দুধ এমন একটি খাবার যা শিশু থেকে শুরু করে সব বয়সের মানুষের জন্য সমানভাবে প্রযোজ্য। পুষ্টি ও শক্তি অর্জনের প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় এটির কোন বিকল্প হয় না। দুধে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন ও ক্যালসিয়াম। তাই বিশেষজ্ঞরা সব বয়সের মানুষের পাশাপাশি রোগীদের কেও দুধ খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন সুস্থ থাকার জন্য। তবে দুধ যেন খাঁটি হয় সেই দিকে অবশ্যই লক্ষ রাখতে হবে।
দুধের মধ্যে থাকে ক্যালসিয়াম যা দাঁত ও হাড়কে ভালো রাখতে সাহায্য করে। এছাড়া দুধ এমন একটি খাবার যা একই সাথে পিপাসা ও ক্ষুধা দূর করতে সক্ষম। এই কারণেই অনেক মানুষের এখন জীবনের অংশ হচ্ছে দুধ। কিন্তু কিছু অসাধু লোক বেশি টাকা লাভের আশায় এই দুধ বা দুধজাত পন্যতে ভেজাল দিচ্ছে । আজকে আমরা আলোচনা করবো "দুধ কিংবা দুগ্ধজাত পণ্য খাটি না ভেজাল কিভাবে বুঝবেন" এই বিষয় সম্পর্কে।
আমরা সাধারণত দুধ খাই শরীরে পুষ্টি ও শক্তি যোগানোর জন্য। কিন্তু দুধ কিংবা এই জাতীয় খাদ্যে যদি ভেজাল থাকে তাহলে তা পুষ্টি কিংবা শক্তির পরিবর্তে শরীরের আরো ক্ষতি হতে পারে। তাই আমাদেরকে সতর্ক থাকতে হবে যে, আমরা যে খাবার গ্রহণ করি তা যেন ভেজাল না হয়। যাইহোক আমরা এখানে দুধে কি কি ভেজাল হতে পারে এবং ভেজাল হলে কিভাবে জানবেন সেই বিষয় নিয়ে আলোচনা করছি।
দুধ বা দুধজাত পণ্যগুলো কি কি?
শরীরের জন্য দুধ একটু বেশি উপকারি। তবে দুধ দিয়ে তৈরি অন্যগুলো সমান ভূমিকা পালন করে থাকে। যেমন-
* দুধ
* পনির
* মাখন
* ঘি ইত্যাদি।
দুধে কি ধরনের ভেজাল হয়?
* দুধে সাধারণত পানি মেশানো হয়ে থাকে। এছাড়াও দুধের ঘনত্ব বাড়ার জন্য ফরমালিন ব্যবহার করে অনেকে।
* অনেক সময় দুধে কার্বোহাইড্রেট যুক্ত করে অসাধু ব্যবসায়ীরা।
* দুধ অনেকক্ষণ ভালো রাখার জন্য তাতে ইউরিয়া মেশানো হয়ে থাকে।
* দুধে স্টার্চ যুক্ত করা হয়ে থাকে
* দুগ্ধজাত পড়লে বিভিন্ন ধরনের ভেজাল মেশানো হয়।
দুধে পানি মিশানো ভেজালটি অনেক আদিকাল থেকে চলে আসছে। তবে বর্তমানে পানির সাথে আরো অনেক ফরমালিন মিশানো হয়ে থাকে। তাই দুধ কিংবা দুগ্ধজাত পণ্য কোন ভেজাল রয়েছে কিনা কিভাবে বুঝবেন নিচে তা আলোচনা করা হলো।
দুধে পানি মিশানো হয়েছে কিনা কিভাবে বুঝবেন?
দুধে পানি মিশালে খুব সহজেই আপনি বুঝতে পারবেন। অনেক সময় দুধ দেখেও বোঝা যায় যে, দুধে পানি মিশানো হয়েছে । একটি ঢালু পাত্রে কয়েক ফোটা দুধ ঢেলে দিন। যদি দেখেন যে সাদা দাগ ট্রেস্ট করে দুধের ফোঁটা গুলো গড়িয়ে যাচ্ছে, তাহলে বুঝবেন দুধে পানি মেশানো হয়নি।
আর যদি সাদা দাগ ট্রেস্ট না করে দুধের ফোটা গুলো গড়িয়ে যায়। তাহলে বুঝবেন দুধে পানি মিশানো হয়েছে।
এছাড়াও দুধে পানি মিশালে টলটলে ভাব দেখা যায় এবং দুধ অনেক পাতলা মনে হবে।
দুধে কার্বোহাইড্রেট মেশানো হয়েছে কিনা কিভাবে বুঝবেন?
দুধে যদি কার্বোহাইড্রেট মেশানো হয় তাহলে খুব সহজেই আপনি সনাক্ত করতে পারেন। ছোট্ট একটি পাত্রে দুধের মধ্যে সামান্য লবণ মিশিয়ে দিন।
যদি দুধের রং পরিবর্তন হয় তাহলে বুঝবেন ভেজাল রয়েছে। অর্থাৎ দুধের মধ্যে কার্বোহাইড্রেট মিশানো হয়েছে। দুধ খাঁটি নয়।
দুধে ফরমালিন দেওয়া আছে কিনা কিভাবে বুঝবেন?
দুধে ফরমালিন দেওয়া আছে কিনা বোঝার জন্য দুধের মধ্যে কিছুটা সালফিউরিক এসিড ঢেলে দিন।
দুধের রং পরিবর্তন হলে বুঝবেন তাতে ফরমালিন দেওয়া হয়েছে। এই পরীক্ষার করার সময় আবার সবটুকু দুধ নষ্ট করবেন না। আলাদা পাত্রে একটু দুধ নিয়ে পরীক্ষা করে দেখতে পারেন।
দুধ ভেজাল কিনা তা জানার একটি সহজ পরীক্ষা
মেঝেতে খাঁটি দুধ কিছুটা ঢেলে দিন কিছুক্ষণ পর যদি দেখেন সেখানে সাদা দাগ পড়ছে তাহলে বুঝবেন দুধে ভেজাল রয়েছে।
খাঁটি দুধ হলে সাদা তরল বা ঝুরঝুরে কোন সাদা দাগ পড়বে না। কার্বোহাইড্রেট দুধের মধ্যে দিলে এরকম সাদা দাগ পরে।
এছাড়াও সামান্য দুধ হাতে নিয়ে ক্রিমের মতো ঘষলে যদি সাবানের মত অনুভূতি হয় তাহলে বুঝবেন দুধের ভেজাল রয়েছে।
দুধে স্টার্চ যুক্ত করা হয়েছে কিনা কিভাবে বুঝবেন?
দুধে মাড়ি দেওয়া হয়েছে কিনা অর্থাৎ দুধে মাড়ির উপস্থিতি সনাক্ত করার সহজ উপায় হচ্ছে তাতে আয়োডিনযুক্ত করা।
কয়েক ফোটা আয়োডিনযুক্ত করলে দুধের রং যদি নীল বর্ণ ধারণ করে তাহলে বুঝবেন দুধ খাঁটি নয়। অর্থাৎ দুধে স্টার্চ যুক্ত করা হয়েছে।
দুধে ইউরিয়া মেশানো হয়েছে কিনা কিভাবে বুঝবেন?
আজকাল দুধে ইউরিয়া মেশানো হয়ে থাকে যা শরীরের জন্য খুবই ক্ষতিকর। আপনার ক্রয় করা দুধের মধ্যে ইউরিয়া মেশানো হয়েছে কিনা কিভাবে বুঝবেন? এটি জানার জন্য একটি পাত্র কিছু দুধ নিন। এবার এখানে এক চা চামচ মটরগুড়া ও সোয়াবিন যোগ করুন।
মিশ্রণটি পাঁচ মিনিট রেখে দেন। এবার এতে লিটমাস পেপার ডুবিয়ে রাখুন। যদি কাগজটি নীল হয়ে যায় তাহলে বুঝবেন দুধে ইউরিয়া মেশানো হয়েছে।
দুধে বনস্পতি মেশানো হয়েছে কিনা কিভাবে বুঝবেন?
দুধে বনস্পতি মিশানো হয়েছে কিনা তা জানার জন্য কয়েক মিলে দুধে হাইড্রোক্লোরিক এসিড মিশিয়ে দিন এবং এক চা চামচ চিনি যুক্ত করুন।
এখন দুধের বর্ণ যদি লাল হয়ে যায় তাহলে বুঝবেন দুধ ভেজাল। অর্থাৎ দুধে বনস্পতি মেশানো হয়েছে।
পনির খাঁটি না ভেজাল কিভাবে বুঝবেন?
খুব সহজেই পনির খাঁটি না ভেজাল জেনে নিতে পারেন । হাতের আঙ্গুল দিয়ে পনির পরীক্ষা করে দেখুন। হাতের আঙ্গুল দিয়ে পনির টিপুন যদি টুকরো টুকরো হয়ে যায় তাহলে বুঝবেন পনির খাঁটি নয়।
ভেজাল পনির বেকিং সোডা রয়েছে কিনা তা জানার জন্য কয়েক টুকরা পনির পানিতে সিদ্ধ করুন। ঠান্ডা হওয়ার পর এতে সামান্য আয়োডিনযুক্ত করুন। যদি রঙ্গিল নীল বর্ণ হয় তাহলে বুঝবেন পনিরে স্টার্চ যুক্ত করা হয়েছে এবং পনির সম্পূর্ণ নকল।
ঘি ভেজাল নাকি আসল কিভাবে বুঝবেন?
অল্প কিছু ঘি গলিয়ে চামছে নিন। এবার এতে পাঁচ মিলি এইচটিএল যুক্ত করুন। ঘিটির রং যদি গোলাপি হতে শুরু করে তাহলে বুঝবেন খাঁটি নয়। অর্থাৎ ঘিতে ভেজাল মেশানো হয়েছে ।
শেষ কথা:
আশা করি, দুধ ও দুধজাত পণ্য খাঁটি নাকি ভেজাল তা কিভাবে জানবেন বা পরীক্ষা করবেন তা এই লেখাটি থেকে বুঝে গেছেন। অর্থাৎ আপনি নিজে নিজেই পরীক্ষা করে জানতে পারবেন দুধ খাঁটি নাকি ভেজাল। ইনফোটে আপনার কাছে প্রয়োজনীয় মনে হলে শেয়ার করে নিজের ওয়ালে রেখে দিন পরবর্তী সময় যাতে খুব সহজেই নিজের ওয়াল থেকে খুঁজে নিতে পারেন।
আরো জানুন:
মধু খাঁটি নাকি ভেজাল কিভাবে বুঝবেন?
কোন কোন খাবার যৌন শক্তি বৃদ্ধি করে?
ইসবগুল ও তোকমাদানা কিভাবে খাবেন এবং কখন খাবেন না?