বর্তমানে অনলাইনে অনেক ধরণের প্রতারণামূলক ইনভেস্ট সাইট রয়েছে। আর হাজার হাজার মানুষ ভালো করে না জেনে না বুঝে লোভে পড়ে অনেক টাকা ইনভেস্ট করে থাকে। এই সাইটগুলোতে কিছু দিনের জন্য আয় করা গেলেও তা হঠাৎ করে বন্ধ হয়ে যায় যা আপনি কল্পনাও করতে পারবেন না। অনলাইনে ইনভেস্ট করে প্রতারণার শিকার হয়েছে এমন অসংখ্য মানুষ আমাদের ইমেইল করে জানিয়েছে। তাই আজকের এই ইনফোটিতে আমরা এই বিষয়ে আলোচনা করবো।
অনলাইনে ইনভেস্ট করার আগে অবশ্যই আপনাকে নিজের বুদ্ধি দিয়ে গবেষণা করতে হবে যে, সাইটটি নিরাপদ নাকি ঝুকিপূর্ণ। অনলাইনে অনেক টুল রয়েছে সেগুলো ব্যবহার করে আপনি কাঙ্খিত সাইটটি পরিক্ষা করতে পারেন। বিশেষ করে সাইটটির রেটিং পয়েন্ট দেখতে ভুলবেন না।
প্রতারণামূলক সাইট গুলোর বৈশিষ্ট কি?
যখনই আপনি কোন অনলাইন প্লাটফর্ম কিংবা মোবাইল অ্যাপ এ ইনভেষ্ট করার চিন্তা করবেন তখনি ঐ অ্যাপের রেটিং চেক করতে ভুলবেন না। কেননা যে গুলো প্রতারণা করে, সাধারণভাবে তাদের রেটিং খুবই খারাপ হয়ে থাকে। এছাড়াও একটি প্রতারণামূলক ওয়েবসাইট কিংবা অ্যাপে কি কি সাধারণ বৈশিষ্ট থাকে তা নিচে দেওয়া হলো।
১। প্রথম বৈশিষ্ট হচ্ছে একটি প্রতারণা মূলক ওয়েবসাইট কিংবা অ্যাপ সাধারণত একদম নতুন হয়ে থাকে। কয়েকদিন কিংবা কয়েক মাস আগে রিলিজ করা হয়েছে মাত্র। কোন সাইট বা অ্যাপ যদি কমপক্ষে দুই তিন বছর পুরানা না হয় তাহলে সে সাইটগুলো সম্পর্কে সুক্ষভাবে পর্যবেক্ষণ করা জরুরী।
২। এই ধরণের সাইটগুলো সাধারণত লোভনীয় অফার করে থাকে। যে অফারগুলো দেখে অস্বাভাবিক মনে হবে।
৩। এই ধরণের প্রতিষ্ঠানের সদর দপ্তর তথা হেড অফিস এমন জায়গার কথা উল্লেখ করা হয় যেখানে সাধারণ মানুষের পক্ষে যাওয়া সম্ভব নয়।
৪। প্রতারণা করার জন্য তারা বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে নতুন নতুন গ্রুপ খুলে থাকে।
৫। প্রথম দিকে তারা আপনার সাথে খুব ভালো ব্যবহার করে লোভ দেখাবে আপনি যখন ইনভেস্ট করবেন তখন তারা তাদের ব্যবহার পাল্টাতে শুরু করবে।
৬। সরাসরি ফোনকল সাপোর্ট সাধারণত তারা দেয় না। সাপোর্ট থাকলেও তারা বিভিন্ন থার্ডপার্টি ওয়েতে দিয়ে থাকে।
৭। সাধারণত ব্যাংকিং লেনদেন তারা করে না।
৮। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে তারা মোবাইল ব্যাংকিং ব্যবহার করে ডিপোজিট নিয়ে থাকে।
৯। তাদের রেফারেল কমিশন লোভনীয় হয়ে থাকে।
১০। এই ধরণের সাইট গুলো সাধারণত এক বছরের বেশি দীর্ঘ হয় না।
অনলাইনে ইনভেস্ট করে আয় করা কি সম্ভব?
অনলাইনে ইনভেস্ট করে আয় করা সম্ভব? এই প্রশ্ন যদি আপনার হয়ে থাকে তাহলে আমি আপনাকে প্রশ্ন করবো অনলাইনে কি কাজ করা সম্ভব? যদি এর উত্তর হ্যাঁ হয়ে থাকে তাহলে ইনভেস্ট করেও আয় করা সম্ভব। তবে সেগুলো বিশ্বস্ত এবং প্রতিষ্টিত প্লাটফর্ম হতে হবে। বিদেশে বিভিন্ন ধরণের ইনভেস্ট প্রোজেক্ট থাকলেও বাংলাদেশে তেমন কোন প্রতিষ্ঠান নেই বললেই চলে।
কেননা বাংলাদেশে ক্রিপ্টোকারেন্সি লেনদেন আইনত অবৈধ। যারা প্রবাস থাকেন তারা বিদেশে অবস্থান করে বিভিন্ন ক্রিপ্টো এক্সচেঞ্জগুলোতে বিনিয়োগ করে অল্প সময়ে মুনাফা অর্জন করতে পারেন। তবে বাংলাদেশে অবস্থান করে এটা সম্ভব নয়।
তারপরও যদি করতে যান তাহলে আপনি আইনে চোখে দোষী হিসাবে গন্য হবেন। এছাড়াও আপনার অর্থের কোন ক্ষতি হলে আইনগতভাবে কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারবেন না।
ইনভেস্ট করে প্রতিদিন মুনাফা পাওয়া যায় এমন কোন বিদেশি কোম্পানী রয়েছে?
হ্যাঁ, এমন অনেক প্লাটফর্ম রয়েছে। তবে সেগুলোতে বাংলাদেশ থেকে ইনভেস্ট করতে পারবেন না। কেননা এগুলো মূলত ক্রিপ্টোকারেন্সিতে লেনদেন করে থাকে যা বাংলাদেশে অবৈধ। এছাড়াও বিভিন্ন স্টোক এক্সচেঞ্জ কোম্পানী রয়েছে। যেমন- বাইনেন্স, ক্রিকেন, কু-কয়েন, প্যাক্সফুল ইত্যাদি।
তবে মনে রাখবেন, যেখানেই ইনভেস্ট করুন না কেন তা আগে যাচাই করে নিবেন। কেননা আপনার বিনিয়োগ খোয়া যেতে পারে যে কোন সময় কিংবা লাভের পরিবর্তে লোকসান হতে পারে।
কষ্টে উপার্জিত অর্থ কোথায় বিনিয়োগ করবেন?
এমন কোন জায়গায় আপনার কষ্টে উপার্জিত অর্থ বিনিয়োগ করবেন না যে, বিনিয়োগ করার পর আপনার লাভের বদলে বিনিয়োগ হারানোর ভয় থাকে। লাভজনক এমন জায়গায় বিনিয়োগ করুন যেখানে খুব বেশি লাভ না হলেও যে আপনার বিনিয়োগকুত টাকা খোয়া না যায়। কোন চাটুকদের কথায় ভুলে যেখানে সেখানে বিনিয়োগ করবেন না। আর যেখানে বিনিয়োগ করবেন সেটা অবশ্যই হালাল কিনা তা যাচাই করে নিবেন। কেননা অনলাইনে এখন জুয়া খেলা যায় কিংবা এই ধরণের অনেক অবৈধ কাজ রয়েছে।
শেষকথা:
আশাকরি, অনলাইনে ইনভেস্ট করা সাইটগুলো অর্থ উপার্জনের জন্য কতটুকু নিরাপদ? এই লেখাটি থেকে কিছুটা ধারণা পেয়েছেন। যদি আপনার মন চায় যে, কোন সাইটে বিনিয়োগ করবেন তাহলে সেটি পরীক্ষা করতে ভুলবেন না। সাইটটির বয়স, রেটিং পয়েন্ট, রিভিউ ইত্যাদি পর্যালোচনা করে ইনভেস্ট করবেন। অন্যথায় আপনি অর্থ হারাতে পারেন।