ফ্রিল্যান্সিং কি? কেন ফ্রিল্যান্সিং (Freelancing) সেরা? এই পেশায় কি সবাই ভাল করতে পারবে? এই সকল বিষয় নিয়ে আজকের ইনফোটি শেয়ার করা হলো। বর্তমানে ফ্রিল্যান্সিং হচ্ছে সরকার অনুমোদিত একটি পেশা। অনলাইনে আবেদন করে এই পেশার জন্য একটি সরকারি কার্ড করে নিয়ে সরকারি বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা ভোগ করা যায়। তবে আজকে আমরা আলোকপাত করবো কেন এই পেশাটি সেরা?
সাধারণত শিক্ষাজীবন শেষে আমর নিজের পেশা বেছে নিই। ব্যক্তিজীবন, পরিবার আর পেশাজীবনের সবচেয়ে ভাল সমন্বয়কেই ভাল থাকার মাপকাটি বলে মনে করি আমি। এই ভাল থাকার জন্য প্রধানত যে তিনটি জিনিসের প্রয়োজন তা হলো- স্বাধীনতা, স্বাচ্ছন্দ এবং পর্যাপ্ত আয়।
আর একজন ফ্রিল্যান্সার আউটসোর্সিং করে
এই সুবিধাগুলো ভোগ করে থাকে। নিচে এই বিষয়ে আলোচনা করা হয়েছে। তার আগে আউটসোর্সিং কি?
এবং ফ্রিল্যান্সিং কি? এই বিষয়ে একটু ধারণা নেওয়া যাক।
আউটসোর্সিং (Outsourcing) এবং ফ্রিল্যান্সিং (Freelancing) কি?
আউটসোর্সিং
(Outsourcing) এবং ফ্রিল্যান্সিং (Freelancing) কি এটি বোঝার জন্য আপনাকে একটি ভাল
ধারণা রাখতে হবে, অনলাইনে আয় আর আউটসোর্সিং দুটি আলাদা বিষয়। কেননা অনেকেই এই দুটি বিষয়কে
একসাথে গুলিয়ে ফেলেন।
ফলে নতুনদের
কাছে হজবরল অবস্থা সৃষ্টি হয়। যাইহোক যখন কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান তাঁর নিজের বা
প্রতিষ্ঠানের কাজ ইন-হাউজ না করে বাইরের কাউকে দিয়ে করিয়ে নেয় তখন সেটিকে বলা হয় আউটসোর্সিং।
আর ফ্রিল্যান্সিং (Freelancing) হলো যখন কোন ব্যক্তি, কোন নির্দিষ্ঠ প্রতিষ্ঠানে কাজ
না করে চুক্তিভিত্তিক বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কাজ করে থাকেন, তখন তাঁকে ফ্রিল্যান্সার
বলে।
যারা নতুন
এই পেশায় আসতে চান তাদেরকে অবশ্যই এই বিষয়ে ক্লিয়ার ধারণা নিতে হবে সর্বপ্রথম। মনে
রাখবেন দক্ষতা ছাড়া এই পেশায় কেউ সফলতা অর্জন করতে পারে না। তাই যারা ফ্রিল্যান্সিং
পেশায় আসতে আগ্রহী তাদেরকে প্রথমেই নিজের দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য প্রচেষ্টা করতে হবে।
আরো জানুন:
বাংলাদেশ থেকে পেপাল একাউন্ট খুলবেন কিভাবে? এবং ভেরিফাই করবেন কিভাবে?
অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং কি? কিভাবে এফিলিয়েট মার্কেটিং করে আয় করা যায়?
ফেসবুক ইন্সট্যান্ট আর্টিকেল কি? এখানে থেকে কিভাবে আয় করা যায়?
পেশা হিসাবে ফ্রিল্যান্সিং (Freelancing) কেন সবচেয়ে সেরা?
উপরে আমরা
উল্লেখ করেছি যে, জীবন ভালভাবে উপভোগ করার জন্য তিনটি জিনিসের প্রয়োজন । আর তা হচ্ছে-
কাজের স্বাধীনতা, স্বাচ্ছন্দ
এবং পর্যাপ্ত আয়। যারা এই পেশায় সফলতা অর্জন করেছেন,
তাদের জীবন পর্যালোচনা করলে বুঝা যায় যে, পূর্ণমাত্রায় এই শর্তগুলোর সর্বাধিক সুবিধা
ভোগ করা যায়।
উদাহরণ হিসাবে
বলা যায় যে, আপনি কখন কাজ করবেন, কোথায় বসে কাজ করবেন, কোন ধরণের কাজ করবেন, ঘরে বসে
বিশ্বের যে কোন দেশে কাজ করার সুবিধা এবং আপনি কত টাকা আয় করতে চান সেটাও আপনার হাতে,
যদি আপনি ফ্রিল্যান্সার পেশায় নিয়োজিত থাকেন।
তাহলে চলুন
দেখি ফ্রিল্যান্স-আউটসোর্সিংয়ের ক্ষেত্রে আমরা কতটুকু সুবিধা এ ক্ষেত্রগুলোতে পাওয়া
যায় সেই বিষয়ে আলোচনা করি।
কখন কাজ করবেন তার স্বাধীনতা
ফ্রিল্যান্সিং
পেশায় কাজ করার ক্ষেত্রে কখন কাজ করবেন তার স্বাধীনতা থাকে। অর্থাৎ আপনি সিদ্ধান্ত নেবেন আপনি কখন কাজ করবেন। উদাহরণ হিসেবে বলি- আমি প্রতিদিন কাজ করি রাত এগারোটা থেকে সকাল ছয়টা, দুপুর পর্যন্ত ব্যক্তিগত ও পারিবারিক কাজ
করে দুপুর থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত ঘুমাই। এভাবে কাজ করতে আমাকে কেউ বাধ্য করেনি।
আমার
কাছে কাজরে এই শিডিউলটা সুবিধাজনক
মনে হয়েছে, তাই এভাবেই কাজ করে থাকি। কোনদিন ইচ্ছা হলো আজ রাতে কাজ
করবো না, অন্য সময়ে করবো, তাতেও কেউ নিষেধ করে না।
কিন্তু
আগের ১০ বছরের কর্মজীবনে
আমি কখনো ভাবতে পারিনি যে, অফিসে বসকে বলবো আজ আমি সকালে
অফিসে না গিয়ে সন্ধ্যায়
যাব বা দুদিন অফিসে
না গিয়ে বন্ধুদের সাথে আড্ডা দেবো! ইত্যাদি ইত্যাদি।
কোথায় বসে কাজ করবেন তার স্বাধীনতা
ফ্রিল্যান্সার
হিসাবে আপনিই সিদ্ধান্ত নেবেন কোথায় বসে কাজ করবেন। এক্ষেত্রে আমি আমার নিজের কথা বলি। আমার পার্সোনাল ডেস্কটা আমার বেডরুমেই, একানে বসেই আমার ফ্রিল্যান্সিং
কাজ করা হযে থাকে। আপনি
কোন চাকরি করেন কিংবা অন্য কোন ব্যবসা করেন, বেড়াতে ইচ্ছা হলেই আপনি বেড়াতে যেতে পারবেন না।
যদি
চাকরী হয়, তাহলে ছুটির জন্য অপেক্ষা করতে হবে, ব্যবসা হলে আপনার প্রতিষ্ঠান ফেলে যেতে হবে। এরকম ভ্যাগাবন্ড ফ্যামিলি তৈরি তো দূরের কথা,
এমন কিছু স্বপ্ন দেখতেও দ্বিধা হবে আপনার! এরা সবাই বছরের পর বছর দেশে
বিদেশে বেড়াচ্ছে। কিন্তু এদের কাজ থেমে থাকছে না।
ফ্রিল্যান্সার
যেখানে যায় এদের অফিসও সেখানে। একজন ফ্রিল্যান্সার হিসেবে আপনার ল্যাপটপ আর একটা ছোট্ট
ট্রাভেল ব্যাগই যথেষ্ট। আপনাকে অফিসে যেতে হবে না, বরং অফিসই আপনার সাথে সাথে যাবে। কাজের জন্য আর কতটা স্বাধীনতা
চান?
ফ্রিল্যান্সার ব্যবসা বা কাজের পরিধি বিশাল কিন্তু ঝুঁকি কম
বিশাল পরিধি
নিয়ে কাজ করার সুযোগ রয়েছে এখানে। লোকাল
বিজনেসের সাথে এটার সবচেয়ে বড় পার্থক্য হচ্ছে,
এক্ষেত্রে আপনার ব্যবসাক্ষেত্র বিশ্বব্যাপি। ফলে গ্রাহকসংখ্যা বহুগুণ বেশি। এজন্য কাজেরও কোন অভাব নেই। এখানে আপনি সার্ভিস প্রোভাইডার এবং আপনিই সিদ্ধান্ত নেবেন কাকে আপনার সার্ভিস প্রোভাইড করবেন আর কাকে করবেন না।
মনে করি,
আপনি কোন একটা শহরে একটা দোকান দিয়েছেন। ব্যবসা বেশ ভালই চলছে, কিন্তু আপনার শহরে হঠাৎ কোন প্রাকৃতিক বিপর্যয় হলে হয়তো বেশ কিছুদিনের জন্য আপনার ব্যবসায় মন্দা শুরু হয়ে যাবে। কিন্তু ফ্রিল্যান্স আউটসোর্সিংয়ের ক্ষেত্রে আপনার ব্যবসা শুধু আপনার শহরকেন্দ্রিক নয়, তাই ঝুঁকিও কম।
উদাহরণ স্বরুপ-
আমার একজন ক্লায়েন্ট রয়েছে। তিনি নিউ জার্সিতে থাকেন। কিছুদিন আগে হ্যারিকেন স্যান্ডিতে তাঁর এলাকা তছনছ হয়ে গিয়েছিল। এরকম অবস্থায় তাঁর কাজও হুট করে কিছুদিনের জন্য স্থগিত হয়ে যায। কিন্তু আমার অন্যান্য শহরের বা অন্যান্য দেশের
ক্লায়েন্টদের কাজ ঠিকই চলে।
ফ্রিল্যান্সিং ভার্চুয়াল অফিস
ফ্রিল্যান্সিংয়ের
মানে এই নয় যে,
আপনাকে সারাজীবন একা একাই কাজ করতে হবে। আমি নিজেও একা কাজ করি না। আমাদের একটা অফিস রয়েছে। তবে সেটাও ভার্চুয়াল অফিস। ক্রিয়েটিভ এলিয়েন্সের কে কোথায় বসে
কাজ করলো সেটা নিয়ে আমাদের কোন মাথাব্যাথা নেই। কাজ ঠিকঠাক হলেই হলো।
আমাদের
প্রতিষ্ঠানের হয়ে বাংলাদেশ, ভারত, ফিলিপাইন এবং চেক প্রজাতন্ত্রের ১৮ জন ছেলেমেয়ে
যার সুবিধামত জায়গায় বসে নিয়মিত কাজ করছে এটা ভাবতেও অনেক ভাল লাগছে। আমাদের চাওয়াও এইটা যে,
যে জায়গায় বসে আমাদের এমপ্লয়িরা যেখানে সবচেয়ে স্বাচ্ছন্দে কাজ করতে পারেন, যেভাবে এবং যে পোষাকে ক্রিয়েটিভিটি
দেখাতে পছন্দ করে সেভাবে বসেই কাজ করুক। মুদি দোকান থেকে কর্পোরেট প্রতিষ্ঠান, চাকুরিতে কোথাও এটা কল্পনাও করা যায় না।
কত টাকা আয় করতে চান? অর্থাৎ আয়ের নিয়ন্ত্রণ আপনার হাতে
ফ্রিল্যান্সিং
এর ক্ষেত্রে আপনি
কতটা আয় করতে চান?
কথাটা আপাতদৃষ্টিতে হাস্যকর মনে হতে পারে। যেখানে দেশে সর্বোচ্চ শিক্ষাস্তর শেষ করার পরও কয়েক লাখ টাকা ঘুষ দিয়ে লাইনে দাঁড়াতে হয় একটা চাকরীর
আশায়, তারপরও চাকরীটা হবে কিনা এটার নিশ্চয়তা আপনাকে কেউ দিতে পারে না।
সেখানে
উল্টো কেউ যদি আপনাকে জিজ্ঞাসা করে কোন ঘুষ ছাড়াই নিজের যোগ্যতায় আপনি প্রতি মাসে কি পরিমাণ আয়
করতে চান! তাহলে হাসি আসতেই পারে। কিন্তু কথাটা মোটেও হস্যকর নয়।
আপনার
যোগ্যতা এবং দক্ষতার উপরেই নির্ভর করবে আপনি কতটাকা আয় করবেন। আর
আপনি যখন আন্তর্জাতিক বাজারে কাজ করবেন, স্বাভাবিকভাবেই আপনার কাজের দাম স্থানীয় বাজারের চাইতে কয়েকগুণ বেশি হয়ে যাবে।
উপসংহার
আশাকরি, লেখাটি
পড়ে বুঝতে পেরেছেন ফ্রিল্যান্সার কেন সেরা একটি পেশা। তবে এই পেশায় সফলতা অর্জন করার
মূল শর্ত হচ্ছে নিজের দক্ষতা বৃদ্ধি। দক্ষতা ছাড়া আপনি যতই ডিগ্রিধারী হোন না কেন ফ্রিল্যান্সার
হয়ে সফলতা পাবেন না।
যারা শিক্ষার্থী
তাদের কাছে আমার পরামর্শ হচ্ছে- শিক্ষা অর্জনের পাশাপাশি নিজের দক্ষতাকেও সমান তালে
গুরুত্ব দিতে হবে। ল্যাপটপ/কম্পিউটার কিংবা হাতের স্মার্টফোনকে দক্ষতা অর্জনে কাজে
লাগতে হবে। একজন দক্ষ এবং শিক্ষিত মানুষ দেশ এবং জাতীর কল্যাণ বয়ে আনতে পারে। অদক্ষ
মানুষ দেশ ও জাতীর জন্য বেকার ও বোঝা হয়ে দাড়ায়।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন