বাংলাদেশের পেক্ষাপটে ক্যারিয়ারের সবচেয়ে আকাঙ্খিত পেশাগুলোর মধ্যে অন্যতম পেশা হলো ডাক্তারি পেশা। এই পেশায় আসতে হলে আপনাকে বাংলাদেশ স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের নীতিমালা অনুযায়ী ব্যাচেলর অব মেডিসিন ব্যাচেলার অফ সার্জারি(M.B.B.S.) ডিগ্রিধারী হতে হবে। কেননা ডাক্তারি পেশার সূচনা শুরু হয় এই ডিগ্রির মাধ্যমে। অর্থাৎ এমবিবিএস ডিগ্রিধারীরা কেবল ডাক্তার পদবী ব্যবহার করতে পারবেন। যেহেতু এই ডিগ্রী ডাক্তারি পেশার সূচনা তাই অধিকাংশ এমবিবিএস ডাক্তার চিকিৎসা বিজ্ঞানের যেকোনো বিশেষ বিষয়ে উচ্চতরডিগ্রি নিয়ে থাকেন। যেমন: মেডিসিন, নিউরোলজি, গাইনোকোলজি, অনকোলজি, গ্যাস্ট্রোলজি, কার্ডিওলজি, ইত্যাদি। আজকের এই ইনফটিতে আমরা আলোচনা করব "এমবিবিএস ডাক্তার কিভাবে হবেন? কি ধরনের কাজ কোথায় করবেন?" সম্পর্কে, বিস্তারিত জানতে লেখাটি শেষ পর্যন্ত পড়ুন।
একজন এমবিবিএস ডাক্তার কোথায় কাজ করেন, কোন ধরনের কাজ করেন? এমবিবিএস ডাক্তারের কি ধরনের যোগ্যতা থাকতে হয় এবং কী ধরনের দক্ষতা ও জ্ঞান থাকা প্রয়োজন? কোথায় পড়বেন এমবিবিএস? এমবিবিএস ডাক্তারের মাসিকা কেমন হয়? এমবিবিএস (M.B.B.S.) ডাক্তারের ক্যারিয়ার কেমন হতে পারে? ইত্যাদি প্রশ্নগুলোর উত্তর আমরা এই লেখাটির মাধ্যমে দেওয়ার চেষ্টা করবো। তাই চলুন এই বিষয়ে জেনে নেওয়া যাক।
এমবিবিএস ক্যারিয়ারের জন্য কোথায় পড়বেন?
যেহেতু এমবিবিএস হচ্ছে একটি পেশাদার পড়াশুনা। তাই এই পেশায় আপনাকে আসতে হল নির্দিষ্ট প্রতিষ্ঠানে নির্দিষ্ট বিষয় নিয়ে পড়াশোনা করতে হবে। যেমন বাংলাদেশে বিএমডিসি স্বীকৃত মোট ২৩ টি সরকারি এবং বেসরকারি ৫৫ মেডিকেল কলেজ রয়েছে। এমবিবিএস পড়ার জন্য এগুলো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তি প্রস্তুতি নিতে হবে।
এমবিবিএস (M.B.B.S.) পড়াশুনা বা মেডিকেল কলেজে পড়াশুনার ক্ষেত্রে লক্ষণীয় বিষয় হচ্ছে, সরকারি মেডিকেল কলেজে পড়ার সুযোগ পেতে হলে আপনাকে প্রতিযোগিতাপূর্ণ পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে হবে। যেটা বাংলাদেশের মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষা হিসেবে পরিচিত। ইন্টারমিডিয়েট বা HS C পাসের পর এই পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে হয়।
অন্যদিকে বেসরকারি প্রতিষ্ঠান গুলোতে সাধারণত শিক্ষার খরচ অনেক বেশি। মধ্যবিত্ত কিংবা নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারের জন্য বেসরকারি মেডিকেল পড়াশোনা করা প্রায় অসম্ভব। কেননা প্রচুর পরিমাণ শিক্ষার খরচ যোগান দেওয়া পরিবারের পক্ষে সম্ভব হয় না।
এছাড়াও বেসরকারি মেডিকেল কলেজে ভর্তি হতে আরো সতর্ক থাকতে হবে এজন্য যে, বহু মেডিকেল কলেজে পর্যাপ্ত শিক্ষকের অভাব রয়েছে।
এমবিবিএস (M.B.B.S.) ডাক্তাররা কোথায় কাজ করেন?
একজন এমবিবিএস ডাক্তার সাধারণত যেসব জায়গায় কাজ করে থাকেন তা নিম্নরূপ:
* সরকারি বেসরকারি হাসপাতাল
* সরকারি বেসরকারি ক্লিনিক ও স্বাস্থ্য কেন্দ্র
* রোগতত্ত্ব রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান।
বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলে একজন ডাক্তারকে উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে রিজিওনাল মেডিকেল অফিসার হিসাবে কাজ করতে হয়। এই প্রতিষ্ঠানের বাইরেও কাজের সুযোগ রয়েছে।
যেমন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (w.h.o.) ব্রাক (brack), কেয়ার (care) আর ইউনিসেফের (UNICEF) মতো আন্তর্জাতিক দাতা সংস্থা ও এনজিওতে কনসালটেন্ট হিসেবে কাজের সুযোগ রয়েছে। তাই এই পেশায় সম্মানজনকভাবে অনেক টাকা আয় করা যায় এবং জনকল্যাণকর ভাল সেবা প্রদান করাও সম্ভব হয়।
MBBS doctor কোন ধরনের কাজ করেন?
ডাক্তার পদবী এক ধরনের সেবামূলক পদবী, যা জনকল্যাণ কাজের সাথে সম্পর্কিত। এছাড়াও এমবিবিএস ডাক্তার সাধারণত যে সমস্ত কাজ করে থাকেন তা নিম্নরূপ:
*উপজেলা পর্যায়ে মেডিকেল অফিসার এর দায়িত্ব পালন করেন যাঁরা, তারা সাধারণত আউটডোরে রোগী দেখেন এবং জরুরী ক্ষেত্রে চিকিৎসার ব্যবস্থা করেন।
*রোগের লক্ষণ দেখে রোগ নির্ণয় করা সম্ভব হলে রোগীকে ব্যবস্থাপত্র প্রদান করেন।
*রোগের লক্ষণ দেখে যদি রোগ নির্ণয় করা সম্ভব না হয় তাহলে রোগীকে প্রয়োজনীয় মেডিকেল টেস্ট করতে বলেন ।
*হাসপাতালে যেসকল রোগী ভর্তি রয়েছে নিয়মিত তাদের চেকআপ করেন এবং খাদ্যাভাস নির্ধারণ করে দেন।
*হাসপাতালে ভর্তি থাকা রোগীদের আত্মীয় স্বজনদের সাথে যোগাযোগ রাখেন।
*বড় কোনো সার্জারির সময় অপারেশন থিয়েটারে সহায়তা প্রদান করেন। যেমন নবজাতকের স্বাভাবিক প্রসবের দায়িত্বে থাকা অভিজ্ঞ গাইনিকোলজিস্টকে সহায়তা করে থাকেন।
* পরিবার পরিকল্পনা ও টিকাদান কর্মসূচির কাজ করেন।
* মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল গুলোতে নিযুক্ত এমবিবিএস ডাক্তার চিকিৎসা কার্যক্রমের পাশাপাশি সংলগ্ন মেডিকেল কলেজের বিভিন্ন পরীক্ষার সময় অধ্যাপকদের সাহায্য করে থাকেন।
এমবিবিএস (M.B.B.S.) ডাক্তারের কী ধরনের যোগ্যতা থাকতে হয়?
এ পেশায় আসতে হলে আপনাকে বেশ কিছু যোগ্যতা অর্জন করতে হবে। যেমন- শিক্ষাগত যোগ্যতা: ডাক্তার পদবীধারী হতে হলে আপনাকে অবশ্যই বাংলাদেশ মেডিকেল ও ডেন্টাল কাউন্সিল অনুমোদিত কলেজ থেকে 5 বছর মেয়াদী এমবিবিএস ডিগ্রী পাস করতে হবে। বয়স সাধারণত 25 থেকে 30 বছর হতে হবে।
অভিজ্ঞতা: শিক্ষাগত যোগ্যতা অর্জন শেষে মেডিকেল হাসপাতালের এক বছরের ইন্টার্নশিপ করতে হবে।
এছাড়াও একজন মেডিকেল ডাক্তার হিসেবে নিজেকে নিয়োজিত করার জন্য বাংলাদেশ মেডিকেল ও ডেন্টাল কাউন্সিল থেকে চিকিৎসা সেবা দেওয়ার জন্য লাইসেন্স নেওয়া বাধ্যতামূলক।
এমবিবিএস ডাক্তারের পেশায় কী ধরনের দক্ষতা ও জ্ঞান থাকা জরুরি?
যারা ডাক্তারি পেশায় নিজেকে নিয়োজিত রাখতে চান তাদেরকে মনে রাখতে হবে, এটি একটি সেবামূলক পেশা। তাই একজন ভাল ডাক্তার হতে হলে সাধ্য অনুযায়ী রোগীকে সেবা দেওয়ার মানসিকতা থাকতে হবে।
এছাড়াও মেডিকেল জ্ঞানের পাশাপাশি আলাদা কিছু দক্ষতাও অর্জন করতে হবে। যেমন:
* রোগীর সমস্যার কথা মনোযোগ দিয়ে শুনতে হবে।
* মেডিকেল বিজ্ঞানের নতুন নতুন পদ্ধতি ও গবেষণা সম্পর্কে খোঁজ রাখা ও তার চর্চা করা নিয়মিত করতে হবে।
* সর্বশেষ আধুনিক চিকিৎসা প্রযুক্তির ব্যবহার শিখতে হবে।
* হাসপাতাল কিংবা অন্যান্য চিকিৎসা কেন্দ্রের ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে ধারণা থাকতে হবে।
এছাড়া আপনি যদি নিজেকে একজন দক্ষ ডাক্তার হিসেবে প্রতিষ্ঠ করতে চান, তাহলে হাসপাতালগুলোতে আয়োজিত বিভিন্ন সেমিনার কর্মশালা ও প্রশিক্ষণ এ অংশ নিন। চিকিৎসার বিশেষ ক্ষেত্রে জ্ঞান ও দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য নিয়মিত পড়াশোনা করুন। আলট্রাসনোগ্রাফি থেকে শুরু করে রেডিওলজি ব্যক্তিগত আগ্রহের ভিত্তিতে যেকোনো বিষয়ে পড়ার সুযোগ রয়েছে আপনার। তাই ডাক্তার হিসেবে বিশেষজ্ঞ হওয়ার চেষ্টা করুন।
এমবিবিএস ডাক্তার হিসাবে মাসিক আয় কেমন হতে পারে?
সাধারণত একজন এমবিবিএস ডাক্তারের মাসিক আয় চিকিৎসা কেন্দ্রের স্থান ও মনের উপর নির্ভর করে থাকে। যেমন এমবিবিএস ডাক্তার রা শিক্ষাগত যোগ্যতা অর্জন শেষে যখন ইন্টার্নশিপ করেন তখন সাধারণত মাসে 15000 টাকা পেয়ে থাকেন।
এরপর সরকারি চিকিৎসা কেন্দ্রে বিসিএস ক্যাডার হিসেবে একজন এমবিবিএস ডাক্তারের মাসিক সাধারণত 50 হাজার থেকে 60 হাজার টাকা হয়ে থাকে।
বেসরকারী হাসপাতাল বা ক্লিনিকে মাসিক আয় গড়ে সাধারণত 20 হাজার থেকে 50 হাজার টাকা হয়ে থাকে। পার্টটাইম ডিউটির ক্ষেত্রে প্রতিটি ঘরে এক হাজার থেকে আড়াই হাজার টাকা হতে পারে।
এছাড়াও এমবিবিএস ডাক্তার হওয়ার পর যে কোন নির্দিষ্ট বিষয়ে ডিগ্রি নেওয়া শুরু করার পর আপনার অয়ও অনেক বেড়ে যেতে পারে।
এমবিবিএস (M.B.B.S.) ডাক্তার হিসেবে ক্যারিয়ার কেমন হতে পারে?
আমরা জানি এমবিবিএস (M.B.B.S.) পাস করার পর ডাক্তারি শুরু হয়। কিন্তু বিশেষজ্ঞ ডাক্তার যেমন গাইনিকোলজিস্ট হতে হলে কিংবা ব্যক্তিগত চেম্বারে রোগী দেখতে হলে উচ্চতর ডিগ্রি এর কোন বিকল্প নেই। এখানে আপনাকে মনে রাখতে হবে, বিশেষজ্ঞ ডাক্তার হওয়ার আগে যে সময়টুকু পাবেন তাকে কাজে লাগিয়ে প্রয়োজনীয় অভিজ্ঞতা অর্জন করতে পারেন।এই অভিজ্ঞতা আপনাকে আপনার ক্যারিয়ার গড়তে সাহায্য করবে।
উন্নত বিশ্বে চিকিৎসা বিজ্ঞানে প্রচুর পরিমাণ কাজ হয়েছে কিন্তু বাংলাদেশের সুযোগ এখনো সীমিত আকারে রয়েছে। তাই অনেকে পাবলিক হেলথ সেক্টরে কাজ করে থাকেন। সাধারণত বিভিন্ন দেশি-বিদেশি এনজিও আর আন্তর্জাতিক দাতা সংস্থাগুলো এই সেক্টর গুলো নিয়ে কাজ করে। তাই আপনাকে মনে রাখতে হবে, ডাক্তারি পেশা সরাসরি জনকল্যাণের সাথে জড়িত। আপনার জ্ঞান দক্ষতা আর আন্তরিক প্রচেষ্টায় বাঁচতে পারে অনেক মানুষের প্রাণ।
শেষ কথা:
আশাকরি লেখাটি থেকে বুঝতে পেরেছেন এমবিবিএস ডাক্তার হতে হলে কি কি যোগ্যতা অর্জন করতে হবে এবং কিভাবে একজন ডাক্তার হওয়া যায়। আপনি যদি ডাক্তারি পেশায় নিজেকে নিয়োজিত করতে চান তাহলে এই লেখা টি অনুসরণ করতে পারেন। ধৈর্যসহকারে লেখাটি পড়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।
ক্যারিয়ার সংক্রান্ত অন্যান্য ইনফো
কখন ক্যারিয়ার প্রস্ততি শুরু করা উচিৎ?
ঘরে বসে কারিগরি শিক্ষা গ্রহণ করবেন কিভাবে?
কোন মন্তব্য নেই: