আমান আযমী ৮ বছর ধরে এক অমানুষিক পরিস্থিতিতে বন্দি ছিলেন। তিনি কীভাবে এতদিন টিকে ছিলেন, তা জানতে সকলেই আগ্রহী।
আট বছর! কল্পনাও করা যায় না, একজন মানুষ কীভাবে এতদিন গোপন কারাগারে বন্দি থাকতে পারে? সাবেক সেনা কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (বরখাস্ত) আবদুল্লাহিল আমান আযমী এই অবিশ্বাস্য অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরেছেন।
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর মুক্তি পেয়ে গতকাল গণমাধ্যমের সামনে আসা আযমী তার ভয়াবহ অতীতের কথা বর্ণনা করেছেন। তিনি জানিয়েছেন, তাকে কথিত ‘আয়না ঘরে’ বন্দি রাখা হয়েছিল। সেখানে তিনি কখনো সূর্যের আলো দেখতে পাননি। প্রতি রাতে মৃত্যুর ভয় তার সঙ্গী ছিল। বন্দি অবস্থায় তাকে নানা ধরনের নির্যাতন করা হয়েছে।
আট বছরের নির্যাতনের অন্ধকার থেকে আলোর পথে
মঙ্গলবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে ভার্চুয়ালি যোগ দিয়ে আযমী জামায়াতে ইসলামীর সাবেক আমীর গোলাম আযমের ছেলে বলে নিজেকে পরিচয় দিয়েছেন। ২০১৬ সালে তাকে গুম করা হয়েছিল বলে তার পরিবারের দাবি ছিল।
"আমি তাহাজ্জুদ পড়ে আল্লাহর কাছে শুধু কান্না করতাম। আমার লাশটা যেন আমার পরিবারের কাছে যায়।" এই কথাগুলোই বলে দেয় একজন মানুষ কতটা নিরাশা ও যন্ত্রণায় ছিলেন। আট বছর ধরে অন্ধকারের কারাগারে বন্দি হয়ে থাকার পর আমান আযমী যখন মুক্তি পান, তখন তার জীবন নতুন করে শুরু হয়।
তিনি বলেন, দেশে যে বিপ্লব হয়েছে সেটি তিনি জানতাম না। আগস্টের ৫ তারিখে রাত সাড়ে দশটার সময় এসে তাকে বলা হলো আপনাকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাওয়া হবে। কিন্তু তার পরিবর্তে তাকে নিয়ে যাওয়া হয় অজানা এক জায়গায়। রাস্তা ভাঙাচোরা, গাড়ি ছুটে চলেছে, কিন্তু কেউ তার প্রশ্নের উত্তর দিতে রাজি হয়নি।
ঘটনা তুলে ধরে তিনি বলেন, ৬ই আগস্ট একজন তাকে জানালেন, আজ তাকে মুক্তি দেয়া হতে পারে। একটা কাপড় নিয়ে আসা হলো, যেটা পরে তিনি মুক্তির পরে বাইরে বের হন। টাঙ্গাইলের এলেঙ্গা সড়কের পাশে তাকে নামিয়ে দেয়া হয় এবং পাঁচ হাজার টাকা দেয়া হয়। কিন্তু তিনি টাকা নিতে রাজি হননি।
ঠিকমতো হাঁটতে পারছিলেন না, কিন্তু তবুও একটা বাসে উঠে নিজের পরিবারের কাছে ফিরে যান। পরিবারের সঙ্গে মিলিত হয়ে চিকিৎসা গ্রহণ করে ৮ তারিখ ভোরে বাসায় পৌঁছালাম।
আমান আযমীর এই অভিজ্ঞতা শুধু তার নিজের নয়, এটি হাজার হাজার নির্যাতিত মানুষের কাহিনী। এই ঘটনা আমাদের সকলকে সচেতন করে তোলে যে স্বাধীনতা কত মূল্যবান।
আমান আযমীর নির্যাতনের ভয়াবহ চিত্র:
আবদুল্লাহিল আমান আযমীর গল্প শুনলে কান্নায় ভাসতে হয়। নিজের বাসায়ই অচেনা লোকদের হাতে ধরা পড়া, চোখ বেঁধে অন্ধকার কোঠায় আটকে থাকা, নির্যাতন—এসব কথা শুনলে মনে হয়, মানুষের ওপর এত নির্মম হওয়া কিভাবে সম্ভব?
আমান আযমী বলেন, "তারা আমাকে জিজ্ঞেস করল না, কে আপনি? কোথা থেকে এলেন? আমি তাদের পরিচয় চাইলেও তারা কোনো জবাব দিল না।" একজন নিরীহ মানুষকে এভাবে অমানুষিক নির্যাতন করা কতটা বর্বরতা!
আমান আযমীকে জোর করে লিখিয়ে নেওয়া হলো, "আমি রাজনীতি ছেড়ে বিদেশ চলে যাবো।" কিন্তু তিনি সাহস করে বলেছিলেন, "আমি স্বাধীন দেশের স্বাধীন নাগরিক। আপনারা আমাকে অবৈধভাবে আটকে রেখেছেন।" তার এই সাহসী কথাগুলো আজও অনুপ্রেরণার উৎস।
আমান আযমীর গল্প শুনলে মনে হয়, আমাদের দেশে এখনো অনেক কিছু করার আছে। মানুষকে নিরাপদে বাঁচার পরিবেশ দিতে হবে। কারোর ওপর এভাবে অত্যাচার চালানো কখনোই মেনে নেওয়া যাবে না।