জন্মের পর নবজাতক শিশুকে তার প্রথম খাবার হিসেবে মায়ের বুকের দুধ খাওয়াতে বলা হয়। শিশুর জন্মের পর তাকে ৬ মাস মায়ের দুধ ছাড়া অন্য কোনো খাবার খেতে দেওয়া উচিত নয়। আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল জন্মের পর শিশুকে শালদুধ খাওয়ানো। যা আমরা অনেকেই মাথায় রাখি না। ফলে অধিকাংশ মায়েদের সন্তানই বুকের দুধ খাওয়া থেকে বঞ্চিত হয়। যার জন্য শিশুর পুষ্টির চাহিদা পূরণ হয় না এবং তার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা অনিশ্চিত থাকে। বেশিরভাগ মায়েরাই বুকের দুধ খাওয়ানোর গুরুত্ব সম্পর্কে ভালভাবে জানেন না। যার জন্য শিশু বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হতে পারে যেমন: জন্ডিস, হাম, কালো জ্বর ইত্যাদি।তাই দুধের উপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত ধারণা থাকা খুবই জরুরি।
আজকের এই ইনফোটিতে আমরা আলোচনা করবো “শালদুধ কি? শিশুকে কখন কিভাবে শাল-দুধ খাওয়াবেন?” সম্পর্কে। কেননা শিশুর জন্মের পর পরই তার একমাত্র খাবার হচ্ছে মায়ের বুকের দুধ। গর্ভবতী মায়ের সন্তান জন্মের পর যে প্রথমবারের মতো বুকের দুধ খাওয়ানোকে শাল দুধ বলা হয়। প্রতিটি শিশুর জন্য এর কোন বিকল্প খাবার নেই।
শালদুধ কি?
শাল দুধ একটি প্রধান খাদ্য জীবনধারী পশুদের দুধ যা বিভিন্ন ধরণের খাদ্য উৎপাদনে ব্যবহার করা হয়। এই দুধে বিভিন্ন উপাদান যেমন প্রোটিন, ক্যালসিয়াম, ভিটামিন এবং খনিজ এসে থাকে যা স্বাস্থ্যকর এবং উপকারী। শাল দুধ উৎপাদন করতে খাবার উন্নয়ন, স্বাস্থ্যকর চারা প্রবন্ধ এবং ভাল বাসায়জীবন প্রদানের জন্য প্রস্তুত হয়। এছাড়াও এটি বিভিন্ন প্রকারের খাবার উৎপাদনে ব্যবহার করা হয়, যেমন চিজ, গ্রাহক, দই, মিষ্টি এবং বাটার। শাল দুধ জন্য দুধ প্রস্তুত করার একটি বিশাল পরিমাণ শ্রম প্রয়োজন হয় যা ক্ষেত্রে দক্ষ কর্মীদের প্রস্তুতি এবং পরিচর্যার উন্নয়ন করে।
শালদুধ হল গরুদুধের একটি প্রকার। গরুর মাংস খাওয়ার পাশাপাশি দুধ ও দুধজাত উৎপাদন করার জন্য গরুগুলি বিশেষ ভাবে প্রতিস্থাপন করা হয়। গরুর দুধ দুই প্রকার হয় - সাধারণ দুধ এবং শালদুধ। সাধারণ দুধ এর সাথে তুলতুলে বিশেষ পুষ্টি সামগ্রী না থাকায় শালদুধ সাধারণ দুধের চেয়েও পুষ্টিকর এবং স্বাস্থ্যকর। শালদুধ ভারত ও পাকিস্তানে অনেক জনপ্রিয় এবং সবচেয়ে বেশি খাওয়া হয়।
মায়ের বুকের দুধ শাল হল এমন একটি প্রাকৃতিক পদার্থ যা মায়ের স্তন থেকে প্রস্রাব হয়। এটি শিশুর জন্য পুষ্টিকর খাদ্য হিসাবে ব্যবহার করা হয়। মায়ের বুকের দুধ শালে সম্পূর্ণ নিরাপদ এবং প্রাকৃতিক উপায়ে তৈরি হয়। এটি শিশুর বৃদ্ধি ও সুস্থতার জন্য গুরুত্বপূর্ণ খাদ্য হিসাবে পরিষেবিত হয়।
যে শাল দুধ সম্পর্কে এখানে আলোচনা
শিশুর জন্মের পর বেশির ভাগ মা দুশ্চিন্তায় থাকেন যে দুধ ঠিকমতো আসছে না। এবং এই ভেবে যে তারা শিশুকে বুকের দুধ খাওয়াতে চায় না। এর প্রধান কারণ তারা শাল দুধ চিনতে পারে না। তাহলে চলুন জেনে নিই শাল দুধ কিভাবে চিনবেন,
* নবজাতক শিশুর জন্মের পরপরই মায়ের স্তনবৃন্ত থেকে যে হলুদ, ঘন, সান্দ্র দুধ বের হয় তাকে কোলোস্ট্রাম বলে। মায়ের দুধের এই শাল 1 থেকে 12 দিন পর্যন্ত স্থায়ী হয়। এবং এই 12 দিনের মধ্যে শিশুর জন্মের প্রথম 12 ঘন্টার মধ্যে শিশুকে যে দুধ খাওয়ানো হয় তাকে ট্রানজিশনাল মিল্ক বলে এবং শিশুর জন্মের পরের তিন দিনের মধ্যে যে দুধ খাওয়ানো হয় তাকে পরিণত দুধ বলে। .
* 12 দিনের মধ্যে শিশুকে বুকের দুধ খাওয়ানো বন্ধ করবেন না। কারণ এই ১২টি দিন শিশুর জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কোলস্ট্রামের পরিমাণ খুবই কম হওয়ায় মায়েরা সাধারণত চিন্তিত থাকেন। কিন্তু যা আসে তা নবজাতক শিশুর চাহিদা মেটাতে যথেষ্ট। সে জন্য কোনো অবস্থাতেই শিশুকে এই দুধ খাওয়া থেকে বিরত রাখা উচিত নয়।
আরো জানুন:
শিশুর হামাগুড়ি দেওয়া সম্পর্কে কি বিষয় জানা জরুরী?
শিশুর জন্য ডায়াপার বা প্যাম্পাস কেনার জন্য কি কি বিষয় লক্ষ রাখতে হবে?
অর্থ সহ মেয়েদের ইসলামিক কিছু নামে তালিকা
শিশুকে দুধ খাওয়াতে হবে কেন?
কোলস্ট্রাম খাওয়ানো হলে শিশু কি কি সুবিধা পাবে সে সম্পর্কে নিচে বিস্তারিত আলোচনা করা হল-
প্রথম ভ্যাকসিন হিসাবে কাজ করা: চিকিৎসা বিশেষজ্ঞদের মতে, নবজাতক শিশুর জন্য মায়ের বুকের দুধ এতটাই উপকারী যে এটিকে তার জীবনের প্রথম টিকা হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এ কারণেই চিকিৎসকরা শিশুকে জন্মের এক ঘণ্টার মধ্যে তার মায়ের শাল থেকে শিশুকে খাওয়াতে বলেন। এতে শিশুমৃত্যুর ঝুঁকি অনেকাংশে কমে যায়। সে জন্য জন্মের এক ঘণ্টার মধ্যে শিশুকে বুকের দুধ খাওয়ানোর চেষ্টা করুন।
দ্রুত দুধ সরবরাহ: জন্মের পর যদি আপনার শিশুকে কোলস্ট্রাম দেওয়া হয়, তাহলে সে খুব দ্রুত বুকের দুধ খাওয়াতে শিখবে। এবং এর সাথে, প্রোল্যাক্টিন হরমোনের নিঃসরণ এবং বৃদ্ধি অব্যাহত থাকবে। ফলে 12 দিন পর স্বাভাবিকভাবেই স্তনে প্রচুর দুধ আসতে শুরু করবে। তাই আতঙ্কিত হবেন না কারণ জন্মের পর প্রথম 12 দিনের তুলনায় বুকের দুধ কম থাকে। বরং এই সময়ে শিশুকে দুধ খাওয়াতে থাকুন।
অ্যান্টিবডি তৈরিতে সাহায্য করে: কোলোস্ট্রাম আপনার শিশুর শরীরে অ্যান্টিবডি তৈরি করতে সাহায্য করবে। যা শিশুর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করবে। মায়ের দুধ ছাড়া অন্য কোনো খাবারে অ্যান্টিবডি পাওয়া যায় না। তাই শিশুর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে তাকে অবশ্যই দুধ দিতে হবে।
পুষ্টি চাহিদা পূরণ: বুকের দুধ অন্য যেকোনো খাবারের চেয়ে বেশি পুষ্টিকর। আর সব পুষ্টিগুণ এই দুধে থাকে। সে জন্য এ সময় শিশুকে আলাদা করে অতিরিক্ত খাবার দিতে হবে না। আপনি যদি শিশুকে এই দুধটি সঠিকভাবে পান করাতে পারেন তাহলে আপনার শিশুর পুষ্টির কোনো ঘাটতি হবে না।
জন্ডিস প্রতিরোধ: বেশিরভাগ শিশুর জন্মের কয়েক দিনের মধ্যে জন্ডিস হয়। গবেষণায় দেখা গেছে যে শিশুরা জন্মের পর পর্যাপ্ত পরিমাণে কোলস্ট্রাম পান করে না তাদের এই রোগ হওয়ার ঝুঁকি বেশি থাকে। কিন্তু জন্মের পরপরই শিশুকে বুকের দুধ খাওয়ালে শিশুর শরীরে রোগের সঙ্গে লড়াই করার জন্য অ্যান্টিবডি তৈরি হবে। এতে শিশুর জন্ডিস হবে না।
কালো মল দূর করতে সাহায্য করে: জন্মের পর শিশুর শরীর থেকে প্রথম যে মলটি বের হয় তা কালো রঙের হয়। অনেক শিশুর এই মলত্যাগে বিলম্ব হতে পারে। কিন্তু দুধ খেলে শিশুর শরীর থেকে কালো মল দ্রুত বেরিয়ে আসবে।
নিয়মিত মলত্যাগ: বুকের দুধ খাওয়ালে আপনার শিশুর পুষ্টির চাহিদা পূরণ হবে এবং পেট ভরা থাকবে। এছাড়াও, এই দুধ প্রয়োজনীয় তরল প্রয়োজনীয়তা পূরণ করবে। এতে করে শিশুর শরীর শক্ত হবে না। এর ফলে আপনার শিশুর নিয়মিত মলত্যাগ হবে।
ভিটামিনের ঘাটতি পূরণ: শাল দুধ ভিটামিন এ সমৃদ্ধ। যা ছোট বাচ্চাদের নিশাচর অসুস্থতা থেকে রক্ষা করবে। তাই জন্মের পর আপনার শিশুকে নিয়মিত এই দুধ পান করান।
শিশুকে উষ্ণ রাখা: আমরা সবাই জানি, শিশুরা ঠান্ডার প্রতি একটু বেশিই সংবেদনশীল। কিন্তু শিশুকে বুকের দুধ খাওয়ালে তা মায়ের শরীরে লেগে থাকে। ফলে শিশু মায়ের শরীর থেকে উষ্ণতা পাবে। এতে শিশুর সর্দি-কাশিতে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি কমে যাবে।
আরো জানুন:
দুধ বা দুদ্ধজাত খাবার খাঁটি না ভেজাল কিভাবে বুঝবেন?
দেহের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে কোন কোন খাবার?
টক দই কিভাবে খাবেন? এর উপকারিতা কি?
লাচ্ছা সেমাইয়ে লাডডু তৈরি করবেন কিভােবে?
অনাক্রম্যতা বৃদ্ধিতে দুধের ভূমিকা
আপনার শিশু যদি কোলোস্ট্রাম পান করে তবে এটি তার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াবে। এতে করে শিশুর শরীরে কোনো জীবানু প্রবেশ করলে তার বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য প্রয়োজনীয় অ্যান্টিবডি তৈরি হবে। ফলে শিশু প্রয়োজনীয় সংক্রামক রোগ যেমন ডায়রিয়া, নিউমোনিয়া, সেপসিস ইত্যাদি প্রতিরোধ করবে।
আমাদের পরামর্শ:
প্রতিটি মা চান তার সন্তান সুস্থ ও স্বাভাবিকভাবে বেড়ে উঠুক। আর শিশুকে সঠিকভাবে বুকের দুধ খাওয়ানো হলে অধিকাংশ মায়ের এই ইচ্ছা পূরণ হবে। তাই আমাদের উচিত শিশুকে বুকের দুধ খাওয়ানোর গুরুত্ব সম্পর্কে জানা এবং উপরোক্ত বিষয়গুলো মাথায় রাখা এবং শিশু যেন সঠিকভাবে বুকের দুধ পান করতে পারে সেদিকে খেয়াল রাখা উচিত।
দুধ সম্পর্কে গুগলে জানতে চাওয়া বিষয়গুলো কি?
- দুধ সম্পর্কিত পুরোপুরি তথ্য
- গরুর দুধ এবং ছাগলের দুধের পার্থক্য কি?
- দুধ কিভাবে উৎপাদিত হয়?
- দুধ কি খাওয়ালে কী কী উপকারিতা হয়?
- দুধ কি খাওয়ালে কী কী সমস্যা হয়?
- দুধ সম্পর্কে গুণাবলী
- নির্মিতি প্রক্রিয়া অনুসারে পাকা দুধ এবং গুড়া দুধের পার্থক্য কি?
- সোয়া দুধ বা গাভী দুধ কি হলে জন্মে যায় এবং এর বৈশিষ্ট্য কি?
- দুধ সম্পর্কে কথা বলার সময় যে প্রশ্নগুলি জিজ্ঞাসা করা উচিত তা কী?
- গরুর দুধ থেকে প্রাপ্ত দুধের গুণগত মান এবং সারাদুনিয়াতে কেন গরুর দুধ সবচেয়ে জনপ্রিয়?
- দুধ সম্পর্কে আদর্শ সেবনের নিয়মাবলী।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন