সাধারণত দেখা যায় বেশিরভাগ ক্ষেত্রে নারীদের যৌনাঙ্গ ইনফেকশন বা সংক্রমণ হলে তারা নীরবে সহ্য করে থাকেন। এটা আপনার গোপন বিষয় তাই লজ্জা পেয়ে দাঁতে দাঁত চিপে সহ করলে নিজেরই অস্বস্তি অনেক গুণ বেড়ে যাবে। (Vaginal infection, Itching and odor), অনেকেই খুব মারাত্মক না হলে এমনকি ডাক্তারের শরণাপন্ন হতে চান না। যৌনাঙ্গে ইনফেকশন, চুলকানি ভাব, জ্বালা ও দুর্গন্ধ হয় কেন? সংক্রমণ হয়েছে কিনা কিভাবে বুঝবেন? এবং আপনি সংক্রমিত হলে কি করবেন এই বিষয়ে আজকে আমরা বিস্তারিত আলোচনা করব।
মনে রাখুন, যোনিতে ইনফেকশন বা সংক্রমণ হলে ঠিক সময় চিকিৎসা করা না হলে এটি ভয়ানক আকার ধারণ করতে পারে। অনেকেই আবার এই বিষয়ে সচেতনার অভাবে ভ্যাজাইনাল ইনফেকশন বা যোনিতে সংক্রমণ, যৌনাঙ্গে চুলকানি ভাব, জ্বালা ও দুর্গন্ধ বোধ করেন। নিজের অবহেলার কারণে তা মারাত্বক আকার ধারণ করে।
এই লেখাটিতে আমরা জানবো, ভ্যাজাইনা বা যোনিতে যে ইনফেকশন হয়েছে, সেটা কিভাবে বোঝা যাবে? (Jounange Chulkani, Durgandho, jala vab or infection bujar upay ki?) যৌনাঙ্গের সমস্যায় আপনি পড়লে কিভাবে যত্ন নিবেন? এবং কি কি নিয়ম মেনে চললে এসব ইনফেকশন হওয়ার আশঙ্কা অনেকাংশে কমে যাবে?
প্রতিটি মানুষকে নিজের শরীরের প্রতি যথেষ্ট সচেতন থাকতে হবে, কেননা একটু অবহেলা মারাত্মক সমস্যা ডেকে আনতে পারে জীবনের জন্য। স্বাস্থ্যরক্ষা বিষয়ক এই লেখাটি আপনাকে সহায়তা করতে পারে, বিশেষ করে যৌনিপথের অস্বস্থি সম্পর্কে। তাই পুরো লেখাটি (vaginal infection symptoms, home remedies, causes, types, all type of vaginal discharge) ভালো করে মনোযোগ দিয়ে পড়ুন ।
আরো জানুন:
যৌনাঙ্গে ইনফেকশন হওয়ার লক্ষণসমূহ কি কি?
যোনিতে বা ভ্যাজাইনাতে ইনফেকশন হয়েছে এটা বুঝার জন্য বেশ কিছু লক্ষণ জানা দরকার। What are the symptoms of different vaginal infections. নিচের উপসর্গ গুলো যদি আপনার শরীরে দেখা দেয়, তাহলে বুঝে নিতে পারেন যে, আপনার যৌনাঙ্গে বা ভ্যাজাইনাতে ইনফেকশন হতে পারে। যৌনিপথের ইনফেকশন হলে নিম্নরুপ উপস্বর্গ দেখা যেতে পারে।
১) যোনিতে চুলকানি ভাব হওয়া
২) জ্বালা বোধ বা অসহ্য প্রকৃতির হওয়া
৩) দুর্গন্ধযুক্ত ও অস্বাভাবিক ভ্যাজাইনাল ডিসচার্জ হওয়া
৪) সহবাসের সময় অসস্তিবোধ হওয়া
৫) রেশ বা এলার্জির মত হয়ে যাওয়া
এসব উপসর্গ দেখা দিলে আপনাকে ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে এবং এই সমস্যা যাতে আপনার না হতে পারে সেজন্য সচেতন থাকতে হবে আর নিজের শরীরের যত্ন সঠিক ভাবে নিতে হবে। কি কি উপায় অবলম্বন করলে আপনার যৌনাঙ্গ ইনফেকশন হওয়ার আশঙ্কা কমে যাবে কিংবা ইনফেকশন হলে আরাম পাবেন কিভাবে সেই বিষয়ে লেখাটির শেষের দিকে আলোচনা করা হয়েছে। তাই বিস্তারিত জানতে শেষ অবধি লেখাটি ভাল করে পড়ুন।
All types of vaginal discharge: what do they really indicate? অর্থাৎ কোন কোন ভ্যাজাইনাল ডিসচার্জ ইনফেকশনের লক্ষণ তা জানার জরুরি। কেননা ঋতুস্রাব অনেক প্রকারের হতে পারে স্বাভাবিক নিয়ম অনুসারে। এর মধ্যে কোনগুলো আপনাকে ইনফেকশনের ইঙ্গিত দেয় সেই বিষয়ে সঠিক ধারণা নিতে হবে।
কোন ধরনের ভ্যাজাইনার ডিসচার্জ ইনফেকশন এর ইঙ্গিত দেয়?
আগেই বলা হয়েছে, ভ্যাজাইনাল ডিসচার্জ স্বাভাবিক নিয়মে অনেক ধরনের হতে পারে। All types of vaginal discharge, what do they really indicate? কোন কোন ভ্যাজাইনাল ডিসচার্জ আপনার যৌনাঙ্গে ইনফেকশনের ইঙ্গিত দেয় তা নিম্নরূপ:
১) বিভিন্ন ধরনের ঋতুস্রব, যেমন- স্বচ্ছ স্রাব, অল্প চ্যাটচ্যাটে স্বচ্ছ স্রাব, পনির মত স্রাব বা সাদা স্রাব ইত্যাদি এগুলো সম্পূর্ণ স্বাভাবিক। তবে মনে রাখুন, এই স্রাবের সাথে যোনিতে চুলকানি অনুভব হলে এবং স্রাবে দুর্গন্ধ থাকলে তা স্বাভাবিক হয় না । ইনফেকশনের কারণে চুলকানি বা দুর্গন্ধ হতে পারে।
২) আবার সাদা স্রাব যদি চাকের মত ঘনত্বের হয়ে যায়, তাহলে তা ইঙ্গিত দেয় যে, যৌনিপথে ইনফেকশন হয়েছে। ওভুলেশনের সময় স্বচ্ছ বা সাদা স্রাবের পরিমাণ অনেক বেড়ে যায়।
৩) ট্রাইকোমোনিয়াসিস নামে (Trichomoniasis) infection: যোনিতে এক ধরনের ইনফেকশন হয়ে থাকে । যৌনাঙ্গে এই ধরনের ইনফেকশন হলে অর্থাৎ এর প্রভাবে হলুদ রঙের, ফেনাযুক্ত ও দুর্গন্ধময় স্রাব হয়।
এই ধরনের ইনফেকশন সাধারণত সহবাসের দ্বারাই সংঘটিত হয়ে থাকে। অর্থাৎ মিলনের কারণে সংক্রমণ হয়ে থাকে। এছাড়াও বাইরের থেকে কোন সংক্রমিত বস্তু যোনির সংস্পর্শে এলেও এ ধরনের যৌনাঙ্গ ইনফেকশন হয়।
৪) যোনিতে যদি ফাঙ্গাল ইনফেকশন হয় তাহলে হলুদাভ সাদা স্রাব দেখা যেতে পারে। এই ইনফেকশনের ফলে যোনিতে জ্বালা এবং চুলকানির অনুভব হতে পারে।
এছাড়াও এই স্রাব অনেকটা পচে যাওয়া দুধের মত গন্ধযুক্ত হয়। সাধারণত খুব বেশি এন্টিবায়োটিক ওষুধের প্রভাবে, ডায়াবেটিক নারীদের কিংবা যাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা অনেক কম, এই সকল নারীদের ক্ষেত্রে এই ধরনের স্রাব হতে পারে।
৫) ইনফেকশনের অন্যতম একটি উপসর্গ হচ্ছে, সবুজ স্রাব ব্যাকটেরিয়া । ব্যাকটেরিয়া ঘটিত এই ধরনের স্রাব হতে দেখা যায়।
যে ব্যক্তির গনোরিয়া কিংবা এই ধরনের রোগ রয়েছে তার সাথে যদি মিলন করেন, তাহলে যোনিতে ব্যাকটেরিয়া আক্রমণ করে থাকে (Vaginal itching and discharge)। এছাড়াও সেক্স টয় থেকেও এই ধরনের ইনফেকশন হতে পারে।
এই ধরনের vaginal discharge বা স্রাবেও যোনিতে জ্বালা এবং স্রাব দুর্গন্ধময় হয়ে থাকে।
কেন ইনফেকশন হয়? Why vaginal infection?
বিভিন্ন কারণে যৌনিতে ইনফেকশন হয়ে থাকে। যেমন- ইস্ট ইনফেকশন, ব্যাকটেরিয়াল ভেজাইনোসিস ইনফেকশন, এলার্জিজনিত অস্বস্তি বা ইনফেকশন ইত্যাদি। এই ইনফেকশন গুলো আবার মাত্রার কম বেশি হয়ে থাকে। Vaginal yeast infection, common type of vaginal infections, overview of vaginal infection, women's health issue নিয়ে নিচে আলোচনা করা হলো।
যোনিতে ইস্ট ইনফেকশন (Vaginal yeast infection)
সাধারণভাবে যৌনাঙ্গে এই ধরনের ইস্ট ইনফেকশন হওয়া খুবই সাধারণ একটি ব্যাপার । প্রায় সব ধরনের নারীরা Vaginal yeast infection ইস্ট ইনফেকশনের শিকার হয়ে থাকেন।
নারীদের ভ্যাজাইনাতে বা যোনিতে ব্যাকটেরিয়া ও ইস্ট মিলেমিশে একসাথে থাকে। এই ব্যাকটেরিয়া গুলি কিন্তু একেবারেই কোন ক্ষতি করে না। উল্টো ভ্যাজাইনার স্বাস্থ্য ভালো রাখতে এবং ইস্ট এর মাত্রা ঠিক রাখতে সাহায্য করে থাকে।
কোন কারনে যদি ব্যাকটেরিয়া ও ইষ্টের সাম্যতা গরমিল হয়, অর্থাৎ এদের মধ্যে সাম্যতা বিগ্রে গেলে ব্যাকটেরিয়া ইস্টের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারে না এটাই মূলত ইস্ট ইনফেকশন (Vaginal yeast infection)। অর্থাৎ ভেজাইনাতে ইস্টের মাত্রা বেড়ে গেলে এই ধরনের ইনফেকশন হয়ে থাকে।
এই ধরনের ইনফেকশনের জন্য আরও কিছু কারণ রয়েছে। এগুলোর কারণেও দেখা দিতে পারে এ ধরনের ইনফেকশন। যেমন:
* কোন ঔষধের প্রভাবে বা অন্য কোন কারণে। যেমন ধরেন যে সকল নারীদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম কিংবা যাদের ডায়াবেটিস রয়েছে অথবা গর্ভনিরোধক ঔষধের প্রভাবে বা শরীরের হরমোনের মাত্রা হঠাৎ তারতম ঘটলে (গর্ভাবস্থার সময়) হতে পারে (Vaginal yeast infection) যেীনিপথ ইনফেকশন।
* এই প্রকার ইনফেকশনের উপসর্গ হিসেবে ভেজাইনাতে জ্বালা ভাব ও চুলকানি হতে পারে।
* সাদা বা স্বচ্ছ ভ্যাজাইনাল ডিসচার্জও দেখা যেতে পারে এই ইনফেকশনের কারণে।
* Vaginal yeast infection খুব বেশি মাত্রায় হয়ে গেলে হলুদাভ সাদা রংয়ের দুর্গন্ধযুক্ত স্রাব তৈরি হয়ে থাকে।
* আপনার যদি এই ধরনের ইনফেকশন হয়, তাহলে সারাক্ষণ আপনি অস্বস্তিতে ভুগবেন।
ব্যাকটেরিয়াল ভেজাইনোসিস (bacterial vaginosis) ইনফেকশন
যৌনাঙ্গে খুবই কমন একটি ইনফেকশন হচ্ছে (Common type of vaginal infection) ব্যাকটেরিয়াল ভেজাইনোসিস (bacterial vaginosis) ইনফেকশন। বিশেষ করে যে সকল মেয়েরা মা হওয়ার জন্য সম্পূর্ণ তৈরি, তাদের মধ্যে এই ইনফেকশন হওয়ার আশঙ্কা বেশি দেখা যায়।
ভ্যাজাইনা বা যোনিকে বসবাসকারী উপকারী ব্যাকটেরিয়ার মাত্রা কমে গেলে বা ব্যালেন্স গড়বড় হয়ে গেলে এই ধরনের ইনফেকশন অর্থাৎ ব্যাকটেরিয়াল ভেজাইনসিস- bacterial vaginosis (B V) হামলা করে থাকে। এই ধরনের ইনফেকশন হওয়ার জন্য বিভিন্ন প্রকার কারণ থাকতে পারে। যেমন-
* কোন প্রকার কেমিক্যাল দিয়ে ভ্যাজাইনা বা যৌনি পরিস্কার করা, সহবাসে নিম্ন মানের লুব্রিক্যান্ট ব্যবহার করা, যৌনাঙ্গে সরাসরি লাগানো উচিত নয়, এমন প্রোডাক্ট ব্যবহার করা, ধূমপান করা, অস্বাস্থ্যকর যৌন মিলন ইত্যাদদির কারণে এই ধরনের ইনফেকশন হয়ে থাকে।
* এই ইনফেকশনের জন্য কিছু অজ্ঞাত কারণ রয়েছে যা এখন পর্যন্ত সঠিকভাবে জানা যায়নি। এছাড়াও কিছু ক্ষেত্রে খারাপ ডিটারজেন্ট বা সেন্ডেট প্রোডাক্ট ব্যবহারকেও এই ইনফেকশনের জন্য দায়ী মনে করা হয়।
* এই ইনফেকশনের প্রধান উপসর্গ হিসেবে জ্বালা ভাব, চুলকানি, অস্বস্তি এবং অস্বাভাবিক ঋতুস্রাব বা ভ্যাজাইনাল ডিসচার্জই প্রধান ।
* গর্ভবতী নারীদের ক্ষেত্রে এই ধরনের ইনফেকশন মারাত্মক আকার ধারণ করতে পারে। এমন কি সঠিক সময়ে লক্ষ্য না করলে এবং যথাযথ ব্যবস্থা না নিলে ক্ষতি করতে পারে গর্ভের সন্তানকেও।
* তাই গর্ভবতী মায়েদের ক্ষেত্রে এই ধরনের ইনফেকশন দেখা দেওয়ার সাথে সাথে সচেতন হতে হবে এবং ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে চিকিৎসা শুরু করতে হবে।
এলার্জিজনিত অস্বস্তি বা ইনফেকশন
সাধারণত সেন্টড প্রোডাক্ট, কোন ইনটিমেট ওয়াশ বা লুব্রিক্যান্ট সুট না করলে যৌনাঙ্গে ইনফেকশন হতে। পারে । এই ধরনের ইনফেকশন হলে খুব বেশি মারাত্মক না হলেও যোনিতে জ্বালা ভাব এবং অস্বস্তি ভালোই হয়ে থাকে।
শুধু এই করনাই নয়, মাসিকের সময় একই প্যাড দীর্ঘক্ষণ পড়ে থাকলে এ ধরনের ইনফেকশন হতে পারে। সুতরাং সচেতন থাকতে হবে Overview of vaginal infections, women's health issue সম্পর্কে।
গোপনাঙ্গ বা ভ্যাজিনাতে ইনফেকশনে কি কি করবেন?
সর্বপ্রথম কথা হচ্ছে, আপনার শরীরের যত্ন নিতে আপনাকেই সচেতন হতে হবে। আর সর্বদা মনে রাখবেন নারীদের যৌনিপথ সবে চেয়ে সেন্সেটিভ একটি অঙ্গ। আর এটিতে সমস্য হলে বা ইনফেকশন হলে অসস্থির শেষ নেই। তাই এর থেকে রেহাই পেতে নিচের পদক্ষেপগুলো নিতে পারেন।
- ভেজা, বাসি, স্যাঁতসেঁতে অন্তর্বাস পরবেন না।
- প্রতিদিন আপনার অন্তর্বাস ধুয়ে রোদে শুকিয়ে নিন।
- যোনিপথে কোনো রাসায়নিক বা পারফিউম ব্যবহার করবেন না।
- যৌনমিলনের আগে ও পরে যোনিপথ ভালোভাবে পরিষ্কার করুন।
- রাতে অন্তর্বাস পরে ঘুমাবেন না।
- আপনি যখন বাড়িতে থাকবেন, এমন পোশাক পরুন যাতে বাতাস চলাচল করতে পারে।
- মাসিকের সময় অনেক সয়মধরে একই স্যানিটারি ন্যাপকিন পরবেন না।
- বেশি করে প্রোবায়োটিক খাবার, দই ইত্যাদি খান। এসব খাবার শরীরে উপকারী ব্যাকটেরিয়ার সংখ্যা বাড়ায়।
- খাঁটি জৈব নারকেল তেল যোনির বাইরের জ্বালা কমাতে সাহায্য করতে পারে।
- টি ট্রি অয়েল এই সংক্রমণ সারাতেও বেশ কার্যকরী। কিন্তু, মনে রাখবেন এই অপরিহার্য তেল সরাসরি যোনিতে ব্যবহার করা যাবে না। নারকেল তেল বা জোজোবা তেলের সাথে সামান্য মিশিয়ে আক্রান্ত স্থানে লাগান। প্রতিদিন ব্যবহার করার দরকার নেই। প্রথমে খুব কম প্রয়োগ করুন। অস্বস্তি অতিরিক্ত হলে আর লাগাবেন না।
- পরিষ্কার গরম পানিতে কিছু আপেল সাইডার ভিনেগার মিশিয়ে যোনি ধুয়ে ফেলতে পারেন।
- ভিটামিন-সি সমৃদ্ধ খাবার খান, নিয়মিত প্রচুর পানি পান করুন।
আরো পড়ুন....
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন