মুসলিম বিবাহ গাইডলাইন মোবাইল অ্যাপ থেকে কনটেন্ট নিয়ে আজকের ইনফোটি সাজানো হয়েছে। অ্যাপের কন্টেন্টগুলো আমরা এখানে তুলে ধরেছি। এছাড়াও আপনার দৃষ্টিতে যদি কোন প্রকার ভুল চোখ পড়ে তাহলে আমাদের জানালে আমরা আপডেট করে কৃতজ্ঞ থাকবো।
ইসলামে, বিবাহ
হল বিবাহযোগ্য দুইজন নারী ও পুরুষের মধ্যে দাম্পত্য সম্পর্ক প্রনয়নের বৈধ আইনি চুক্তি
ও তার স্বীকারোক্তি।
ইসলামে কনে
তার নিজের ইচ্ছানুযায়ী বিয়েতে মত বা অমত দিতে পারে| একটি আনুষ্ঠানিক এবং দৃঢ় বৈবাহিক
চুক্তিকে ইসলামে বিবাহ হিসেবে গণ্য করা হয়, যা বর ও কনের পারষ্পারিক অধিকার ও কর্তব্যের
সীমারেখা নির্ধারণ করে|
বিয়েতে অবশ্যই
দুজন মুসলিম স্বাক্ষী উপস্থিত থাকতে হবে| ইসলামে তালাক অপছন্দনীয় হলেও এর অনুমতি আছে
এবং তা যে কোন পক্ষ হতে দেওয়া যেতে পারে|
তবে দেশ অনুযায়ী বিবাহ ও তালাক বিষয়ক আইনের কিছু ভিন্নতা আছে যা সংশ্লিষ্ট দেশের সংষ্কৃতি ও নৈতিকতার দ্বারা প্রণীত হয়।
শরীয়তে দৃষ্টিতে বিবাহ বলতে কী বুঝায়?
নারী-পুরুষ
একে অপর থেকে উপকৃত হওয়া এবং আদর্শ পরিবার ও নিরাপদ সমাজ গড়ার উদ্দেশ্যে পরস্পর চুক্তিবদ্ধ
হওয়া।
এ সংজ্ঞা
থেকে আমরা অনুধাবন করতে পারি, বিবাহের উদ্দেশ্য কেবল ভোগ নয়; বরং এর সঙ্গে আদর্শ পরিবার
ও আলোকিত সমাজ গড়ার অভিপ্রায়ও জড়িত।
বিবাহের তাৎপর্য কি?
বিবাহ
একটি বৈধ ও প্রশংসনীয় কাজ।
প্রত্যেক সামর্থ্যবান ব্যক্তির ক্ষেত্রেই এর যার গুরুত্ব
অপরিসীম। বিয়ে করা নবী-রাসূলদের (আলাইহুমুস সালাম) সুন্নাত। আল্লাহ তা‘আলা ইরশাদ
করেন,
وَلَقَدْ أَرْسَلْنَا رُسُلًا مِنْ قَبْلِكَ وَجَعَلْنَا لَهُمْ
أَزْوَاجًا وَذُرِّيَّةً
‘আর
অবশ্যই তোমার পূর্বে আমি রাসূলদের প্রেরণ করেছি এবং তাদেরকে দিয়েছি স্ত্রী ও সন্তান-সন্ততি।’
রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজে বিবাহ করেছেন এবং এর প্রতি উদ্বুদ্ধ
করতে গিয়ে বলেছেন,
أَتَزَوَّجُ النِّسَاءَ فَمَنْ رَغِبَ عَنْ سُنَّتِي فَلَيْسَ مِنِّي.
‘আমি
নারীকে বিবাহ করি। (তাই বিবাহ আমার সুন্নত) অতএব যে আমার সুন্নত
থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবে, সে আমার দলভুক্ত
নয়।’
এ
জন্যই আলিমগণ বলেছেন, সাগ্রহে বিবাহ করা নফল ইবাদতের চেয়ে উত্তম। কারণ, এর মধ্য দিয়ে
অনেক মহৎ গুণের বিকাশ ঘটে এবং অবর্ণনীয় কল্যাণ প্রকাশ পায়।
কারও
কারও ক্ষেত্রে বিবাহ করা ওয়াজিব হয়ে পড়ে। যেমন : যদি কেউ বিবাহ না করলে হারাম
কাজে লিপ্ত হওয়ার আশঙ্কা করে।
তখন
নিজেকে পবিত্র রাখতে এবং হারাম কাজ থেকে বাঁচতে তার জন্য বিয়ে করা ওয়াজিব হয়ে দাঁড়ায়। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
يَا مَعْشَرَ الشَّبَابِ مَنِ اسْتَطَاعَ الْبَاءَةَ فَلْيَتَزَوَّجْ
فَإِنَّهُ أَغَضُّ لِلْبَصَرِ وَأَحْصَنُ لِلْفَرْجِ ، وَمَنْ لَمْ يَسْتَطِعْ فَعَلَيْهِ
بِالصَّوْمِ فَإِنَّهُ لَهُ وِجَاء.
‘হে যুব সম্প্রদায়, তোমাদের মধ্যে যারা বিবাহের সামর্থ্য রাখে সে যেন বিয়ে করে। কেননা তা চক্ষুকে অবনত করে এবং লজ্জাস্থানকে হেফাযত করে। আর যে এর সামর্থ্য রাখে না, তার কর্তব্য রোযা রাখা। কেননা তা যৌন উত্তেজনার প্রশমন ঘটায়।’
সম্পর্কিত
কোর্ট ম্যারেজ কি? কোর্ট ম্যারেজ করে বিয়ে করলে কেন বিয়ে শুদ্ধ হয় না?
বিয়ের আগে একটি মেয়ে সম্পর্কে কি কি জানা জরুরী?
বিয়ে করার আগে ১০ টি বিষয় জানুন:
বিয়ে করার
বিভিন্ন বিষয় সম্পর্কে সবাইকে সচেতন হতে হবে। কেননা বর্তমানে মুসলিম হয়েও অনেকে অমুসলিমদের
আচার-আচারণ করে থাকে বিয়েতে।
একজন মুসলিম
হিসাবে কি কি বিষয় জানা জরুরী এমন ১০ টি বিষয় নিচে তুলে ধরা হলো।
১. বিয়ের প্রস্তাব এবং তার নিয়ম
কেউ
যখন কোনো নারীকে বিবাহ করতে আগ্রহী হয় তার জন্য সমীচীন হলো ওই মেয়ের অভিভাবকের
মাধ্যমে তাকে পেতে চেষ্টা করা। আর এর জন্য
রয়েছে কিছু মুস্তাহাব ও ওয়াজিব কাজ,
যা উভয়পক্ষের আমলে নেওয়া উচিত ।
এমন
ব্যক্তির পক্ষ থেকে বিয়ে করতে চাওয়া যার কাছ থেকে এমন প্রস্তাব গ্রহণ হতে পারে। এটি বিবাহ পর্ব সূচনাকারীদের প্রাথমিক চুক্তি। এটি বিবাহের ওয়াদা এবং বিবাহের প্রথম পদক্ষেপ।
২. ইস্তিখারা তথা আল্লাহর কাছে কল্যাণ কামনা করা
মুসলিম
নর-নারীর জীবনে বিবাহ একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ। তাই যখন তারা বিবাহের সিদ্ধান্ত নেবেন তাদের জন্য কর্তব্য হলো ইস্তিখারা তথা আল্লাহর কাছে কল্যাণ কামনা করা। জাবির রাদিআল্লাহ আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
عَنْ جَابِرٍ- رَضِيَ اللهُ عَنْهُ- قَالَ كَانَ النَّبِيُّ- صَلّى
اللهُ عَلَيْهِ وَ سَلَّمَ- يُعَلِّمُنَا الْاِسْتِخَارَةَ فِي الْأُمُوْرِ كُلِّهَا،
كَالسُّوْرَةِ مِنَ الْقُرْآنِ : (إِذَا هَمَّ أَحَدُكُمْ بِالْأَمْرِ فَلْيَرْكَعْ
رَكْعَتَيْنِ مِنْ غَيْرِ الْفَرِيْضَةِ، ثُمَّ يَقُوْلُ : اللّهُمَّ إنِّيْ أسْتَخِيْرُكَ
بِعِلْمِكَ، وَ أسْتَقْدِرُكَ بِقُدْرَتِكَ، وَ أسْألُكَ مِنْ فَضْلِكَ الْعَظِيْمِ،
فَإنَّكَ تَقْدِرُ وَ لآ أقْدِرُ، وَ تَعْلَمُ وَ لآ أعْلَمُ، وَ أنْتَ عَلَّامُ الْغُيُوْبِ،
اللّهُمَّ إنْ كُنْتَ تَعْلَمُ أنَّ هذَا الْأمْرَ خَيْرٌ لِّيْ فِيْ دِيْنِيْ وَ مَعَاشِيْ
وَ عَاقِبَةِ أمْرِيْ- أوْ قَالَ: فِيْ عَاجِلِ أمْرِيْ وَآجِلِه- فَاقْدُرْهُ لِيْ،
وَ إنْ كُنْتَ تَعْلَمُ أنَّ هذَا الْأمْرَ شَرٌّ لِّيْ فِيْ دِيْنِيْ وَ مَعَاشِيْ
وَ عَاقِبَةِ أمْرِيْ- أوْ قَالَ: فِيْ عَاجِلِ أمْرِيْ وَ آجِلِه- فَاصْرِفْهُ عَنِّيْ
وَ اصْرِفْنِيْ عَنْهُ، وَ اقْدُرْ لِيَ الْخَيْرَ حَيْثُ كَانَ، ثُمَّ رَضِّنِيْ بِه.
( وَ يُسَمِّيْ حَاجَتَه.)
‘যখন
তোমাদের কেউ গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে চায় সে যেন দু’রাকাত নফল নামাজ পড়ে অতপর বলে :
اللَّهُمَّ إِنِّي أَسْتَخِيرُكَ بِعِلْمِكَ وَأَسْتَقْدِرُكَ بِقُدْرَتِكَ
وَأَسْأَلُكَ مِنْ فَضْلِكَ الْعَظِيمِ فَإِنَّكَ تَقْدِرُ ، وَلاَ أَقْدِرُ وَتَعْلَمُ
، وَلاَ أَعْلَمُ وَأَنْتَ عَلاَّمُ الْغُيُوبِ اللَّهُمَّ إِنْ كُنْتَ تَعْلَمُ أَنَّ
هَذَا الأَمْرَ خَيْرٌ لِي فِي دِينِي وَمَعَاشِي وَعَاقِبَةِ أَمْرِي ، أَوْ قَالَ
عَاجِلِ أَمْرِي وَآجِلِهِ – فَاقْدُرْهُ لِي وَيَسِّرْهُ لِي ثُمَّ بَارِكْ لِي فِيهِ
وَإِنْ كُنْتَ تَعْلَمُ أَنَّ هَذَا الأَمْرَ شَرٌّ لِي فِي دِينِي وَمَعَاشِي وَعَاقِبَةِ
أَمْرِي ، أَوْ قَالَ فِي عَاجِلِ أَمْرِي وَآجِلِهِ – فَاصْرِفْهُ عَنِّي وَاصْرِفْنِي
عَنْهُ وَاقْدُرْ لِي الْخَيْرَ حَيْثُ كَانَ ثُمَّ أَرْضِنِي.
‘হে
আল্লাহ, আমি আপনার ইলমের মাধ্যমে আপনার নিকট কল্যাণ কামনা করছি। আপনার কুদরতের মাধ্যমে আপনার নিকট শক্তি কামনা করছি এবং আপনার মহা অনুগ্রহ কামনা করছি। কেননা আপনি শক্তিধর, আমি শক্তিহীন, আপনি জ্ঞানবান, আমি জ্ঞানহীন এবং আপনি অদৃশ্য বিষয় সম্পর্কে পূর্ণ জ্ঞানী। হে আল্লাহ, এই
কাজটি (এখানে উদ্দিষ্ট কাজ বা বিষয়টি উল্লেখ
করবেন) আপনার জ্ঞান মোতাবেক যদি আমার দীন, আমার জীবিকা এবং আমার পরিণতির ক্ষেত্রে অথবা ইহলোক ও পরলোকে কল্যাণকর
হয়, তবে তাতে আমাকে সামর্থ্য দিন। পক্ষান্তরে এই কাজটি আপনার
জ্ঞান মোতাবেক যদি আমার দীন, জীবিকা ও পরিণতির দিক
দিয়ে অথবা ইহকাল ও পরকালে ক্ষতিকর
হয়, তবে আপনি তা আমার থেকে
দূরে সরিয়ে রাখুন এবং আমাকেও তা থেকে দূরে
সরিয়ে রাখুন এবং কল্যাণ যেখানেই থাকুক, আমার জন্য তা নির্ধারিত করে
দিন। অত:পর তাতেই
আমাকে পরিতুষ্ট রাখুন।
৩. পরামর্শ করা
বিবাহ
করতে চাইলে আরেকটি করণীয় হলো বিয়ে ও সংশ্লিষ্ট বিষয়ে
অভিজ্ঞ, পাত্রী ও তার পরিবার
সম্পর্কে ভালো জানাশুনা রয়েছে এমন ব্যক্তির সঙ্গে পরামর্শ করা। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর সাহাবীদের সঙ্গে অধিক পরিমাণে পরামর্শ করতেন। আবূ হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
مَا رَأَيْتُ أَحَدًا أَكْثَرَ مَشُورَةً لأَصْحَابِهِ مِنْ رَسُولِ
اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ.
‘আমি
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের চেয়ে অন্য কাউকে আপন সাথীদের সঙ্গে বেশি পরামর্শ করতে দেখি নি।’
হাসান
বসরী রহ. বলেন,
ثلاثة فرجل رجل ورجل نصف رجل ورجل لا رجل فأما الرجل الرجل فذو
الرأي والمشورة وأما الرجل الذي هو نصف رجل فالذي له رأي ولا يشاور وأما الرجل الذي
ليس برجل فالذي ليس له رأي ولا يشاور
‘মানুষের
মধ্যে তিন ধরনের ব্যক্তিত্ব রয়েছে : কিছু ব্যক্তি পূর্ণ ব্যক্তিত্বসম্পন্ন, কিছু ব্যক্তি অর্ধেক ব্যক্তিত্বসম্পন্ন এবং কিছু ব্যক্তি একেবারে ব্যক্তিত্বহীন। পূর্ণ ব্যক্তিত্বসম্পন্ন ব্যক্তি সেই, যিনি সিদ্ধান্ত নিতে পারেন এবং পরামর্শও করেন। অর্ধেক ব্যক্তিত্বসম্পন্ন সেই, যিনি সিদ্ধান্ত নিতে পারেন তবে পরামর্শ করেন না। আর ব্যক্তিত্বহীন ব্যক্তি
তিনিই, যিনি সিদ্ধান্ত নিতে পারেন না আবার কারো
সঙ্গে পরামর্শও করেন না।’
এদিকে
পরামর্শদাতার কর্তব্য বিশ্বস্ততা রক্ষা করা। তিনি যেমন তার জানা কোনো দোষ লুকাবেন না, তেমনি অসদুদ্দেশে আদতে নেই এমন কোনো দোষের কথা বানিয়েও বলবেন না। আর অবশ্যই এ
পরামর্শের কথা কাউকে বলবেন না।
৪. পত্র-পাত্রী দেখা
জাবের ইবন আবদুল্লাহ রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
إِذَا خَطَبَ أَحَدُكُمُ الْمَرْأَةَ فَقَدَرَ عَلَى أَنْ يَرَى
مِنْهَا مَا يُعْجِبُهُ وَيَدْعُوهُ إِلَيْهَا فَلْيَفْعَلْ. قَالَ جَابِرٌ : فَلَقَدْ
خَطَبْتُ امْرَأَةً مِنْ بَنِى سَلِمَةَ فَكُنْتُ أَتَخَبَّأُ فِى أُصُولِ النَّخْلِ
حَتَّى رَأَيْتُ مِنْهَا بَعْضَ مَا أَعْجَبَنِى فَتَزَوَّجْتُهَا.
‘তোমাদের
কেউ যখন নারীকে বিবাহের প্রস্তাব দেয়, অতপর তার পক্ষে যদি ওই নারীর এতটুকু
সৌন্দর্য দেখা সম্ভব হয়, যা তাকে মুগ্ধ
করে এবং মেয়েটিকে (বিবাহ করতে) উদ্বুদ্ধ করে, সে যেন তা
দেখে নেয়।’
অপর
এক হাদীসে রয়েছে, আবূ হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
كُنْتُ عِنْدَ النَّبِىِّ -صلى الله عليه وسلم- فَأَتَاهُ رَجُلٌ
فَأَخْبَرَهُ أَنَّهُ تَزَوَّجَ امْرَأَةً مِنَ الأَنْصَارِ فَقَالَ لَهُ رَسُولُ اللَّهِ
-صلى الله عليه وسلم- « أَنَظَرْتَ إِلَيْهَا ». قَالَ لاَ. قَالَ « فَاذْهَبْ فَانْظُرْ
إِلَيْهَا فَإِنَّ فِى أَعْيُنِ الأَنْصَارِ شَيْئًا ».
‘আমি
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে ছিলাম। এমতাবস্থায় তাঁর কাছে এক ব্যক্তি এসে
জানাল যে সে একজন
আনসারী মেয়েকে বিয়ে করেছে। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে জিজ্ঞেস করলেন, ‘তুমি কি তাকে দেখেছো?’
সে বললো, না। তিনি বললেন, যাও, তুমি গিয়ে তাকে দেখে নাও। কারণ আনসারীদের চোখে (সমস্যা) কিছু একটা রয়েছে’।’
ইমাম
নববী রহ. বলেন, ‘এ হাদীস থেকে
জানা যায়, যাকে বিবাহ করতে ইচ্ছুক তাকে দেখে নেয়া মুস্তাহাব।’
৫. ছবি বা ফটো বিনিময় করা বৈধ নয়
নারী-পুরুষ
কারো জন্য কোনোভাবে কোনো ছবি বা ফটো বিনিময় বৈধ নয়। কারণ, প্রথমত. এ ছবি অন্যরাও
দেখার সম্ভাবনা রয়েছে, যাদের জন্য তা দেখার অনুমতি নেই।
দ্বিতীয়ত.
ছবি কখনো পূর্ণ সত্য তুলে ধরে না। প্রায়শই এমন দেখা যায়, কাউকে ছবিতে দেখে বাস্তবে
দেখলে মনে হয় তিনি একেবারে ভিন্ন কেউ।
তৃতীয়ত.
কখনো এমন হতে পারে যে প্রস্তাব ফিরিয়ে নেয়া হয় বা প্রত্যাখ্যাত হয় অথচ ছবি সেখানে
রয়েই যায়। ছবিটিকে তারা যাচ্ছে তাই করতে পারে।
৬. বিবাহর আগে প্রস্তাবকারীর আগে বাহিরে বের হওয়া
বিয়ের আগে
প্রস্তাব দেয়া নারীর সঙ্গে নির্জন অবস্থান বা তার সঙ্গে ঘুরতে যাওয়া বৈধ নয়। কেননা,
এখনো সে বেগানা নারীই রয়েছে।
পরিতাপের
বিষয়, আজ অনেক মুসলমানই তার মেয়েকে লাগামহীন ছেড়ে দিয়েছেন। ফলে তারা প্রস্তাবদানকারী
পুরুষের সঙ্গে ঘরের বাইরে যায়! উপরন্তু তার সঙ্গে সফরও করে! ভাবখানা এমন যে মেয়েটি
যেন তার স্ত্রী হয়ে গেছে।
৭. বর-কনের পারস্পরিক যোগাযোগ করা
প্রস্তাব
দেয়া নারীর সঙ্গে ফোন বা মোবাইলে এবং চিঠি ও মেইলের মাধ্যমে শুধু বিবাহের চুক্তি ও
শর্তাদি বোঝাপড়ার জন্য যোগাযোগের অনুমতি রয়েছে।
তবে এ যোগাযোগ
হতে হবে ভাব ও আবেগবিবর্জিত ভাষায়, যা একজন বেগানা নারী-পুরুষের জন্য বৈধ ভাবা হয়
না।
আর বলাবাহুল্য,
বিবাহের প্রস্তাব প্রেরণকারী কনের কেউ নন, যাবৎ না তারা বিবাহের বন্ধনে আবদ্ধ হয়।
উল্লেখ্য, এ যোগাযোগ উভয়ের পিতার সম্মতিতে হওয়া শ্রেয়।
৮. একজনের প্রস্তাবের ওপর অন্যজনের প্রস্তাব না দেয়া
যে
নারীর কোথাও বিয়ের কথাবার্তা চলছে তাকে বিয়ের প্রস্তাব দেয়া বৈধ নয়। আবূ হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
لاَ يَخْطُبُ الرَّجُلُ عَلَى خِطْبَةِ أَخِيهِ حَتَّى يَنْكِحَ
، أَوْ يَتْرُكَ.
‘কেউ
তার ভাইয়ের প্রস্তাবের ওপর যেন প্রস্তাব না দেয়, যাবৎ
না সে তাকে বিবাহ
করে অথবা প্রস্তাব প্রত্যাহার করে নেয়।’
হ্যা,
দ্বিতীয় প্রস্তাবদাতা যদি প্রথম প্রস্তাবদাতার কথা না জানেন তবে
তা বৈধ। এ ক্ষেত্রে ওই
নারী যদি প্রথমজনকে কথা না দিয়ে থাকেন
তবে দু’জনের মধ্যে
যে কাউকে গ্রহণ করতে পারবেন।
৯. ইদ্দতে থাকা নারীকে প্রস্তাব দেয়া
বায়ান
তালাক বা স্বামীর মৃত্যুতে
ইদ্দত পালনকারী নারীকে সুস্পষ্ট প্রস্তাব দেয়া হারাম। ইঙ্গিতে প্রস্তাব দেয়া বৈধ। কেননা, আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
وَلَا جُنَاحَ عَلَيْكُمْ فِيمَا عَرَّضْتُمْ بِهِ مِنْ خِطْبَةِ
النِّسَاءِ
‘আর
এতে তোমাদের কোন পাপ নেই যে, তোমরা নারীদেরকে ইশারায় যে প্রস্তাব করবে।’
তবে
‘রজঈ’ তালাকপ্রাপ্তা নারীকে সুস্পষ্টভাবে তো দূরের কথা
আকার-ইঙ্গিতে প্রস্তাব দেয়াও হারাম। তেমনি এ নারীর পক্ষে
তালাকদাতা ব্যক্তি ছাড়া অন্য কারও প্রস্তাবে সাড়া দেয়াও হারাম। কেননা এখনো সে তার স্ত্রী
হিসেবেই রয়েছে।
(সুস্পষ্ট
প্রস্তাব : যেমন এ কথা বলা,
আমি তোমাকে বিয়ে করতে চাই। অস্পষ্ট প্রস্তাব : যেমন এ কথা বলা,
আমি তোমার মতো মেয়েই খুঁজছি ইত্যাদি বাক্য।)
১০. এ্যাংগেজমেন্ট করা
ইদানীং পাশ্চাত্য
সভ্যতার অনুকরণে বিয়েতে এ্যাংগেজমেন্ট করার রেওয়াজ ব্যাপকতা পেয়েছে। এই আংটি পরানোতে
যদি এমন ধরে নেওয়া হয় যে এর মাধ্যমে বিবাহের কথা পাকাপোক্ত হয়ে গেল তবে তা শরীয়তের
দৃষ্টিতে হারাম।
কেননা, মুসলিম
সমাজ বা শরীয়তে এর কোনো ভিত্তি নেই। আরও নিন্দনীয় ব্যাপার হলো, এ আংটি প্রস্তাবদানকারী
পুরুষ নিজ হাতে কনেকে পরিয়ে দেয়।
কারণ, এ পুরুষ
এখনো তার জন্য বেগানা। এখনো সে মেয়েটির স্বামী হয়নি। কেননা, কেবল বিবাহ চুক্তি সম্পাদিত
হবার পরেই তারা স্বামী-স্ত্রী বলে গণ্য হবেন।
১১. উপযুক্ত পাত্রের প্রস্তাব নাচক করা
উপযুক্ত
পাত্র পেলে তার প্রস্তাব নাকচ করা উচিত নয়। আবূ হুরায়রা রাদিআল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
إِذَا خَطَبَ إِلَيْكُمْ مَنْ تَرْضَوْنَ دِينَهُ وَخُلُقَهُ فَزَوِّجُوهُ
إِلاَّ تَفْعَلُوا تَكُنْ فِتْنَةٌ فِى الأَرْضِ وَفَسَادٌ عَرِيضٌ.
‘যদি
এমন কেউ তোমাদের বিয়ের প্রস্তাব দেয় যার ধার্মিকতা ও চরিত্রে তোমরা
সন্তুষ্ট তবে তোমরা তার সঙ্গে বিয়ে দিয়ে দেবে। যদি তা না করো
তবে পৃথিবীতে ব্যাপক অরাজতা সৃষ্টি হবে।’
প্রিয়
পাঠক-পাঠিকা, আজ আমাদের ভেবে
দেখা দরকার, ইসলামের আদর্শ কোথায় আর আমরা কোথায়।
ইসলাম কী বলে আর
আমরা কী করি।
আমরা
কি অস্বীকার করতে পারি যে, এসব আদর্শ আজ আমাদের আমলের
বাইরে চলে গেছে। আমাদের যাপিত জীবনে ইসলামের বিমল রঙ ফিকে হয়ে
এসেছে। সত্যি কথা বলতে গেলে, আমরা বরং বর্জনীয় কাজগুলো করি আর করণীয়গুলো ভুলে
থাকি।
আল্লাহ
মাফ করুন। এ কারণেই আমাদের
বিয়ে-শাদীতে বরকত নেই।
বিবাহিত জীবনে সুখ নেই। দাম্পত্য জীবনের সুখ আজ সোনার হরিণে
পরিণত হয়েছে। প্রকৃত সুখের পরশ পেতে হলে, সুখ পাখির আগুন ডানা ছুঁতে হলে আজ আমাদের তাই
ইসলামের কাছেই ফিরে আসতে হবে।
ইসলামের আদর্শকেই আকড়ে ধরতে হবে। শুধু কনে দেখা আর বিয়ে-শাদীতেই
নয়; জীবনের প্রতিটি কর্মে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে আদর্শ হিসেবে গ্রহণ করতে হবে।
মুখে
নয়; কাজে পরিণত করতে হবে তাঁর উম্মত দাবী। আল্লাহ তা’আলা আমাদের
সবাইকে তাঁর যাবতীয় আদেশ এবং তাঁর রাসূলের সকল আদর্শ মেনে চলার তাওফীক দিন। আমীন।
প্রশ্নঃ হিন্দু ও মুসলিমের মধ্যে বিয়ে কি বৈধ?
উত্তর:
ইসলাম নারী-পুরুষের মধ্যে বিবাহ বন্ধনকে বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছে। ইসলাম ধর্মে বিয়ে করা এত বেশি জরুরি
যে, এ সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ
(সা.) বলেছেন: বিয়ে আমার সুন্নত এবং যে এ বিষয়কে
এড়িয়ে যাবে (অর্থাত বিয়ে করবে না) সে আমার উম্মত
নয়।
বিবাহ
বন্ধনের মাধ্যমে নারী ও পুরুষ তাদের
জীবন সঙ্গী বেছে নেন এবং এর মাধ্যমে একটি
পরিবার গঠিত হয়। এই পরিবারে ছায়াতলেই
নীতি-নৈতিকতা ও গভীর ধর্মীয়
বিশ্বাস নিয়ে বেড়ে ওঠে ভবিষ্যত প্রজন্ম।
আর
ইসলাম যেহেতু পূর্ণাঙ্গ জীবন বিধান, তাই পরিবার গঠনের ক্ষেত্রে তার রয়েছে সুনির্দিষ্ট দিক-নির্দেশনা। যে নারী ও
পুরুষের মিলনে পরিবার গঠিত হবে তাদের ধর্মীয় বিশ্বাসের ওপর ইসলাম বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছে। অর্থাত জীবন সঙ্গী বা সঙ্গিনী বেছে
নেয়ার ক্ষেত্রে ‘ইসলাম ধর্মে গভীর বিশ্বাস থাকা’ একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। বিষয়টি এতটাই গুরুত্বপূর্ণ যে মহান আল্লাহ
পবিত্র কুরআনে বলেছেন:
وَلاَ تَنكِحُواْ الْمُشْرِكَاتِ حَتَّى يُؤْمِنَّ وَلأَمَةٌ مُّؤْمِنَةٌ
خَيْرٌ مِّن مُّشْرِكَةٍ
“আর
তোমরা মুশরিক নারীদের বিয়ে করো না,যতক্ষণ না
তারা ঈমান আনে। মুশরিক নারী তোমাদের দৃষ্টিতে সুন্দরী মনে হলেও মু’মিন ক্রীতদাসী
মুশরিক নারীর চেয়ে উত্তম।” (সুরা বাকারা-২২১)
এ
আয়াতে মহান আল্লাহ মু’মিন নারীকে
বিয়ে করার নির্দেশ দিয়ে বলছেন, যদি ঈমানদার নারী পাওয়া না যায় তাহলে
মু’মিন দাসীকে বিয়ে করতে হবে। কারণ, মুশরিক নারীর চেয়ে মু’মিন দাসী
উত্তম। এর কারণ হচ্ছে,
মুশরিক কিংবা মুর্তিপুজক নারীর সঙ্গে পরিবার গঠন করে ওই পরিবার থেকে
নেক সন্তান আশা করা যায় না।
হিন্দু
বা মুশরিক নারী শিশুকাল থেকে তার পরিবারে মুর্তিপূজার যে প্রচলন দেখে
এসেছে তা তার জীবনের
অংশ হয়ে গেছে। মনে-প্রাণে সে ওই ধর্মবিশ্বাসকে
ধারণ করেছে। ওই বাতিল বা
মিথ্যা বিশ্বাস তার চোখের সামনে এমন একটি আবরণ তৈরি করে দিয়েছে যার ফলে তার পক্ষে সত্য এবং ইসলামের আবেদন উপলব্ধি করা কঠিন।
এমন
একজন নারী তার কথা-বার্তা, আচার-আচরণ দিয়ে তার আশপাশের লোকজনকে নিজের ধর্মবিশ্বাসের দিকে টেনে নেয়ার চেষ্টা করে; যে বিশ্বাস মানুষকে
জাহান্নামের দিকে নিয়ে যায়। এ বিষয়টি একজন
মুসলমানের জন্য কোনো অবস্থায়ই কাম্য হতে পারে না।
পক্ষান্তরে
একজন মুসলিম পুরুষ আল্লাহকে মেনে চলে এবং তাকে ভয় করে। এ
ছাড়া, একজন প্রকৃত মুসলমানের কাজ হচ্ছে নিজের আচার-আচরণের মাধ্যমে মুশরিকদেরকে ইসলামের পথে দাওয়াত দেয়া।
কোনো
মুসলিম পুরুষ যদি হিন্দু নারীকে বিয়ে করে তাহলে তাদের দু’জনের মধ্যে
এই চিন্তা ও আচার-আচরণগত
বিশাল পার্থক্য তাদের মধ্যে চরম মতানৈক্য সৃষ্টি করবে। তাদের মধ্যকার এ মতপার্থক্য দিন
দিন বেড়ে যাবে এবং তা ঝগড়া-বিবাদে
রূপ নেবে। এ অবস্থায় পারিবারিক
অশান্তি ও কলহ অনিবার্য
হয়ে পড়বে। এ ধরনের একটি
পরিবারে যে সন্তান বেড়ে
উঠবে সে কোনো অবস্থায়ই
মু’মিন কিংবা আল্লাহর নেক বান্দা হতে পারবে না।
এ
কারণে, ইসলামের বিশিষ্ট ফকীহগণ হিন্দুসহ সব মুশরিক নারী
ও পুরুষের সঙ্গে মু’মিন পুরুষ
ও নারীর বিয়েকে হারাম বলে ঘোষণা দিয়েছেন।
অবশ্য
এখানে একটি বিষয় স্পষ্ট আর তা হলো,
একজন মুসলমানের কাছে তার ধর্মীয় বিশ্বাস এত বেশি গুরুত্বপূর্ণ
যে, সে পার্থিব জীবনের
জন্য যা কিছু চায়
তার সবকিছুই ওই ধর্মবিশ্বাসকে বিকশিত
করার পাথেয় হিসেবে চায়। সে ইসলামের জন্য
সবকিছু বিলিয়ে দেয় এবং যে কোন মূল্যে
দ্বীন ইসলাম প্রচার করে। এ ধরনের কোনো
ব্যক্তি যদি কোনো হিন্দু বা মুশরিক নারীকে
ভালোবেসে থাকে তাহলে তাকেও ইসলামের দাওয়াত দেয়া তার কর্তব্য।
এ
অবস্থায় ওই নারী যদি
ইসলামের সুমহান আহ্বানে সাড়া দিয়ে মুসলমান হয়ে যায়, তাহলে সে একদিকে একজন
মুশরিককে ইসলাম ধর্মে দীক্ষিত করার সওয়াব পাবে এবং অন্যদিকে তার সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হতেও তার আর কোন বাধা
থাকবে না।
সুত্র:
সূরা
বাকারা, ২২১নং আয়াত
মোহাম্মদ
হোসেন তাবাতায়ী, তাফসিরুল মিজান, ২খ: পৃ:২০৯, বিরুত,
১ম প্রকাশনা ১৪১৭
ইমাম
খোমেনী (রহ:)’র ফতোয়ার বই
তাহরিউল ওসিলা,পৃ:২৫২
রেডিও
তেহরান/এএস/এমআই/১২
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন