অ্যাপল ফোল্ডএবল ডিভাইস নিয়ে গোপনে কাজ করছে—এমন গুজব প্রযুক্তি বিশ্বে নতুন নয়। সম্প্রতি মার্কিন সংবাদমাধ্যম ব্লুমবার্গ-এর প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, অ্যাপল সম্ভবত ২০২৬ সালের শুরুর দিকেই একটি ফোল্ডএবল আইপ্যাড বাজারে আনতে পারে। বলা হচ্ছে, এটি আকারে হবে সবচেয়ে বড় আইপ্যাডের দ্বিগুণ এবং এতে থাকবে ‘প্রায় অদৃশ্য ক্রিজ’ সহ এক্সটেন্ডেড স্ক্রিন।
কী থাকতে পারে ফোল্ডএবল আইপ্যাডে?
ব্লুমবার্গের প্রতিবেদন অনুযায়ী, অ্যাপল ডিজাইনাররা ইতোমধ্যেই একটি প্রোটোটাইপ তৈরি করেছেন। এই ডিভাইসটি সম্পূর্ণ খুলে ধরলে এর স্ক্রিনের আকার হবে ১৮.৮ ইঞ্চি। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দুটি আইপ্যাড প্রো পাশাপাশি রাখার মতো অভিজ্ঞতা দেবে এই ডিভাইস। তাছাড়া, স্ক্রিনে থাকবে এমন প্রযুক্তি, যা ক্রিজ (ভাঁজ) প্রায় অদৃশ্য করে তুলবে।
অ্যাপলের গোপন পরিকল্পনা
অ্যাপল সাধারণত তাদের নতুন পণ্য সম্পর্কে আগাম কোনো মন্তব্য করে না। এ বিষয়টি আরও স্পষ্ট হয়, যখন ব্রিটিশ দৈনিক ইন্ডিপেনডেন্ট অ্যাপলের কাছে এই ডিভাইস সম্পর্কে জানতে চাইলে কোনো প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি। যদিও অ্যাপলের গোপন প্রকল্প এবং নতুন পণ্য নিয়ে গুঞ্জন প্রযুক্তি বিশ্বে লেগেই থাকে।
ফোল্ডএবল আইপ্যাড: অ্যাপলের দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা
ফোল্ডএবল ডিভাইস নিয়ে অ্যাপল দীর্ঘদিন ধরে কাজ করছে। ২০১১ সাল থেকেই প্রতিষ্ঠানটি এ সম্পর্কিত বেশ কিছু পেটেন্ট দাখিল করেছে। প্রযুক্তি বিশ্লেষকরা মনে করছেন, ফোল্ডএবল আইফোন চালুর আগে অ্যাপল ফোল্ডএবল আইপ্যাড আনতে পারে। এর মূল কারণ হলো, ফোল্ডএবল আইফোন বাজারে ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে, কারণ এটি বর্তমান আইফোন লাইনআপে প্রভাব ফেলতে পারে।
বাজার বিশ্লেষকদের দৃষ্টিভঙ্গি
বাজার গবেষণা প্রতিষ্ঠান সিসিএস ইনসাইট-এর বিশ্লেষক বেন উড বলেন, "অ্যাপলের জন্য উচ্চ ঝুঁকির পণ্য হিসেবে দেখা হচ্ছে ফোল্ডএবল আইফোনকে।" তার মতে, ফোল্ডএবল আইফোন সরাসরি আইফোনের বাজারে প্রতিযোগিতা তৈরি করতে পারে। ফলে অ্যাপল আরও সতর্কভাবে পদক্ষেপ নিচ্ছে। অ্যাপলের সহ-প্রতিষ্ঠাতা স্টিভ ওজনিয়াকও ফোল্ডএবল প্রযুক্তি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছিলেন। তিনি বলেছিলেন, "অ্যাপল যদি ফোল্ডএবল ডিভাইস বাজারে না আনে, তবে তারা প্রতিযোগীদের পেছনে পড়ে যেতে পারে।" ২০১৯ সালে স্যামসাং যখন তাদের প্রথম ফোল্ডএবল স্মার্টফোন ‘গ্যালাক্সি ফোল্ড’ উন্মোচন করে, তখন অ্যাপলের প্রতি চাপ আরও বাড়ে।
ফোল্ডএবল ডিভাইসের বাজার প্রতিযোগিতা
স্যামসাং এবং গুগল ইতোমধ্যেই ফোল্ডএবল স্মার্টফোন বাজারে এনেছে। স্যামসাং গ্যালাক্সি জেড ফোল্ড এবং গুগল পিক্সেল ফোল্ড বাজারে ইতোমধ্যেই জনপ্রিয়তা পেয়েছে। অ্যাপল যদি ফোল্ডএবল ডিভাইস বাজারে আনতে দেরি করে, তবে প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়তে পারে। অ্যাপলের বর্তমান অবস্থান এবং পণ্য উদ্ভাবনের ধারা বিবেচনা করলে, ফোল্ডএবল আইপ্যাড আনার কৌশলটি অনেক বেশি নিরাপদ বলে মনে হচ্ছে।
ভবিষ্যতে কী দেখার আছে?
বিভিন্ন প্রতিবেদন থেকে ধারণা করা যাচ্ছে, অ্যাপলের ফোল্ডএবল আইপ্যাড ২০২৬ সালের প্রথম দিকে বাজারে আসতে পারে। এই ডিভাইসটি অ্যাপলের পরবর্তী যুগান্তকারী উদ্ভাবন হিসেবে চিহ্নিত হতে পারে। বড় স্ক্রিন, প্রায় অদৃশ্য ক্রিজ, এবং শক্তিশালী প্রসেসরসহ ফোল্ডএবল প্রযুক্তি অ্যাপলের নতুন দিগন্ত উন্মোচন করতে পারে।
উপসংহার
অ্যাপলের ফোল্ডএবল আইপ্যাড প্রযুক্তি বিশ্বে ব্যাপক আলোড়ন তুলেছে। যদিও আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু জানানো হয়নি, কিন্তু বিভিন্ন প্রযুক্তি বিশ্লেষক ও বাজার গবেষকদের মতে, ২০২৬ সালের প্রথম দিকে অ্যাপলের ফোল্ডএবল আইপ্যাড বাজারে আসতে পারে। এই ডিভাইসটি অ্যাপলের পণ্যের বৈচিত্র্য বাড়াবে এবং প্রতিযোগীদের চাপে রাখবে। ফোল্ডএবল প্রযুক্তিতে অ্যাপলের এই পদক্ষেপ ভবিষ্যতের মোবাইল ডিভাইসের দৃষ্টিভঙ্গিকে সম্পূর্ণরূপে পরিবর্তন করতে পারে।
অন্যান্য ইনফো জানুন:
আইফোনের ব্যাটারি দ্রুত শেষ হওয়ার কারণ এবং সমাধান কি?
স্যামসাং গ্যালাক্সি এস২৪ আলট্রা বনাম আইফোন ১৫ প্রো ম্যাক্স: কোনটি সেরা আপনার জন্য?
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন