ভূমি ব্যবস্থাপনায় স্মার্টটেকনোলজির ভূমিকা কি?

প্রযুক্তি সম্পর্কে কথা বলতে গিয়ে এর সুযোগ কখন কখন ভূমি ব্যবস্থাপনার জন্য সম্ভব হচ্ছে সেটি পরিচয় দেয়া প্রয়োজন। আমরা দেখতে পারি আজকের সময়ে প্রায় সব ক্ষেত্রে প্রযুক্তির ব্যবহার হচ্ছে এবং সেই প্রযুক্তিগুলো একে অপরের সাথে সম্পর্কিত। একে অন্যকে সমন্বয় করে এই ব্যাপারটি বিশেষত আমাদের দেশে প্রযুক্তির ব্যবহার এবং এর পূর্বপর্দা বেশ সম্ভব হতে পারে।


বাংলাদেশ সরকার এই দিকে খুবই উদ্যোক্তাপূর্ণ। তারা ব্যবস্থাপনার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রে প্রযুক্তি ব্যবহার করছেন। উদাহরণস্বরূপ রোড ট্রান্সপোর্টে, বিদ্যুৎ সরবরাহে এবং এনার্জি এফিসিয়েন্ট প্রকল্প উন্নয়ন ইত্যাদি।

ভূমি ব্যবস্থাপনায় প্রযুক্তি ব্যবহারের উপযোগিতার প্রমাণ দেখে আসা হচ্ছে। স্মার্টফোন, ইন্টারনেট এবং প্রযুক্তির বিকশিত ব্যবহার একটি নতুন দুনিয়া নিয়ে আসছে। এখন ভূমির সম্পদ ও ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে আরও একটি দুনিয়া উদ্ভাবিত হচ্ছে।


ভূমি ব্যবস্থাপনায় যে প্রযুক্তির ব্যবহার

ভূমি ব্যবস্থাপনায় স্মার্টটেকনোলজির ভূমিকা কি?


আধুনিক প্রযুক্তির সম্মিলিত ব্যবহার সম্ভব করে ভূমি ব্যবস্থাপনার সাথে সম্পর্কিত বিভিন্ন কাজকে সহজ এবং দ্রুতগতিতে নির্বাচন করা সম্ভব হয়েছে। নীচে এই বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।


১. ঘরে বসে ই-নামজারি:

বর্তমান সময়ে নামজারি সম্পর্কিত কাজ গুলি অনলাইনে সম্পাদন করা যায়। এর জন্য আবশ্যক সকল নথি সংরক্ষণ করা হয় যেখান থেকে সেই ডেটা ব্যবহার করে নামজারি এর কাজ সম্পন্ন করা যায়।

আপনি ঘরে বসে কিভাবে নামজারি করবেন বিস্তারিত জানতে “অনলাইনে নামজারি করবেন কিভাবে” ইনফোটি দেখুন।


২. মৌজা ও প্লটভিত্তিক ভূমি জোনিং ব্যবস্থা:

ভূমি জোনিং পদ্ধতি ব্যবহার করে মৌজা ও প্লটভিত্তিক ভূমি জমি নির্ধারণ করা যায়। এর মাধ্যমে আকার, অবস্থান এবং সীমানা নির্ধারিত হয়।

এই বিষয়ে আমরা পরবর্তীতে একটি বিস্তারিত ইনফো শেয়ার করবো ইনশাল্লাহ। এই বিষয়ে অধিক তথ্য পেতে আমাদের সাথেই থাকুন।


৩. মোবাইলে ডিজিটাল রেকর্ড রুম থেকে খতিয়ান সংগ্রহ:

একটি ডিজিটাল রেকর্ড রুম থেকে মোবাইলে সংগ্রহ করা হয় খতিয়ান সম্পর্কিত তথ্য। এর মাধ্যমে ভূমি মালিক তাঁর জমি সংক্রান্ত সকল বিবরণ দেখতে পারেন।

যেমন আপনি যদি আপনার মোবাইল দিয়ে আপনার জমির যেকোন খতিয়ান দেখতে চান কিংবা ডাউনলোড করতে চান তহলে “ই-পর্চা: যে কোন খতিয়ান অনলাইনে” ইনফোটি দেখুন।


৪. জেলার খতিয়ান অনলাইনে:

ভূমি মন্ত্রণালয়ে ডিজিটাল প্রযুক্তি যুক্ত হওয়ায় এখন আর জেলা অফিসে গিয়ে খতিয়ান দেখতে হয় না। ইন্টারনেটে গিয়ে আপনি জেলার ওয়েবসাইটে গিয়ে সেখানে আবদ্ধ সেবাগুলি ব্যবহার করে আপনি খতিয়ান সংক্রান্ত সকল তথ্য দেখতে পারবেন।

প্রতিটি জেলার জন্য নির্দিষ্ট ওয়েবসাইট রয়েছে। সেগুলোতে গেলে আপনি ই-সেবার তালিকা দেখতে পাবেন।


৫. অনলাইনে খাজনা পরিশোধ:

এখন অনলাইনে খাজনা পরিশোধ করা যায়। এর মাধ্যমে ভূমি মালিকদের খাজনা পরিশোধ করতে অনেক সহজ হয়েছে।

অনলাইনে আপনি কিভাবে খাজনা পরিশোধ করবেন দেখতে “অনলাইনে খাজনা পরিশোধ করবেন কিভাবে” ইনফোটি দেখুন।


৬. ভূমি ডেটা বা তথ্য ব্যাংক:

ভূমি ব্যবস্থাপনার জন্য তথ্য ব্যাংক খুব গুরুত্বপূর্ণ। এখানে সংগৃহীত তথ্য ব্যবহার করে ভূমি মালিকদের বিভিন্ন সেবা প্রদান করা হয়ে থাকে।

ভূমি তথ্য ব্যাংক সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে “ভূমি তথ্য ব্যাংক কি” ইনফোটি দেখুন।


৭. ভূমি মালিকদের স্মার্টকার্ড

ভূমি মালিকদের জন্য স্মার্টকার্ড হল একটি ইলেকট্রনিক কার্ড যা ভূমি মালিকদের তথ্য সংরক্ষণ করে রাখতে ব্যবহৃত হয়। এই স্মার্টকার্ড ব্যবহার করে ভূমি মালিকরা তাদের সম্পত্তি সংক্রান্ত নিম্নলিখিত কিছু তথ্য সহজেই জানতে পারেন:

১. জমির স্থান

২. জমির পরিমাণ

৩. মালিকের নাম এবং ঠিকানা

৪. করের হার

৫. নবায়ন শেষের তারিখ

৬. বিক্রয় বা ক্রয়ের তারিখ এবং দাম


এছাড়াও স্মার্টকার্ড থেকে ভূমি মালিকরা নিম্নলিখিত কিছু সেবা উপভোগ করতে পারেন:

১. কর পরিশোধ করতে পারেন

২. জমি দখলের আবেদন করতে পারেন

৩. জমির সার্ভে রেকর্ড আপডেট করতে পারেন

৪. জমি বিক্রয় বা ক্রয় করতে পারেন


এই স্মার্টকার্ড আধুনিক টেকনোলজির একটি উদাহরণ এবং এটি ভূমি মালিকদের ব্যবস্থাপনা সহজ এবং সুরক্ষিত করে।


৮. অনলাইনে তথ্য যাচাই

অনলাইনে ভূমি তথ্য যাচাই সম্পর্কিত সেবাগুলো হলো খতিয়ান পরিদর্শন, ভূমি হালনাগাদ এবং জমাকৃত আবেদন সম্পর্কিত। এগুলো অনলাইনে করা হয় যাতে মালিকদের সময় এবং পরিশ্রম বাঁচানো যায়।


খতিয়ান পরিদর্শন সেবা দিয়ে ভূমির মালিকেরা তাঁদের জমিদারির তথ্য অনলাইনে চেক করতে পারেন। এছাড়াও ভূমি হালনাগাদ সেবা দিয়ে মালিকরা তাঁদের ভূমির সঠিক মালিকানাধীন এবং সরবরাহকৃত তথ্য চেক করতে পারেন। জমাকৃত আবেদন সম্পর্কিত সেবার মাধ্যমে মালিকদের জমিদারির উপর কোনো আবেদন পেন্ডিং রয়েছে কিনা চেক করা যায়।


এছাড়াও ভূমি হালনাগাদ সম্পর্কিত অনলাইন সেবা দিয়ে মালিকদের সঠিক তথ্য দেওয়া হয়। মালিকরা তাঁদের ভূমি হালনাগাদ অনলাইনে করতে পারেন এবং সরবরাহকৃত তথ্যের সঠিকতা যাচাই করতে পারেন।


৮. ২৪ ঘন্টা ভূমি সেবা

২৪ ঘন্টা ভুমি সেবা হল এমন একটি সুযোগ যা ব্যবহারকারীদের ভূমি সম্পত্তি নিয়ন্ত্রণ করতে সহায়তা করে। এই সেবাটি অনলাইনে পাওয়া যায় এবং সেই সময় ব্যবহারকারীর জন্য সর্বোচ্চ সুবিধা সম্পন্ন করা হয়।


২৪ ঘন্টা ভুমি সেবাগুলো হতে পারে:


১. খতিয়ান ইউনিট নিরীক্ষণ: এই সেবার মাধ্যমে ব্যবহারকারীরা খতিয়ান ইউনিটের উপর নিরীক্ষণ করতে পারে এবং তাদের খতিয়ানের পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করতে পারে।


২. জমি রেকর্ড নিরীক্ষণ: এই সেবার মাধ্যমে ব্যবহারকারীরা তাদের জমি রেকর্ডের উপর নিরীক্ষণ করতে পারে এবং তাদের জমি রেকর্ডের পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করতে পারে।


৩. ভূমি খাজনা পরিশোধ: এই সেবার মাধ্যমে ব্যবহারকারীরা তাদের ভূমি খাজনা পরিশোধ করতে পারে এবং তাদের খাজনা বিষয়ক সমস্ত তথ্য পাওয়া যায়।


ডিজিটাল ভূমির আরো কিছু তথ্য

ভূমি ব্যবস্থাপনার জন্য অনলাইনে ব্যবহৃত প্রযুক্তি এবং সেবা এখন খুব জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। এগুলো সাধারণত রাজস্ব বিভাগ, ভূমি অধিদপ্তর এবং বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এর মাধ্যমে সরবরাহ করা হয়। নিম্নে কিছু আরও ভূমি সেবা সম্পর্কে বিস্তারিত দেওয়া হলো:


ভূমি মূল্য নির্ধারণ সংক্রান্ত সেবা - এই সেবার মাধ্যমে একটি জমি এর মূল্য নির্ধারণ করা হয়। এটি আধিকারিকভাবে বিবেচনা করে হয় যে কোন ভূমির মূল্য নির্ধারণ করার জন্য।


ভূমি মালিকের অনলাইন রেজিস্ট্রেশন এবং নথিপত্র সম্পাদন - এই সেবার মাধ্যমে ভূমি মালিকরা তাদের ভূমি সংক্রান্ত তথ্য এবং নথিপত্র সম্পাদন করতে পারেন।


ভূমি মালিকের অনলাইন ট্রান্সফার এবং রেকর্ড আপডেট - ভূমি মালিকরা সরকারি প্রতিষ্ঠানে যেমন জেলা কমপ্লেক্স বা উপজেলা ভূমি অফিসে গিয়ে তাদের ভূমি সংক্রান্ত কাজ করে থাকেন। এখন প্রায় সকল কাজ অনলাইনে হচ্ছে। যেমন ভূমি ক্রয় বা বিক্রয়ের জন্য অনলাইনে আবেদন করা হচ্ছে এবং ভূমি রেকর্ড ও ট্রান্সফার অনলাইনে করা হচ্ছে।


ভূমি মালিকের জমি ট্রান্সফার বা বিক্রয়ের ক্ষেত্রে অনলাইনে কিছু সেবা উল্লেখযোগ্য যেমন:

১. জমির পরিমাপ এবং রেকর্ড আপডেট: ভূমি মালিকরা অনলাইনে তাদের জমির পরিমাপ এবং রেকর্ড আপডেট করতে পারেন। এটি ভূমি ক্রয় ও বিক্রয়ের সময় খুবই গুরুত্বপূর্ণ হয়। অনলাইনে পরিমাপ করা হয় যাতে ভূমি মালিকরা পরিমাপ রেকর্ড সত্যিকার এবং নিরাপদ থাকে।


২. ট্রান্সফার রেজিস্ট্রেশন: ভূমি মালিকরা অনলাইনে তাদের জমি ট্রান্সফার করতে পারেন অনলাইনের মাধ্যমেই।


উপসংহার

বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের সহযোগিতা মাধ্যমে বাংলাদেশে ভূমি সম্পত্তির ডিজিটাল সেবা বিকাশ হচ্ছে। এই সেবাগুলো ভূমি সম্পত্তি বিক্রয় এবং ক্রয়, খতিয়ান আপডেট, ভুমি জোনিং সহ ভূমি সম্পত্তির সকল সম্পর্কিত তথ্যের সংগ্রহ, সংরক্ষণ, প্রক্রিয়াজাতকরণ এবং তথ্য দেওয়া সেবা সম্পর্কিত। ইচ্ছা মত সময়ে ভূমি সম্পত্তি প্রতিষ্ঠানে যে কোন সময় যাচাই করা যায়।


ভূমি সম্পত্তির ডিজিটাল সেবার ফলে ব্যবসায় ও বাণিজ্যিক ক্ষেত্রে সুবিধা হচ্ছে। কারণ ভূমি সম্পত্তি ক্রয় ও বিক্রয়ের প্রসেস এখন আর তাত্ক্ষণিক নয়, দ্রুত ও সহজ হয়েছে। এছাড়াও সেবাগুলো স্মার্টফোন ব্যবহার করে পাওয়া যায়।


ভূমি সংক্রান্ত অন্যান্য তথ্য জানুন







একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

[blogger]

Search This Blog

যোগাযোগ ফর্ম

নাম

ইমেল *

বার্তা *

Blogger দ্বারা পরিচালিত.
Javascript DisablePlease Enable Javascript To See All Widget