মাথার খুশকি কিভাবে দূর করবেন? প্রাকৃতিক উপায়সহ কার্যকর কয়েকটি উপায়

মাথার খুশকি কিভাবে দূর করবেন? প্রাকৃতিক উপায়সহ কার্যকর কয়েকটি উপায়: যাদের মাথায় অতিরিক্ত খুশকি এবং কিভাবে দূর করবেন উপায় খুজঁছেন তাদের জন্য আজকের এই ইনফোটি। এখানে বেশ কয়েকটি উপায় তুলে ধরা হয়েছে। প্রথমে যে ‍উপায়টি বলবো তা পরীক্ষিত একটি উপায় যা মোছাঃ আমিনা আক্তার ব্যবহার করে উপকৃত হয়েছে। তার দেওয়া পরামর্শটি নিচে হুহহু তুলে ধরা হলো।


মাথার খুশকি কিভাবে দূর করবেন? প্রাকৃতিক উপায়সহ কার্যকর কয়েকটি উপায়


আমি খুশকির জন্য ইদানীং যা করছি তা করার জন্য আপনাকে পরামর্শ দেব। আমার অনেক খুশকি ছিল। সৌন্দর্য সচেতন বা স্বাস্থ্যসচেতন না হওয়ায় আমি খুব কমই আমার চুলের যত্ন নিতাম। তাই এখন আমি ভয়ে কেঁপে উঠছিলাম, ভাবছিলাম কি করা যায়। নারকেল তেল ব্যবহারের চিন্তা মাথায় এল।

যা ভাবলাম তাই কজ। গোসলের কয়েক ঘণ্টা আগে তেলের বোতলটা মাকে দিয়ে বললাম ভালো করে তেল দিতে। মায়ের কাজের পরেও আমি নিজে বেশ কিছুক্ষণ আঙ্গুল দিয়ে চুলের গোড়া মালিশ করেছি।

আমি এমনভাবে করেছি যাতে ত্বকে তেল ভালো হয়ে যায়। ফলস্বরূপ, শক্ত হয়ে যাওয়া ফ্লেক্স ত্বক থেকে আলগা হয়ে আসবে। এক ঘণ্টা পর আবার শ্যাম্পু দিয়ে চুল ধুয়ে কিছুক্ষণ ম্যাসাজ করলাম।

চুল শুকানোর পর বেশ অবাক হলাম। যেখানে টোকা দিলে মাথার ত্বক পড়ে যেত, খুশকি ঝরাতে গিয়ে ঘামের ঝড়তো। সেখানে- আপনা আপনি খুশকি দূর হতে শুরু করলো।

এভাবে তিন-চার দিন পর নিয়মিত তেল ও শ্যাম্পু ব্যবহার করে চুল ধুলে খুশকি কমে যাবে। আমি আমার পরিবারের বড়দের দেখেছি, তারা রাতে ঘুমানোর আগে মাথায় তেল দিয়ে ঘুমায় এবং সকালে তা ধুয়ে ফেলে।

অসুবিধা

মাথা থেকে সাদা খুশকি পড়ে ঘাড়ের কাপড়ে জমা হলে সবাই একধরনের বিব্রতকর অবস্থার সম্মুখীন হয়। দৈনন্দিন সামাজিকতা, অফিসের কাজ, সামাজিক অনুষ্ঠানে যোগদান, এমনকি প্রিয়জনের সাথে দেখা করা, এই সমস্ত বিব্রতকর খুশকি দৈনন্দিন কাজকর্মে হস্তক্ষেপ করতে পারে।


খুশকি দূর করার প্রাকৃতিক উপায়

চুলের স্বাস্থ্যে খুশকি বড় সমস্যা! শুধু শুষ্ক শীতের আবহাওয়ায় নয়, অতিরিক্ত দূষণের ফলে প্রায় সারা বছরই এখন অনেকেই খুশকিতে ভোগেন। খুশকির কারণে অন্যান্য সমস্যা হতে পারে। যেমন- অতিরিক্ত চুল পড়া, রুক্ষ চুল এবং মাথার ত্বকের বিভিন্ন সংক্রমণের জন্যও খুশকি দায়ী। তাই, সঠিক সময়ে খুশকির সমস্যা মোকাবিলায় যথাযথ ব্যবস্থা না নিলে অকালে চুল পড়ে যেতে পারে এবং মাথা 'গড় ক্ষেত্র' হয়ে যেতে পারে!

খুশকির সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে বাজারে বিভিন্ন ধরনের শ্যাম্পু বা লোশন পাওয়া যায়। তবে চুলে থাকা বিভিন্ন রাসায়নিক উপাদানের প্রভাবে চুলেরই ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। তাই কিছু কার্যকরী প্রাকৃতিক উপায় যা প্রয়োগ করে সহজেই খুশকি থেকে মুক্তি পেতে পারেন। নিচে প্রাকৃতিক ভাবে খুশকি দূর করার ৬টি উপায় দেওয়া হলো।


মাথার খুশকি দূর করার ৬টি টিপস

মাথার খুশকি কিভাবে দূর করবেন? প্রাকৃতিক উপায়সহ কার্যকর ৬টি উপায় যা ব্যবহার করে আপনার মাথার খুশকি দূর করতে পারেন। যেমন- 

১)টক দই: খুশকি প্রতিরোধে দই খুবই কার্যকরী একটি উপাদান। খুশকি দূর করতে দই দিয়ে মাথার ত্বকে ভালো করে ম্যাসাজ করুন। এরপর দশ মিনিট রেখে ভালো করে ধুয়ে ফেলুন। খুশকির সমস্যা পুরোপুরি দূর না হওয়া পর্যন্ত সপ্তাহে অন্তত দুবার এভাবে চুলে টকদই ব্যবহার করার চেষ্টা করুন। আপনার উপকার হবে।

2) মেথি: 2-3 চামচ মেথি সারারাত জলে ভিজিয়ে রাখুন এবং সকালে ছেঁকে নিন। ছেঁকে ফেলা পানি ফেলে দেবেন না। এ বার মেথির পেস্ট মাথার ত্বকে ভালো করে চুলের গোড়ায় লাগিয়ে এক ঘণ্টা রেখে দিন। এর পর চুল শুকিয়ে গেলে ভালো করে ধুয়ে ফেলুন। চুল ধোয়ার পর মেথি ভেজানো পানি দিয়ে আরও একবার চুল ধুয়ে নিন। এভাবে সপ্তাহে দুবার মেথি ব্যবহার করলে খুশকির সমস্যা দ্রুত চলে যাবে।

৩) লেবুর রস: ২ চা চামচ লেবুর রস সামান্য পানিতে মিশিয়ে মাথার ত্বকে ভালো করে ম্যাসাজ করুন। পাঁচ মিনিট পর চুল ভালো করে ম্যাসাজ করে চুল ধুয়ে ফেলুন। খুশকির সমস্যা পুরোপুরি দূর না হওয়া পর্যন্ত সপ্তাহে অন্তত ২ বার এভাবে লেবু পাতা ব্যবহার করার চেষ্টা করুন। হাতে কলমে ফলাফল পাবেন।

৪) রিঠা: চুলের সৌন্দর্য বাড়াতে রিঠা খুবই কার্যকরী একটি উপাদান। খুশকির চিকিৎসায়ও এটি খুবই কার্যকরী! রিঠা পাউডার বা রিঠা ফুটানো পানি দিয়ে চুল ভিজিয়ে কয়েক ঘণ্টা রেখে দিন। রিঠার পানি চুলের গোড়ায় ভালো করে লাগালেই ভালো ফল পাওয়া যায়। এক ঘণ্টা পর চুল ধুয়ে ফেলুন। এভাবে সপ্তাহে ২-৩ বার রিঠা ভিজিয়ে পানিতে লাগালে খুশকির সমস্যা দ্রুত নিয়ন্ত্রণে আসবে।

5) নারকেল তেল: চুলের যেকোনো সমস্যা সমাধানে নারকেল তেল একটি অপরিহার্য উপাদান। খুশকির প্রকোপ কমাতেও এটি খুবই কার্যকরী। এছাড়াও, এটি চুলের গোড়ার আর্দ্রতা বজায় রেখে খুশকি এবং 'স্ক্যাল্প ইনফেকশন'-এর ঝুঁকিও কমায়। সপ্তাহে অন্তত ২-৩ বার চুলের গোড়ায় সামান্য উষ্ণ নারকেল তেল মালিশ করলে ফল পাবেন।

৬) পেঁয়াজের রস: ২টি পেঁয়াজ পিষে ১ মগ পানিতে মিশিয়ে নিন। এ বার পেঁয়াজের রসের সঙ্গে পানি মিশিয়ে ভালো করে ম্যাসাজ করুন। কিছুক্ষণ পর কুসুম গরম পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। এভাবে সপ্তাহে অন্তত ২-৩ বার মাথার ত্বকে পেঁয়াজের রস লাগালে খুশকি থেকে দ্রুত মুক্তি মিলবে।


খুশকি দূর করার ডাক্তারী ৫টি টিপস

1. আপেল সিডার ভিনেগার খুশকির চিকিৎসায় ব্যবহার করা যেতে পারে। সমপরিমাণ ভিনেগার ও পানি একসঙ্গে মিশিয়ে মাথার ত্বকে ম্যাসাজ করুন। 15 মিনিট অপেক্ষা করুন এবং এটি ধুয়ে ফেলুন। এটি সপ্তাহে দু'বারের বেশি ব্যবহার করা উচিত নয়।

2. খুশকি দূর করতে নারকেল তেল এবং লেবু খুব ভালো কাজ করে। দুই টেবিল চামচ নারকেল তেল এবং সমপরিমাণ লেবুর রস একসঙ্গে মিশিয়ে মাথার ত্বকে ম্যাসাজ করুন। এর পর শ্যাম্পু দিয়ে চুল ধুয়ে ফেলুন।

তবে যাদের মাথার ত্বক স্পর্শকাতর তাদের লেবু ব্যবহারে সতর্ক হওয়া উচিত।

3. গ্রিন টি অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল গুণে সমৃদ্ধ এবং মাথার ত্বকের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে সাহায্য করে। তাই খুশকি কমাতে গ্রিন টি ব্যবহার করতে পারেন।

দুই টি ব্যাগ এক কাপ গরম পানিতে ২০ মিনিট ভিজিয়ে রাখুন। ঠান্ডা হয়ে গেলে এটি মাথার ত্বকে লাগান এবং 30 মিনিট অপেক্ষা করুন। এর পর ঠান্ডা পানি দিয়ে চুল ধুয়ে ফেলুন।

4. ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী অ্যান্টি-ড্যান্ড্রাফ শ্যাম্পু ব্যবহার করতে পারেন।

5. চুল আঁচড়াতে 'ব্রাশ'-এর পরিবর্তে চিরুনি ব্যবহার করুন। মাথার ত্বক পরিষ্কার রাখতে সপ্তাহে দুবার শ্যাম্পু ব্যবহার করা উচিত।

খুশকির চিকিত্সা

এখন চুল পরিষ্কার রাখতে ও চুলের সৌন্দর্য বাড়াতে শ্যাম্পু ব্যবহারে সচেতনতা তৈরি হয়েছে। কিন্তু মনে রাখতে হবে খুশকি একটি রোগ, যা কিছু নির্দিষ্ট কারণে হয়ে থাকে। তাই রোগের চিকিৎসার জন্য যেমন ওষুধের প্রয়োজন হয়, ঠিক তেমনি খুশকি থেকে মুক্তি পেতেও সঠিক ওষুধ প্রয়োগ করতে হবে। 

এটাও মনে রাখা জরুরী যে খুশকির সঠিক চিকিৎসা না করা হলে ভবিষ্যতে জটিলতা দেখা দেবে এবং এই জটিলতার জন্য আবার অন্যান্য ধরনের ওষুধ দিয়ে দীর্ঘমেয়াদী চিকিৎসার প্রয়োজন হতে পারে।

তাই সময়মতো ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

খুশকি কি?

খুশকি একটি সুপরিচিত চর্মরোগ যা সাধারণত মাথার ত্বকে হয়। খুশকির সমস্যায় নারী-পুরুষ সমানভাবে ভোগেন। প্রত্যেকেই তাদের জীবনের কোনো না কোনো সময়ে খুশকিতে আক্রান্ত হয়।

অনেকে এই রোগটিকে হালকাভাবে নেয়, এমনকি সচেতনতার অভাব যে এটি একটি রোগ এবং এর সঠিক চিকিৎসা প্রয়োজন। খুশকি তীব্র চুলকানির পাশাপাশি নিয়মিত চুল পড়ার কারণ হতে পারে। খুশকি কোনো ছোঁয়াচে রোগ নয়।

মাথায় খুশকি হওয়ার কারণ কি?

মাথার ত্বকে একটি ছত্রাক বা খামির সংক্রমণ ঘটে। এই সংক্রমণ বেশি হলে খুশকি হয় এবং তৈলাক্ত গ্রন্থি (সেবেসিয়াস গ্রন্থি) ত্বকের তৈলাক্ত উপাদান বেশি নিঃসরণ করে। অনেক লোক জেনেটিক্যালি খুশকির প্রবণতা রয়েছে।

খুশকি মাথার ত্বকে চুলকানি ছাড়াও নিয়মিত চুল পড়ার কারণ হতে পারে। এ ধরনের ক্ষেত্রে বিভিন্ন ধরনের সাধারণ শ্যাম্পু বা তেল ব্যবহার করতে বলা হয় বা বেশির ভাগ ক্ষেত্রে কোনো ব্যবস্থাপত্র দেওয়া হয় না। এটি বিভিন্ন সেকেন্ডারি ব্যাকটেরিয়া বা ছত্রাক সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়ায়। এর মধ্যে seborrheic dermatitis এবং tinea capitis উল্লেখযোগ্য।

খুশকি কোথায় হতে পারে?

শরীরের যে কোনো জায়গায় খুশকি হতে পারে। খুশকি সাধারণত মাথার ত্বক, মুখমণ্ডল, বুক, চোখের পাতা এবং নাকের দুই পাশে হয়ে থাকে।

চোখের পাতা বা ভ্রুতে খুশকি

কখনও কখনও চোখের পাতা বা ভ্রুতে সাদা আঁশযুক্ত ফুসকুড়ি হয়, যা খুশকি বা ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণ হতে পারে। তবে যাদের মাথায় খুশকি আছে তাদের চোখের পাতা বা ভ্রুতে খুশকি হতেই পারে। এই ক্ষেত্রে, মাথার ত্বকের নিয়ন্ত্রণের ফলে সাধারণত উন্নতি হয়। এবং ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণের কারণে চোখ লাল, জ্বলন্ত, জলাধার এবং এমনকি চোখের পাতা ফুলে যেতে পারে। 

এ ক্ষেত্রে নিজের যত্ন বেশি নিলে এ ধরনের সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। যেমন গরম পানিতে কাপড় ভিজিয়ে চোখ বন্ধ করে দিনে কয়েকবার ময়লা পরিষ্কার করুন এবং দিনে কয়েকবার গরম কম্প্রেস করলে ভালো হয়।

অন্যান্য ইনফো দেখুন









একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

[blogger]

Search This Blog

যোগাযোগ ফর্ম

নাম

ইমেল *

বার্তা *

Blogger দ্বারা পরিচালিত.
Javascript DisablePlease Enable Javascript To See All Widget