ঈদুল আযহা বা কোরবানি ঈদের মাংস কাটা এবং বিতরণের পর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হয়ে দাঁড়ায় এতগুলো মাংস একসাথে কিভাবে সংরক্ষণ করা যায়। মাংস সংরক্ষণের ক্ষেত্রে সাধারণত রেফ্রিজারেটর করে রাখা সবচেয়ে সহজ এবং নিরাপদ উপায় হলেও বিকল্প আরো নানা পদ্ধতি রয়েছে। আজকে আমরা আলোচনা করব "ফ্রিজ ছাড়া কিভাবে মাংস সংরক্ষণ করা যায়"
রেফ্রিজারেটর এ কাঁচা মাংস রাখা গেলও বেশকিছু সমস্যার সম্মুখীন হতে হয় । তবে সচেতনার সাথে সঠিকভাবে ফ্রিজে রাখলে তেমন কোন সমস্যা হয় না। ফ্রিজে কিভাবে মাংস সংরক্ষণ করবেন বিস্তারিত জানতে এখানে ক্লিক করুন। এই লেখাটিতে আমরা ফ্রিজ ছাড়া কিভাবে মাংস সংরক্ষণ করা যায় সেই বিষয়ে আলোচনা করছি।
যখন ফ্রিজ ছিল না তখনকার মানুষ অর্থাৎ আগে মানুষ বিভিন্ন উপায়ে মাংস সংরক্ষণ করত। সেই পদ্ধতি গুলোর মধ্যে বেশ কিছু জনপ্রিয় পদ্ধতি রয়েছে। যেমন: ক্যানিং, স্মোকিং বা ধোঁয়া পদ্ধতি, সলটিং বা লবণ দিয়ে মাংস সংরক্ষণ পদ্ধতি, নিয়মিত গরম করে সংরক্ষণ পদ্ধতি ইত্যাদি। ফ্রিজ ছাড়া কিভাবে মাংস সংরক্ষণ করবেন তার জনপ্রিয় বেশকিছু পদ্ধতি আলোচনা করা হলো।
মাংস সংরক্ষণ করার ক্যানিং পদ্ধতি
ফ্রিজ ছাড়া মাংস সংরক্ষণের অন্যতম একটি উপায় হচ্ছে ক্যানিং পদ্ধতি। সাধারণত কমার্শিয়ালি এই পদ্ধতিতে মাংস সংরক্ষণ করা হয়। এই পদ্ধতিতে মাংস প্রায় এক বছর পর্যন্ত সংরক্ষণ করা যায়।
এই পদ্ধতিতে মাংস সংরক্ষণ করার জন্য প্রথমে ২৫০ ডিগ্রি ফারেনহাইট তাপমাত্রায় ডাই করতে হবে । এরপর ঠান্ডা করে মাংসগুলো একেবারে শুকনো করতে হবে।
এক্ষেত্রে মাংসের সাথে যাতে তেল না থাকে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। প্রয়োজনে রৌদ্রে ভালোভাবে শুকিয়ে নিতে হবে যাতে মাংসের মধ্যে কোন প্রকার রস না থাকে।
এরপর এয়ারটাইট ক্যানে রেখে সংরক্ষণ করতে হবে।
গ্রাম অঞ্চলের মানুষ যেখানে আধুনিক কোন সুবিধা নেই তারা কিভাবে মাংস সংরক্ষণ করবে?
প্রাচীনতম কাল থেকে মানুষ সাধারণত মাংস উচ্চ তাপমাত্রায় জাল দিয়ে সংরক্ষণ করতো। এক্ষেত্রে প্রতি ছয় ঘণ্টা পরপর মাংসটি আবার জাল দিতে হয়, না হলে জীবাণু সংক্রমণের আশঙ্কা থাকে । গ্রামের মানুষ সাধারণত এভাবেই কয়েকদিন পর্যন্ত মাংস ভালো রাখে। তবে কারো যদি অনেকদিন পর্যন্ত মাংস সংরক্ষণ করার প্রয়োজন হয়, তাহলে নিম্ন উপায় অবলম্বন করতে পারেন।
প্রথমে মাংসগুলো মাঝারি আকার কেটে পরিষ্কার পানিতে ভালোভাবে ধুয়ে নিন। এরপর মাংসের সাথে কোন অবস্থাতেই চর্বি রাখবেন না। অর্থাৎ চর্বি গুলো আলাদা করে নিন।
এবার মাংসের পানি নিংড়ে নিন। এবং যথেষ্ট পরিমাণে লবণ ও হলুদ মাখিয়ে গরম পাতিলে পানি দিয়ে সেই মাংসগুলো কিছুক্ষণ সিদ্ধ করে নিন।
মাংস আদা সিদ্ধ হলে অর্থাৎ কাঁচা মাংসের গন্ধ না যাওয়া পর্যন্ত সিদ্ধ করতে থাকুন। কাঁচা মাংসের গন্ধ গেলে চুলা থেকে নামিয়ে পুরো পানি ছেঁকে নিন।
এবার মাংসের টুকরাগুলো শিখে গেতে রোদে শুকাতে দিন। এভাবে মাংস রোদে শুকাতে একটানা চার থেকে সাত কিংবা তিন দিন সময় লাগতে পারে। মাংসের মধ্যে যাতে ধুলোবালি না লাগে সেজন্য পাতলা কাপড় পেঁচিয়ে দিতে পারেন।
মাংসের সব পানি সম্পূর্ণভাবে শুকিয়ে গেলে তারপর সংরক্ষণ করুন। এভাবে প্রায় এক বছর মাংস সংরক্ষণ করা যায়।
এই সংরক্ষণ করা মাংসগুলো হালকা গরম পানিতে কিছুক্ষণ ভিজিয়ে রাখার পর স্বাভাবিক নিয়মে রান্না করতে হবে। এছাড়াও আপনি তেলে ভেজে রান্না করতে পারেন ।
এই পদ্ধতিতে মাংস সংরক্ষণ করলে সংরক্ষণের তারিখ কন্টেইনার এর গায়ে লিখে রাখা ভালো । আর এই পদ্ধতিতে যে অসুবিধা হয়ে থাকে সেটা হচ্ছে রোদ না থাকা।
অর্থাৎ বাইরে রোদ না থাকলে এই পদ্ধতিতে মাংস সংরক্ষণ করা কঠিন হয়ে যায়। এই ক্ষেত্রে চুলার সাহায্যে মাংস শুকিয়ে নেওয়া যেতে পারে। এটা ক্যানিং পদ্ধতির মতো।
লেবু ও লবণের সাহায্যে মাংস সংরক্ষণ করার পদ্ধতি
প্রথমে মাংসগুলো মাজারি আকারে কেটে হালকা ভাবে ছেচে নিতে হবে। এরপর লবণ ও লেবুর রসে এক ঘন্টা ডুবিয়ে রাখতে হবে, যেন মাংসের ভিতরে ভিতরে এটা পৌঁছে যায়।
এরপর মাংসগুলো সংরক্ষণ করা যাবে । এভাবে কয়েকদিন পর্যন্ত মাংস ভালো রাখা যায় ।
একদিন পর পর মাংস গরম করে সংরক্ষণ করার পদ্ধতি
এই পদ্ধতিতে সংরক্ষণ করার জন্য প্রথমে মাংসগুলো কেটে পরিষ্কার করে নিন। এরপর আদা বাটা, রসুন বাটা, পেঁয়াজ বাটা, দিয়ে মাংসটি কিছুক্ষণ মেরিনেট করে রাখুন।
এরপর গরম তেলে মসলা সহ মাংস গুলো ভালো করে ভেজে নিন এবং তেল ছেকে নিয়ে তা সংরক্ষণ করুন ।
এরপর একদিন অন্তর অন্তর মাংসগুলো গরম করে নিতে হবে। এভাবে আপনি ১৫ থেকে ২০ দিন পর্যন্ত মাংস ভালো রাখতে পারেন।
মসলা ছাড়াও শুধুমাত্র ডুবো তেলে মাংস সিদ্ধ করে সংরক্ষণ করা যায় । সেক্ষেত্রে হাড়িতে যথেষ্ট পরিমাণে তেল গরম করে নিতে হবে প্রথমে। তারপর মাংস ডুবিয়ে পুরোপুরি সিদ্ধ করতে হবে।
দু একদিন পরপর ডুবানো মাংস গরম করে নিতে হবে। এভাবেও ১৫ থেকে ৩০ দিন পর্যন্ত সংরক্ষণ করতে পারেন।
সল্টিং বা লবণ দিয়ে গোস্ত সংরক্ষণ পদ্ধতি
মাংসের গুনাগুন ঠিক এবং মাংস টাটকা রাখতে সবচেয়ে উত্তম পদ্ধতি হচ্ছে গোস্ত সংরক্ষণ করার সাল্টিং পদ্ধতি । এই পদ্ধতিতে সংরক্ষণ করার জন্য খাবার লবণ, কিউড়িং লবণ, বিভিন্ন মসলা, সোডিয়াম নাইট্রেট ও সোডিয়াম লেক্টেট দিয়ে মাখিয়ে প্রায় ২৪ ঘন্টা রেখে দিন।
এরপর এই মাংস ফ্রিজে প্রায় এক থেকে দেড় মাস পর্যন্ত সংরক্ষণ করা যায়। এভাবে মাংস সংরক্ষণ করলে মাংসের পুষ্টিগুণ সঠিক থাকে।
আরো জানুন:
যে সকল খাবার শরীরের হজম শক্তি বৃদ্ধি করে?
দেহে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করার জন্য কোন কোন খাবার খাওয়া জরুরী?
ভর্তার ইতিহাস ও নামকরণ: বাংলাদেশে ভর্তা এতো জনপ্রিয় কেন?
টক দই খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা কি?
গর্ভবতী মায়ের খাবার তালিকা কি?
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন