রক্রিয়া করে এরপর আউটপুট ডিভাইসে ফলাফল প্রদর্শন করে।
আউটপুট ডিভাইসের ভিন্নতার কারণে তা ভিন্ন ভিন্ন আউটপুট প্রদর্শন করে এবং তাদের কাজও ভিন্ন ভিন্ন হয়ে থাকে। নিচে জনপ্রিয় কিছু আউপুট ডিভাইসের আলোচনা করা হলো।
মনিটর (Monitor) এর ব্যবহার
মনিটর হচ্ছে কম্পিউটারের প্রধান আউটপুট ডিভাইস। কম্পিউটারে যে কোন কাজ করার জন্য মনিটর (Monitor) প্রয়োজন পড়ে। মনিটর যে শুধু আউটপুট প্রদর্শন করে তা কিন্তু নয়, ইনপুট দেওয়ার সময়ও বিশেষ কাজে লাগে এটি।
সুতরাং মনিটর হচ্ছে কম্পিটারের ডিসপ্লে ইউনিট বা স্কিন। মনিটর আউটপুট প্রদর্শিত করার জন্য এটিকে ভিজুয়াল ডিসপ্লে ইউনিট (Visual Display Unit) ও বলা হয়।
কম্পিউটার ব্যবহারকারীরা মনিটরে একটি ডিজিটাল ইন্টারফেসের মাধ্যমে ডেটা দেখতে পারে। বাজারে মনিটরের বিভিন্ন প্রকার দেখা যায়। যেমন-
** LED মনিটর (Light Emitting Diodes)
** LCD মনিটর (Liquid Crystal Display)
** DLP Monitor বা ডিজিটাল লাইট প্রসেসিং মনিটর
** টাচ স্ক্রিন মনিটর ইত্যাদি।
প্রিন্টার (Printer) কি?
প্রিন্টার হলো কম্পিউটারের একটি আউটপুট ডিভাইস, যা দিয়ে বিভিন্ন ডকুমেন্ট এর অনুলিপি কাগজে প্রিন্ট নেওয়া যায়। যেমন- বিভিন্ন নথিপত্র/ লেটার বা ছবির প্রিন্ট কাগজে নেওয়ার জন্য এই ডিভাইসটি ব্যবহার করা হয়।
অর্থাৎ প্রিন্টার (Printer) হলো এমন একটি আউটপুট ডিভাইস যা কম্পিউটারে থাকা Soft copy কে Hard copy তে রুপান্তর করতে সাহায্য করে বা যা মাধ্যমে সফট কপি হার্ড কপিতে পরিবর্তন করা যায়।
কম্পিউটারের সংরক্ষিত কোন ইনফরমেশন যখন প্রিন্ট করা হয় তখন এটি কাগজ এর মাধ্যমে ছাপিয়ে বের হয়ে আসে। এই ইনফরমেশন যখন কম্পিউটারে ছিল তখন তা Soft copy আর পিন্ট হয়ে বেরিয়ে আসার পর হয় Hard copy অর্থাৎ কাগজের মধ্যে ইনফরমেশনগুলো টাইপ হয়ে বেরিয়ে আসে।
হার্ড কপি আমরা স্পর্শ করতে পারি কিন্তু সফট কপি স্পর্শ করা যায় না। প্রিন্টারের মাধ্যমে আমরা কোন ইনফরমেশন কম্পিউটার থেকে কাগজে টাইপ পেয়ে থাকি। তাই প্রিন্টার কম্পিউটারের একটি আউটপুট ডিভাইস।
প্রিন্টারের বিভিন্ন প্রকারভেদ
বর্তমান বাজারে বিভিন্ন ধরণের প্রিন্টার রয়েছে। যেমন-
** ইমপ্যাক্ট প্রিন্টার
** ক্যারেক্টার প্রিন্টার
** লাইন প্রিন্টার
** লেজার প্রিন্টার ইত্যাদি।
প্রিন্টারগুলো নিয়ে বিস্তারিত অন্য একটি ইনফোতে আলোচনা করা হবে ইনশাল্লাহ।
প্লেটার (Plotter) কি? কোন কাজে এটি ব্যবহার হয়?
বিভিন্ন ধরণের ড্রয়িং, গ্রাফ এবং চার্ট Plotter এর মাধ্যমে প্রিন্ট করা হয়। সাধারণত বড় সাইজের প্রিন্ট নেওয়ার কাজগুলো প্লেটারে করা হয়ে থাকে। তাই এটিও একটি কম্পিউটারের আউটপুট ডিভাইস।
বিভিন্ন ধরনের ব্যানার প্রিন্ট করা থেকে 3D Printing এর সমস্ত কাজ প্লেটারের মাধ্যমে করা হয়। এজন্য প্রথমে কম্পিউটারে নির্দিষ্ট চিত্রটি বানিয়ে নিয়ে তারপর Plotter কে কম্পিউটারের সাথে সংযুক্ত করে প্রিন্ট নেওয়া হয়।
প্রজেক্টর (Projector) কি?
প্রজেক্টরের মাধ্যমে বিশেষ ধরণের চিত্র কিংবা ভিডিও প্রদর্শন করা যায়। তাই এই ডিভাইসটিকেও কম্পিউটারের আউটপুট ডিভাইস বলা হয়।
কম্পিউটারে কোন প্রজেক্ট তৈরি করে তা প্রজেক্টরের মাধ্যমে প্রদর্শন করা হয়। তাই প্রজেক্টর হলো এমন একটি আউটপুট হার্ডওয়্যার ডিভাইস যা ইউজারকে বড় স্ক্রীন প্রাচীর বা অন্যান্য বড় পৃষ্ঠে তথ্য, চিত্র কিংবা ভিডিও প্রদর্শন করতে দেয়।
অর্থাৎ কম্পিউটারের ছোট মনিটরের পরিবর্তে বিশাল বড় পর্দায় তথ্য, চিত্র বা ভিডিও প্রদর্শন করার জন্য প্রজেক্টর প্রয়োজন হয়। Projector আলো এবং লেন্সকে ম্যাগনিফাইড টেক্সট, ইমেজ এবং ভিডিও প্রদান করতে সক্ষম করে।
প্রজেক্টরের কাজ কি?
প্রজেক্টরের প্রধান কাজ হচ্ছে বড় পর্দায় বা দেয়ালে কম্পিউটারের ছবি, তথ্য বা ভিডিও প্রদর্শন করা।
তাই প্রজেক্টর ব্যবহার করে সিনেমা দেখা, উপস্থাপন করা, শ্রেণীকক্ষে ক্লাস, অডিটোরিয়াম এবং ক্লায়েন্টদের সামনে তথ্য প্রদর্শন করা হয়।
কম্পিউটারের স্পিকার (Speaker) কি?
কম্পিউটারের স্পিকার এমন একটি হার্ডওয়্যার ডিভাইস যা শব্দ তৈরির জন্য কম্পিউটারের সাথে সংযুক্ত থাকে। কম্পিউটারের সাউন্ড কার্ড সিগন্যাল ব্যবহার করে শব্দ তৈরি করে।
কম্পিউটারের জন্য স্পিকারগুলোতে সাধারণত একটি পরিবর্ধক থাকে যা প্রয়োজন অনুসারে ভলিউমের মাত্রা বাড়ানো বা কমানো যায়।
সুতরাং স্পিকারের প্রথমিক কাজ হচ্ছে কম্পিউটারের সাউন্ড কার্ড এর সংকেতকে অডিওতে রুপান্তর করা। কম্পিউটার স্পিকার অভ্যান্তরীণ পরিবর্ধক ব্যবহার করে শব্দ উৎপন্ন করে যা কম্পিউটার থেকে তথ্য অনুযায়ী বিভিন্ন প্রিকোয়েন্সিতে কম্পন করে।
জিপিএস (GPS) কি?
জিপিএস হচ্ছে একটি স্যাটেলাইট-ভিত্তিক নেভিগেশন সিস্টেম যা একটি নির্দিষ্ট অবস্থান সনাক্ত করতে রেডিও সংকেত ব্যবহার করে। প্রেরক উপগ্রহ এই রেডিও সংকেত এর মাধ্যমে সময়, অবস্থান, গতি ইত্যাদি সম্পর্কিত তথ্য সংগ্রহ করে এবং প্রক্রিয়াকরণের জন্য রিসিভার কম্পিউটারে পাঠিয়ে দেয়।
কম্পিউটারে এই প্রক্রিয়াকৃত তথ্য বস্তটির অবস্থান সম্পর্কে বিভিন্ন ইনফরমেশন প্রকাশ করতে পারে বলে একে কম্পিউটারের আউটপুট ডিভাইস বলা হয়।
GPS এর অর্থ- “গ্লোবাল পজিশনিং সিস্টেম” অর্থাৎ এটি একটি স্পেস-ভিত্তিক স্যাটেলাইট নেভিগেশন আউটপুট হার্ডওয়্যার ডিভাইস যা ডিভাইসের অবস্থা এবং ট্রাকিং করতে সাহায্য করে।
জিপিএস এর কাজ
GPS এর প্রধান কাজ হলো বস্তুর অবস্থা নির্ণয়, আবহাওয়ার অবস্থা এবং ট্রাকিং প্রদানের সাথে সম্পর্কিত ফলাফল তৈরিতে ভুমি পালন করা। গ্লোবাল পজিশনিং সিস্টেম বা জিপিএস ২৪টি উপগ্রহ নিয়ে গঠিত হয়েছে। এটি পৃথিবীর পৃষ্ঠ থেকে প্রায় ১২০০০ মাইল উপরে মাহাকাশে অবস্থান করছে।
বর্তমানে এই ডিভাইস স্মার্টফোন, যানবাহন এবং অন্যান্য ট্রাকিং ডিভাইসগুলোতে ব্যবহৃত হচ্ছে। অর্থাৎ “গ্লোবাল পজিশনিং সিস্টেম” বা জিপিএস ট্রাকিং কাজে ব্যবহার করা হয়।
GPS মাইক্রোওয়েব সিগন্যাল ব্রবহার করে বস্তুর অবস্থান গাড়ির গতি, আবহাওয়ার তথ্য ইত্যাদি সম্পর্কিত তথ্য প্রদান করে থাকে।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন