গর্ভাবস্থায় নারী শরীরে অনেক পরিবর্তন ঘটে, যার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে গ্যাসের সমস্যা। গ্যাসের কারণে পেট ফোলাভাব, অস্বস্তি, এবং কখনও কখনও তীব্র ব্যথা অনুভূত হতে পারে। তবে, এই সমস্যা সাধারণত স্বাভাবিক হলেও, মা ও শিশুর জন্য এটি কিছুটা অস্বস্তিকর হয়ে উঠতে পারে।
এই ইনফোটিতে আমরা জানব গর্ভাবস্থায় গ্যাসের সমস্যার কারণ, লক্ষণ এবং কীভাবে নিরাপদভাবে এর সমাধান করা যায়।
গর্ভাবস্থায় গ্যাসের সমস্যা: কারণ
গর্ভাবস্থায় গ্যাসের সমস্যা হওয়ার পেছনে কিছু সাধারণ কারণ রয়েছে:
হরমোনাল পরিবর্তন
গর্ভাবস্থায় শরীরে একটি গুরুত্বপূর্ণ হরমোন, প্রোজেস্টেরনের বৃদ্ধি ঘটে, যা পেটের মাংসপেশী শিথিল করে। এর ফলে খাবার পেটের মধ্যে ধীরে ধীরে পরিপাক হয়, যার ফলে গ্যাস জমে এবং ফোলাভাব সৃষ্টি হতে পারে।বাড়তি চাপ
যত তাড়াতাড়ি গর্ভস্থ সন্তান বড় হতে থাকে, তত বেশি চাপ পড়ে মায়ের পেটের ওপর। এই চাপ গ্যাসের সমস্যা বাড়িয়ে দেয়।অপর্যাপ্ত খাবারের পরিমাণ বা ঘনঘন খাওয়া
গর্ভাবস্থায় অনেক সময় খাবারের প্রতি ইচ্ছাশক্তি বৃদ্ধি পায়, যার কারণে অতিরিক্ত খাবার খাওয়া হতে পারে, যা গ্যাসের সমস্যা সৃষ্টি করে।
গ্যাসের সমস্যা: লক্ষণ
গর্ভাবস্থায় গ্যাসের সমস্যা সনাক্ত করা খুব সহজ নয়, তবে কিছু লক্ষণ আছে যেগুলি যদি দেখা যায়, তাহলে গ্যাসের সমস্যা হতে পারে:
- পেটের ভারী বা ফোলাভাব অনুভব করা
- অস্বস্তি বা ব্যথা অনুভব করা, বিশেষ করে পেটে
- মলত্যাগের পরও পূর্ণতা বা অস্বস্তি অনুভব করা
- অ্যাসিডিটির অনুভূতি, বমি বমি ভাব
গ্যাসের সমস্যা মোকাবিলার নিরাপদ উপায়
গর্ভাবস্থায় গ্যাসের সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য কিছু সহজ এবং নিরাপদ উপায় রয়েছে:
ছোট ছোট খাবার খাওয়া
বড় খাবারের পরিবর্তে দিনে কয়েকবার ছোট খাবার খাওয়ার চেষ্টা করুন। এতে পেটের উপর চাপ কমবে এবং গ্যাস জমবে না।মিষ্টি বা তিক্ত খাবার পরিহার করুন
গ্যাসের সমস্যা বৃদ্ধি করতে পারে এমন খাবার, যেমন টক বা মিষ্টি খাবারগুলো এড়িয়ে চলুন। এগুলি পেটের অ্যাসিডিটির সৃষ্টি করতে পারে।পানি বেশি করে পান করুন
পানি গ্যাসের সমস্যা কমাতে সাহায্য করতে পারে। প্রতিদিন পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করলে শরীর হাইড্রেটেড থাকে এবং হজম প্রক্রিয়া ঠিকভাবে চলে।হালকা ব্যায়াম করুন
গর্ভাবস্থায় হাঁটা বা অন্যান্য হালকা ব্যায়াম গ্যাসের সমস্যার মোকাবিলায় কার্যকর। এটি পেটের পেশীকে শিথিল করতে সাহায্য করে এবং গ্যাসের সঞ্চয় কমাতে সহায়ক।চা ও মশলা গ্রহণ করুন
মৃদু পুদিনা চা বা আদা চা খাওয়া গ্যাসের সমস্যা কমাতে সাহায্য করতে পারে। তবে, অতিরিক্ত চা বা ক্যাফেইন জাতীয় পানীয় এড়িয়ে চলুন।
গর্ভাবস্থায় এন্টাসিড খাওয়া কি নিরাপদ?
এন্টাসিড সাধারণত গ্যাস বা অ্যাসিডিটির সমস্যা মোকাবিলা করতে ব্যবহৃত হয়, তবে গর্ভাবস্থায় এটি ব্যবহার করা একদম নিরাপদ নয়। কিছু এন্টাসিডে এমন উপাদান থাকতে পারে যা গর্ভস্থ শিশুর জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। তাই, কোনও এন্টাসিড বা ওষুধ ব্যবহারের আগে আপনার ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
১. গ্যাসের ব্যথা যদি খুব তীব্র হয়
গর্ভাবস্থায় গ্যাসের ব্যথা সাধারণত হালকা থেকে মাঝারি ধরনের হয় এবং সাধারণত কিছু সময় পর চলে যায়। কিন্তু যদি ব্যথা খুব তীব্র হয় এবং দীর্ঘ সময় ধরে থাকে, তবে তা অন্যান্য গুরুতর সমস্যার লক্ষণ হতে পারে। তীব্র পেটের ব্যথা বা শ্বাস-প্রশ্বাসে সমস্যা, রক্তচাপের ওঠানামা ইত্যাদি কিছু গুরুতর শারীরিক অবস্থার ইঙ্গিত দিতে পারে, যেমন:
- গ্যাস্ট্রাইটিস বা গ্যাস্ট্রিক আলসার: পেটের দেওয়ালে প্রদাহ বা আলসার হলে তীব্র ব্যথা হতে পারে।
- পেটের অঙ্গগুলোর ক্ষত: গ্যাসের কারণে পেটের মাংসপেশী শিথিল হয়ে যায়, কিন্তু কখনও কখনও এটি আরও গুরুতর সমস্যার দিকে নির্দেশ করতে পারে, যেমন মোলিকুলার টিউমার বা অন্ত্রের ইনফেকশন।
- প্রি-ইক্ল্যাম্পসিয়া: গর্ভাবস্থায় উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা, যা গ্যাস বা পেটের ব্যথার মতো উপসর্গ তৈরি করতে পারে।
কী করবেন:
যদি গ্যাসের ব্যথা খুব তীব্র হয়, চিকিৎসকের সাথে পরামর্শ করুন। পেটের সমস্যা মোকাবিলা করার জন্য ঘরোয়া চিকিৎসা কখনও কখনও যথেষ্ট হতে পারে না, তাই দ্রুত চিকিৎসা গ্রহণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
২. গ্যাসের ব্যথার সাথে রক্তপাত হলে
গর্ভাবস্থায় রক্তপাতের ঘটনা বেশ উদ্বেগজনক হতে পারে এবং এটি অনেক ভিন্ন কারণে ঘটতে পারে। গ্যাসের সমস্যা থাকলেও, যদি ব্যথার সাথে রক্তপাত হয়, তাহলে এটি গুরুতর স্বাস্থ্য সমস্যার ইঙ্গিত হতে পারে:
- মিসক্যারেজ বা গর্ভপাতের লক্ষণ: গর্ভাবস্থায় ব্যথার সাথে রক্তপাত মিসক্যারেজের চিহ্ন হতে পারে।
- প্ল্যাসেন্টাল সমস্যা: প্ল্যাসেন্টার থেকে রক্তপাত হতে পারে, যা গর্ভাবস্থায় গুরুতর সমস্যার লক্ষণ হতে পারে।
- গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল রক্তপাত: গ্যাসের সমস্যার কারণে পেটের যেকোনো অংশে ক্ষত সৃষ্টি হতে পারে, যার ফলে রক্তপাত ঘটতে পারে।
কী করবেন:
রক্তপাত দেখলে অবশ্যই চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ করুন এবং দ্রুত গর্ভধারণ চিকিৎসক বা গ্যাস্ট্রোএন্টারোলজিস্টের কাছে যান। দ্রুত চিকিৎসা নেওয়া প্রয়োজন।
৩. বমি বমি ভাব বা বমি হওয়া
গ্যাসের কারণে সাধারণত বমি বা বমি বমি ভাব হতে পারে, তবে যদি এটি অতিরিক্ত হয় বা নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়, তাহলে এটি গুরুতর কোন শারীরিক অবস্থা নির্দেশ করতে পারে:
- হাইড্রেশন সমস্যার ফলে বমি: গর্ভাবস্থায় বমি বা বমি বমি ভাব পানির অভাব সৃষ্টি করতে পারে, যা হাইড্রেশন সমস্যা তৈরি করতে পারে।
- গ্যাস্ট্রিক আলসার বা গ্যাস্ট্রিক ব্লিডিং: বমি যদি রক্ত মিশ্রিত হয় বা খুব তীব্র হয়, তাহলে এটি গ্যাস্ট্রিক সমস্যা বা আলসারের কারণে হতে পারে।
- হাইপারেমেসিস গ্রাভিডারাম: এটি গর্ভাবস্থায় অতিরিক্ত বমি হওয়া একটি গম্ভীর অবস্থার নাম, যা গর্ভবতী মহিলাদের গর্ভধারণের প্রথম তিন মাসে বেশি দেখা যায়। এটি শুধু বমি নয়, খাওয়া-দাওয়া এবং পানীয়র অভাবও সৃষ্টি করতে পারে, যার ফলে মা ও শিশুর স্বাস্থ্যের ক্ষতি হতে পারে।
কী করবেন:
যদি বমি অবিরত চলতে থাকে, বিশেষ করে যদি আপনি খাবার বা পানীয় গ্রহণ করতে না পারেন, তাহলে আপনার ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ করুন। হাইপারেমেসিস গ্রাভিডারাম পরিস্থিতি অবনতির দিকে যেতে পারে এবং হাসপাতালে চিকিৎসা প্রয়োজন হতে পারে।
গর্ভাবস্থায় গ্যাসের সমস্যা কমানোর উপায়: সহজ এবং কার্যকর পদক্ষেপ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন