শিশুর পাতলা পায়খানা ও ডায়রিয়া নিয়ে দুশ্চিন্তা? জেনে নিন কারণ, দ্রুত সমাধান ও বিশেষজ্ঞ পরামর্শ!

শিশুর পাতলা পায়খানার কারণ, ও লক্ষণ

১ থেকে ১০ মাসের ও ২ বছরের শিশুর পাতলা পায়খানা: করণীয় ও সমাধান

বাচ্চার পাতলা পায়খানা বন্ধ করার উপায় ও করণীয়

পানির মতো পাতলা পায়খানা হলে করণীয়

শিশুদের ডায়রিয়া: কারণ, লক্ষণ ও করণীয়


শিশুর পাতলা পায়খানার কারণ, ও লক্ষণ

শিশুর পাতলা পায়খানা বা ডায়রিয়া বাবা-মায়ের জন্য বড় দুশ্চিন্তার কারণ হতে পারে। বিশেষ করে নবজাতক ও কম বয়সী শিশুদের ক্ষেত্রে এটি গুরুতর সমস্যার দিকে মোড় নিতে পারে, যদি দ্রুত ব্যবস্থা না নেওয়া হয়। ডায়রিয়ার ফলে শিশুর শরীর থেকে অতিরিক্ত পানি ও লবণ বেরিয়ে যায়, যা মারাত্মক পানিশূন্যতা সৃষ্টি করতে পারে। তাই দেরি না করে দ্রুত সঠিক পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি।

শিশুর পাতলা পায়খানার কারণ, ও লক্ষণ

এই ইনফোতে আমরা জানবো শিশুর পাতলা পায়খানার কারণ, লক্ষণ, করণীয় ও বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ।

📌 শিশুর পাতলা পায়খানার কারণ

শিশুর পাতলা পায়খানা বা ডায়রিয়ার পেছনে কয়েকটি সাধারণ কারণ রয়েছে:

ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণ: রোটা ভাইরাস, নরোভাইরাস, ই-কোলাই বা সালমোনেলা সংক্রমণ শিশুর অন্ত্রে সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে।
খাদ্যে বিষক্রিয়া: অস্বাস্থ্যকর খাবার বা পানি থেকে ইনফেকশন হতে পারে।
অতিরিক্ত ফলের রস: কিছু শিশুর হজমশক্তি দুর্বল হওয়ায় অতিরিক্ত ফলের রস বা ল্যাকটোজ সমৃদ্ধ খাবার থেকে ডায়রিয়া হতে পারে।
অ্যালার্জি বা খাবার সহ্য না হওয়া: নির্দিষ্ট কিছু খাবারে এলার্জি থাকলে শিশুর পাতলা পায়খানা হতে পারে।
অ্যান্টিবায়োটিকের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া: অনেক সময় ওষুধ সেবনের পর অন্ত্রের ভালো ব্যাকটেরিয়া নষ্ট হয়ে শিশুর পায়খানা নরম হয়ে যায়।


📌 শিশুদের পাতলা পায়খানার লক্ষণ

✅ দিনে তিনবার বা তার বেশি পাতলা পায়খানা হওয়া
✅ শিশুর শরীরে পানি শূন্যতার লক্ষণ – মুখ ও ঠোঁট শুকিয়ে যাওয়া, চোখ বসে যাওয়া
✅ বারবার পিপাসা লাগা বা প্রস্রাব কমে যাওয়া
✅ শিশুর চেহারা ক্লান্ত ও নিস্তেজ দেখানো
✅ পায়খানার সাথে রক্ত বা শ্লেষ্মা থাকা

যদি এই লক্ষণগুলোর মধ্যে কোনোটি দেখা যায়, তবে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি।

১ থেকে ১০ মাসের ও ২ বছরের শিশুর পাতলা পায়খানা: করণীয় ও সমাধান

শিশুর বয়স কম থাকায় পাতলা পায়খানা (ডায়রিয়া) তাদের জন্য বিপজ্জনক হতে পারে। কারণ, এতে শরীর থেকে দ্রুত পানি ও প্রয়োজনীয় লবণ বেরিয়ে যায়, যা পানিশূন্যতা (ডিহাইড্রেশন) সৃষ্টি করতে পারে। শিশুর বয়স অনুযায়ী করণীয় নিচে দেওয়া হলো।

১ থেকে ১০ মাসের ও ২ বছরের শিশুর পাতলা পায়খানা: করণীয় ও সমাধান

📌 ১মাস ও ৩ মাসের শিশুর পাতলা পায়খানা হলে করণীয়

১ মাস বয়সী শিশুর একমাত্র খাবার হচ্ছে মায়ের দুধ। তাই এই বয়সের শিশুর পাতলা পায়খানা হলে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি।

মায়ের দুধ খাওয়ানো চালিয়ে যান: মায়ের দুধই শিশুর জন্য সবচেয়ে নিরাপদ এবং কার্যকর ওষুধ।
ওআরএস (ORS) প্রয়োগ: যদি চিকিৎসক পরামর্শ দেন, তবে মাত্রা অনুযায়ী ওআরএস খাওয়াতে পারেন।
পানিশূন্যতার লক্ষণ দেখুন:

  • শিশুর মুখ ও জিহ্বা শুকিয়ে গেলে
  • বারবার কান্না করলেও অশ্রু না আসলে
  • প্রস্রাব কম হলে

🚨 চিকিৎসকের পরামর্শ নিন যদি:

  • পাতলা পায়খানার সাথে রক্ত বা শ্লেষ্মা থাকে
  • শিশুর শরীর বেশি দুর্বল হয়ে পড়ে
  • ২৪ ঘণ্টার বেশি ডায়রিয়া চলতে থাকে

📌 ৪ মাস ও ৫ মাসের শিশুর পাতলা পায়খানা হলে করণীয়

এ বয়সের শিশুর খাবারের মূল উৎস মায়ের দুধ। তাই যত বেশি সম্ভব মায়ের দুধ খাওয়াতে হবে।

ওআরএস খাওয়ানো যেতে পারে (ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী)।
মায়ের খাবারের দিকে নজর দিন: যদি শিশু শুধুমাত্র বুকের দুধ খায়, তবে মায়ের খাবার পরিবর্তন করে দেখা যেতে পারে (যেমন বেশি চর্বিযুক্ত বা দুগ্ধজাত খাবার এড়ানো)।
পানিশূন্যতার লক্ষণ দেখুন (যেমন মুখ শুকিয়ে যাওয়া, প্রস্রাব কমে যাওয়া, শিশুর অলস বা বেশি ঘুমিয়ে থাকা)।

🚨 চিকিৎসকের পরামর্শ নিন যদি:

  • শিশুর পায়খানার রঙ বদলে যায় বা তাতে রক্ত/শ্লেষ্মা থাকে
  • পাতলা পায়খানা ২৪ ঘণ্টার বেশি স্থায়ী হয়
  • জ্বর ও বমি হয়

📌 ৯ মাস ও ১০ মাসের শিশুর পাতলা পায়খানা হলে করণীয়

এই বয়সে শিশুরা মায়ের দুধের পাশাপাশি শক্ত খাবারও খেতে শুরু করে। তাই পায়খানার ধরন খাবারের ওপর নির্ভর করে।

ওআরএস দিন: শিশুর শরীরে পানি ও লবণের ঘাটতি পূরণ করতে ওআরএস কার্যকর।
জিঙ্ক সিরাপ দিন: ১০-১৪ দিন ধরে প্রতিদিন চিকিৎসকের নির্দেশনা অনুযায়ী জিঙ্ক সিরাপ খাওয়ান।
সহজপাচ্য খাবার দিন:

  • নরম ভাত বা খিচুড়ি
  • কলা (পটাশিয়াম সমৃদ্ধ)
  • দই (প্রাকৃতিক প্রোবায়োটিক)
  • ডাবের পানি
    অতিরিক্ত চর্বিযুক্ত ও দুগ্ধজাত খাবার এড়িয়ে চলুন যদি তা হজমে সমস্যা করে।

🚨 চিকিৎসকের পরামর্শ নিন যদি:

  • শিশুর পায়খানায় রক্ত বা শ্লেষ্মা থাকে
  • জ্বর বেশি থাকে বা পাতলা পায়খানা ৩ দিনের বেশি স্থায়ী হয়
  • বমি ও প্রচণ্ড পানিশূন্যতার লক্ষণ দেখা দেয়

২ বছরের শিশুর পাতলা পায়খানা: করণীয় ও সমাধান

২ বছরের শিশুর পাতলা পায়খানা হলে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি, কারণ এ সময় শিশুর শরীরে পানি ও লবণের ঘাটতি দেখা দিতে পারে।

ঘরোয়া সমাধান

ওআরএস (ORS): শিশুকে নিয়মিত ওআরএস খাওয়ান, এটি শরীরে পানি ও ইলেক্ট্রোলাইটের ভারসাম্য রক্ষা করবে।
জিঙ্ক সিরাপ: পাতলা পায়খানার তীব্রতা কমাতে এবং দ্রুত সুস্থ হতে সহায়ক। ১০-১৪ দিন ধরে জিঙ্ক সিরাপ খাওয়ানোর পরামর্শ দেওয়া হয়।
প্রোবায়োটিক: এটি শিশুর হজম শক্তি বাড়ায় এবং ভালো ব্যাকটেরিয়া সরবরাহ করে, যা ডায়রিয়া দ্রুত কমাতে সাহায্য করে।
সহজপাচ্য খাবার:

  • নরম ভাত বা খিচুড়ি
  • কলা (পটাশিয়াম সমৃদ্ধ)
  • টোস্ট, রুটি
  • দই (প্রাকৃতিক প্রোবায়োটিক)
  • ডাবের পানি

সতর্কতা

অ্যান্টিবায়োটিক নিজে থেকে দেবেন না: ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া ওষুধ খাওয়ানো বিপজ্জনক হতে পারে।
পানি স্বল্পতা চিহ্নিত করুন: শিশুর যদি মুখ শুকিয়ে যায়, প্রস্রাব কম হয়, বা সে বেশি ক্লান্ত থাকে, তাহলে দ্রুত চিকিৎসকের কাছে যান।
অস্বাভাবিক লক্ষণ থাকলে সতর্ক হন:

  • শিশুর পায়খানায় রক্ত থাকলে
  • জ্বর বেশি থাকলে
  • পাতলা পায়খানা ৩ দিনের বেশি স্থায়ী হলে

চিকিৎসকের পরামর্শ কখন নেবেন?

✔ শিশুর পায়খানা বারবার হলে বা কোনো ওষুধেও উন্নতি না হলে
✔ শরীরে পানিশূন্যতার লক্ষণ দেখা দিলে
✔ পেটে ব্যথা বা অতিরিক্ত দুর্বলতা দেখা দিলে

শিশুর স্বাভাবিক খাবার চালিয়ে যান

🔹 মায়ের দুধ চালিয়ে যেতে হবে, কারণ এটি শিশুর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।
🔹 শিশুকে চর্বিযুক্ত, অতিরিক্ত মিষ্টি বা দুগ্ধজাত খাবার (যদি হজম না হয়) এড়িয়ে চলুন।

পরামর্শ

মায়ের দুধ খাওয়ানো বন্ধ করবেন না, এটি শিশুর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।
শিশুকে নিজে থেকে ওষুধ দেবেন না, চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার বিপজ্জনক হতে পারে।
শিশুর শরীরে পানিশূন্যতা দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসকের কাছে যান।

📌 বাচ্চার পাতলা পায়খানা বন্ধ করার উপায় ও করণীয়

শিশুর পাতলা পায়খানা (ডায়রিয়া) হলে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি, কারণ এটি শরীরে পানিশূন্যতা (ডিহাইড্রেশন) তৈরি করতে পারে।


✅ কি খেলে বাচ্চার পাতলা পায়খানা বন্ধ হয়?

সহজপাচ্য খাবার খাওয়ানো দরকার, যা হজমে সহায়তা করবে এবং শরীরের শক্তি ফেরাতে সাহায্য করবে।

ওআরএস (ORS): এটি পানিশূন্যতা রোধের সবচেয়ে কার্যকর উপায়।
কলার পেস্ট: কলায় প্রচুর পরিমাণে পটাশিয়াম থাকে, যা ডায়রিয়া কমাতে সাহায্য করে।
নরম ভাত ও খিচুড়ি: এটি সহজে হজম হয় এবং শক্তি দেয়।
আপেল বা আপেলের পেস্ট: পেকটিন সমৃদ্ধ হওয়ায় এটি পায়খানা ঘন করতে সাহায্য করে।
সেদ্ধ আলু: এটি সহজে হজম হয় এবং পায়খানা শক্ত করতে সাহায্য করে।
দই: প্রোবায়োটিক থাকার কারণে এটি ভালো ব্যাকটেরিয়া সরবরাহ করে এবং হজমের উন্নতি ঘটায়।

🚫 এড়িয়ে চলুন:

  • দুগ্ধজাত খাবার (যদি হজম না হয়)
  • অতিরিক্ত তৈলাক্ত ও চর্বিযুক্ত খাবার
  • চিনি ও মিষ্টি জাতীয় খাবার

✅ পাতলা পায়খানা বন্ধ করার উপায়

১. ওআরএস খাওয়ান:

  • প্রতিবার পাতলা পায়খানার পর শিশুকে ওআরএস দিন।
  • ৬ মাসের বেশি বয়সী শিশুদের দিনে ২-৩ বার ওআরএস খাওয়ানো যেতে পারে।

২. জিঙ্ক সিরাপ দিন (চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী):

  • এটি পাতলা পায়খানার তীব্রতা কমায় ও দ্রুত সুস্থ হতে সাহায্য করে।
  • সাধারণত ১০-১৪ দিন ধরে দিনে একবার জিঙ্ক সিরাপ দেওয়া হয়।

৩. পর্যাপ্ত পানি ও তরল দিন:

  • ৬ মাসের বেশি হলে ডাবের পানি, গাজরের স্যুপ, লবণ-চিনি মিশ্রিত হালকা শরবত দিতে পারেন।

৪. বিশ্রাম নিশ্চিত করুন:

  • শিশু যেন পর্যাপ্ত ঘুমায় এবং বিশ্রাম নেয়, তা নিশ্চিত করুন।

✅ বাচ্চাদের পাতলা পায়খানা ও বমি হলে করণীয়

১. ধীরে ধীরে তরল খাবার দিন:

  • বেশি পরিমাণে খাবার একবারে না দিয়ে অল্প অল্প করে বারবার খাওয়ান।
  • বমি কমার পর নরম খাবার দিন।

২. ওআরএস খাওয়ান:

  • পাতলা পায়খানা ও বমির পর শরীরে লবণ ও পানি ফিরিয়ে আনতে সাহায্য করে।

৩. জিঙ্ক সিরাপ ব্যবহার করুন:

  • এটি পায়খানার পরিমাণ ও তীব্রতা কমাতে সাহায্য করবে।

৪. খাবারের দিকে নজর দিন:

  • সহজপাচ্য খাবার দিন: খিচুড়ি, কলা, সেদ্ধ আলু, দই ইত্যাদি।
  • চর্বিযুক্ত ও অতিরিক্ত মসলাযুক্ত খাবার এড়িয়ে চলুন।

🚨 কখন ডাক্তার দেখাবেন?

  • বাচ্চার বারবার বমি হলে (প্রতি ৩০ মিনিটে একবার বা তার বেশি)
  • শিশুর প্রস্রাব কমে গেলে বা মুখ শুকিয়ে গেলে
  • বাচ্চা অতিরিক্ত দুর্বল হয়ে পড়লে


✅ পানির মতো পাতলা পায়খানা হলে করণীয়

১. ওআরএস এবং তরল খাবার বেশি পরিমাণে খাওয়ান।
২. পানিশূন্যতার লক্ষণ দেখুন:

  • মুখ শুকিয়ে যাওয়া
  • বারবার কান্না করলেও অশ্রু না আসা
  • প্রস্রাব কম হওয়া
    ৩. চিকিৎসকের পরামর্শ নিন যদি:
  • ২৪ ঘণ্টার বেশি পাতলা পায়খানা হয়
  • রক্ত বা শ্লেষ্মা মিশ্রিত পায়খানা হয়
  • শিশু খুব দুর্বল হয়ে পড়ে

আরো জানুন

শিশুদের ডায়রিয়া: কারণ, লক্ষণ ও করণীয়

শিশুদের ডায়রিয়া একটি সাধারণ সমস্যা হলেও এটি দ্রুত পানিশূন্যতা সৃষ্টি করতে পারে, যা মারাত্মক হতে পারে। সঠিক সময়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিলে শিশু দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠতে পারে। এখানে শিশুদের ডায়রিয়ার কারণ, লক্ষণ, প্রতিরোধ এবং চিকিৎসা সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।

শিশুদের ডায়রিয়া কারণ, লক্ষণ ও করণীয়

🔹 ডায়রিয়া কি?

শিশুর যদি দিনে তিনবার বা তার বেশি পাতলা পায়খানা হয়, তাহলে তাকে ডায়রিয়া বলা হয়। যেসব শিশু বুকের দুধ পান করে, তাদের পায়খানা সাধারণত নরম ও আঠালো হয়, যা স্বাভাবিক। তবে স্বাভাবিকের তুলনায় ঘন ঘন পাতলা পায়খানা হলে সেটাকে ডায়রিয়া হিসেবে ধরা হয়।


🔹 শিশুদের ডায়রিয়ার কারণ

ডায়রিয়া সাধারণত ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া বা পরজীবীর সংক্রমণের ফলে হয়। কিছু সাধারণ কারণ হলো—

পেটের ইনফেকশন (গ্যাস্ট্রোএন্টেরাইটিস)
নরোভাইরাস বা রোটা ভাইরাসের সংক্রমণ
ফুড পয়জনিং (খাদ্যে বিষক্রিয়া)
নির্দিষ্ট কিছু খাবারে এলার্জি বা সহ্য না হওয়া
অ্যান্টিবায়োটিক বা অন্যান্য ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া
কোভিড-১৯ সংক্রমণ


🔹 শিশুদের ডায়রিয়ার লক্ষণ

ডায়রিয়ার প্রধান লক্ষণ হলো ঘন ঘন পাতলা পায়খানা। তবে এর সাথে অন্যান্য লক্ষণ দেখা দিতে পারে, যেমন—

🔸 বমি বমি ভাব বা বমি হওয়া
🔸 পেট ব্যথা বা পেট ফুলে যাওয়া
🔸 জ্বর হওয়া
🔸 ক্ষুধামন্দা
🔸 শরীরে দুর্বলতা
🔸 পায়খানার সাথে রক্ত বা শ্লেষ্মা যাওয়া

👉 গুরুতর লক্ষণ:
⚠️ অতিরিক্ত পানিশূন্যতা (ডিহাইড্রেশন) হলে শিশুর জীবন ঝুঁকিতে পড়তে পারে। তাই নিম্নলিখিত লক্ষণ দেখা দিলে দ্রুত ডাক্তারের পরামর্শ নিন—

🚨 মুখ ও ঠোঁট শুকিয়ে যাওয়া
🚨 কান্না করলেও চোখ থেকে পানি না পড়া
🚨 চোখ ও গাল বসে যাওয়া
🚨 প্রস্রাব কম হওয়া (২৪ ঘণ্টায় ৪ বারের কম)
🚨 শিশুর হাত-পা ঠান্ডা হয়ে যাওয়া
🚨 ত্বকে ছোপ ছোপ দাগ দেখা দেওয়া


🔹 শিশুদের ডায়রিয়ার ঘরোয়া চিকিৎসা

১. পানিশূন্যতা পূরণ করা

ডায়রিয়ার প্রথম ও প্রধান চিকিৎসা হলো পানিশূন্যতা পূরণ করা। শিশুকে বেশি করে তরল খাবার ও ওআরএস (ORS) খাওয়াতে হবে।

  • ২ বছরের কম বয়সী শিশুদের প্রতিবার পাতলা পায়খানার পর ৫০-১০০ মিলি তরল পানীয় দিন।
  • ২-১০ বছর বয়সী শিশুদের ১০০-২০০ মিলি দিন।
  • ১০ বছরের বেশি বয়সীদের যতটুকু খেতে পারে ততটুকু তরল দিন।

🔹 তরল খাবার যা দেওয়া যেতে পারে:
✅ খাবার স্যালাইন (ওআরএস)
✅ ভাতের মাড়
✅ চিড়ার পানি
✅ ডাবের পানি (সীমিত পরিমাণে)
✅ গাজরের স্যুপ
✅ সেদ্ধ করা আলুর পানি

🚫 এড়িয়ে চলুন:
❌ বাজারের জুস ও কোমল পানীয়
❌ অতিরিক্ত মিষ্টি বা চিনি জাতীয় খাবার


২. শিশুকে পুষ্টিকর খাবার দিন

ডায়রিয়ার সময় শিশুকে খাবার খাওয়ানো খুবই গুরুত্বপূর্ণ। অনেকেই মনে করেন, ডায়রিয়া হলে শুধু কলা আর সাদা ভাত খাওয়া উচিত। তবে এটি ভুল ধারণা। শিশুকে সব ধরনের পুষ্টিকর খাবার খাওয়াতে হবে।

🔹 ডায়রিয়ায় করণীয় খাবার:
🍚 নরম খিচুড়ি বা ভাত
🍌 কলা (পটাশিয়াম সমৃদ্ধ)
🥔 সেদ্ধ আলু
🍎 আপেলের পেস্ট
🥛 দই (প্রোবায়োটিক সমৃদ্ধ)

🚫 এড়িয়ে চলুন:
❌ দুগ্ধজাত খাবার (যদি হজমে সমস্যা হয়)
❌ অতিরিক্ত মসলাযুক্ত ও তৈলাক্ত খাবার


৩. প্রয়োজনীয় ওষুধ সেবন করুন

সাধারণত ডায়রিয়া ৫-৭ দিনের মধ্যে ভালো হয়ে যায়। তবে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে নিচের ওষুধ দেওয়া যেতে পারে—

💊 জিঙ্ক সিরাপ বা ট্যাবলেট: ১০-১৪ দিন ধরে ১০-২০ মিলিগ্রাম জিঙ্ক দেওয়া হয়। এটি ডায়রিয়ার সময়কাল কমিয়ে আনে।
💊 প্যারাসিটামল: জ্বর বা পেটব্যথা থাকলে দেওয়া যেতে পারে।

🚫 এড়িয়ে চলুন:
❌ ১২ বছরের কম বয়সী শিশুদের ডায়রিয়া বন্ধের ওষুধ (লোপেরামাইড)
❌ চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া অ্যান্টিবায়োটিক


🔹 শিশুদের ডায়রিয়া প্রতিরোধের উপায়

ডায়রিয়া থেকে শিশুদের রক্ষা করতে কিছু নিয়ম মেনে চলতে হবে—

🧼 শিশুর হাত ধোয়া নিশ্চিত করুন।
🍽️ পরিষ্কার পানীয় ও স্বাস্থ্যকর খাবার দিন।
🚽 টয়লেট ব্যবহারের পর ভালোভাবে হাত ধোয়া অভ্যাস করুন।
💉 রোটা ভাইরাসের টিকা দিন।


🔹 কখন দ্রুত ডাক্তারের কাছে যাবেন?

⚠️ শিশুর বয়স ৬ মাসের কম হলে
⚠️ শিশুর পায়খানায় রক্ত বা শ্লেষ্মা থাকলে
⚠️ ২৪ ঘণ্টার মধ্যে শিশুর প্রস্রাব না হলে
⚠️ ৪৮ ঘণ্টার বেশি সময় ধরে জ্বর থাকলে
⚠️ শিশুর হাত-পা ঠাণ্ডা হয়ে গেলে

🔴 এটি গুরুতর অবস্থার ইঙ্গিত দিতে পারে, তাই দেরি না করে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন।

সতকর্তাঃ এই লিখাটি সাধারণ শিক্ষার জন্য উপলভ্য। এটি কোন ভাবেই চিকিৎসার বিকল্প হিসাবে ব্যবহার যোগ্য নয়। 

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

[blogger]

যোগাযোগ ফর্ম

নাম

ইমেল *

বার্তা *

Blogger দ্বারা পরিচালিত.
Javascript DisablePlease Enable Javascript To See All Widget