বাংলাদেশের সংসদ সদস্যদের ট্যাক্সমুক্ত গাড়ি আমদানির সুযোগ নিয়ে তৈরি হয়েছে নতুন বিতর্ক। সম্প্রতি চট্টগ্রাম কাস্টমস বিভাগ ৪৪টি বিলাসবহুল গাড়ির রিলিজ প্রক্রিয়া স্থগিত করেছে। গাড়িগুলি আমদানি করা হয়েছে সেইসব সংসদ সদস্যদের নামে, যারা এখন আর সংসদ সদস্য নন।
সংসদ সদস্যদের ট্যাক্সমুক্ত গাড়ি সুবিধা: একটি পেছনের গল্প
১৯৮৭ সালে এরশাদ সরকারের সময় সংসদ সদস্যদের ট্যাক্সমুক্ত গাড়ি আমদানির সুবিধা চালু হয়। এই সুবিধার উদ্দেশ্য ছিল সংসদ সদস্যদের কাজের জন্য বিলাসবহুল গাড়ি প্রদান। বর্তমানে সংসদ সদস্যরা প্রতি পাঁচ বছরে একটি ট্যাক্সমুক্ত গাড়ি আমদানি করতে পারেন।
এই সুবিধার মাধ্যমে সংসদ সদস্যরা ৮১০ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক ছাড় পান। উদাহরণস্বরূপ, একেকটি টয়োটা ল্যান্ড ক্রুজারের আমদানি মূল্য যেখানে ৯৮ লাখ টাকার নিচে, শুল্কসহ সেটির দাম ৮ কোটি টাকার বেশি হতে পারে।
কাস্টমসের হস্তক্ষেপ: গাড়ি আটকে দেওয়ার কারণ
চলতি মাসে আওয়ামী লীগ সরকারের মেয়াদ শেষ হওয়ার পর, প্রাক্তন সংসদ সদস্যদের ট্যাক্সমুক্ত সুবিধা বাতিল হয়। ফলে, তাদের নামে আমদানি করা গাড়িগুলির রিলিজ আটকে দেওয়া হয়।
চট্টগ্রাম কাস্টমস কমিশনার মোহাম্মদ ফয়জুর রহমান জানিয়েছেন:
"গাড়িগুলি সংসদীয় কাজে ব্যবহারের উদ্দেশ্যে ট্যাক্সমুক্ত সুবিধায় আনা হয়েছিল। এখন যেহেতু তারা সংসদ সদস্য নন, তাই আমরা গাড়িগুলি ছাড় দিচ্ছি না।"
গাড়ি আমদানির পরিসংখ্যান ও আর্থিক ক্ষতি
জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (NBR)-এর তথ্য অনুযায়ী, মোট ৫১টি গাড়ি আমদানির খরচ ছিল প্রায় ৬১ কোটি টাকা। এর মধ্যে বেশিরভাগই জাপান ও সিঙ্গাপুর থেকে আনা হয়েছে। গত ১৫ বছরে এই সুবিধার কারণে সরকারের প্রায় ৫,১৪৭ কোটি টাকা রাজস্ব ক্ষতি হয়েছে।
ট্যাক্সমুক্ত সুবিধা: বিতর্কিত ইস্যু
ট্যাক্সমুক্ত গাড়ি আমদানির সুবিধাটি আইনপ্রণেতাদের জন্য প্রণীত হলেও, এর অপব্যবহারের অভিযোগ দীর্ঘদিন ধরে উঠে আসছে। প্রাক্তন সংসদ সদস্যদের নামে গাড়ি আমদানি করে, সেগুলি ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহার করা বা ব্যবসায়িক উদ্দেশ্যে বিক্রি করার ঘটনাও শোনা যায়।
সাম্প্রতিক তথ্য অনুযায়ী:
- ৪৪টি গাড়ির মধ্যে ৩টি গাড়ির আমদানি নথি দাখিল করা হয়েছে।
- সাতটি গাড়ি আগেই রিলিজ হয়েছে, যার মধ্যে কয়েকটি বিশিষ্ট ব্যক্তিদের নামে।
সরকারের পদক্ষেপ ও সম্ভাব্য সমাধান
বর্তমানে কাস্টমস বিভাগ জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (NBR) নির্দেশনার অপেক্ষায় রয়েছে। এক্ষেত্রে দুটি সম্ভাব্য সিদ্ধান্ত হতে পারে:
- গাড়িগুলোর রিলিজের জন্য সম্পূর্ণ শুল্ক আদায়।
- ভবিষ্যতে ট্যাক্সমুক্ত সুবিধার জন্য নতুন নিয়ম তৈরি।
BRTA চেয়ারম্যান গৌতম চন্দ্র পাল জানিয়েছেন, যদি NBR বা আইন মন্ত্রণালয় নির্দেশনা দেয়, তবে তারা গাড়িগুলোর রেজিস্ট্রেশন প্রক্রিয়া স্থগিত করতে প্রস্তুত।
উপসংহার
ট্যাক্সমুক্ত গাড়ি আমদানির সুবিধা সংসদ সদস্যদের একটি গুরুত্বপূর্ণ সুবিধা হলেও, এর অপব্যবহার বন্ধে কঠোর আইন প্রণয়ন করা প্রয়োজন। সরকারের উচিত এই সুবিধার অপব্যবহার রোধে আরও স্বচ্ছ নীতিমালা প্রণয়ন করা, যাতে সরকারি রাজস্বের ক্ষতি না হয় এবং জনগণের আস্থা বজায় থাকে।
সুত্র: লিংক
বিলাসবহুল গাড়ির মডেল গুলো কি কি?
বিশ্বজুড়ে বিলাসবহুল গাড়ি তৈরি করে এমন বেশ কিছু বিখ্যাত ব্র্যান্ড রয়েছে। তাদের মধ্যে কিছু জনপ্রিয় মডেলের কিছু নাম হলো:
১. রোলস-রয়েস (Rolls-Royce)
- ফ্যান্টম (Phantom)
- গোস্ট (Ghost)
- কালিনান (Cullinan)
- স্পেক্টার (Spectre)
২. বেন্টলি (Bentley)
- বেন্টাইগা (Bentayga)
- কন্টিনেন্টাল জিটি (Continental GT)
- ফ্লাইং স্পার (Flying Spur)
৩. মার্সিডিজ-বেঞ্জ (Mercedes-Benz)
- এস-ক্লাস (S-Class)
- মায়বাখ এস ৬৮০ (Maybach S 680)
- ইকিউএস (EQS)
৪. ল্যাম্বোরগিনি (Lamborghini)
- অ্যাভেন্টাডর (Aventador)
- হুরাকান (Huracán)
- ইউরাস (Urus)
৫. ফেরারি (Ferrari)
- ৮১২ সুপারফাস্ট (812 Superfast)
- এফ৮ ট্রিবিউটো (F8 Tributo)
- পোর্টোফিনো এম (Portofino M)
৬. পোরশে (Porsche)
- ৯১১ টার্বো এস (911 Turbo S)
- কায়েন (Cayenne)
- তায়কান (Taycan)
৭. টেসলা (Tesla)
- মডেল এস প্লেড (Model S Plaid)
- মডেল এক্স (Model X)
- রোডস্টার (Roadster)
৮. অ্যাস্টন মার্টিন (Aston Martin)
- ডিবি১১ (DB11)
- ভ্যানকুইশ (Vanquish)
- ভ্যালকিরি (Valkyrie)
৯. ম্যাসেরাতি (Maserati)
- কুয়াট্রোপোর্টে (Quattroporte)
- লেভান্তে (Levante)
- গ্রেকালে (Grecale)
১০. বুগাটি (Bugatti)
- শিরন (Chiron)
- ডিভো (Divo)
- বোলাইড (Bolide)
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন