গর্ভাবস্থা পরীক্ষা করা হয় যখন মহিলার মাসিক সাময়িক অবস্থার দিনের পর এক সপ্তাহ পর পর মেয়ের পেটে প্রসবের চিহ্ন দেখা যায় না। মাসিক বন্ধ হওয়ার ৭ দিন পরে গর্ভাবস্থা পরীক্ষা করা যেতে পারে। গর্ভাবস্থা পরীক্ষা (pregnancy test) কখন করবেন? এই বিষয়ে বিস্তারিত থাকছে আজকের এই ইনফোটিতে।
আপনি প্রাথমিকভাবে জানতে পারেন একটি হোম গর্ভাবস্থা টেস্ট ব্যবহার করে আপনি গর্ভবতী হয়েছেন কিনা। এই টেস্টের জন্য একটি টেস্ট কিট কেনা যায় যা পানিতে ডুবিয়ে প্রয়োজনীয় রং পরিবর্তন করে। এছাড়াও, একজন ডাক্তার করা গর্ভাবস্থা পরীক্ষা একটি রেডিওলজিক্যালি স্ক্যান ব্যবহার করে করা হয় যা গর্ভবতী হওয়ার দিকে নিশ্চিততা দেয়।
পিরিয়ড অনুপস্থিত সব মহিলাদের জন্য উদ্বেগজনক হতে পারে। এটি আপনাকে গর্ভাবস্থা নিশ্চিত করার জন্য একটি গর্ভাবস্থা পরীক্ষা করার অনুরোধ করতে পারে। আপনি যখন নিশ্চিত হতে পারেন না যে, গর্ভবতী হয়েছেন কিনা। তখন আপনি গর্ভবস্থা পরীক্ষা করতে পারেন।
মহিলারা প্রায়ই গর্ভাবস্থা পরীক্ষা করার সঠিক সময় সম্পর্কে বিভ্রান্ত হন। বেশিরভাগ নামকরা ব্র্যান্ড মিসড পিরিয়ডের প্রথম দিনের আগেও সঠিক ফলাফল দেওয়ার দাবি করে। যাইহোক, একটি নিশ্চিত ফলাফলের জন্য একটু অপেক্ষা করা ভাল। এই পরীক্ষার কিটগুলি গর্ভাবস্থা নিশ্চিত করতে আপনার প্রস্রাবে গর্ভাবস্থার হরমোন হিউম্যান কোরিওনিক গোনাডোট্রপিন (HCG) এর উপস্থিতি মূল্যায়ন করে।
এগুলো জানুন:
মেয়েদের মাসিক না হলে কি বাচ্চা হওয়ার সম্ভবনা থাকে?
গর্ভবতী হওয়ার প্রথম সপ্তাহের লক্ষণসমূহ কি কি?
গর্ভাবস্থা পরীক্ষা করার সহজ উপায় কি?
যৌন মিলনের পর মেয়েদের তলপেটে ব্যাথা হয় কেন? প্রতিকার পাবেন কিভাবে?
কিভাবে একটি গর্ভাবস্থা পরীক্ষা কাজ করে?
আপনার ডিম নিষিক্ত হওয়ার প্রায় ছয় দিন পরে, আপনার শরীর হিউম্যান কোরিওনিক গোনাডোট্রপিন (HCG) নামে একটি হরমোন তৈরি করতে শুরু করে। আপনি গর্ভবতী কিনা তা নিশ্চিত করতে একটি গর্ভাবস্থা পরীক্ষা হিউম্যান কোরিওনিক গোনাডোট্রপিন (HCG) সনাক্ত করে থাকে।
গর্ভাবস্থা পরীক্ষা করার জন্য একটি উপাদান ব্যবহার করা হয় যা মহিলার মূল্যায়ন করে তার মূল্যবান প্রসব হরফের সাথে সম্পর্কিত তথ্য সরবরাহ করে।
হোম গর্ভাবস্থা টেস্টে সাধারণত একটি টেস্ট কিট থাকে যা দুই উপাদানে ভেদ করা হয় - একটি উপাদান মূল্যায়ন করে জন্য প্রয়োজনীয় প্রসব হরফ উপস্থাপন করে এবং অন্য উপাদান মূল্যায়ন করে জন্য প্রয়োজনীয় রং পরিবর্তন করে।
এই টেস্ট কিটের সাথে একটি প্রসব হরফ পরীক্ষা করার জন্য একটি স্ট্রিপ থাকে যা মূল্যায়ন করে জন্য প্রসব হরফ উপস্থাপন করে। প্রসব হরফ যখন ইউটেরাসে পড়ে, তখন এটি স্ট্রিপে দেখা যায় এবং রঙের পরিবর্তন হয়।
বাড়িতে গর্ভাবস্থা পরীক্ষা (pregnancy test) কতটা সঠিক?
ইউএস অফিস অন উইমেন'স হেলথ অনুসারে, বেশিরভাগ হোম প্রেগন্যান্সি টেস্ট কিট সঠিকভাবে ব্যবহার করা হলে 99% সঠিক ফলাফল প্রদান করে। সময়ের সাথে সাথে আপনার প্রস্রাবে হিউম্যান কোরিওনিক গোনাডোট্রপিন (HCG) এর পরিমাণ বৃদ্ধি পায়। তাই আপনি যদি আপনার পিরিয়ড মিস হওয়ার কয়েকদিন পর পরীক্ষা করেন, তাহলে আপনি সম্ভবত সঠিক, নির্ভরযোগ্য ফলাফল পেতে পারেন।
সুতরাং বাড়িতে গর্ভাবস্থা পরীক্ষা খুবই সঠিক এবং সহজ পদক্ষেপ। এই পরীক্ষাগুলি অন্যান্য সমস্ত উপায়ে গর্ভাবস্থা পরীক্ষা করার মধ্যে সবচেয়ে সহজ এবং সমর্থ।
হোম গর্ভাবস্থা টেস্ট সম্পন্ন করার আগে, মহিলাকে কিছু সতর্কতার মানদণ্ড অনুসরণ করতে হবে। টেস্ট সঠিক ফলাফল দেওয়ার জন্য, মহিলাকে টেস্টটি সম্পন্ন করার আগে সকালের প্রথম পেশাদার মল বা মুখের পানি থেকে নেওয়া নয়। এছাড়াও, মহিলার টেস্টটি করার আগে হালকা খাবার গ্রহণ করা উচিত নয়।
যদি সম্ভব হয় না হোম গর্ভাবস্থা টেস্টের ফলাফল সঠিক হয়, তবে সেটি পুনরায় পরীক্ষা করার জন্য একটি প্রফেশনাল ডাক্তারের কাছে চেকআপ করতে হবে। ডাক্তার সাধারণত মহিলার মূল্যায়ন করার জন্য কিছু আরও পরীক্ষাগুলি সম্পন্ন করার জন্য নির্দেশ দিতে পারেন।
কখন আপনি বাড়িতে গর্ভাবস্থা পরীক্ষা করবেন?
আপনার ডিম্ব নিষিক্ত হওয়ার 6 দিনের মধ্যে এই হরমোন তৈরি করতে শুরু করে। এর পরে, HCG মাত্রা দ্রুত বৃদ্ধি পায়। বেশিরভাগ মহিলা প্রতি 2 থেকে 3 দিনে এই যৌগের ডোজ দ্বিগুণ করে। প্রস্রাবে HCG-এর মাত্রা সনাক্ত করার জন্য একটি মিসড পিরিয়ডের পরে একটি বাড়িতে গর্ভাবস্থা পরীক্ষা করা ভাল। প্রস্রাবে HCG এর ঘনত্ব সর্বোচ্চ হলে গর্ভাবস্থা পরীক্ষা করার জন্য ভোরবেলা হল সেরা সময়। অর্থাৎ ভোরে কোন কিছু খাওয়ার আগে আপনার গর্ভাবস্থা পরীক্ষাটি করা উচিৎ।
সাধারণত গর্ভাবস্থা পরীক্ষা বাড়িতে করা যায় যখন মহিলার বিশ্বাস থাকে যে তিনি গর্ভবতী হয়েছেন এবং তার গর্ভধারণের সময়সীমা উত্তীর্ণ হয়ে গেছে। সাধারণত এই সময়সীমা মাসিক নির্ণয়ের সময় এক সপ্তাহ পরে বা হালকা ব্লিডিং বা মাংসপেশী ছিদ্রসহ অবস্থান থাকলে অবশ্যই সম্পন্ন হয়।
এছাড়াও, গর্ভাবস্থা পরীক্ষার ফলাফল ভুল হতে পারে যদি টেস্টটি সঠিকভাবে না সম্পন্ন করা হয়। তাই এটি আবার পরীক্ষা করার জন্য ডাক্তারের কাছে চেকআপ করা উচিত যদি প্রথম টেস্টটি সম্পন্ন করার পর মহিলার মাসিক নির্ণয় হয় না।
গর্ভধারণের পর শরীর কেন মানব কোরিওনিক গোনাডোট্রপিন হরমোন তৈরি করে?
HCG হরমোন প্রাথমিক পর্যায়ে গর্ভাবস্থা বজায় রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এই গর্ভাবস্থার হরমোনের মাত্রাগুলিও নির্ধারণ করে যে আপনি কতদিন গর্ভবতী। যাইহোক, গাইনোকোলজিস্টরা প্রায়ই HCG স্তরের সাথে গর্ভাবস্থার পর্যায়কে সম্পর্কযুক্ত করার জন্য একটি আল্ট্রাসাউন্ড পরীক্ষার পরামর্শ দেন।
গর্ভবতী মায়েরা ক্রমবর্ধমান ভ্রূণের সংলগ্ন কোষগুলি থেকে HCG হরমোন নিঃসরণ করে যখন এটি জরায়ুর প্রাচীরের সাথে সংযুক্ত হয়। অল্প সময়ের মধ্যে, এই কোষগুলি প্লাসেন্টায় রূপান্তরিত হয় এবং HCG উৎপাদনের ভূমিকা গ্রহণ করে। গর্ভাবস্থার প্রথম ত্রৈমাসিকে পর্যাপ্ত প্রোজেস্টেরন তৈরি করতে এইচসিজি কর্পাস লুটিয়ামকেও উদ্দীপিত করে।
গর্ভাবস্থার ষষ্ঠ সপ্তাহে HCG এর মাত্রা সর্বোচ্চ। এই পর্যায়ের পরে, প্ল্যাসেন্টা সম্পূর্ণরূপে কার্যকরী হয় এবং HCG-এর সাহায্য ছাড়াই যথেষ্ট প্রোজেস্টেরন তৈরি করে। এই পর্যায়ের পর HCG এর মান কমে যায়।
মানব কোরিওনিক গোনাডোট্রপিন (human chorionic gonadotropin, hCG) হরমোন হল একটি গ্রামপোষক হরমোন যা গর্ভধারণের পর মহিলার শরীরে তৈরি হয়। এটি প্রথমবার গর্ভবতী মাদারের ভিতরে শিশুর উপস্থিতি নির্দেশ করে।
গর্ভবতী মাদারের শরীরে হরমোনের এই উত্থানের পিছনের কারণ হল তার বাচ্চার প্রজনন সিস্টেমের উন্নয়ন এবং সঠিকভাবে তার শিশুর সমর্থন করা। এই হরমোন শিশুর উন্নয়ন এবং উন্নয়ন করে এবং তার প্রজনন সিস্টেমে কাজ করে যাতে মানব জাতি বহুত সংখ্যক বাচ্চা জন্ম দিতে পারে।
সাধারণত গর্ভধারণ এবং গর্ভবতী মাদারের হার্টবিট শুরু হওয়ার পর কিছু দিনের মধ্যে হরমোনের পরীক্ষা করা হয়। গর্ভবতী মহিলার হরমোন স্তরও এই সময়ে সম্পন্ন হয়।
বিভিন্ন ধরনের গর্ভাবস্থা পরীক্ষা কি কি?
বেশিরভাগ গর্ভাবস্থা পরীক্ষা প্রস্রাব বা রক্তে HCG এর উপস্থিতি সনাক্ত করে। এই বিশ্লেষণের উপর ভিত্তি করে, দুটি প্রাথমিক ধরনের গর্ভাবস্থা পরীক্ষা আছে।
১) গর্ভাবস্থার জন্য রক্ত পরীক্ষা
২) গর্ভাবস্থার জন্য প্রস্রাব পরীক্ষা
গর্ভাবস্থার জন্য রক্ত পরীক্ষা (Blood test for pregnancy)
1. গুণগত HCG পরীক্ষা।
2. পরিমাণগত HCG পরীক্ষা
গর্ভাবস্থার জন্য প্রস্রাব পরীক্ষা (Urine test for pregnancy)
কত তাড়াতাড়ি আমি গর্ভাবস্থা পরীক্ষা করতে পারি?
প্রারম্ভিক গর্ভাবস্থা পরীক্ষার সুবিধা এবং অসুবিধা
প্রারম্ভিক গর্ভাবস্থা পরীক্ষার সুবিধা:
- এটি বাড়িতে গর্ভাবস্থা সনাক্ত করার সবচেয়ে সহজ এবং দ্রুততম উপায়গুলির মধ্যে একটি।
- আপনার জন্ম নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা ব্যর্থ হলে এটি কার্যকর।
- এটি আপনাকে প্রসবপূর্ব যত্নের জন্য আপনার জীবনধারায় প্রয়োজনীয় পরিবর্তন করতে সাহায্য করে।
- এটি আপনাকে বুঝতে সাহায্য করে কখন ওষুধ বন্ধ বা শুরু করতে হবে।
- গর্ভাবস্থার লক্ষণগুলি বুঝুন সহজেই।
প্রারম্ভিক গর্ভাবস্থা পরীক্ষার অসুবিধা:
- আপনি যদি খুব তাড়াতাড়ি বা ভুলভাবে পরীক্ষা করেন তবে মিথ্যা-নেতিবাচক হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।
- এটি রাসায়নিক গর্ভাবস্থা সনাক্ত করতে পারে।
- এটি পরীক্ষার ফলাফলের কারণে উদ্বেগ সৃষ্টি করতে পারে।
- আপনি যদি পরীক্ষার পুনরাবৃত্তি করতে চান তবে এটি ব্যয়বহুল হতে পারে।
আমার গর্ভাবস্থা পরীক্ষা ইতিবাচক হলে আমার কি করা উচিত?
- একজন ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ করুন
- ধৈর্য্য ধারন করুন
- প্রসবপূর্ব ভিটামিন সহ একটি সুষম খাদ্য গ্রহণ শুরু করুন
- মদ খাওয়া বন্ধ করুন
- ধুমপান ত্যাগ কর
- ব্যায়াম নিয়মিত করুন
- অনেক পানি পান করুন
হোম প্রেগন্যান্সি টেস্টের ধাপগুলো কি কি?
হোম গর্ভাবস্থা পরীক্ষার সঠিকতা হার কি?
গর্ভাবস্থা পরীক্ষা নেওয়ার পরে কখন ডাক্তার দেখাবেন?
ধরুন,
আপনি প্রথম ট্রিমেস্টারে হয়েছেন এবং আপনার গর্ভাবস্থার স্বাভাবিক উন্নয়ন ঘটছে। তাহলে
আপনার ডাক্তার সমস্যার আভাস থাকলে সহজেই সেটা সমাধান করতে পারেন এবং আপনাকে পরবর্তী বিষয়ে নির্দেশনা দিয়ে গর্ভাবস্থার উন্নয়ন পর্যবেষণ করতে বলতে পারেন। তবে,
যদি আপনি কোন সমস্যার সম্মুখীন হন বা অস্থিতিমূলক
কোন লক্ষণ দেখা দিয়ে থাকেন, তবে আপনার ডাক্তার পরিচিত সময়ে আপনার দেখতে হবে।
গর্ভাবস্থা পরীক্ষা সম্পর্কে প্রায়শই জিজ্ঞাসিত প্রশ্ন
1. আপনার নিয়মিত ওষুধ কি গর্ভাবস্থা পরীক্ষার ফলাফলে হস্তক্ষেপ করতে পারে?
2. গর্ভাবস্থার পরীক্ষায় কি মিথ্যা-ইতিবাচক ফলাফল পাওয়া সম্ভব?
3. কখন আপনি একটি মিথ্যা-নেতিবাচক গর্ভাবস্থা পরীক্ষার ফলাফল পেতে পারেন?
4. প্রথম সপ্তাহে গর্ভাবস্থা পরীক্ষা কতটা সঠিক?
গর্ভাবস্থা সম্পর্কে গুগলে যে সার্চগুলো করা হয়
- কতদিন পর গর্ভবতী হয়
- গর্ভাবস্থার প্রথম সপ্তাহ
- গর্ভধারণ করার জন্য সবচেয়ে ভালো সময়
- গর্ভধারণ করার পর কতদিন পর প্রথম উল্টি হয়
- গর্ভাবস্থার শেষ মাসে যে যে সমস্যা হয়
- গর্ভাবস্থার মধ্যে ভিটামিন খাওয়ার প্রয়োজনীয়তা
- গর্ভাবস্থায় নিয়মিত যোগাযোগ করা উচিত কাকে
- গর্ভাবস্থার শেষ দিকে কি খেয়ে থাকতে হয়
- গর্ভাবস্থার সময় কি ফলন খেতে উচিত
- গর্ভাবস্থায় নিয়মিত কি ধরনের ব্যায়াম করা উচিত