আধুনিক প্রযুক্তির জগতে স্মার্টফোনের নিরাপত্তা একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। অ্যাপল তাদের আইফোন ব্যবহারকারীদের জন্য নিয়মিত আইওএস অপারেটিং সিস্টেম আপডেট করে, যা নতুন ফিচার যুক্ত করার পাশাপাশি নিরাপত্তা ব্যবস্থাকেও শক্তিশালী করে। তবে অনেক ব্যবহারকারী পুরোনো আইওএস সংস্করণেই রয়ে যান, যা তাদের জন্য বড় ধরনের নিরাপত্তা ঝুঁকি তৈরি করতে পারে। চলুন জেনে নিই, আইফোনে পুরোনো আইওএস ব্যবহার করলে কী কী বিপদ হতে পারে।
১. সাইবার হামলার ঝুঁকি বৃদ্ধি
সম্প্রতি, সাইবার নিরাপত্তা গবেষণা প্রতিষ্ঠান জ্যামফ থ্রেট ল্যাবস জানিয়েছে যে, আইওএসের ট্রান্সপারেন্সি, কনসেন্ট অ্যান্ড কন্ট্রোল (টিসিসি) সাব-সিস্টেমে একটি মারাত্মক ত্রুটি শনাক্ত হয়েছে। টিসিসি সাধারণত কোনো অ্যাপ ব্যবহারকারীর ছবি, জিপিএস অবস্থান বা কন্টাক্ট তালিকায় প্রবেশ করতে চাইলে অনুমতির জন্য ব্যবহারকারীকে নোটিফিকেশন পাঠায়। কিন্তু পুরোনো সংস্করণে এই ত্রুটির কারণে, ব্যবহারকারী নোটিফিকেশন পান না। ফলে ব্যবহারকারীর অনুমতি ছাড়াই অ্যাপগুলো তার সংবেদনশীল তথ্যে প্রবেশ করতে পারে।
২. ব্যক্তিগত তথ্য চুরির আশঙ্কা
টিসিসি ত্রুটির কারণে হ্যাকাররা ব্যবহারকারীর ডিভাইস থেকে ছবি, অবস্থান সম্পর্কিত তথ্য, স্বাস্থ্যবিষয়ক তথ্য, এমনকি মাইক্রোফোন ও ক্যামেরার ধারণকৃত শব্দ ও ভিডিওও হাতিয়ে নিতে পারে। এটি ব্যক্তিগত গোপনীয়তার জন্য একটি বড় ধরনের হুমকি। গোপন তথ্য ফাঁস হলে তা ব্ল্যাকমেইল, পরিচয় চুরি এবং অন্যান্য অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে ব্যবহার হতে পারে।
৩. ডিভাইসের কর্মক্ষমতা ও স্থিতিশীলতা কমে যাওয়া
পুরোনো আইওএস সংস্করণে সফটওয়্যার বাগ ও ত্রুটি থেকে যেতে পারে, যা অ্যাপ ক্র্যাশ, ডিভাইস হ্যাং, ব্যাটারির অতিরিক্ত ক্ষয় এবং ফোনের কর্মক্ষমতা কমিয়ে দেয়। অ্যাপলের নতুন আপডেটগুলোতে এই সমস্যাগুলোর সমাধান দেওয়া হয়, যা পুরোনো সংস্করণে পাওয়া যায় না। ফলে ডিভাইসের কর্মক্ষমতা আগের মতো থাকে না।
৪. নিরাপত্তা ত্রুটির শিকার হওয়ার ঝুঁকি
নিরাপত্তা ত্রুটি বা "ভালনারেবিলিটি" পুরোনো অপারেটিং সিস্টেমে সবচেয়ে বড় সমস্যা। অ্যাপলের আইওএস ১৮ সংস্করণে সাইবার হামলার জন্য ব্যবহৃত বড় ধরনের ত্রুটিগুলোর সমাধান করা হয়েছে। তবে পুরোনো সংস্করণে সেই ত্রুটি থেকেই যায়, যা হ্যাকারদের জন্য একটি সহজ লক্ষ্য।
৫. নতুন ফিচার ও অ্যাপের সঙ্গে অসামঞ্জস্য
পুরোনো আইওএস ব্যবহার করলে অনেক অ্যাপ ও পরিষেবার সর্বশেষ ফিচার উপভোগ করা যায় না। অনেক সময় অ্যাপ ডেভেলপাররা পুরোনো সংস্করণে সমর্থন বন্ধ করে দেয়, ফলে ব্যবহারকারীরা নতুন অ্যাপ ইনস্টল করতে বা পুরোনো অ্যাপ আপডেট করতে পারেন না।
কী করবেন?
১. নিয়মিত আইওএস আপডেট করুন: আপনার আইফোনে সর্বশেষ সংস্করণের আইওএস ইন্সটল করুন। এতে নতুন ফিচারের পাশাপাশি নিরাপত্তা ব্যবস্থা শক্তিশালী হয়।
২. পুরোনো আইফোন ব্যবহার করা এড়িয়ে চলুন: অনেক পুরোনো মডেলের আইফোন নতুন আইওএস সমর্থন করে না। যদি সম্ভব হয়, আপডেট সমর্থিত একটি নতুন ডিভাইসে পরিবর্তন করুন।
৩. অ্যাপ পারমিশন যাচাই করুন: প্রতিটি অ্যাপের জন্য অনুমোদিত পারমিশনগুলো নিয়মিত চেক করুন। সেটিংসে গিয়ে নিশ্চিত করুন যে, কোন কোন অ্যাপ আপনার ব্যক্তিগত তথ্যে প্রবেশ করছে।
শেষ কথা
আইফোন ব্যবহারকারীদের উচিত সর্বদা সর্বশেষ আইওএস সংস্করণ ব্যবহার করা। জ্যামফ থ্রেট ল্যাবসের গবেষণার পর অ্যাপল আইওএস ১৮-এ টিসিসি ত্রুটির সমাধান করেছে। পুরোনো সংস্করণ ব্যবহার করলে হ্যাকাররা সহজেই আপনার ব্যক্তিগত তথ্য হাতিয়ে নিতে পারে। তাই নিজের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এবং সাইবার হামলা থেকে বাঁচতে আজই আপনার আইফোনের আইওএস সংস্করণ আপডেট করুন।
অন্যান্য ইনফো জানুন:
আইফোনের ব্যাটারি দ্রুত শেষ হওয়ার কারণ এবং সমাধান কি?
স্যামসাং গ্যালাক্সি এস২৪ আলট্রা বনাম আইফোন ১৫ প্রো ম্যাক্স: কোনটি সেরা আপনার জন্য?
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন