জমি ক্রয়-বিক্রয়ের ক্ষেত্রে মৌজা বিডিং পদ্ধতি নেই। এর পরিবর্তে, যে দামে জমি ক্রয়-বিক্রয় করা হবে সেটিই হবে জমির রেজিস্ট্রেশন বা দলিল। অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বাজার দরে জমি ক্রয়-বিক্রয়ের একটি কার্যকর পদ্ধতি নিয়ে আসার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। অর্থপাচার ও সন্ত্রাসে অর্থায়ন রোধে বিভিন্ন নির্দেশনা ও নীতিমালা প্রণয়ন ও বাস্তবায়নে গঠিত জাতীয় সমন্বয় কমিটির বৈঠকে অর্থমন্ত্রী এ সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেন।
বৈঠকটি অনলাইনে অনুষ্ঠিত হয়। নতুন ব্যবস্থা নির্ধারণের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব শেখ মোহাম্মদ সেলিম উল্লাহকে। তিনি ভূমি মন্ত্রণালয়ের কাজ করবেন; নিবন্ধন অধিদপ্তর; আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয় এবং জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সঙ্গে সমন্বয় করে।
বেশি দামের জমি কম দামে দলিল করে বিদেশে পাচার
বৈঠকে অংশ নেওয়া একাধিক কর্মকর্তা জানান, ওই দিন অর্থমন্ত্রী বলেন, বিপুল পরিমাণ বৈধ অর্থ অবৈধ হওয়ায় উচ্চমূল্যের জমি অনেক কম দামে দেখানো হয়, যা পরবর্তীতে বিদেশে পাচার করা হয়। বিষয়টি নিয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ একাধিক বৈঠক করেও কোনো সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পারেনি। দেশের বাইরে পাচার হওয়া অর্থ উদ্ধারের চেয়ে চোরাচালান রোধ করা ভালো।
বৈধ সম্পদ যখন অবৈধ
জমি রেজিস্ট্রেশন বাজারভিত্তিক হলে অর্থ পাচার কমে যাবে। বৈঠকে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আবদুর রউফ তালুকদার বলেন, জমি রেজিস্ট্রেশনের সময় প্রকৃত মূল্য না দেখানোর কারণে অনেক সময় বৈধ অর্থ অবৈধ হয়ে যায়। বাজারভিত্তিক লেনদেনের মাধ্যমেই এ সমস্যার সমাধান সম্ভব।
ভূমি রেজিস্ট্রেশনে বর্তমানে ১.৫ শতাংশ স্ট্যাম্প ডিউটি, ১ শতাংশ রেজিস্ট্রেশন ফি, ৩ শতাংশ স্থানীয় সরকার কর এবং এলাকাভেদে ১ থেকে ৫ শতাংশ মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) দিতে হয়। কোনো কোম্পানি জমি ও ফ্ল্যাট ক্রয় বা বিক্রি করলে অতিরিক্ত ৪ শতাংশ উইথহোল্ডিং ট্যাক্স যোগ করা হয়। জানতে চাইলে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব শেখ মোহাম্মদ সলিম উল্লাহ সম্প্রতি বলেন, দায়িত্ব দেওয়া হলেও তিনি এ বিষয়ে এখন পর্যন্ত কোনো বৈঠক করেননি, তবে শিগগিরই সংশ্লিষ্ট সবার সঙ্গে বৈঠক করবেন।
ভূমি সংক্রান্তু বিভিন্ন তথ্য
ভূমি বিষয়ে কোন কোন বিষয় জানা জরুরী?
জমি বেদখল হলে উদ্ধার করার উপায় কি?
জমির খতিয়ান অনলাইনে পাবেন কিভাবে?
মৌজা হারে জমি ক্রয়-বিক্রয়
বর্তমানে মৌজা দর (রেট) অনুযায়ী জমি ক্রয়-বিক্রয় বা রেজিস্ট্রি করা হয়। মৌজা হার মানে সর্বনিম্ন মূল্য অর্থাৎ মৌজা হারের চেয়ে কম দাম দেখিয়ে কেউ জমি ক্রয়-বিক্রয় করতে পারবে না। মৌজার হার 'ন্যূনতম বাজারমূল্য বিধি' অনুযায়ী নির্ধারিত হয়। সারাদেশে বিভিন্ন এলাকায় মৌজার হার সর্বশেষ 2016 সালে নির্ধারণ করা হয়েছিল, সেই হারে এখনও নিবন্ধন চলছে।
নিয়ম অনুযায়ী বাজারদর নির্ধারণ করে একটি কমিটি। কমিটির মাধ্যমে প্রতি দুই বছর অন্তর বাজারদর হালনাগাদ করা হয়। এই ক্ষেত্রে, একটি নির্দিষ্ট সময়ের (22 মাস) নথিতে উল্লিখিত মূল্যের গড় করে নতুন হার নির্ধারণ করা হয়। পরে মৌজার দাম চূড়ান্ত করেন ভূমি নিবন্ধন অধিদফতরের মহাপরিদর্শক।
নিবন্ধন অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, ঢাকায় গুলশান সাব-রেজিস্ট্রার কার্যালয়ের অধীনে ১৪টি মৌজা রয়েছে। এই ১৪টি মৌজায় ৮ ধরনের জমি রয়েছে। মৌজা হার অনুযায়ী এ এলাকার ১ শতাংশ জমির দাম ১ লাখ টাকা থেকে ৫৮ লাখ টাকা। কিন্তু গুলশানের কোথাও কোটি টাকার নিচে কেনা-বেচা ১ শতাংশ জমি নেই। ধানমন্ডি এলাকার মৌজা মূল্য অনুযায়ী ১ শতাংশ জমির দাম ৪৩ লাখ ৯৩ হাজার ৩০০ টাকা। কিন্তু বাস্তবে ধানমন্ডির কোথাও এ দামে জমি বিক্রি হয় না।
ভূমি রেজিস্ট্রেশনে বর্তমানে ১.৫ শতাংশ স্ট্যাম্প ডিউটি, ১ শতাংশ রেজিস্ট্রেশন ফি, ৩ শতাংশ স্থানীয় সরকার কর এবং এলাকাভেদে ১ থেকে ৫ শতাংশ মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) দিতে হয়। কোনো কোম্পানি জমি ও ফ্ল্যাট কিনলে আরও ৪ শতাংশ উইথহোল্ডিং ট্যাক্স যোগ করা হয়।
রেজিস্ট্রেশন অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, জমি রেজিস্ট্রেশন থেকে সরকার বছরে ৭,০০০ থেকে ৮,০০০ কোটি টাকা আয় করে। বাজারমূল্য ব্যবস্থা বাস্তবায়িত হলে এ খাত থেকে সরকারের আয় বাড়বে এবং দ্বিগুণের কাছাকাছি হবে। ২০১৬ সাল থেকে এ বিষয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ চারটি বৈঠক করলেও কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেয়নি।
আরো জানুন:
বিভিন্ন আকৃতির জমি পরিমাপ করার পদ্ধতি কি?
অনলাইনে জমির খাজনা পরিশোধ কিভাবে করবেন?
দলিল ক্রয় করার আগে ও পরে করণীয় কি?
কালো টাকা তৈরি
দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) 23 জুলাই, 2020 তারিখে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে একটি চিঠি জারি করে যে জমির প্রকৃত বাজার মূল্য এবং মৌজার মূল্যের মধ্যে পার্থক্য দুর্নীতিকে উত্সাহিত করে। এটি বাজার মূল্যের নিয়ম সংশোধনের সুপারিশ করেছে। সরকারি ক্রয় কমিটির বৈঠক শেষে অর্থমন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, বর্তমানে প্রতিটি মৌজার মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে, এর বেশি মূল্য নিবন্ধন করা যাবে না। সেখানে কালো টাকা তৈরি হয়।
অর্থমন্ত্রী সম্প্রতি এ প্রসঙ্গে বলেছেন, 'মানি লন্ডারিং রোধে বাজারভিত্তিক ভূমি নিবন্ধন ব্যবস্থার কোনো বিকল্প নেই। আমরা কাজটি করতে বদ্ধপরিকর। এতে সরকারের আয় বাড়বে, মানুষের দুর্ভোগ কমবে এবং অপ্রকাশিত আয়ের উৎস কমবে।
তথ্যসুত্র: প্রথমালো।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন