গর্ভাবস্থার শেষ পর্যায়ে এসে প্রত্যেক মা অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করেন শিশুর আগমনের জন্য। এই সময়টাতে শরীরে ঘটে যাওয়া বিভিন্ন পরিবর্তন এবং লক্ষণগুলো সঠিকভাবে জানা ও বোঝা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এগুলোই ইঙ্গিত দেয় যে প্রসবের সময় ঘনিয়ে এসেছে।
আসুন, বিস্তারিতভাবে জেনে নিই প্রসব শুরুর প্রথম লক্ষণ এবং এর প্রাথমিক পর্যায়ের লক্ষণগুলো।
প্রসব শুরুর প্রধান লক্ষণগুলো
১. ঘনঘন জরায়ুর সংকোচন অনুভব
প্রসবের সময় যখন ঘনিয়ে আসে, তখন জরায়ুতে সংকোচন হতে থাকে। এটি একধরনের ব্যথা, যা প্রথমে হালকা শুরু হয় এবং সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তা বৃদ্ধি পেতে থাকে।
কিছু বিষয় খেয়াল করুন:
- সংকোচন কি নির্দিষ্ট সময় পরপর হচ্ছে?
যেমন: ১০ মিনিট পরপর সংকোচন শুরু হয়ে ধীরে ধীরে সময়ের ব্যবধান কমে আসা।
- সংকোচন কতক্ষণ স্থায়ী হচ্ছে?
সত্যিকারের সংকোচন ৩০-৭০ সেকেন্ড স্থায়ী হয় এবং নিয়মিত বিরতিতে এটি ঘটে।
- স্থান পরিবর্তন করলে ব্যথা কি কমছে?
ফলস লেবার পেইনের ক্ষেত্রে নড়াচড়া করলে ব্যথা কমে যায়, কিন্তু সত্যিকারের প্রসব ব্যথার ক্ষেত্রে তা বাড়তেই থাকে।
২. রক্তমিশ্রিত স্রাব নিঃসরণ (Mucus Plug)
জরায়ুর মুখ বন্ধ রাখতে সাহায্যকারী মিউকাস প্লাগ প্রসবের সময় বেরিয়ে আসে। এটি দেখতে সর্দির মতো এবং কখনো পুরোটা একসঙ্গে বের হয়, আবার কখনো ছোট ছোট অংশে। অনেক সময় এটি প্রসবের আগে দেখা যায়, আবার কিছু ক্ষেত্রে একেবারে প্রসবের সময়েই বের হয়।
৩. পেট ও পিঠের নিচের দিকে ব্যথা
প্রসবে আগে পিরিয়ডের মতো তলপেটে এবং পিঠের নিচের অংশে তীব্র ব্যথা হতে পারে। এই ব্যথা পায়ের দিকেও ছড়িয়ে পড়তে পারে। জায়গা পরিবর্তন করেও এই ব্যথা কমে না।
৪. পানি ভেঙে যাওয়া (Water Breaking)
বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ঝিল্লি ফেটে গিয়ে এ্যামিনিওটিক তরল বের হয়। এটি একটি বড় লক্ষণ, যদিও ১৫% বা তারও কম ক্ষেত্রে এটি স্বাভাবিকভাবে ঘটে। তরল কখনো একসঙ্গে বেশি পরিমাণে পড়ে, আবার কখনো ফোঁটা ফোঁটা করেও পড়তে পারে।
প্রি-লেবার লক্ষণ: কীভাবে বুঝবেন প্রসব শুরুর প্রস্তুতি চলছে?
১. শিশুর নিচের দিকে নামা
প্রথমবার মা হওয়ার ক্ষেত্রে শিশুটি ২-৪ সপ্তাহ আগে পেলভিসের দিকে নেমে যায়। এ সময় হাঁটতে অসুবিধা হয়, হেলে দুলে হাঁটতে হয়, এবং প্রস্রাবের চাপ বাড়ে।
২. সারভিক্সের মুখ বড় হওয়া
প্রসবের আগে সারভিক্সের মুখ ধীরে ধীরে খুলতে থাকে। ডাক্তারের চেকআপের সময় এটি পরিমাপ করা হয়।
৩. পেশিতে টান লাগা ও পিঠে ব্যথা বৃদ্ধি
পেলভিস ও পিঠের জয়েন্টগুলো শিথিল হয়ে যায়। এটি শিশুর জন্মের প্রক্রিয়া সহজ করার জন্য স্বাভাবিক প্রস্তুতি।
৪. হাড়ের জয়েন্ট শিথিল হওয়া
রিলাক্সিন হরমোনের ক্ষরণের কারণে শরীরের জয়েন্টগুলো শিথিল হয়, যা শিশুর পথ তৈরি করে।
৫. ডায়রিয়া
মলদ্বারের পেশী শিথিল হয়ে ডায়রিয়া হতে পারে। এটি প্রসব শুরুর একটি সাধারণ লক্ষণ।
৬. ওজন বৃদ্ধি বন্ধ হওয়া বা কমে যাওয়া
গর্ভাবস্থার শেষে অনেক মায়েদের ওজন কমে যেতে পারে। এটি এ্যামিনিওটিক তরল কমে যাওয়ার কারণে হয়ে থাকে।
৭. ক্লান্তি বা নেস্টিং প্রবৃত্তি
প্রসবের আগে অনেক মা ক্লান্তি অনুভব করেন, আবার কেউ কেউ শিশুকে স্বাগত জানাতে উদ্যমী হয়ে ওঠেন। বাসা গোছানো, শিশুর জন্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র প্রস্তুত করা এ সময়ের সাধারণ চিত্র।
কখন দ্রুত হাসপাতালে যাবেন: ৫টি গুরুত্বপূর্ণ লক্ষণ
আপনার গাইনি মিস গ্যাব্রিয়েল স্যান্ডলারের উল্লেখ করা এই ৫টি লক্ষণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, এবং যেকোনো একটি লক্ষণ দেখা দিলেই দ্রুত হাসপাতালে যাওয়া উচিত। আসুন প্রতিটি লক্ষণ বিস্তারিতভাবে আলোচনা করি:
১. তীব্র ব্যথা: কথা বলারও শক্তি থাকবে না
লেবার পেইন বা প্রসব ব্যথা সাধারণত হালকা থেকে শুরু হয়ে ধীরে ধীরে তীব্রতর হয়। কিন্তু যদি ব্যথা এতটাই তীব্র হয়ে যায় যে আপনি কথাও বলতে পারছেন না বা হাঁটাচলা করতে অসুবিধা হচ্ছে, তখন এটি নিশ্চিতভাবে সত্যিকারের প্রসব ব্যথার ইঙ্গিত।
ব্যথার লক্ষণ:
- ব্যথা নির্দিষ্ট বিরতিতে আসবে এবং সময়ের সঙ্গে সঙ্গে আরো ঘন এবং তীব্র হবে।
- স্থান পরিবর্তন করেও ব্যথা কমবে না।
করণীয়:
এ ধরনের ব্যথা অনুভব করলে দেরি না করে দ্রুত হাসপাতালে যান।
২. রক্ত বা রক্তরস নিঃসরণ
যদি আপনি প্রসবের সময় কাছাকাছি চলে আসেন, তাহলে জরায়ুর মুখ খুলতে শুরু করবে। এর ফলে রক্তমিশ্রিত স্রাব বা রক্তরস বের হতে পারে।
রক্তমিশ্রিত স্রাব:
- এটি মিউকাস প্লাগের অংশ হতে পারে।
- যদি রক্তের পরিমাণ বেশি হয় বা পুরোপুরি রক্ত প্রবাহ শুরু হয়, তাহলে এটি বিপদজনক সংকেত।
করণীয়:
রক্তের যেকোনো অস্বাভাবিক নিঃসরণ দেখা দিলে দেরি না করে হাসপাতালে যান।
৩. প্রস্রাবের মতো পানি বের হওয়া
যখন আপনার অ্যামনিওটিক থলি ফেটে যায়, তখন এটি প্রস্রাবের মতো অনুভূত হতে পারে। তবে এই তরল সাধারণ প্রস্রাব নয় এবং এর রং কিছুটা লালচে বা পরিষ্কার হতে পারে।
পানি ভাঙার লক্ষণ:
- এটি ফোঁটা ফোঁটা বা একসঙ্গে বেশি পরিমাণে হতে পারে।
- তরল বের হওয়ার পর ব্যথা না হলেও হাসপাতালে যাওয়া উচিত।
করণীয়:
অ্যামনিওটিক থলি ফেটে গেলে আপনার শরীর এবং শিশুকে ইনফেকশন থেকে রক্ষা করতে দ্রুত হাসপাতালে যান।
৪. বাচ্চার নড়াচড়া বন্ধ হয়ে যাওয়া
গর্ভস্থ শিশুর নড়াচড়া একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এটি শিশুর স্বাস্থ্যের সূচক। যদি আপনি দীর্ঘ সময় ধরে শিশুর নড়াচড়া না টের পান, এটি উদ্বেগজনক হতে পারে।
বাচ্চার নড়াচড়ার বিষয়ে লক্ষণ:
- দিনে অন্তত ১০ বার শিশুর নড়াচড়া টের পাওয়াটা স্বাভাবিক।
- যদি নড়াচড়া বন্ধ হয়ে যায়, প্রথমে মিষ্টি কিছু খান এবং কিছু সময় অপেক্ষা করুন।
- এরপরও যদি নড়াচড়া অনুভূত না হয়, এটি জরুরি অবস্থার ইঙ্গিত।
করণীয়:
দ্রুত হাসপাতালে গিয়ে আল্ট্রাসাউন্ড বা ফিটাল মনিটরিং করান।
৫. অন্যান্য অস্বাভাবিক লক্ষণ (যদি থাকে)
উপরের চারটি লক্ষণের বাইরেও কিছু অস্বাভাবিক লক্ষণ দেখা দিতে পারে, যেমন:
- হঠাৎ উচ্চ রক্তচাপ বা মাথা ঘোরা।
- তীব্র শ্বাসকষ্ট বা বুক ধড়ফড় করা।
- তলপেটে চাপ অনুভূত হওয়া বা শরীরের কোনো অংশ অসাড় হয়ে যাওয়া।
করণীয়:
যদি কোনো অস্বাভাবিক কিছু অনুভব করেন, দেরি না করে হাসপাতালে যান।
যা মনে রাখবেন
- এই লক্ষণগুলো আপনার এবং আপনার শিশুর সুরক্ষার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
- প্রতিটি গর্ভাবস্থা ভিন্ন হতে পারে, তাই সন্দেহ হলে সবসময় আপনার ডাক্তারের পরামর্শ নিন।
- হাসপাতালে যাওয়ার আগে আপনার প্রয়োজনীয় কাগজপত্র, মেডিকেল রিপোর্ট, এবং ব্যাগ প্রস্তুত রাখুন।
শুভ কামনা রইলো আপনার নিরাপদ ও সুন্দর প্রসব যাত্রার জন্য!
যেসব লক্ষণ দেখা মাত্রই ডাক্তার বা স্বাস্থ্যকর্মীর সঙ্গে যোগাযোগ করতে হবে
আপনার ও আপনার শিশুর সুরক্ষার জন্য গর্ভাবস্থায় কিছু লক্ষণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই লক্ষণগুলো দেখা দিলে দ্রুত ডাক্তার বা স্বাস্থ্যকর্মীর সঙ্গে যোগাযোগ করা উচিত। এখানে প্রতিটি লক্ষণের বিস্তারিত ব্যাখ্যা দেওয়া হলো।
১. রক্তপাত বা উজ্জ্বল লাল রঙের স্রাব দেখা দেওয়া
গর্ভাবস্থার শেষ দিকে হালকা বাদামী বা গোলাপি স্রাব সাধারণত চিন্তার কারণ নয়, তবে উজ্জ্বল লাল রঙের স্রাব বা রক্তপাত বিপজ্জনক সংকেত হতে পারে।
সম্ভাব্য কারণগুলো:
- প্লাসেন্টা প্রিভিয়া (Placenta Previa): যখন প্লাসেন্টা জরায়ুর মুখ ঢেকে রাখে।
- অ্যাব্রাপশিও প্লাসেন্টা (Abruptio Placentae): যখন প্লাসেন্টা জরায়ুর দেয়াল থেকে আগে থেকেই আলগা হয়ে যায়।
- প্রি-টার্ম লেবার: গর্ভাবস্থার নির্ধারিত সময়ের আগে প্রসব শুরু।
করণীয়:
রক্তপাত দেখা দিলে সঙ্গে সঙ্গে হাসপাতালে যান বা ডাক্তারের সঙ্গে যোগাযোগ করুন।
২. পানি ভেঙে যাওয়া এবং তরলের রঙ সবুজ বা বাদামি হওয়া
অ্যামনিওটিক তরল (amniotic fluid) স্বচ্ছ বা সামান্য হলুদাভ রঙের হওয়া উচিত। তবে যদি এই তরল সবুজ বা বাদামি রঙের হয়, তা শিশুর জন্য বিপজ্জনক হতে পারে।
সম্ভাব্য কারণগুলো:
- মেকোনিয়াম স্টেইনড অ্যামনিওটিক ফ্লুইড: শিশুর পেটে থাকা অবস্থায় পায়খানা করে দেওয়া।
- শিশুর ফুসফুসে মেকোনিয়াম (পায়খানা) প্রবেশ করলে শ্বাসকষ্ট বা নিউমোনিয়ার মতো গুরুতর সমস্যা হতে পারে।
করণীয়:
- শিশুর ফুসফুসে মেকোনিয়াম (পায়খানা) প্রবেশ করলে শ্বাসকষ্ট বা নিউমোনিয়ার মতো গুরুতর সমস্যা হতে পারে।
- পানি ভাঙার সঙ্গে সঙ্গেই রঙ লক্ষ করুন। যদি এটি সবুজ বা বাদামি হয়, দ্রুত হাসপাতালে যান।
- শিশুর জন্মের সময় বিশেষ যত্ন ও পর্যবেক্ষণের প্রয়োজন হতে পারে।
৩. দৃষ্টিশক্তি ঘোলা হওয়া বা জিনিস দুটো করে দেখা
গর্ভাবস্থায় হঠাৎ দৃষ্টিশক্তি ঝাপসা বা ডাবল ভিশন হওয়া গুরুতর সংকেত হতে পারে।
সম্ভাব্য কারণগুলো:
- প্রি-এক্ল্যাম্পসিয়া (Pre-eclampsia):
- এটি গর্ভাবস্থায় উচ্চ রক্তচাপের জটিলতা।
- উপসর্গগুলোর মধ্যে রয়েছে:
- প্রচণ্ড মাথাব্যথা।
- চোখের সামনে ঝাপসা দেখা বা এক জিনিস দুটো করে দেখা।
- মুখ, হাত বা পায়ের হঠাৎ ফুলে যাওয়া।
- বমি বা পেটব্যথা।
ঝুঁকি:
প্রি-এক্ল্যাম্পসিয়া দ্রুত চিকিৎসা না করলে তা এক্ল্যাম্পসিয়ায় পরিণত হতে পারে, যা মা ও শিশুর জন্য প্রাণঘাতী হতে পারে।
করণীয়:
- দ্রুত ডাক্তার বা স্বাস্থ্যকর্মীর সঙ্গে যোগাযোগ করুন।
- উচ্চ রক্তচাপ পরীক্ষা করে নিন এবং ডাক্তারের নির্দেশনা অনুযায়ী ব্যবস্থা নিন।
৪. প্রচণ্ড মাথাব্যথা বা হঠাৎ ফুলে যাওয়া
গর্ভাবস্থায় স্বাভাবিক কারণে কিছুটা ফোলা থাকতে পারে, তবে যদি এটি খুব হঠাৎ করে এবং অস্বাভাবিকভাবে ঘটে, তা গুরুতর সংকেত হতে পারে।
সম্ভাব্য কারণগুলো:
- প্রি-এক্ল্যাম্পসিয়া:
- হঠাৎ ফুলে যাওয়া প্রি-এক্ল্যাম্পসিয়ার একটি সাধারণ লক্ষণ।
- প্রি-এক্ল্যাম্পসিয়া তাড়াতাড়ি শনাক্ত করে চিকিৎসা করা না হলে মায়ের লিভার, কিডনি ও স্নায়ুতন্ত্র ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।
করণীয়:
- ফুলে যাওয়া বা মাথাব্যথার সঙ্গে অন্য উপসর্গ থাকলে দ্রুত ডাক্তারের পরামর্শ নিন।
- চিকিৎসা শুরু না করলে ঝুঁকি বাড়তে পারে।
আপনার করণীয় পদক্ষেপ:
১. লক্ষণগুলো মনোযোগ দিয়ে পর্যবেক্ষণ করুন:
- গর্ভাবস্থায় যেকোনো অস্বাভাবিক লক্ষণ হালকাভাবে নেবেন না।
২. প্রতিবার ডাক্তারের পরামর্শ নিন: - গর্ভকালীন চেকআপের সময় আপনার অবস্থার বিস্তারিত জানান।
৩. জরুরি কিট প্রস্তুত রাখুন: - হাসপাতালে যাওয়ার সময় প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র এবং কাগজপত্র হাতের কাছে রাখুন।
৪. নিজের ও শিশুর সুরক্ষা নিশ্চিত করুন: - সুস্থ খাদ্যাভ্যাস বজায় রাখুন এবং পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিন।
আপনার এবং আপনার শিশুর সুস্থতা নিশ্চিত করতে যে কোনো সন্দেহজনক লক্ষণ দেখা দিলে দেরি না করে দ্রুত চিকিৎসা গ্রহণ করুন।
আরো জানুন
প্রসবপূর্ব থেকে প্রসবপরবর্তী: সম্পূর্ণ মাতৃত্ব যাত্রায় আপনার পাশে
গর্ভাবস্থায় নিয়মিত চেকআপ কেন জরুরি? সুস্থ থাকার গোপনীয়তা
প্রা!তিষ্ঠানিক সেবা: সুস্থ মায়ের এবং শিশুর জন্য সর্বোত্তম উপহার
উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ গর্ভাবস্থা? চিন্তা করবেন না, সমাধান আছে
সাংস্কৃতিক প্রথা ও গর্ভাবস্থা: আধুনিকতার সাথে ঐতিহ্যের মেলবন্ধন
গর্ভাবস্থার জটিলতা এড়াতে জানুন কীভাবে কি করবেন?
প্রসবের প্রতিটি পর্যায়: বিস্তারিত জানুন
নরমাল ডেলিভারির পর সুস্থ থাকার ৮টি গুরুত্বপূর্ণ টিপস: সেলাই, জরায়ু ও পেটের যত্ন
প্রসবকালীন চিকিৎসা: আপনার জন্য সেরা পদ্ধতি
FAQs
১. গর্ভাবস্থার শেষ দিকে পানি ভাঙলে কী করব?
পানি ভাঙা প্রসব শুরুর একটি সাধারণ লক্ষণ। যদি অ্যামনিওটিক তরল বের হয় এবং এটি স্বাভাবিক রঙের (স্বচ্ছ বা হালকা হলুদাভ), তবে দ্রুত হাসপাতালে যান। তবে যদি তরল সবুজ বা বাদামি রঙের হয়, এটি শিশুর জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে এবং আরও দ্রুত চিকিৎসা প্রয়োজন।
২. যদি শিশুর নড়াচড়া কমে যায়, কী করব?
গর্ভাবস্থার শেষ দিকে শিশুর নড়াচড়া কমে যাওয়া উদ্বেগজনক হতে পারে। প্রথমে মিষ্টি কিছু খেয়ে নিন এবং কিছুক্ষণ শুয়ে থেকে মনোযোগ দিন। এরপরও নড়াচড়া অনুভূত না হলে দ্রুত ডাক্তারের সঙ্গে যোগাযোগ করুন।
৩. প্রসবের সময় ব্যথা কেমন হয়?
প্রসব ব্যথা সাধারণত জরায়ুর সংকোচন থেকে শুরু হয়। এটি নির্দিষ্ট সময় পরপর আসতে থাকে এবং সময়ের সঙ্গে তীব্রতা বৃদ্ধি পায়। ব্যথা পিঠের নিচ থেকে তলপেটে ছড়িয়ে পড়তে পারে। যদি ব্যথা এতটাই তীব্র হয় যে হাঁটাচলা বা কথা বলার শক্তি হারিয়ে ফেলেন, তাহলে এটি প্রকৃত প্রসব ব্যথা।
৪. জরায়ুর মুখ কতটুকু খোলা থাকলে প্রসব হয়?
সাধারণত জরায়ুর মুখ ১০ সেন্টিমিটার পর্যন্ত খোলা থাকলে শিশুর জন্ম হয়। ডাক্তারের চেকআপে এটি পর্যবেক্ষণ করা হয়।
৫. যদি ডায়রিয়া হয়, এটি কি বিপদজনক?
গর্ভাবস্থার শেষ দিকে ডায়রিয়া হতে পারে, যা সাধারণত শরীরের প্রসবের প্রস্তুতির অংশ। তবে অতিরিক্ত ডায়রিয়া হলে পানিশূন্যতার ঝুঁকি এড়াতে ডাক্তারের পরামর্শ নিন।
বিশেষ দ্রষ্টব্য (Important Notes)
চিকিৎসকের পরামর্শ নিন:
যেকোনো সন্দেহজনক লক্ষণ দেখা দিলে নিজের সিদ্ধান্তে চিকিৎসা গ্রহণ না করে অবিলম্বে বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ নিন।জরুরি কিট প্রস্তুত রাখুন:
হাসপাতালে যাওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র, মেডিকেল রিপোর্ট, পরিচয়পত্র এবং কিছু ব্যক্তিগত সামগ্রী আগে থেকেই ব্যাগে গুছিয়ে রাখুন।স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন বজায় রাখুন:
সঠিক খাদ্যাভ্যাস, পর্যাপ্ত পানি পান, এবং মানসিক চাপ মুক্ত থাকার চেষ্টা করুন।প্রসব পরিকল্পনা তৈরি করুন:
ডাক্তারের সঙ্গে কথা বলে প্রসবের সম্ভাব্য তারিখ, প্রসবের প্রক্রিয়া, এবং কোনো জটিলতার সম্ভাবনা থাকলে তার প্রস্তুতি নিন।মায়ের মনোভাব:
নিঃসন্দেহে গর্ভাবস্থার শেষ সময়টি চ্যালেঞ্জিং হতে পারে, তবে ইতিবাচক মনোভাব এবং সঠিক প্রস্তুতি আপনাকে আত্মবিশ্বাসী রাখবে।
আপনার এবং আপনার শিশুর সুরক্ষা নিশ্চিত করতে সচেতনতা এবং সময়মতো চিকিৎসা গ্রহণই প্রধান চাবিকাঠি।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন