কীভাবে বুঝবেন আপনার ফোনে আড়ি পাতা হচ্ছে? মুঠোফোন হ্যাক হওয়া ঠেকানোর উপায়

বর্তমান ডিজিটাল যুগে প্রতারণার ঘটনা আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে। ই-ব্যাংকিং, অনলাইন শপিং বা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সক্রিয় ব্যবহারকারীরা প্রায়ই সাইবার অপরাধীদের লক্ষ্যবস্তু হন। তবে আরও ভয়ের বিষয় হল, আপনার মুঠোফোনও হ্যাকারদের কবলে পড়তে পারে। মুঠোফোন হ্যাক হয়ে গেলে আপনার ব্যক্তিগত তথ্য, আর্থিক লেনদেনের বিবরণ, এমনকি ব্যক্তিগত কথোপকথনও ফাঁস হয়ে যেতে পারে।


কীভাবে বুঝবেন আপনার ফোনে আড়ি পাতা হচ্ছে? মুঠোফোন হ্যাক হওয়া ঠেকানোর উপায়


এই ইনফোটিতে আমরা জানাব, কীভাবে বুঝবেন আপনার ফোন হ্যাক হয়েছে কিনা এবং কীভাবে তা প্রতিরোধ করবেন।


কীভাবে বুঝবেন আপনার ফোন হ্যাক হয়েছে?

১. ফোনের ব্যাটারি দ্রুত শেষ হয়ে যাচ্ছে

আপনার ফোনে যদি চার্জ সম্পূর্ণ করেও তা দ্রুত ফুরিয়ে যায়, তাহলে এটি হ্যাকিংয়ের লক্ষণ হতে পারে। হ্যাকাররা ফোনে ম্যালওয়্যার বা স্পাইওয়্যার ইনস্টল করে, যা ব্যাকগ্রাউন্ডে সক্রিয় থাকে এবং প্রচুর ব্যাটারি খরচ করে।

২. ফোন অপ্রত্যাশিতভাবে গরম হয়ে যাচ্ছে

সাধারণত, ফোনে ভিডিও দেখা বা গেম খেলার সময় গরম হওয়া স্বাভাবিক। তবে, যদি ফোনটি ব্যবহার না করেও গরম হয়ে যায়, তবে বুঝতে হবে ফোনে কিছু অস্বাভাবিক প্রসেস চলছে, যা হ্যাকিংয়ের লক্ষণ হতে পারে।

৩. অপ্রত্যাশিত বিজ্ঞাপন বা পপ-আপ মেসেজ দেখা যাচ্ছে

আপনার ফোনে যদি অযাচিত বিজ্ঞাপন বা পপ-আপ মেসেজ ঘন ঘন দেখা যায়, তাহলে বুঝতে হবে ফোনে ম্যালওয়্যার রয়েছে। বিশেষ করে, যদি এসব বিজ্ঞাপনে সন্দেহজনক লিঙ্কে ক্লিক করার জন্য বলা হয়, তাহলে দ্রুত সতর্ক হওয়া উচিত।

৪. ফোন নিজে থেকেই রিস্টার্ট বা অ্যাপ ইনস্টল করছে

আপনার ফোন যদি হঠাৎ করে নিজে থেকে রিস্টার্ট হয়, বা নতুন অ্যাপ্লিকেশন ইনস্টল হয়, তবে এটি একটি বড় সতর্কবার্তা। সাধারণত, হ্যাকাররা রিমোট অ্যাক্সেস পেয়ে ফোনের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয়।

5. নিজে থেকে মেসেজ বা কল চলে যাচ্ছে

আপনার ফোন থেকে যদি স্বয়ংক্রিয়ভাবে কারও কাছে মেসেজ বা কল চলে যায়, তবে বুঝতে হবে আপনার ফোনে হ্যাকার প্রবেশ করেছে। অনেক সময় হ্যাকাররা আপনার হোয়াটসঅ্যাপ, ফেসবুক বা অন্যান্য মেসেজিং অ্যাপে প্রবেশ করে স্প্যাম বার্তা পাঠায়।

6. গ্যালারিতে অচেনা ছবি বা ভিডিও পাওয়া

যদি আপনার ফোনের গ্যালারিতে এমন ছবি বা ভিডিও দেখা যায়, যা আপনি তোলেননি, তবে বুঝতে হবে ফোনটি হ্যাক হয়েছে। কারণ হ্যাকাররা ফোনের ক্যামেরার নিয়ন্ত্রণ নিতে সক্ষম হয়।

7. ইন্টারনেট ডেটা দ্রুত শেষ হয়ে যাচ্ছে

যদি ইন্টারনেট ডেটার ব্যবহার হঠাৎ বেড়ে যায়, তাহলে বুঝতে হবে ফোনে ম্যালওয়্যার কাজ করছে। ম্যালওয়্যার ব্যাকগ্রাউন্ডে থেকে ডেটা ট্রান্সমিশন করে, যা ডেটা প্ল্যান দ্রুত শেষ করে দেয়।

আরো জানুন:





ফোন হ্যাক হওয়া থেকে বাঁচার উপায়

১. সফটওয়্যার আপডেট রাখুন

প্রতিটি সফটওয়্যার আপডেটে ডেভেলপাররা নতুন নিরাপত্তা প্যাচ যুক্ত করে, যা ফোনকে হ্যাকিং থেকে রক্ষা করে। তাই, iOS বা Android আপডেট এলে সঙ্গে সঙ্গে ইনস্টল করুন।

২. অ্যান্টিভাইরাস সফটওয়্যার ব্যবহার করুন

নির্ভরযোগ্য অ্যান্টিভাইরাস অ্যাপ ইনস্টল করে ফোনে স্ক্যান চালিয়ে ম্যালওয়্যার শনাক্ত করুন। Avast, Kaspersky, Norton ইত্যাদি অ্যাপ বিশ্বস্ত নিরাপত্তা প্রদান করে।

৩. অযাচিত অ্যাপ ইনস্টল এড়িয়ে চলুন

অপরিচিত বা সন্দেহজনক অ্যাপ কখনোই ডাউনলোড করবেন না। অ্যাপ ইনস্টলের আগে ডেভেলপার, রেটিং এবং রিভিউ দেখে নিশ্চিত হন। অনেক সময় ফ্রি গেম বা ফ্রি ইউটিলিটি অ্যাপ-এর মাধ্যমে হ্যাকাররা আপনার ফোনে ম্যালওয়্যার ঢুকিয়ে দেয়।

৪. সন্দেহজনক লিঙ্কে ক্লিক করবেন না

ইমেল, এসএমএস বা হোয়াটসঅ্যাপে আসা সন্দেহজনক লিঙ্কে ক্লিক করা থেকে বিরত থাকুন। সাধারণত, এই লিঙ্কে ক্লিক করলেই ম্যালওয়্যার ইনস্টল হয়ে যায়।

৫. অ্যাপ পারমিশন সীমিত করুন

অ্যাপ ইনস্টল করার সময় খুব বেশি পারমিশন চাওয়া অ্যাপগুলোকে এড়িয়ে চলুন। বিশেষ করে, কন্টাক্ট লিস্ট, মাইক্রোফোন, ক্যামেরা, লোকেশন-এর মতো গুরুত্বপূর্ণ অনুমতি দিতে সতর্ক হন।

৬. দুর্বল পাসওয়ার্ড ব্যবহার করবেন না

পাসওয়ার্ড ম্যানেজার ব্যবহার করে শক্তিশালী পাসওয়ার্ড তৈরি করুন এবং নিয়মিত তা পরিবর্তন করুন। একই পাসওয়ার্ড একাধিক অ্যাপে ব্যবহার করবেন না।

৭. দুই-ধাপ যাচাইকরণ (2FA) সক্রিয় করুন

টু-ফ্যাক্টর অথেনটিকেশন (2FA) সক্রিয় রাখুন। গুগল অ্যাকাউন্ট, ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপ এবং ব্যাংকিং অ্যাপে 2FA চালু করুন। এটি হ্যাকারদের ফোনে প্রবেশ করা অনেক কঠিন করে তোলে।

৮. QR কোড স্ক্যান করার সময় সতর্ক থাকুন

কোনো QR কোড স্ক্যান করার আগে যাচাই করুন। কারণ, QR কোড স্ক্যান করলে ফোনে ম্যালওয়্যার ডাউনলোড হতে পারে।


হ্যাকিংয়ের শিকার হলে কী করবেন?

  1. ফোনটি রিস্টার্ট করুন: ফোন পুনরায় চালু করলে অনেক সময় হ্যাকারদের সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়।

  2. অ্যান্টিভাইরাস দিয়ে স্ক্যান করুন: একটি নির্ভরযোগ্য অ্যান্টিভাইরাস দিয়ে ফোনটি স্ক্যান করুন।

  3. সন্দেহজনক অ্যাপ আনইনস্টল করুন: ফোনে যদি কোনও অচেনা অ্যাপ দেখতে পান, সেটি দ্রুত আনইনস্টল করুন।

  4. পাসওয়ার্ড পরিবর্তন করুন: আপনার গুগল, ফেসবুক, ব্যাংক অ্যাকাউন্টের পাসওয়ার্ড পরিবর্তন করুন।

  5. ফ্যাক্টরি রিসেট করুন: শেষ উপায় হিসেবে ফোন ফ্যাক্টরি রিসেট করুন। তবে এর আগে ডেটা ব্যাকআপ নিয়ে নিন।


উপসংহার

হ্যাকিংয়ের ঝুঁকি দিন দিন বাড়ছে। তবে সঠিক সচেতনতা এবং সাবধানতা অবলম্বন করলে, আপনার মুঠোফোনকে হ্যাকিং থেকে রক্ষা করা সম্ভব। উপরের লক্ষণগুলো নিয়মিত পরীক্ষা করুন এবং উপযুক্ত ব্যবস্থা নিন। আপনার সফটওয়্যার আপডেট এবং অ্যান্টিভাইরাস স্ক্যান সব সময় চালু রাখুন। যদি সন্দেহজনক কিছু দেখতে পান, তবে তথ্য প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞের সহায়তা নিন। মনে রাখবেন, সচেতনতা এবং সতর্কতা আপনাকে সাইবার অপরাধ থেকে সুরক্ষিত রাখতে পারে।

অন্যান্য ইনফো জানুন





একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Emoticon
:) :)) ;(( :-) =)) ;( ;-( :d :-d @-) :p :o :>) (o) [-( :-? (p) :-s (m) 8-) :-t :-b b-( :-# =p~ $-) (b) (f) x-) (k) (h) (c) cheer
Click to see the code!
To insert emoticon you must added at least one space before the code.

যোগাযোগ ফর্ম

নাম

ইমেল *

বার্তা *

Blogger দ্বারা পরিচালিত.
Javascript DisablePlease Enable Javascript To See All Widget