ভাগে কোরবানি দেওয়ার নিয়ম কি? কোন শরিক শুধু গোস্ত খাওয়ার জন্য কোরবানি দিলে সবার কোরবানি বাতিল কেনো?

পবিত্র ঈদুল আযহার সবচেয়ে আকর্ষণীয় বিষয় হচ্ছে পশু কুরবানী করা। আর কেন কোরবানি দিতে হয়? কিভাবে কুরবানী দিবেন কিংবা কাদের জন্য কুরবানী করা আবশ্যক বা কত টাকা থাকলে কোরবানি দেওয়া ওয়াজিব ইত্যাদি সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে "কুরবানী কার উপর ওয়াজিব ও কুরবানীর ইতিহাস" ইনফোটি দেখুন। আজকের এই লেখাটিতে আমরা আলোচনা করব কতজন শরিকানা মিলে কুরবানী দেওয়া যাবে কিংবা ভাগে কোরবানি কিভাবে দিবেন? সেই সম্পর্কে।

ভাগে কোরবানি দেওয়ার নিয়ম কি? কোন শরিক শুধু গোস্ত খাওয়ার জন্য কোরবানি দিলে সবার কোরবানি বাতিল কেনো?

মুসলিমরা নিজের অর্থ খরচ করে একটি পশু ক্রয় করে আল্লাহর নামে উৎসর্গ করে জবাই করে থাকেন এই ঈদুল আযহার দিনে। যারা প্রকৃত মুসলিম তারা নিজেকে আল্লাহর কাছে সমর্পণের শিক্ষা নেয় এই কুরবানী দেওয়ার মাধ্যমে। আর আমাদের দেশের যেহেতু কয়েকজন মিলে কোরবানি দেওয়ার রেওয়াজ বেশি, তাই এই বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ কিছু বিষয় জানা জরুরী। কেননা শরিকের মধ্যে কারো যদি নিয়ত সহিহ না হয়, কিংবা কুরবানী দেওয়ার ভিন্ন কোন উদ্দেশ্য থাকে, তাহলে ইসলামী শরীয়াহ অনুযায়ী সবার কোরবানি বাতিল বলে গণ্য হবে।

ভাগে কুরবানী দেওয়ার ক্ষেত্রে কোরবানির পশুতে প্রত্যেক অংশীদারের অংশ সমান হতে হবে। কারো অংশে অন্য অংশের চেয়ে কম হতে পারবে না। যেমন কারো আধা ভাগ কারো আবার দের ভাগ ইত্যাদি। বাদায়উস সানায়ে : ৪/২০৭ তে উল্লেখ করা আছে, শরীকদের অংশের কম বেশি হলে কারো কুরবানী শুদ্ধ হবে না ।

আরো জানুন:

কুরবানীর পশুর বয়স ও গুণাগুণ কেমন হতে হয়?

কারা কুরবানী দিবেন এবং কারা কুরবানী দিবেন না?


কতজন শরিক মিলে কোরবানি দেওয়া যায়?

এ বিষয়ে সমাজে কিছু ভুল ধারণা রয়েছে । যেমন অনেকেই মনে করেন, যে পশুতে সাতজন শরিক হতে পারে তাতে শরীকের সংখ্যা সাতের কম হলে বেজোড় হওয়া জরুরি। যেমন একটি গরুতে ১,৩,৫ বা সাতজন শরিক হতে পারবে। ২,৪ বা ৬ জন শরিক হতে পারবে না। এই ধারণা ইসলাম সমর্থন করে না।

আর এই কথাটি বিলকুল একটি গলদ কথা বা ভুল ধারণা । ইসলামে নিয়ম নীতি অনুযায়ী একটি গরু যেমন এক ব্যক্তি একা কোরবানি দিতে পারে তেমনি দুই থেকে সাত পর্যন্ত যে কোন সংখ্যক শরীক একত্র হয়ে কোরবানি করতে পারেন এতে কোন বাধা নিষেধ নেই।

ভাগে কোরবানি দেওয়ার ক্ষেত্রে শরিকের সংখ্যা জোর না হয়ে বেজোড় হওয়ার মাঝেও এমন কোন আলাদা ফজিলত নেই, যার কারণে পাঁচ শরীকের স্থলে ছয় শরীর কিংবা ছয় শরিকের স্থলে সাত শরিক একত্র হয়ে কোরবানি করতে উৎসাহ দেওয়া যায়। সুতরাং কোরবানিতে যে কোন সংখ্যক (১-৭) শরিক হতে পারে। বেজোড় সংখ্যা কিংবা জোড় সংখ্যা শরীক হয়ে কুরবানী দেওয়াতে আলাদা কোন ফজিলত নেই।


কোন কোন পশুতে কতজন শরীর হওয়া যায়?

ছাগল, ভেড়া ও দুম্বা কুরবানি দিলে শুধুমাত্র একজন শরিক অর্থাৎ এই সকল পশু কোরবানি দিলে একাই দিতে হবে। এ সকল পশুতে কোরবানির কোন শরিক হয় না।

উট, গরু, মহিষ সাত শরীকে এবং সাতের কমে যে কোন সংখ্যক যেমন দুই, তিন, চার, পাঁচ ও ছয় শরীকে কোরবানি করা জায়েজ। অর্থাৎ এ সকল পশুতে এক থেকে সাত যেকোনো সংখ্যক শরিক হতে পারেন। যে কয়জনেই শরীর হন না কেন তাদের সমান অংশ পশুটিতে থাকতে হবে।


কোন অংশীদারের নিয়োত গলদ হলে?

কুরবানীর অংশীদার করার ক্ষেত্রে অবশ্যই প্রকৃত মুমিনকে সতর্ক থাকতে হবে । কেননা অংশীদারের কেউ যদি আল্লাহ তাআলার হুকুম পালনের উদ্দেশ্যে কোরবানি না করে, শুধুমাত্র গোস্ত খাওয়ার নিয়তে কোরবানি করে, তাহলে কুরবানি শুদ্ধ হবে না।

এমন লোক অংশীদার বানালে অংশীদারের কারো কুরবানী শুদ্ধ হবে না। তাই কোরবানির অংশীদার নির্বাচন করার ক্ষেত্রে অত্যন্ত সতর্কতা অবলম্বন করা জরুরী।


কোরবানির পশুতে আকিকার অংশ দেওয়া যাবে কি?

কোরবানির গরু মহিষ ও উটে আকিকার নিয়তে অংশীদার হওয়া যায়। এতে কোরবানি ও আকিকা দুটোই শুদ্ধ হবে। ছেলের জন্য দুই অংশ আর মেয়ের জন্য এক অংশ দিতে হবে। অর্থাৎ গরুতে ছেলের আকিকার অংশ নেওয়ার জন্য সাত ভাগের দুই ভাগ নিতে হবে আর মেয়ের জন্য এক ভাগ নিতে হবে।

শৈশবে আকিকা করা না হলে বড় হওয়ার পরও আকিকা করা যায়। যার আকীকা সে নিজে এবং তার মা-বাবাও আকিকার গোস্ত খেতে পারে।

ফাতাওয়াসমিসহ ফাতোয়ার কিতাব গুলোতে স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে যে, কুরবানীর সাথে আকিকা সহিহ।


হারাম টাকার কোরবানি শুদ্ধ নয় কেনো?

কুরবানী করতে হবে সম্পূর্ণ হালাল সম্পদ থেকে। কেননা এবাদত কবুল হওয়ার পূর্ব শর্ত হলো হালাল সম্পদ হওয়া। হারাম টাকা দ্বারা কুরবানী করা শুদ্ধ নয় এবং শরিকানা কোরবানির ক্ষেত্রে কোন শরীক যদি হারাম টাকা দিয়ে কোরবানির পশু ক্রয় করে, তাহলে অংশীদারের কারোই কুরবানি শুদ্ধ হবে না।

কেউ যদি গরু মহিষ বা উট একা কোরবানি দেওয়ার জন্য ক্রয় করে আর সে যদি ধনী হয়, তবুও তার জন্য এ পশুতে অন্যকে অংশীদার করা জায়েজ। তবে এক্ষেত্রে কাউকে শরিক না করে একা কোরবানি দেওয়া শ্রেয়। শরীক করলে সে টাকা সদকা করে দেওয়াও উত্তম। 

আর যদি ওই ব্যক্তি এমন গরিব হয় যার উপর কুরবানী করা ওয়াজিব নয়, এক্ষেত্রে যেহেতু কুরবানীর নিয়তে পশুটি ক্রয় করার মাধ্যমে লোকটি তার পুরোটাই আল্লাহর জন্য নির্ধারণ করে দিয়েছে, তাই তার জন্য এই পশুটিতে অন্যকে শরিক করা জায়েজ নয়।

যদি শরীক করে তবে ওই টাকা সদকা করে দেওয়া জরুরি হবে। কেননা কোরবানির পশুতে কাউকে শরিক করতে চাইলে পশু ক্রয় করার সময়ই নিয়ত করে নিতে হয়। (কাজিখান: ৩/৩৫০-৩৫১, বাদায়েউস সনায়ে: ৪/২১০)


কুরবানী করার নিয়ম

অধিকাংশ ব্যক্তি নিজের কোরবানি নিজে করেন না এর অন্যতম প্রধান কারণ হলো অনেকেই মনে করেন, তিনি কোরবানির পদ্ধতি কিংবা নিয়ম জানেন না। অথচ কুরবানীর নিয়ম ও পদ্ধতি একেবারেই সহজ।

কুরবানীর পশু যবেহ করার ক্ষেত্রে কয়েকটি বিষয় লক্ষ্য রাখার জন্য খেয়াল করতে হবে, তবে পশু জবেহ বিশুদ্ধ হওয়ার জন্য এ দুটি বিষয়ের প্রতি লক্ষ্য রাখলে কোরবানির শুদ্ধ হবে। বিষয় দুটি হচ্ছে-

এক) কোরবানির পশু যবেহ করার সময় বিসমিল্লাহ বলে যবেহ শুরু করা। অর্থাৎ বিসমিল্লাহ বলে যবেহ করার জন্য ছুরি চালানো শুরু করতে হবে। ইসলামে আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো নামে পশু জবাই করা জায়েজ নেই। অন্য কারো নামে পশুর জবাই করলে সেই পশুর গোস্ত মুসলমানদের খাওয়াও জায়েজ নাই। তাই এই বিষয়টি খেয়াল রাখা জরুরি।

দুই) যবেহ করার সময় আরো যে বিষয় খেয়াল রাখতে হবে তা হচ্ছে, পশুর খাদ্যনালী, শ্বাসনালী, আর দুই পাশে থাকা দুটি নালী যেন কেটে দেওয়া হয়। এ নালীগুলো কাটা হয়ে গেলে পশু যবেহ বিশুদ্ধ হয়ে যায়।

উল্লেখিত বিষয়টিকে খেয়াল করে যে কেউ নিজের কোরবানির পশু জবাই করতে পারেন। অর্থাৎ কুরবানীর সময় আল্লাহর নামে তথা বিসমিল্লাহ বলে পশুর খাদ্যনালী শ্বাসনালী ও দুইপাশের দুটি নালী যবেহ করা হলে কোরবানি বিশুদ্ধ হয়ে যায়। এছাড়াও কোরবানির পশুর জবাই করার ক্ষেত্রে আরো যে বিষয়গুলো খেয়াল রাখতে হবে তা হচ্ছে-

* পশু জবাই করার চুরি যেন খুব ধারালো হয়। যাতে জবাই করার সময় পশুর যেন কষ্ট না হয়। অনেকে একটি ছুরি দিয়ে একাধিক পশু কুরবানী করে থাকেন। এক্ষেত্রে শেষ দিকে চুরির ধার কমে যায় সে ক্ষেত্রে ছুরির ধার দিয়ে নেওয়া যেতে পারে। কেননা হাদিসে এসেছে, রাসূল সাল্লাল্লাহু সাল্লাম বলেছেন পশু জবাই করার আগে ছুরি-চাকুতে ভালোভাবে ধার দিয়ে নেওয়া। (মুসলিম)

* অন্য পশুর সামনে যবেহ না করা এবং পশুর সামনে চুরি বা চাকুতে ধার না দেওয়া। কেননা এতে পশু ভয় পেয়ে যায়। আর এটাও এক প্রকার পশুকে কষ্ট দেওয়ার সামিল।

* কুরবানী করার সময় পশুকে পশুর বাম কাতে শোয়ানো। সে সময় পশুর পাগুলো পশ্চিম দিকে থাকবে।


কুরবানি ঈদ সম্পর্কে আরো ইনফো জানুন





একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

[blogger]

Search This Blog

যোগাযোগ ফর্ম

নাম

ইমেল *

বার্তা *

Blogger দ্বারা পরিচালিত.
Javascript DisablePlease Enable Javascript To See All Widget