গর্ভধারণ হলো একটি স্বাভাবিক প্রাকৃতিক প্রক্রিয়া। একজন নারীর ডিম্বাশয় থেকে ডিম্বাণু নির্গত হওয়ার পর তা শুক্রাণু দ্বারা নিষিক্ত হলে গর্ভধারণ ঘটে। গর্ভধারণের ফলে একজন নারীর শরীরে নানা পরিবর্তন দেখা দেয়। এই পরিবর্তনগুলোকে গর্ভধারণের লক্ষণ বলা হয়।
প্রথম মাস থেকে গর্ভধারণের লক্ষণগুলো
গর্ভধারণের
লক্ষণগুলো সাধারণত পিরিয়ড মিস হওয়ার পর থেকে দেখা
দেয়। তবে
কিছু কিছু ক্ষেত্রে পিরিয়ড মিস হওয়ার আগেও কিছু লক্ষণ দেখা দিতে পারে।
গর্ভধারণের লক্ষণগুলো
নিম্নরূপ:
- পিরিয়ড মিস হওয়া: গর্ভধারণের সবচেয়ে সাধারণ লক্ষণ হলো পিরিয়ড মিস হওয়া। যদি
আপনার পিরিয়ডের নির্ধারিত তারিখে পিরিয়ড না হয়, তাহলে আপনি গর্ভবতী হতে পারেন।
- বমি বমি ভাব: গর্ভধারণের প্রথম দিকে বমি বমি ভাব এবং বমি হওয়া একটি সাধারণ লক্ষণ। এই
লক্ষণটি সাধারণত গর্ভধারণের ৬-৮ সপ্তাহ পর্যন্ত থাকে।
- স্তনের পরিবর্তন: গর্ভধারণের প্রথম দিকে স্তনে ব্যথা, ফুলে যাওয়া, এবং নিপল গাঢ় হওয়ার মতো পরিবর্তন দেখা দিতে পারে।
- ক্লান্তি: গর্ভধারণের প্রথম দিকে ক্লান্তি একটি সাধারণ লক্ষণ।
- মূত্রত্যাগের পরিমাণ বৃদ্ধি: গর্ভধারণের প্রথম দিকে মূত্রত্যাগের পরিমাণ বৃদ্ধি পায়।
- বেলাবেলা ঘুম পাওয়া: গর্ভধারণের প্রথম দিকে বেলাবেলা ঘুম পাওয়া একটি সাধারণ লক্ষণ।
- মাথা ঘোরা: গর্ভধারণের প্রথম দিকে মাথা ঘোরা একটি সাধারণ লক্ষণ।
- রক্তপাত: গর্ভধারণের কয়েক সপ্তাহের মধ্যে সামান্য পরিমাণে রক্তপাত হতে পারে। এই
রক্তপাতকে ইমপ্লান্টেশন রক্তপাত বলা হয়।
এই
লক্ষণগুলোর সবগুলো একজন নারীর মধ্যে দেখা নাও দিতে পারে। তবে
যদি আপনার মধ্যে এই লক্ষণগুলোর যেকোনো
একটি দেখা দেয়, তাহলে আপনি গর্ভবতী হতে পারেন।
গর্ভধারণের লক্ষণগুলো সম্পর্কে আরো বিস্তারিত জানতে পারেন “গর্ভধারণের প্রথম সপ্তাহের লক্ষণগুলো কি কি?” ইনফোটি থেকে।
গর্ভধারণের পরীক্ষা:
আপনার
যদি গর্ভধারণের লক্ষণ দেখা দেয়, তাহলে আপনি ঘরে বসেই প্রেগন্যান্সি পরীক্ষা করতে পারেন। প্রেগন্যান্সি
পরীক্ষা কিট ফার্মেসি বা ওষুধের দোকান
থেকে কিনতে পাওয়া যায়। প্রেগন্যান্সি
পরীক্ষা কিটের সাহায্যে আপনি খুব সহজেই জানতে পারবেন আপনি গর্ভবতী কি না।
আপনি
যদি ঘরে বসেই প্রেগন্যান্সি পরীক্ষা করতে না চান, তাহলে
আপনি ডাক্তারের কাছে গিয়ে প্রেগন্যান্সি পরীক্ষা করতে পারেন। ডাক্তার
আপনার রক্ত বা প্রস্রাব পরীক্ষা
করে নিশ্চিতভাবে বলতে পারবেন আপনি গর্ভবতী কি না।
গর্ভধারণের পর
করণীয়:
আপনি
যদি গর্ভবতী হন, তাহলে আপনাকে কিছু বিষয় খেয়াল রাখতে হবে।
যেমন:
- স্বাস্থ্যকর খাবার খান।
- পর্যাপ্ত পরিমাণে বিশ্রাম নিন।
- নিয়মিত ব্যায়াম করুন।
- নিয়মিত ডাক্তারের পরামর্শ নিন।
গর্ভধারণের
সময় একজন নারীর শরীরে নানা পরিবর্তন হয়।
তাই এই সময় একজন
নারীর বিশেষ যত্ন নেওয়া উচিত।
সহবাসের কতদিন
পর
প্রেগন্যান্সি
টেস্ট
করতে
হয়?
সহবাসের
কমপক্ষে ২১ দিন পরে
প্রেগন্যান্সি টেস্ট করা উচিত। কারণ,
গর্ভধারণের পর ডিম্বাশয় থেকে
নিষিক্ত ডিম্বাণু জরায়ুতে রোপিত হতে ২১ দিন সময়
লাগে। এই সময়ের মধ্যে গর্ভবতী নারীর শরীরে hCG হরমোন উৎপন্ন হতে শুরু করে।
প্রেগন্যান্সি টেস্টে এই হরমোনের উপস্থিতি
নির্ণয় করা হয়।
আপনি
যদি সহবাসের পরপরই প্রেগন্যান্সি টেস্ট করেন, তাহলে ফল ভুল হওয়ার
সম্ভাবনা থাকে। কারণ,
এই সময়ের মধ্যে hCG হরমোনের পরিমাণ খুবই কম থাকে।
আপনি
যদি পিরিয়ড মিস হওয়ার পর প্রেগন্যান্সি টেস্ট
করেন, তাহলে ফল আরও নির্ভরযোগ্য
হবে। তবে
পিরিয়ড মিস হওয়ার আগেও যদি আপনার গর্ভধারণের কোনো লক্ষণ দেখা দেয়, তাহলে আপনি প্রেগন্যান্সি টেস্ট করতে পারেন।
প্রেগন্যান্সি
টেস্ট করার আগে নিম্নলিখিত বিষয়গুলো খেয়াল রাখবেন:
- পর্যাপ্ত পরিমাণে প্রস্রাব করে পরীক্ষা করুন।
- টেস্ট কিট ব্যবহার করার আগে নির্দেশাবলী ভালোভাবে পড়ুন।
- টেস্ট কিটটি নির্দিষ্ট মেয়াদ পর্যন্ত ব্যবহারযোগ্য কিনা তা নিশ্চিত করুন।
আপনি
যদি প্রেগন্যান্সি টেস্টের ফলাফল নিয়ে সন্দেহ করেন, তাহলে ডাক্তারের পরামর্শ নিন।
ডাক্তার আপনার রক্ত পরীক্ষা করে নিশ্চিতভাবে বলতে পারবেন আপনি গর্ভবতী কি না।
প্রেগন্যান্সি টেস্ট করবেন কিভাবে?
প্রেগন্যান্সি
টেস্টে সাধারণত প্রস্রাবে 'বেটা হিউম্যান কোরিওনিক গোনাডোট্রপিন' (hCG) নামের একটি বিশেষ হরমোনের উপস্থিতি নির্ণয় করা হয়।
গর্ভবতী নারীদের প্রস্রাবে এই হরমোনের পরিমাণ
অনেক বেশি থাকে। যা সাধারণত
একটি কিটের মাধ্যমে শনাক্ত করতে পারেন। এই প্রেগন্যান্সি
টেস্ট কিট দিয়ে প্রস্রাবে এই হরমোনের উপস্থিতি
শনাক্ত করা গেলে সেই ফলাফলকে 'পজিটিভ' বলে।
প্রেগন্যান্সি
টেস্টের বিভিন্ন পদ্ধতি রয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে সাধারণ পদ্ধতি হলো প্রস্রাব পরীক্ষা। প্রস্রাব
পরীক্ষায় বিভিন্ন ধরনের টেস্ট কিট ব্যবহার করা হয়।
এই টেস্ট কিটগুলো ফার্মেসি বা দোকানে কিনতে
পাওয়া যায়।
প্রস্রাব
পরীক্ষায় কীভাবে টেস্ট করতে হয় তা টেস্ট কিটের
গায়ে লেখা নির্দেশাবলীতে লেখা থাকে। সাধারণত
এই নির্দেশাবলী অনুসরণ করে টেস্ট করা হয়।
প্রস্রাব
পরীক্ষায় টেস্ট কিটের একটি অংশে প্রস্রাব সংগ্রহ করতে হয়।
এরপর টেস্ট কিটটি টেবিলের উপর রেখে অপেক্ষা করতে হয়।
কিছুক্ষণ পর টেস্ট কিটে
দুটি রেখা দেখা যায়। যদি
টেস্ট কিটে দুটি রেখা দেখা যায়, তাহলে ফলাফল পজিটিভ। অর্থাৎ,
আপনি গর্ভবতী। যদি
টেস্ট কিটে একটি রেখা দেখা যায়, তাহলে ফলাফল নেগেটিভ। অর্থাৎ,
আপনি গর্ভবতী নন।
প্রস্রাব
পরীক্ষার ফলাফল পেতে প্রায় ৫-১০ মিনিট
সময় লাগে। তবে
কিছু কিছু টেস্ট কিটে ফলাফল পেতে ১ ঘণ্টা পর্যন্ত
সময় লাগতে পারে।
প্রেগন্যান্সি
টেস্টের ফলাফল নিয়ে সন্দেহ থাকলে, ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া ভালো। ডাক্তার
আপনার রক্ত পরীক্ষা করে নিশ্চিতভাবে বলতে পারবেন আপনি গর্ভবতী কি না।
প্রস্রাব
পরীক্ষা ছাড়াও প্রেগন্যান্সি পরীক্ষার অন্যান্য পদ্ধতিও রয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে:
- রক্ত পরীক্ষা: রক্ত পরীক্ষায় hCG হরমোনের পরিমাণ পরিমাপ করা হয়। এই
পরীক্ষায় গর্ভধারণের সঠিকতা বেশি।
- ইউরিন অ্যামনিওসিস টেস্ট: এই পরীক্ষায় জলজ প্লাসেন্টা থেকে একটি নমুনা নেওয়া হয়। এই
নমুনায় hCG হরমোনের উপস্থিতি নির্ণয় করে গর্ভধারণের সত্যতা নিশ্চিত করা হয়।
- ইউটেরাস আল্ট্রাসাউন্ড: এই পরীক্ষায় আল্ট্রাসাউন্ডের মাধ্যমে জরায়ুতে ভ্রূণের অস্তিত্ব পরীক্ষা করা হয়। এই পরীক্ষায় গর্ভধারণের সত্যতা নিশ্চিত করা যায়।
মাসিক মিস হওয়ার কত দিন পর আপনি প্রেগন্যান্ট বুঝবেন?
সাধারণত মাসিক মিস হওয়ার এক সপ্তাহ পর
গর্ভধারণ পরীক্ষা করলে সঠিক ফলাফল পাওয়া যায়। কারণ
গর্ভধারণের পরপরই ডিম্বাশয়ে সৃষ্ট ভ্রূণের প্লাসেন্টা দ্বারা বেটা হিউম্যান কোরিওনিক গোনাডোট্রপিন (β-hCG) হরমোন উৎপন্ন হয়।
এই হরমোনটি প্রস্রাবেও পাওয়া যায়। তবে
মাসিক মিস হওয়ার এক সপ্তাহের আগে
এই হরমোনের পরিমাণ খুব কম থাকে। তাই এই সময়ে গর্ভধারণ
পরীক্ষা করলে ফলাফল ভুল হতে পারে।
তবে
কিছু ক্ষেত্রে মাসিক মিস হওয়ার আগেও গর্ভধারণ পরীক্ষা পজিটিভ আসতে পারে। তবে
এই ক্ষেত্রে ফলাফলের নির্ভরযোগ্যতা কম থাকে।
গর্ভধারণ
পরীক্ষার ফলাফল নিয়ে সন্দেহ থাকলে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
অন্যান্য ইনফো জানুন
গর্ভের সন্তান ছেলে না মেয়ে হবে কিভাবে বুঝবেন?
গর্ভবতী মায়ের খাবার তালিকা কি?