বাংলাদেশে মোবাইল ব্যাংকিং চালু হওয়ার পর থেকে আর্থিক লেনদেন অনেক গুণ বেড়ে গেছে। এর অন্যতম প্রধান কারণ হচ্ছে- মোবাইল ব্যাংকিং এর মাধ্যমে অনেক সহজেই লেনদেন করা যায়। বর্তমানে প্রায় ব্যাংকগুলো মোবাইল ব্যাংকিং সেবা চালু করেছে। তবে বর্তমানের সবচেয়ে জনপ্রিয় অর্জন করেছে বিকাশ। যে কেউ চাইলেই এখন ঘরে বসে তার স্মার্টফোন দিয়ে বিকাশ একাউন্ট খুলে নিতে পারে। এই লেখাটিতে আমরা আলোচনা করব "বিকাশ মার্চেন্ট একাউন্ট খোলার প্রক্রিয়া" নিয়ে।
বিকাশের মাধ্যমে শুধু ব্যক্তিগত লেনদেন নয়, এর মার্চেন্ট একাউন্ট খুলে আপনি ব্যবসায়িক লেনদেন ও করতে পারেন আনায়াসে। জনপ্রিয়তার শীর্ষে থাকায় অনেক ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসায়ীরা নিজেদের ব্যবসার জন্য বিকাশ merchant account ব্যবহার করেন ।
বিকাশ merchant account কেন খুলবেন?
মনে করুন, আপনার একটি দোকান বা অন্য কোন ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান রয়েছে। আপনার গ্রাহকরা বিভিন্ন পণ্য করে করে বিকাশে পেমেন্ট করবেন। কারণ নগদ টাকা ব্যবহার করা, অনেকেই ঝামেলা মনে করে থাকেন। সে ক্ষেত্রে আপনি যদি বিকাশে পেমেন্ট গ্রহণ করতে না পারেন, তাহলে কাস্টমার হয়তো পেমেন্ট করতে একটু অসুবিধায় পড়বে। অথবা যেখানে বিকাশে পেমেন্ট করার সুযোগ রয়েছে সেখানে পণ্যটি ক্রয় করবেন।
এই ক্ষেত্রে আপনার যদি একটি (merchant account) বিকাশ মার্চেন্ট একাউন্ট থাকে, তাহলে যে কোন পরিমাণ মূল্য খুব সহজেই বিকাশে গ্রহণ করতে পারেন।
অনেকেই আবার ব্যক্তিগত বিকাশ একাউন্টে সেন্ড মানি করে বিভিন্ন পেমেন্ট গ্রহণ করে থাকেন। এই ক্ষেত্রে মনে রাখবেন, ব্যক্তিগত বিকাশ একাউন্টে বিভিন্ন রকম লিমিট রয়েছে। পার্সোনাল একাউন্টে সেন্টমানি করলে আপনার সেন্টমানি চার্জ কাটবে। এছাড়াও ব্যক্তিগত বিকাশ একাউন্টে খুব বেশি লেনদেন কিংবা ঘনঘন লেনদেন করা যায় না। তাই ব্যবসায়িক লেনদেন করার জন্য বিকাশ মার্চেন্ট একাউন্ট খুলতে হয়।
বিকাশ মার্চেন্ট একাউন্ট এর সুবিধা
একটি ব্যক্তিগত বিকাশ একাউন্ট দিয়ে পেমেন্ট গ্রহণ করা যায়, তাহলে মার্চেন্ট একাউন্ট খোলার প্রয়োজন কি? এরকম প্রশ্ন আপনার মনে হতে পারে। মনে রাখুন, একটি সাধারন বিকাশ একাউন্ট লেনদেন করার ক্ষেত্রে লিমিটেশন রয়েছে। অর্থাৎ একটি সাধারণ বিকাশ একাউন্টে আপনি ইচ্ছা করলেই অধিক লেনদেন করতে পারবেন না।
বিকাশ মার্চেন্ট একাউন্টে কি কি সুবিধা রয়েছে, চলুন জেনে নেওয়া যাক।
১) আপনার আইডি কার্ড দিয়ে যদি বিকাশ এর একটি পার্সোনাল অ্যাকাউন্ট খোলা থাকে, তারপরও আপনি ব্যবসায়িক লেনদেন করার ক্ষেত্রে এই আইডি কার্ড নাম্বার ব্যবহার করে একটি মার্চেন্ট একাউন্ট খুলতে পারেন। (যদি না ইতিপূর্বে মার্চেন্ট একাউন্ট বা রিটেইল একাউন্ট না করে থাকেন ।
২) মার্চেন্ট একাউন্ট এর ক্ষেত্রে লেনদেনের কোন লিমিট নেই। অর্থাৎ এই একাউন্টে এক টাকা থেকে যে কোন অংকের লেনদেন করা যায়।
৩) মার্চেন্ট একাউন্ট এর মাধ্যমে আপনার ব্যবসার বিভিন্ন সেবা বা পণ্যের প্রচারে বিভিন্ন অফার দিতে পারেন। নিজের ব্যবসার জন্য গ্রাহকদের কাছে বিভিন্ন ধরনের অফার খুব সহজেই পৌঁছাতে পারেন।
৪) মার্চেন্ট একাউন্ট থেকে ব্যাংক একাউন্টে সরাসরি টাকা তোলার সুযোগ রয়েছে।
৫) নিজের ওয়েবসাইট বা মোবাইল অ্যাপ এ বিকাশের মাধ্যমে পেমেন্ট গ্রহণ করতে পারবেন।
বিকাশ মার্চেন্ট একাউন্ট ক্যাশ আউট চার্জ
পার্সোনাল বিকাশ একাউন্ট থেকে ক্যাশ আউট করতে গেলে তুলনামূলকভাবে বেশি চার্জ কাটে। কিন্তু আপনি যখন বিকাশ মার্চেন্ট একাউন্ট ব্যবহার করবেন তখন পার্সোনাল অ্যাকাউন্ট এর থেকে বেশি সুবিধা ভোগ করতে পারেন। অর্থাৎ ক্যাশ আউট চার্জ বিকাশ পার্সোনাল অ্যাকাউন্টের থেকে বিকাশ মার্চেন্ট একাউন্টের ক্যাশ আউট চার্জ অনেক কম। যেমন বিকাশ পার্সোনাল একাউন্টের ক্যাশ আউট চার্জ ১.৮৫% কিন্তু বিকাশ মার্চেন্ট একাউন্টে ক্যাশ আউট চার্জ ১.৭০% ।
সুতরাং বুঝতেই পারছেন, মার্চেন্ট একাউন্টে বাড়তি সুবিধা রয়েছে। সবচেয়ে বড় সুবিধা হচ্ছে, আপনার কাস্টমারের কাছ থেকে যে কোন পরিমাণ টাকা লেনদেন করতে পারেন। এবং কাস্টমারকে বিভিন্ন পন্যের অফারও দিতে পারেন এই একাউন্টের মাধ্যমে।
বিকাশ merchant account খোলার প্রক্রিয়া
খুব সহজেই বিকাশ merchant একাউন্ট খুলতে পারেন। এমনকি আপনি ঘরে বসেও বিকাশ মার্চেন্ট একাউন্ট অনলাইনের মাধ্যমে খুলতে পারেন। প্রথমে আপনাকে merchant account খোলার জন্য আবেদন করতে হবে। একাউন্ট খোলার জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জমা দিতে হবে।
বিকাশ কর্মকর্তা আপনার কাগজপত্র যাচাই করবে। আপনার কাগজপত্র সঠিক হলে আপনার merchant account অনুমোদন দেওয়া হবে। মার্চেন্ট একাউন্ট খোলার জন্য কি কি কাগজপত্র প্রয়োজন হয তা নিয়ে দেওয়া হলো।
প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট ও তথ্য
মার্চেন্ট একাউন্ট খোলার জন্য বেশ কিছু ডকুমেন্ট অর্থাৎ নিম্ন প্রয়োজনীয় তথ্য প্রয়োজন হবে। যেমন-
* ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের ঠিকানা
* ট্রেড লাইসেন্স
* ব্যাংক একাউন্ট
* জাতীয় পরিচয় পত্রের ফটোকপি
* ট্রেন সার্টিফিকেট
* মোবাইল নাম্বার
* ইমেইল ঠিকানা
বিকাশ মার্চেন্ট একাউন্ট আবেদন প্রক্রিয়া
বিকাশ মার্চেন্ট একাউন্ট খোলার জন্য আপনি দুটি পদ্ধতি অবলম্বন করতে পারেন । সরাসরি বিকাশ অফিসে গিয়ে আবেদন ফরম নিয়ে পূরণ করতে পারেন। অথবা অনলাইনে ঘরে বসে আবেদন করতে পারেন। অনলাইনে আবেনদ করার ক্ষেত্রে এখানে ক্লিক করুন। যে আবেদন ফরম আসবে সেখানানে মেনু ট্যাব থেকে “মার্চেন্ট” সিলেক্ট করুন।
আবেদন করার পর একজন অ্যাকাউন্ট ম্যানেজার আপনার সাথে যোগাযোগ করবে। তিনি সকল ধরনের প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট চাইবেন। প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টগুলো তার কাছে সরবরাহ করবেন।
ডকুমেন্ট গ্রহণের পর বিকাশ কর্তৃপক্ষ আপনার দেওয়া তথ্যের সত্যতা যাচাই করবে। সত্যতা যাচাই হওয়ার পর আপনার একাউন্টে অনুমোদন দিবে।
আপনার আবেদন অনুমোদিত হয়ে গেলে কয়েকদিনের মধ্যে লগইন করা প্রয়োজনীয় তথ্য (ইউজারনেম এবং পাসওয়ার্ড) আপনাকে ইমেইলের মাধ্যমে পাঠিয়ে দিবে।
এবার আপনার দেওয়া মোবাইল নাম্বারে মেসেজের মাধ্যমে একাউন্টি এক্টিভ করে নিতে হবে। এজন্য মোবাইলে *২৪৭# নাম্বারে ডায়াল করেন নতুন গোপনীয় পিন কোড সেট করে নিতে হবে। এরপর আপনি আপনার মার্চেন্ট একাউন্টে পেমেন্ট গ্রহণ করতে পারবেন।
বিকাশ মার্চেন্ট একাউন্ট টাকা পাঠানোর নিয়ম
বিকাশ পার্সোনাল একাউন্ট ও বিকাশ মার্চেন্ট একাউন্ট টাকা পাঠানোর নিয়ম একই রকম। তবে আপনি যদি কোন কিছু ক্রয় করেন এবং বিকাশ মার্সেল একাউন্টে টাকা পাঠান তাহলে আপনার অতিরিক্ত কোন চার্জ কাটবে না।
কিন্তু পার্সোনাল একাউন্টে টাকা পাঠালে অতিরিক্ত টাকা চার্জ করে থাকে। অর্থাৎ পার্সোনাল একাউন্টে সেন্ড মানি করলে সেন্ড মানি চার্জ কাটবে। তাই পেমেন্ট করার ক্ষেত্রে মার্চেন্ট একাউন্টে পেমেন্ট করুন।
আরো জানুন:
বিদেশ থেকে বিকাশ একাউন্টে টাকা পাঠাবেন কিভাবে?
কিভাবে ৫টি বিকাশ নাম্বারে ফ্রি সেন্টমানি করবেন প্রতি মাসে?
মোবাইল ব্যাংকিং এ প্রতারণার শিকার হলে কি করবেন?
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন