কেউ খুঁজে পাবে না আপনার ব্যক্তিগত ছবি ও ভিডিও! স্মার্টফোনে এই সহজ কৌশল শিখে নিন এবং নিরাপত্তা নিশ্চিত করুন

Admin
0

আজকের ডিজিটাল যুগে স্মার্টফোন আমাদের জীবনের প্রতিটি মুহূর্ত ধারণ করে রাখার একটি অপরিহার্য সঙ্গী। ব্যক্তিগত ছবি ও ভিডিও সহজেই ফোনে সংরক্ষিত থাকে, কিন্তু তা হাতছাড়া হওয়ার ঝুঁকি থেকেই যায়। তাই নিজস্ব স্মৃতি এবং ব্যক্তিগত মুহূর্তগুলি যাতে নিরাপদ থাকে, তার জন্য কিছু গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন। অনেকেই হয়তো জানেন না, গুগল ফটোসে রয়েছে এমন একটি ফিচার, যা আপনার ব্যক্তিগত ছবি এবং ভিডিওকে রাখবে সুরক্ষিত। চলুন জেনে নেওয়া যাক, কীভাবে গুগল ফটোসে লক ফোল্ডার ব্যবহার করে আপনার গুরুত্বপূর্ণ ফাইলগুলোকে সুরক্ষিত রাখা যায়।


কেউ খুঁজে পাবে না আপনার ব্যক্তিগত ছবি ও ভিডিও! স্মার্টফোনে এই সহজ কৌশল শিখে নিন এবং নিরাপত্তা নিশ্চিত করুন


কেন প্রয়োজন লক ফোল্ডার?

অনেক সময় আমরা ব্যক্তিগত মুহূর্তগুলো ক্যামেরাবন্দী করে রাখি, এবং তা অনাকাঙ্ক্ষিতভাবে অন্যের হাতে পড়ে যাওয়ার আশঙ্কাও থাকে। বিশেষ করে, ফোনের গ্রিড বা মেমরিতে ছবি-ভিডিও ভেসে উঠলে তা অন্য কেউ দেখে ফেলতে পারে। এমন পরিস্থিতিতে লক ফোল্ডার একটি চমৎকার সমাধান, যা আপনার ছবি এবং ভিডিওগুলোকে ফোনের স্ক্রিন থেকে দূরে রাখবে, অন্য অ্যাপগুলিও সেগুলোর অ্যাক্সেস পাবে না।

কীভাবে লক ফোল্ডার তৈরি করবেন?

গুগল ফটোসে লক ফোল্ডার সেটআপ করা সহজ এবং কয়েকটি ধাপে সম্পন্ন করা যায়:

  1. প্রথমে গুগল ফটোস অ্যাপ ওপেন করুন।
  2. Library অপশনে ক্লিক করে “Locked Folder” অপশনে যান।
  3. লক ফোল্ডার সেটআপ করুন এবং স্ক্রিনে নির্দেশিত ধাপে ডিভাইস আনলক করুন।
  4. একবার ছবি বা ভিডিও লক ফোল্ডারে স্থানান্তরিত হলে, তা ফোনের অন্যান্য স্ক্রিনে বা অ্যাপের অনুমোদন সত্ত্বেও আর দেখা যাবে না।

লক ফোল্ডারে অটোমেটিক ব্যাকআপ রাখুন

লক ফোল্ডারে সেভ থাকা ছবি এবং ভিডিওগুলো যাতে ভবিষ্যতের জন্য সংরক্ষিত থাকে, তার জন্য অটোমেটিক ব্যাকআপ চালু করতে পারেন:

  1. গুগল অ্যাকাউন্ট দিয়ে গুগল ফটোসে সাইন ইন করুন।
  2. প্রোফাইল অপশনে গিয়ে Photos Settings এ যান।
  3. Backup Locked Folder অপশনটি সিলেক্ট করুন এবং আপনার ডিভাইসের পাসওয়ার্ড বা পিন দিন।
  4. ব্যাকআপ চালু করলে, ছবি ও ভিডিওগুলি আপনার জিমেইল অ্যাকাউন্টে ব্যাকআপ থাকবে, যা ফোন হারিয়ে গেলেও মুছে যাবে না।

এভাবে আপনার ব্যক্তিগত মুহূর্তগুলো থাকবে সুরক্ষিত এবং অন্য কারো কাছে হাতছাড়া হওয়ার আশঙ্কা থাকবে না। আজই শিখে নিন এই সহজ কৌশল এবং নিশ্চিন্তে স্মৃতি জমিয়ে রাখুন।


মোবাইলে ব্যক্তিগত কিছু রাখতে হলে কি কি সতর্কতা অবলম্বন করা জরুরি?

বর্তমান ডিজিটাল যুগে আমাদের ব্যক্তিগত তথ্যের বড় অংশ থাকে মোবাইলে। ছবি, ভিডিও, মেসেজ থেকে শুরু করে অনেক গোপনীয় ডকুমেন্টও সংরক্ষণ থাকে স্মার্টফোনে। এসব তথ্য সুরক্ষিত না রাখলে যে কেউ ব্যক্তিগত তথ্য হাতিয়ে নিতে পারে বা ভুল করে তা অন্যের হাতে পড়তে পারে। তাই স্মার্টফোনে ব্যক্তিগত তথ্য রাখার ক্ষেত্রে কিছু গুরুত্বপূর্ণ সতর্কতা মেনে চলা উচিত। চলুন জেনে নেওয়া যাক মোবাইলে ব্যক্তিগত কিছু রাখতে হলে কী কী সতর্কতা অবলম্বন করা জরুরি:

১. শক্তিশালী পাসওয়ার্ড বা প্যাটার্ন লক ব্যবহার করুন

মোবাইলের প্রধান নিরাপত্তা স্তর হলো স্ক্রিন লক। এজন্য সাধারণ প্যাটার্নের পরিবর্তে জটিল প্যাটার্ন বা অক্ষর, সংখ্যা এবং চিহ্ন সমন্বয়ে শক্তিশালী পাসওয়ার্ড ব্যবহার করুন। বায়োমেট্রিক অপশন থাকলে, যেমন ফিঙ্গারপ্রিন্ট বা ফেস আইডি সেট করতে পারেন, যা অধিক সুরক্ষিত।

২. গুগল ফটোসে লক ফোল্ডার ব্যবহার করুন

যারা ব্যক্তিগত ছবি এবং ভিডিও ফোনে রাখেন, তাদের জন্য গুগল ফটোসের লক ফোল্ডার একটি ভালো সমাধান। এই ফোল্ডারে রাখলে ছবি এবং ভিডিও সরাসরি ফোনের গ্যালারিতে বা গ্রিডে দেখা যায় না, ফলে তা কেউ সহজে দেখতে পারবে না। লক ফোল্ডারে পাসওয়ার্ড বা পিন দিয়ে তালা দেয়া থাকে, তাই এটি নিরাপদ।

৩. প্রয়োজনীয় ফাইল এনক্রিপ্ট করুন

আপনার ব্যক্তিগত এবং গুরুত্বপূর্ণ ফাইলগুলি এনক্রিপশন করে রাখতে পারেন। মোবাইলে অনেক অ্যাপ রয়েছে যা ফাইল এনক্রিপ্ট করতে সাহায্য করে। এনক্রিপ্ট করা ফাইল সুরক্ষিত থাকে এবং এটি ডিক্রিপ্ট না করলে সহজে খুলে দেখা যায় না।

৪. অ্যাপ পারমিশন নিয়ন্ত্রণে রাখুন

প্রায়ই বিভিন্ন অ্যাপ ইনস্টল করার সময় আমরা অবচেতনভাবেই অ্যাপ পারমিশন দিয়ে দিই, যেমন কন্ট্যাক্টস, ক্যামেরা, লোকেশন ইত্যাদির অ্যাক্সেস। কিন্তু অনেক অ্যাপেরই এসব পারমিশন প্রয়োজন নেই। তাই সেটিংসে গিয়ে অ্যাপের প্রয়োজনীয় পারমিশনগুলো যাচাই করে শুধু প্রয়োজনীয় পারমিশনই দিন।

৫. ক্লাউড স্টোরেজে সংরক্ষণ করুন এবং ব্যাকআপ মনিটরিং করুন

ব্যক্তিগত ডেটা সংরক্ষণে ক্লাউড স্টোরেজের ব্যবহার ভালো একটি পন্থা। আপনি গুগল ড্রাইভ, ড্রপবক্স বা অন্যান ক্লাউড স্টোরেজ সেবাগুলি ব্যবহার করে ব্যাকআপ রাখতে পারেন। তবে ক্লাউডে সংরক্ষণের আগে এনক্রিপশন অপশন আছে কিনা যাচাই করুন। এভাবে আপনার ডেটা অনলাইনেও সুরক্ষিত থাকবে এবং হারিয়ে গেলেও পুনরুদ্ধার করা সম্ভব হবে।

৬. ফাইল হাইডিং অ্যাপ ব্যবহার করুন

বিভিন্ন হাইডিং অ্যাপ মোবাইলে গোপন ফাইলগুলোকে নিরাপদে রাখতে সাহায্য করে। এই ধরনের অ্যাপ ব্যবহার করলে আপনার ফোনে ছবি, ভিডিও, এবং অন্যান্য ফাইলগুলো আলাদা ফোল্ডারে রাখা যায় এবং পাসওয়ার্ড বা প্যাটার্ন দিয়ে তালা দেওয়া যায়।

৭. নিয়মিত ডিভাইস সফটওয়্যার আপডেট করুন

মোবাইলের অপারেটিং সিস্টেম এবং অন্যান্য অ্যাপের নিয়মিত আপডেট করলে বিভিন্ন নিরাপত্তা ঝুঁকি থেকে রক্ষা পাওয়া যায়। সফটওয়্যার আপডেটের মাধ্যমে মোবাইলের নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও শক্তিশালী হয়, যা আপনাকে হ্যাকার বা ক্ষতিকারক অ্যাপ থেকে রক্ষা করবে।

৮. থার্ড-পার্টি অ্যাপ ইনস্টল থেকে বিরত থাকুন

অনির্ভরযোগ্য বা অচেনা সোর্স থেকে থার্ড-পার্টি অ্যাপ ইনস্টল করা বিপজ্জনক হতে পারে। এসব অ্যাপে ম্যালওয়্যার থাকার সম্ভাবনা থাকে যা আপনার ডেটা চুরি করতে পারে। তাই সবসময় গুগল প্লে স্টোর বা অ্যাপলের অ্যাপ স্টোর থেকে অ্যাপ ডাউনলোড করুন।

৯. অ্যাপলক ব্যবহার করুন

গুরুত্বপূর্ণ অ্যাপগুলোর জন্য অ্যাপলক ব্যবহার করা যেতে পারে। এর ফলে ব্যক্তিগত মেসেজিং অ্যাপ, ব্যাংকিং অ্যাপ, গ্যালারি বা অন্য গুরুত্বপূর্ণ অ্যাপে অন্য কেউ প্রবেশ করতে পারবে না।

১০. অপ্রয়োজনীয় ক্যাশ এবং ব্রাউজিং হিস্টোরি ক্লিয়ার করুন

অনেক সময় আমরা বিভিন্ন ওয়েবসাইটে লগইন বা তথ্য খুঁজতে যাই। এর ফলে অনেক ব্যক্তিগত তথ্য ক্যাশে জমা হয়। নিয়মিত ক্যাশ এবং ব্রাউজিং হিস্টোরি মুছে ফেললে, অনাকাঙ্ক্ষিতভাবে ব্যক্তিগত তথ্য অন্যের হাতে পড়ার ঝুঁকি কমে যায়।

১১. অ্যান্টি-ভাইরাস সফটওয়্যার ব্যবহার করুন

বিশ্বস্ত অ্যান্টি-ভাইরাস অ্যাপ ইনস্টল করে রাখুন, যা ম্যালওয়্যার এবং ভাইরাসের বিরুদ্ধে আপনার ফোনকে সুরক্ষিত রাখবে।


উপসংহার

মোবাইলে ব্যক্তিগত তথ্য সুরক্ষিত রাখার জন্য প্রয়োজনীয় সতর্কতা অনুসরণ করলে আপনি সহজেই আপনার ডেটা সুরক্ষিত রাখতে পারবেন। প্রযুক্তির সহজলভ্যতার সাথে সাথে হ্যাকার এবং ম্যালওয়্যারের ঝুঁকিও বাড়ছে। তাই উপরের এসব পদক্ষেপ অনুসরণ করে আপনার ব্যক্তিগত মুহূর্তগুলোকে সুরক্ষিত রাখতে সচেতন হোন এবং নিশ্চিন্তে স্মার্টফোন ব্যবহার করুন।

Tags

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)

#buttons=(Accept !) #days=(20)

Our website uses cookies to enhance your experience. Learn More
Accept !