বর্তমানে আমরা যে যুগে বসবাস করছি এই যুগটাকে বলা হচ্ছে তথ্য-প্রযুক্তির যুগ। আর এটিতে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা রাখছে কম্পিউটার। কম্পিউটার সম্পর্কে আমরা ইতিপূর্বে আলোচনা করেছি। আজকে আমরা আলোচনা করবো "ক্লাউড কম্পিউটিং কি? ক্লাউড কম্পিউটিং ব্যবহােরর সুবিধা ও অসুবিধা কি?" সম্পর্কে।
ক্লাউড কম্পিউটিং এমন একটি ব্যবস্থা যার মাধ্যমে আপনি বিশ্বের যে কোন স্থানে বসে কাজ করতে পারেন। এই সিস্টেমের বড় সুবিধা হচ্ছে আপনার অ্যাপ বা ফাইল নষ্ট হওয়া কিংবা সিস্টেম ক্রাশ হওয়ার সম্ভবনা থাকে না।
(toc) #title=(ইনফোটি এক নজরে দেখুন)
আরো জানুন:
পৃথিবীর সবচেয়ে প্রাচীন কম্পিউটার
ওয়েব হোস্টিং কি? এর ধরণ, প্রকার ও কেনার নিয়ম কি?
র্যাম কি? কোন ধরণের র্যাম ব্যবহার করবেন?
ক্লাউড কম্পিউটিং কি?
ক্লাউড কম্পিউটিং হলো একটি ইন্টারনেট ভিত্তিক ব্যাবসায়িক মডেল। এখানে কম্পিউটার রিসোর্স যেমন- কম্পিউটার হার্ডওয়্যার ও সফটওয়্যার, নেটওয়ার্ক ডিভাইস ইত্যাদি ব্যবহার করে কোন সার্ভিস বা পরিসেবা প্রদান করা।
এক কথায়, ইন্টারনেট ভিত্তিক ব্যাবসায়িক উদ্দেশে কম্পিউটিং পরিসেবা প্রদান করাকে ক্লাউড কম্পিউটিং বলে।
ক্লাউড কম্পিউটিং নির্দিষ্ট কোন টেকনোলজি নয়, কয়েকটি টেকনোলজির সমন্বয়ে তৈরি করা বিশেষ ব্যবসায়িক মডেল বা পরিসেবা। গ্রাহকের চাহিদা অনুযায়ী বিভিন্ন পরবসেবা প্রদান করা হয়।
উইকিপিডিয়ার তথ্য অনুযায়ী মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব স্ট্যান্ডার্ডস এন্ড টেস্টিং (NIST) অনুসারে ক্লাউড কম্পিউটিং এর সংজ্ঞা নিম্নরূপ-
"Cloud computing is a model for enabling ubiquitous, convenient, on-demand network access to a shared pool of configurable computing resources (e.g., networks, servers, storage, applications, and services) that can be rapidly provisioned and released with minimal management effort or service provider interaction."
অর্থাৎ বিভিন্ন ধরনের রিসোর্স যেমন- নেটওয়ার্ক, সার্ভার, স্টোরেজ, প্রোগ্রাম ও সেবা প্রভৃতি সহজে, ক্রেতার সুবিধা মতো, চাহিবামাত্র ও চাহিদা অনুযায়ী ব্যবহার করার সুযোগ প্রদান বা ভাড়া দেয়ার সিস্টেমই হলো ক্লাউড কম্পিউটিং।
ক্লাউড কম্পিউটিং পরিসেবা গ্রহণ করতে কি জানা জরুরী?
আসলে এই পরিসেবা গ্রহণ করতে এটি কিভাবে কাজ করে বা এর প্রসেসিং সম্পর্কে জানা প্রয়োজন নেই। যেমন-আমরা বিদ্যুৎ ব্যবহার করার জন্য বিদ্যুৎ সংযোগ গ্রহন করি। কিন্তু বিদ্যুৎ কিভাবে কাজ করে বা কিভাবে কিভাবে বিদ্যুৎ সংগ্রহ করা হয তা জানা প্রয়োজন হয় না।
তাই, ক্লাউড কম্পিউটিং পরিসেবা গ্রহণ করতে বা ব্যবহার করতে এই বিষয়ে গভীরভাবে জানা জরুরী নয়।
ক্লাউড কম্পিউটিং এর বৈশিষ্ট্য
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল সরকারের বাণিজ্য বিভাগের অধীনস্থ ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ স্ট্যান্ডার্ডস অ্যান্ড টেকনোলজি দ্বারা সংজ্ঞায়িত ক্লাউড কম্পিউটিংয়ের নিম্নলিখিত ৫টি প্রধান বৈশিষ্ট্য বর্ণনা করেছেন-
১। On-demand Self-service: ক্রেতা চাহিবা মাত্রই সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান সার্ভিস বা সেবা দিতে পারবে। ক্রেতা তার ইচ্ছামতো যখন খুশি তার চাহিদা বাড়াতে কমাতে পারবে। যেমন- ক্রেতা সার্ভার ব্যবহারের সময়, নেটওয়ার্ক স্টোরেজ প্রভৃতি তার চাহিদা বা প্রয়োজন অনুযায়ী পরিবর্তন করতে পারবে।
২। Broad Network Access: ক্রেতা একটা স্ট্যান্ডার্ড বা সার্বজনীন প্রযুক্তিতে ব্যবহারযোগ্য ভিন্ন ভিন্ন পরিবেশ কিংবা ভিন্ন ধরনের প্রযুক্তি পণ্য ব্যবহার করে নেটওয়ার্ক ব্যবহার করতে সক্ষম হবে হবে। যেমন- ব্যবহারকারী একই সাথে মোবাইল ফোন, ট্যাবলেট, ল্যাপটপ, ওয়ার্কস্টেশন প্রভৃতি ডিভাইস ব্যবহার করার সুবিধা পাবে।
৩। Resource Pooling: ব্যবহারকারীর প্রয়োজন অনুযায়ী নেটওয়ার্ক রিসোর্স যেমন- কম্পিউটার হার্ডওয়্যার, সফটওয়্যার, নেটওয়ার্ক ডিভাইস প্রভৃতি সংস্থাপন, পরিবর্তন বা আপগ্রেট করতে পারবে।
৪৷ Rapid Elasticity: ব্যবহারকারী যেকোনো সময় তার চাহিদার প্রেক্ষিতে অভ্যন্তরীণ ও বাহ্যিক যেকোনো সুযোগ-সুবিধা, সেবার পরিধি, প্রভৃতি দ্রুত ও যথোপযুক্তভাবে নির্ধারণ করা বা পরিবর্তন করার ক্ষমতা রাখতে পারবে। অনেকক্ষেত্রে এটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে সম্পপাদন করার ব্যবস্থা রাখা যায়।
৫। Measured Service: বিভিন্ন পর্যায়ে ক্লাউড কম্পিউটিং ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণ ও রক্ষণাবেক্ষেণের কাজ স্বয়ংক্রিয়ভাবে করা যায়। যেমন- স্টোরেজ প্রসেসিং, নেটওয়ার্ক ব্যান্ডউইথ, ইউজার অ্যাকাউন্ট প্রভৃতি কাজ সহজভাবে ও স্বয়ংক্রিয়ভাবে সম্পন্ন করা যায়। বিভিন্ন রিসোর্সের কাজ, ক্ষমতা ও ব্যবহারের মাত্রা নিরূপণ প্রভৃতি কাজ সার্ভিস প্রোভাইডার ও ব্যবহারকারী উভয়ই দিক থেকে পর্যবেক্ষণ ও নিয়ন্ত্রণ করা যায়।
ক্লাউড কম্পিউটিং এর সুবিধাঃ
# অপারেটিং কস্ট বা ম্যানেজমেন্ট কস্ট রিডাকশন:
বড় কোম্পানি ক্লাউডে কম্পিউটার ভাড়া দিলে স্থানীয় মেশিন ব্যবহার করার খরচ অর্ধেক হবে। তার উপরে, সুবিধা হল যে একটি উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন কম্পিউটার চালানোর জন্য অতিরিক্ত শক্তি খরচ বা কম্পিউটার রুম ঠান্ডা রাখার প্রয়োজন হয় না। কয়েকটি কম-কনফিগারেশন মেশিন এবং উচ্চ-গতির ইন্টারনেট যা অফিসে প্রয়োজন।
ক্লাউডে ভার্চুয়াল মেশিনগুলি স্ট্যান্ডার্ড অফিস কম্পিউটারের সাথে অ্যাক্সেস করা যেতে পারে। যেহেতু মেশিনগুলো লিজিং কোম্পানির অধীনে, তাই রক্ষণাবেক্ষণের ঝামেলা ও খরচের প্রয়োজন নেই। এ ছাড়া যেকোনো সময় অফিস বন্ধ থাকলে ক্লাউড মেশিন ব্যবহারের প্রয়োজন নেই।
কারণ ক্লাউড কম্পিউটিং একটি নো-ইউজ-নো-পে মডেল।
# স্টার্ট-আপ খরচ হ্রাস:
সাধারণত, একটি কোম্পানিকে ব্যবসার শুরুতে কম্পিউটার কেনার জন্য বিনিয়োগের একটি অংশ ব্যয় করতে হয়। তবে আপনি যদি ক্লাউড ব্যবহার করেন তবে আপনি ভাড়া ভিত্তিতে কম্পিউটার ব্যবহার করতে পারেন।
ফলস্বরূপ, আপনাকে একবারে অনেক টাকা বিনিয়োগ করতে হবে না। ব্যবসায়িক ক্ষতি বা ব্যবসা পরিবর্তনের ক্ষেত্রে ক্লাউড কোম্পানির সাথে ভাড়া চুক্তি সহজেই বাতিল করা যেতে পারে।
# ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের জন্য কম পুঁজির ব্যবসা:
যদি একটি ছোট প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তি একটি ইন্টারনেট-ভিত্তিক পরিষেবা প্রদান করতে চায়, তবে তাদের প্রথমে একটি সার্ভার ভাড়া নিতে হবে বা একটি সার্ভার কিনতে হবে। এই প্রযুক্তির ফলে, এখন আর কিছুই করার দরকার নেই।
অল্প পুঁজি সহ যে কেউ শুধুমাত্র একটি মাসিক ভাড়া ফি দিয়ে ক্লাউড ব্যবহার করে ব্যবসা শুরু করতে পারে। গুগল, মাইক্রোসফ্ট, ফেসবুক ইত্যাদির মতো বৃহৎ পরিষেবা প্রদানের জন্য সম্প্রতি পর্যন্ত একটি বড় ক্লাস্টার বা ডেটা সেন্টারের প্রয়োজন ছিল। কিন্তু বর্তমানে, যদি শুরুতে অল্প ক্লায়েন্ট বা ব্যবহারকারী থাকে, তবে এটি অ্যামাজনের মতো কোম্পানি থেকে 2/1 সার্ভার ভাড়া করা যথেষ্ট হবে।
ক্লায়েন্ট বাড়ার সাথে সাথে ঘন্টা হিসাবে ক্লাউড থেকে আরও সার্ভার ভাড়া করা যেতে পারে। নির্দিষ্ট সময়ে বা রাতে কম ব্যবহারকারী থাকলে সার্ভারের ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ করতে সিস্টেম সেট-আপ করা যেতে পারে। সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং ওয়েবসাইট টুইটার Amazon.com এর ক্লাউড ব্যবহার করে যাত্রা শুরু করেছিল।
# বিজ্ঞানী, প্রকৌশলী এবং গবেষকদের জন্য সুবিধাঃ
যদি কোনো বিষয়ে গবেষণার জন্য অল্প সময়ের জন্য বা মাত্র কয়েক ঘণ্টার জন্য বিপুল সংখ্যক কম্পিউটারের প্রয়োজন হয়, তাহলে ক্লাউড কম্পিউটার ভাড়া করে কাজটি সহজেই করা যায়। 10 বছর আগে উন্নত বিশ্বের বৃহৎ গবেষণাগার ছাড়া এটি সম্ভব ছিল না।
কিন্তু এখন আপনি Amazon-এর ক্লাউডে একটি কম্পিউটার ভাড়া নিতে পারেন মাত্র 2 সেন্ট প্রতি ঘণ্টায়। উন্নয়নশীল বিশ্বের বিজ্ঞানীদের জন্য এটি একটি বড় সুযোগ। আপনার কম্পিউটার কেনার সামর্থ্য না থাকলেও, আপনি সহজে এবং সস্তায় একটি ভাড়া নিয়ে গবেষণা করতে পারেন।
ক্লাউড কম্পিউটিং এর অসুবিধা
ক্লাউড কম্পিউটিং এর অনেক সুবিধার পাশাপাশি কিছু অসুবিধাও রয়েছে। সবচেয়ে বড় অসুবিধা হল দিনের পর দিন বিল দিতে হয়। আপনি যদি অনেক টাকা খরচ করে আপনার অফিস বা প্রতিষ্ঠানে একটি কম্পিউটার সার্ভার তৈরি করে থাকেন এবং প্রয়োজনীয় সব সফটওয়্যার ইন্সটল করে থাকেন, তাহলে আপনার কাজ শেষ। এর পর আর খরচ করতে হবে না। অন্যদিকে, ক্লাউড কম্পিউটিং-এর ক্ষেত্রে বছরের পর বছর ধরে নিয়ে থাকলে বিল দিতে হবে।
তাই আপনি যদি অনেক সময় নিয়ে কাজ করতে চান তবে ক্লাউড কম্পিউটিং আপনার খরচ কমানোর বদলে বাড়িয়ে দেবে।
আপনার ক্লাউড কম্পিউটিং ব্যবহার করা উচিত বা আপনার নিজস্ব স্থানীয় কম্পিউটার সিস্টেম তৈরি করা উচিত কিনা তা নির্ধারণ করতে আপনি একটি বাড়ি ভাড়া নেওয়ার কথা বিবেচনা করেন। কোনো জায়গায় স্থায়ীভাবে বসবাস করতে চাইলে একটু কষ্ট হলেও বাড়ি কেনা উচিত। না হলে কত বছর ভাড়া দিতে থাকবেন? আপনি কয়েক বছরের ভাড়া দিয়ে একটি বাড়ি কিনতে পারেন।
তাই আপনি আপনার প্রতিষ্ঠানের অবস্থার উপর ভিত্তি করে ক্লাউড কম্পিউটিং বা স্থানীয় কম্পিউটিং ব্যবহার করার সিদ্ধান্ত নেন?
আরো জানুন:
কোন মন্তব্য নেই: